দাম-ধসেও বিক্রি হচ্ছে না তরমুজ

রমজানের শুরুতে তরমুজের দাম অস্বাভাকি বৃদ্ধি পাওয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পচনশীল এই পণ্যটির বয়কটের ডাক দেন ভোক্তারা। বয়কটের এই ডাকে সাড়া দিয়ে অনেক ক্রেতা তরমুজ কেনা থেকে বিরত থাকেন। এই অবস্থা চলতে থাকায় এক পর্যায়ে তরমুজের বাজারে ক্রেতা সংকট দেখা দেয়।

তরমুজের অতি উচ্চমূল্যের কারণে ক্রেতারা পণ্যটি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশি দামে তরমুজ না কেনার জন্য প্রচারণা চালাতে থাকে। এই প্রচারণার সাথে সামিল হয় কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। প্রতিষ্ঠান থেকে সারাদেশে প্রচারণা চালানো হয় ‘দাম বাড়লে কেনা কমাও’।

এ ধরণের নানামুখী প্রচারণা এবং ভোক্তারা পণ্যটি কিনতে নিরুৎসাহিত হওয়ায় ক্রেতার অভাবে রমজানের প্রথম সপ্তাহের পর থেকেই কমতে শুরু করে তরমুজের দাম। ক্রমান্বয়ে তা কমতে কমতে রমজানের তৃতীয় সপ্তাহে এসে ক্রেতার নাগালের মধ্যে চলে এসেছে। রমজানের শুরুতে যে তরমুজের দাম ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে তা কমে ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় নেমে এসেছে।

কিন্তু, দাম কমলেও তরমুজের সরবরাহ অনুযায়ী পর্যাপ্ত ক্রেতা না পাওয়ায় পচনশীল এই ফলটি কিনে ও চাষাবাদ করে বড় ধরনের লোকসানের কবলে পড়েছেন সব ধরনের বিক্রেতা ও কৃষকেরা।

সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ক্রেতা বিক্রেতা ও আড়তদারের সাথে কথা বলে এ চিত্র পাওয়া গেছে।

এ ব্যাপারে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘এটা একটা কনজুমার প্রতিরোধ। সব ক্ষেত্রে যদি এই ধরনের রেজিস্টেন্স সৃষ্টি হয়, তাহলে কিন্তু অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের একটা শিক্ষা হবে।’

তিনি বলেন, ‘তরমুজ এমন একটা জিনিস যে এটা না খেলে মানুষ মারা যাবে না। মুনাফালোভী যে সব ব্যবসায়ী কারসাজি করে তাদের জন্য এটা একটা ভালো উদাহরণ বলে আমি মনে করি।’

এদিকে রাজধানীর বেশ কয়েকটি তরমুজের আড়ত ঘুরে এবং পাইকারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রমজানের শুরুতে প্রতি কেজি তরমুজ ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে তা দাম কমে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় নেমে এসেছে।পাশাপাশি রমজানের শুরুতে কেজিতে বিক্রি হলেও বর্তমানে পিস হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে। তারপরেও বাজারে চাহিদা অনুযায়ী তরমুজের পর্যাপ্ত ক্রেতা মিলছে না। এতে করে চাষী ও সব ধরনের ব্যবসায়ী লোকসানের কবলে পড়েছে।

অনেক ব্যবসায়ী মুনাফার আশায় বেশি দামে তরমুজ কিনে কাঙ্ক্ষিত দামে বিক্রি করতে না পারায় তাদের পুঁজি হারিয়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছে। বিক্রি না হওয়ায় অনেক তরমুজ পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

এ ব্যাপারে মিরপুর ১ নম্বর শাহআলী মাজার বেষ্টনি প্রকল্প মার্কেটের আড়তদার মো: মনির হোসেন মোল্লা বলেন, ‘বর্তমানে বাজারে তরমুজের দাম খুবই কম। সরবরাহ বেশি থাকায় এবং ক্রেতা কম থাকায় দাম অনেক কমে গেছে।’

রমজানের শুরুতে যে তরমুজ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে বর্তমানে সেটা ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় নেমে এসেছে। আবার ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা দামের তরমুজ বর্তমানে ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

রমজানের শুরুতে বেশি দাম থাকলেও বর্তমানে দাম কমার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রমজানের শুরুতে এক শ' তরমুজের দাম ৪০ হাজার টাকা হলেও বর্তমানে তা ২৫ হাজার টাকায় নেমে এসেছে। রমজানের শুরুতে যে তরমুজ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে বর্তমানে সেটা ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় নেমে এসেছে। আবার ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা দামের তরমুজ বর্তমানে ১০০ থেকে ১৫০ টাকায বিক্রি হচ্ছে।’

দাম কমার কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘রমজানের শুরুতে পটুয়াখালির রাঙ্গাবালি, গলাচিপা এলাকার তরমুজ পাওয়া যেত। বর্তমানে বরগুনা, ভোলা, বরিশালসহ বিভিন্ন এলাকার তরমুজ বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। এই কারণে সরবরাহ বেড়ে গেছে, সে তুলনায় ক্রেতা না বাড়ায় দাম কমে গেছে।’

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //