হঠাৎ চালের বাজারে উত্তাপ

হঠাৎ অস্থিরতা দেখা দিয়েছে দেশের চালের বাজারে। পর্যাপ্ত মজুত থাকলেও দুই সপ্তাহের ব্যবধানে দেশের পাইকারি বাজারে চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ২ থেকে ৭ টাকা পর্যন্ত। চালকল মালিকরাই কারসাজি করে নানা অজুহাতে দাম বাড়িয়েছে বলে অভিযোগ করছেন আড়তদাররা। দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

রাজধানীসহ দেশের প্রধান প্রধান চালের পাইকারি বাজারে মোটা ও চিকন চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ২ থেকে ৭ টাকা। ঢাকার কারওয়ান বাজারে মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৭ টাকায়। প্রতি কেজি আটাশ ও পাইজাম ৫১, নাজিরশাইল ৭১ এবং মোটা চাল ৪৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে দামের কিছুটা পার্থক্য রয়েছে দেশের অন্যান্য চালের বাজারে। 

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, মিল মালিকদের কারসাজিতে অস্থির হচ্ছে চালের বাজার। বিভিন্ন অজুহাতে ৫০ কেজির বস্তায় দাম বাড়িয়েছে ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত। এতে পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দাম বাড়ছে। তবে মিল মালিকদের দাবি, ধানের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে চালের বাজারে। 

দেশের অন্যতম প্রধান চালের মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগরে গত দুই সপ্তাহে চালের দাম প্রতি কেজিতে মিলগেটে ২ থেকে ৩ টাকা বাড়লেও খুচরা বাজারে বেড়েছে কেজি প্রতি ৪ টাকা।

হঠাৎ চালের দাম বাড়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে কুষ্টিয়া জেলা চালকল মালিক সমিতি সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন বলেন, গত এক মাসে ধানের দাম যে পরিমাণে বেড়েছে তাতে চালের দাম কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা বেড়ে যাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক।

চালের অন্যতম উৎপাদন এলাকা হিসেবে পরিচিত দিনাজপুর। সেখানে চালের বাজার এখন অস্থির। দিনাজপুরে এক সপ্তাহে পাইকারি বাজারে প্রতিমণে চালের দাম বেড়েছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। আর খুচরা বাজারে প্রকারভেদে সব ধরনের চাল কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা বেড়েছে। প্রতিকেজি মিনিকেট এখন ৬৫ টাকা, ২৯ জাতের চাল ৫৫ টাকা, আগে ২৮ জাতের চাল ৬০ টাকা, গুটিস্বর্ণ ৪৭ টাকা, সুমন স্বর্ণ ৫২ টাকা, কাটারি ১০০ টাকা ও জিরা কাটারি ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

দাম বাড়ার কারণ সম্পর্কে দিনাজপুর জেলা চাউল কল মালিক গ্রুপ সভাপতি মো. মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, মধ্যস্বত্ত্ব ভোগী এবং অলস টাকার মালিকেরা ধান চালের বাজার অস্থিতিশীল করেছে। এ ছাড়া দিন দিন দিনাজপুরে মোটা চালের ধানের  আবাদ কমে যাচ্ছে। এর ফলে মোটা চালের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। যার ফলে মোটা চালের দাম বাড়ছে।

তবে দাম বাড়ার পেছনে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হওয়াকেও অনেকটা দায়ী করেছেন দিনাজপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, দিনাজপুরের আমন চালের সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে শুধু ধানের সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। নির্বাচনের সময়ে ধান ও চালের দাম বেড়েছে। এটি নিয়ন্ত্রণে মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে।

একই পরিস্থিতি দেখা গেছে ধান-চাল উৎপাদনে প্রসিদ্ধ জেলা হিসেবে পরিচিত নওগাঁয়। জেলার ক্ষুদ্র চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক উত্তম কুমার সরকার জানান, নওগাঁয় চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ৩ থেকে ৪ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। প্রতিকেজি স্বর্ণা ৫২ টাকা, কাটারি ৬৮ টাকা,  জিরা (মিনিকেট) ৬৬ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

নওগাঁ জেলা চাল কল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, কৃষকরা এ সময় হাটবাজারে ধানের আমদানি কম করায় মোটা–চিকন উভয় ধানেরই প্রতিমণে দাম বেড়েছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত।

এদিকে দেশের বাজারে হঠাৎ করে চালের দাম এভাবে বেড়ে যাওয়া রোধে সরকারে পর্যাপ্ত নজরদারির অভাব রয়েছে বলে মনে করছেন কৃষি অর্থনীতিবিদরা। এ জন্য দ্রুত বাজার তদারকির বাড়ানোর তাগিদ তাদের।

কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. আব্দুলাহিল বাকি বলেন, চালের বাজারের অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা কিছু দিন সংযত ছিলেন। এখন তারা আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। এদের থামাতে হলে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায় বাজার পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে।

বাজারে ধান, চালের অবৈধ মজুতবিরোধী অভিযান জোরদারে ইতিমধ্যে পাস হয়েছে মজুতবিরোধী আইন। দ্রুত বিধি প্রণয়ন করে তা মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়নের তাগিদ বিশ্লেষকদের।

এদিকে, সোমবার (১৫ জানুয়ারি) চট্টগ্রামে চালের বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে অভিযান চালিয়েছে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। সেখানকার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ওমর ফারুক জানান, গত কয়েকদিনে হঠাৎ করেই চালের দাম বাড়তে শুরু করেছে। চট্টগ্রামের বাজারে বস্তাপ্রতি ২০০-৩০০ টাকা দাম বাড়ার কারণ খুঁজতেই তারা মাঠে নেমেছেন। প্রাথমিকভাবে চট্টগ্রামে চালের আড়ত কেন্দ্রিক বড় কোনো কারসাজির খবর পাওয়া যায়নি। তবে এখানে যেসব জেলা থেকে চাল সরবরাহ করা হয়, সেসব মিল বা মোকামে কারসাজি হচ্ছে বলে জানতে পেরেছেন তারা। এই ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে বলেও জানান তিনি।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //