দাম বেঁধে দেয়ায় বিক্রেতাদের ক্ষোভ

পাইকারি বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণ না করে খুচরা পর্যায়ে পণ্যের দাম বেঁধে দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খুচরা বিক্রেতারা। আজ শনিবার (১৬ মার্চ) রাজধানীর মোহাম্মদপুর, কৃষি মার্কেট ও কাওরানবাজারে এ চিত্র দেখা যায়।

পাইকারি বাজার থেকে কম দামে পণ্য কিনতে পারছেন না খুচরা ব্যবসায়ীরা। যে কারণে সরকার নির্ধারিত দরে পণ্য বিক্রি না করার অজুহাত তাদের। 

পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে শুক্রবার (১৫ মার্চ) দেশি পেঁয়াজ, ছোলা, মাছ, ব্রয়লার মুরগি, গরুর মাংসসহ ২৯টি নিত্যপণ্যের দাম বেঁধে দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। কিন্তু শনিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর, কৃষি মার্কেট ও কাওরানবাজারে দাম কমার প্রভাব তো নেই-ই, উল্টো সরকার নির্ধারিত দামের কথা বললেই ক্ষেপে উঠছেন বিক্রেতারা। আগের মতো চড়া দামেই তাই বিক্রি হচ্ছে নিত্যপণ্য।

সরকারি নির্দেশনায় প্রতি কেজি গরুর মাংসের সর্বোচ্চ খুচরা দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৬৪ টাকা। এছাড়া ছাগলের মাংসের দাম ১ হাজার ৩ টাকা। বাজারগুলোতে দেখা যায়, গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৭৮০ টাকা কেজি দরে। ছাগলের মাংসের দাম দাবি করা হচ্ছে ১১০০-১১৫০ টাকায়।

মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজারের গরুর মাংস ব্যবসায়ী আলী হাসান রাজা জানান, দাম কমলে ব্যবসায়ীরা আরও খুশি। কারণ বিক্রি বেশি হবে। কিন্তু এখন এমন পরিস্থিতিতে পড়েছে খুচরা ব্যবসায়ীরা যে গরুর কেনা দামই সরকারের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি পড়ে। যদি গরুর মাথা, কলিজা, ছাঁট মাংস একসঙ্গে মিশিয়ে দেয়া যায় তবেই একমাত্র সেই নির্ধারিত মূল্যে মাংস বিক্রি সম্ভব হবে। তা না হলে ব্যবসা বাদ দেয়া ছাড়া উপায় নেই।

মুরগিও বিক্রি হচ্ছে আগের দামেই। বিক্রেতাদের অভিযোগ, পাইকারি পর্যায়ে বেশি দামে মুরগি কিনছেন তারা। বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২১০-২২০ টাকা কেজিতে এবং সোনালী মুরগি ৩১০-৩২০ টাকা প্রতি কেজি।

মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের মুরগি বিক্রেতা মো. শামীম বলেন, আগে পাইকারি বাজারে দাম ঠিক করে খুচরা বাজারের মূল্য নির্ধারণ করতে হবে। সরকারের কাছে আহ্বান করবো, সরকার দুই পর্যায়েই দাম নির্ধারণ করে দিক। পাইকারি পর্যায়ে সরকারি সংস্থার মনিটরিং বাড়ানোর দাবি জানিয়ে এ ব্যবসায়ী বলেন, সংস্থার লোকজন এসে দেখে যাক পাইকারি ব্যবসায়ীরা কত করে বিক্রি করেন, তাহলে খুচরা বাজারেও কম দামে মুরগি বিক্রি করা সম্ভব হবে।

দেশি পেঁয়াজ, রসুন, আদা, আলুসহ অন্যান্য সবজির দামেও কোনো পরিবর্তন নেই। বিক্রি হচ্ছে পূর্বের দামেই। অথচ এসব পণ্যেরও দাম বেঁধে দিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদফতর। কাওরানবাজারের সবজি বিক্রেতা মো. মাইনুদ্দিন বলেন, কাল বললে আজকেই তো দাম কমানো সম্ভব না। দুই-তিন দিন সময় দিতে হবে। এখন এইসব পণ্যের কেনা দামই বেশি আছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা তো কমে পাচ্ছে না, তাহলে নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি হবে কিভাবে!

খেজুর বিক্রেতা গোলাম রাব্বি জানান, সরকার জাহেদি খেজুরের দাম ১৮০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। অথচ পাইকারি কেনা হয়েছে ৩০০-৩৫০ টাকা কেজিতে। যে কারণে দোকানে এই খেজুর রাখাই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

বাজার পরিস্থিতি নিয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, বেঁধে দেয়া দামে সাধারণ ক্রেতারা পণ্য বাজারে কিনতে পারবে না। কেননা শুধুমাত্র দাম বেঁধে দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। নির্ধারিত দামে পণ্য বিক্রির জন্য বাজারে সরকারি সংস্থাগুলোকে মনিটরিং আরও বাড়াতে হবে।

উল্লেখ্য, পবিত্র রমজান উপলক্ষে মাছ-মাংসসহ ২৯টি নিত্যপণ্যের দাম বেঁধে দিয়েছে সরকার। শুক্রবার কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে নির্ধারিত দাম অনুযায়ী পণ্য বিক্রি নিশ্চিত করতে সরকারের বিভিন্ন সংস্থাও কাজ করবে বলে জানানো হয়।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //