এফএও’র প্রতিবেদন

বিশ্বে খাদ্যপণ্যের দাম কমেছে, দেশে উল্টো

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) মাসিক খাদ্যের মূল্য সূচক (এফএফপিআই) অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর মাসে খাদ্যদ্রব্য, মাংস, তেল ও দুগ্ধজাত পণ্যের দাম বিশ্ববাজারে কমেছে। বেড়েছে শুধু দানাদার খাদ্য ও চিনির দাম। অথচ দেশের বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।

গতকাল শুক্রবার (৬ অক্টোবর) জাতিংঘের সদর দপ্তর থেকে খাদ্য মূল্য সূচকের ওপর প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

এফএওর প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাংসের গড় মূল্য সূচক কমেছে ১.২ পয়েন্ট। সেপ্টেম্বরে গড় মূল্য সূচক ছিল ১১৪.২ পয়েন্ট, যা আগস্টে ছিল ১১৫.৪। সে হিসাবে কমেছে ১.২ পয়েন্ট (১.০ শতাংশ)। সূচক অনুযায়ী, এ নিয়ে টানা তিন মাস আন্তর্জাতিক বাজারে মাংসের মূল্য কমেছে। আর এক বছর আগের চেয়ে দাম কমেছে ৬.১ পয়েন্ট (৫.০ শতাংশ)। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে মুরগির মাংসের দামও কমেছে। কেননা ব্রাজিল প্রচুর পরিমাণে মুরগি সরবরাহ করছে। চীন ও মধ্যপ্রাচ্যে স্থির চাহিদা থাকা সত্ত্বেও অস্ট্রেলিয়া থেকে উচ্চ সরবরাহের কারণে ধীর গতিতে হলেও মুরগির মাংসের দাম টানা পাঁচ মাস ধরে কমছে। 

এদিকে রাজধানী ঢাকার কারওয়ান বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজিতে। শুক্রবার বিক্রি হয়েছে ১৮০ টাকা কেজি। খাসির মাংস আগের মতোই ১১০০ টাকা ও গরুর মাংস ৭৫০-৭৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। লেয়ার মুরগি ৩১৫ টাকা, পাকিস্তানি ৩০০ টাকা কেজি এবং দেশি মুরগি আগের মতোই ৫৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

দানাদার খাদ্যের মূল্য সূচক বেড়েছে

এফএফপিআই অনুযায়ী, দানাদার খাদ্যের গড় মূল্য সেপ্টেম্বরে ছিল ১২৬.৩ পয়েন্ট, যা আগস্টে ছিল ১২৫.৫ পয়েন্ট। সে হিসাবে এ মাসে দানাদার খাদ্যের মূল্য সূচক বেড়েছে ১.৩ পয়েন্ট (১ শতাংশ বেড়েছে)। কিন্তু গত এক বছর আগের মূল্যের চেয়ে ২১.৬ পয়েন্ট (১৪.৬ শতাংশ) কমেছে। 

সেপ্টেম্বর মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে মোটা শস্যের দাম ৫.৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল। ক্রমাগত সাত মাস মূল্য পতনের পর সেপ্টেম্বরে আন্তর্জাতিক বাজারে ভুট্টার দাম ৭.০ শতাংশ বেড়েছে। যার মধ্যে রয়েছে ব্রাজিলে জোগানের জোরালো চাহিদা, আর্জেন্টিনায় চাষিদের ধীর বিক্রিসহ বিভিন্ন কারণ। বার্লির দাম ছিল স্থিতিশীল। বিপরীতে রাশিয়ান ফেডারেশনে পর্যাপ্ত সরবরাহের কারণে আন্তর্জাতিক গমের দাম ক্রমাগতভাবে কমেছে। প্রতি মাসে কমের পরিমাণ ছিল ১.৬ শতাংশ।

খাদ্য মূল্য সূচক কমেছে

এফএওর প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগস্টের চেয়ে সেপ্টেম্বরে খাদ্যদ্রব্যের মূল্য সূচক কমেছে শূন্য দশমিক ১ পয়েন্ট। আগস্টে খাদ্যদ্রব্যের সূচক ছিল ১২১.৫ পয়েন্ট, যা সেপ্টেম্বরে কমে হয় ১২১.৫ পয়েন্ট। খাদ্যদ্রব্যে মূলত চাল ও আটাজাতীয় পণ্যকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়ে থাকে। সেপ্টেম্বরে সব প্রকার চালের দাম ০.৫ শতাংশ কমেছে। ভারতের চাল রপ্তানিতে বিধিনিষেধ এবং এশিয়ায় নতুন ফসল কাটার আগে সরবরাহ ক্রমান্বয়ে কম হওয়ার কারণে দাম বৃদ্ধির প্রবণতা ছিল।

চিনির দাম ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ

আবহাওয়ায় এল নিনোর বিরূপ প্রভাবে চিনি উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। এতে সেপ্টেম্বরে ১৩ বছরের সর্বোচ্চে উঠেছে চিনির দাম। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) গতকাল এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ভারত ও থাইল্যান্ডে আখের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় বৈশ্বিক চিনি সরবরাহ কমে গেছে। ফলে দাম বেড়েছে ভোগ্যপণ্যটির। খবর বিজেনস রেকর্ডার।

বৈশ্বিক খাদ্যমূল্য স্থিতিশীল থাকলেও গত মাসে চিনির বাজার অস্থিতিশীল হয়েছে বলে দাবি করেছে এফএও। চিনির মূল্য সূচক আগস্টের তুলনায় ৯ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়েছে বলে সংস্থাটির  প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। জাতিসংঘের সংস্থাটি জানিয়েছে, ২০১০ সালের নভেম্বরের পর এটিই পণ্যটির সর্বোচ্চ মূল্য।

ভোজ্য তেল ও অন্যান্য

সেপ্টেম্বরে ভোজ্য তেলের মূল্য সূচক ছিল ১২০.৯ পয়েন্ট, যা আগস্টে ছিল ১২৫.৮ পয়েন্ট। সে হিসাবে ৪.৯ শতাংশ কমেছে। টানা দ্বিতীয় মাস থেকে পাম, সূর্যমুখী, সয়াবিন তেলের বিশ্বে কমের দিকে। সেপ্টেম্বরে আন্তর্জাতিক বাজারে পাম তেলের দাম কমার কারণ হিসেবে প্রধানত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রধান উৎপাদক দেশগুলোতে মৌসুমি উচ্চ উৎপাদনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এরই মধ্যে বিশ্বে সূর্যমুখী তেলের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে কমছে। 

দুগ্ধজাত পণ্যের দাম কমছে ৯ মাস ধরে । গত মাসে দুগ্ধজাত পণ্যের গড় মূল্য সূচক ছিল ১০৮.৬ পয়েন্ট, যা আগস্টে ছিল ১১১.২ পয়েন্ট। সে হিসাবে ২.৫ পয়েন্ট (২.৩ শতাংশ) কমেছে। ৯ মাস যাবত দাম কমছে। গত বছরের একই মাসের মূল্যের চেয়ে ৩৪.১ পয়েন্ট কমল (২৩.৯ শতাংশ)। সেপ্টেম্বরে আন্তর্জাতিক বাজারে সমস্ত দুগ্ধজাত পণ্যের দাম কমেছে। 

দাম কমার কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, নিউজিল্যান্ডের নতুন উৎপাদন মৌসুমে রপ্তানির পরিমাণ বৃদ্ধি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সীমিত অভ্যন্তরীণ চাহিদা এবং মার্কিন ডলারের বিপরীতে দুর্বল ইউরোর প্রভাব আন্তর্জাতিক দুগ্ধজাত পণ্যের দামের ওপর প্রভাব ফেলে থাকে। যদিও দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অঞ্চলে মাসের শেষের দিকে কিছু দুগ্ধজাত পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //