ফুল ফুল, চিৎকার করে ডাকতে
থাকে, ফুল তখন গলা ছেড়ে গান
ধরেছে। ফুলের গান বাতাসে ভেসে অনেক দূরে চলে যাচ্ছে। বাবার ডাক শুনে বেরিয়ে আসে
নূরী, সে তার মায়ের সেবা করছিল।
পঙ্গু মা নিজে কিছুই করতে পারে না,
ফুল
আর নূরী দেখা শোনা করে। বাবা খুস্ খুস্ করে কাশে, তার কাশিটা গেল না। ফুল রান্না শেষ করে গা ধুয়ে বারান্দায়
বসে গান গাইছিল, কিন্তু বাবার ডাকে
বন্ধ করে দিল। সন্ধ্যার পর ফুরফুরে হাওয়া বইতে শুরু করেছে। সারাদিনে এই সময়টা ফুল কিছুটা অবসর পায়, তখন সে কিছুক্ষণের জন্য নিজেকে নিয়ে ভাবে।
শেয়াল ডাকছে। শরতের রাত বেশ ঠা-া পড়েছে। পূজার ঢোল বাজানো
থেমেছে, গতকাল ছিল বিসর্জন। এবার
ফুল পূজা দেখতে যায়নি, নূরী অনুরোধ
করেছিল। এই শরতে ফুল একদিনও বাড়ির বাইরে যায়নি। দিনভর কাজ করে। মুখে কোনো কথা নেই, কার সঙ্গেই বা কথা বলবে! মার কাছে বসলে ওর খুব
কষ্ট হয়, তার যত কথা মার সঙ্গে, মা হঠাৎ পঙ্গু হয়ে গেল। অভাবের সংসার।
বাবা ঠিক মতো
চিকিৎসা করাতে পারল না, যা হয়ে থাকে। মাকে
সেবা শুশ্রƒষা রান্না-বান্না, সময় কই অন্যের
সঙ্গে কথা বলার।
বাবা আবার হাঁক ছাড়ে,
নূরী
গলা বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করে, কী হলো বাবা?
এদিকে একটু আসলেই তো হয়।
তুমি মোটেই সইতে পার না, হাতের কাজগুলো গুছিয়ে না হয় আসব।
বাবা বুঝেও বুঝতে চায় না, চোখের সামনে সোমত্ত দুই মেয়ে, চোখে জোনাক পোকা দেখে।
খাবার দেওয়া হয়েছে,
নূরী
বাবাকে বলে।
শরীর ভালো না,
জ্বর
জ্বর লাগছে, বাবা বলল।
খালি পেটে থেক না,
কিছু
মুখে দাও, আমি আদা চা করে দিচ্ছি, প্যারাসিটামল চা খেলে ভালো লাগবে।
অনেক দিন হলো ফুল বাবার সঙ্গে কথা বলে না, সে খুব অভিমানী। বড় মেয়েটার জন্য বাবার রয়েছে
প্রচ্ছন্ন টান। যাঁতাকলে পিষ্ট হতে হতে বাবার আর কোনো অনুভূতি নেই। তবু ফুলের
জন্যে তার খারাপ লাগে, নূরীকে কখনো বুঝতে
দেয় না।
তোরা কি খেয়েছিস,
বাবা
জানতে চায়।
না বাবা, আমরা খেয়ে নেব, মা ঘুমোচ্ছে, তুমি চিল্লানো বন্ধ কর। নূরীর মুখে কিছু আটকায় না। সে তার
বাবাকে ছেড়ে কথা বলে না। বাবা গজ গজ করতে থাকে, আমার খাওয়া নিয়ে তোর এত চিন্তা কিসের, তোর মা’র ওষুধ ঠিক মতো খাওয়ানো হয়েছে? প্রতিদিন সে এটা জিজ্ঞেস করবে, নূরী প্রতিদিনই একই কথা বলে থাকে। ফুল নীরবে
শোনে। সে একটা বিষয় খেয়াল করেছে, বাবা কখনো ওর
আনন্দ সইতে পারে না। আজ তার খুব গান গাইতে ইচ্ছে করছিল। কিন্তু বাবা তা হতে দিল
না। মার ঘরে নীল আলো, ফুল তা দেখল, মনে হলো কফিনে মোড়া ঘরটা।
নূরী চুল বাঁধতে বসল। বাবার খাওয়া হলে ওরা দু’বোন খেয়ে নেবে, রোজ রোজ এভাবেই চলে।
বাবা জানতে চায়,
কাল
বাজার করতে হবে কি না। বাড়িতে ফ্রিজ নেই,
দিনের
বাজার দিনেই করতে হয়। ফুল বুঝতে পারে,
নূরীকে
বলতে বলে, বাজার করার দরকার হবে না।
খেয়ে না খেয়ে ওদের দিন চলে। ঘরে যা আছে তাই দিয়ে এ-কদিন চলতে হবে। মোড়ের দোকান
থেকে ডিম, তেল নুন, অন্য আর যা দরকার নিয়ে নিলে হবে। মাঝে মাঝে
দোকানদার গুজ গুজ করে, বাকির পরিমাণ বেড়ে
গেলে ফুল নিজেও লজ্জা পায়, কিন্তু কী করবে।
বাবার কাশিটা বেড়েছে। ইদানীং দেখা যাচ্ছে রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাবার কাশির দমক
বেড়ে যায়, মাঝে মাঝে জ্বরও আসে।
ডাক্তার দেখাতে বললে যাবে না, কেন যে যায় না তা
দু’বোন বুঝতে পারে। প্রতি মাসে মার পেছনে অনেক টাকা খরচ হয়। দিন দিন বাবা শুকিয়ে যাচ্ছে, সব সময় খিটমিট করে। সংসারের জন্যে ফুল কিছুই
করতে পারে না, ওর পড়ালেখাও ঠিক
মতো হলো না। নিজেই বন্ধ করে দিল, বাবার পক্ষে
ক্ষম্ভব হচ্ছিল না। বাবা কখনো জানতেও চাইল না সে পড়ালেখা কেন ছেড়ে দিল। নূরী কোনো
ভাবে চালিয়ে যাচ্ছে, সে টিউশনি করে তার
খরচ জোগাড় করে। ফুলও তা করতে পারতো। কিন্তু তা হলে সংসারের অন্য কাজ হতো না। মাকে
দেখার কেউ থাকত না, অন্তত ছোট বোনটা
চালিয়ে যেতে পারছে এটাই ওর সান্ত¡না।
মার ঘরের দিকে তাকিয়ে ফুল ছ্যাঁকা খেল। ওর বুকটা ছলাৎ করে
উঠল। নীল আলোয় ঘরটা ভেসে যাচ্ছে। ফুলের চোখে আজকের আলোর বন্যা অন্য যে কোনো দিনের
চেয়ে ভিন্ন লাগল।শরীরের ভেতর হীম বয়ে গেল। কষ্টের সঙ্গে ভয় হতচকিত হওয়া নির্যাস
নিসৃত মাদক রস নীল আলোর বন্যায় ভেসে বেড়াচ্ছে। ক্ষয় অতি ধীরে দৃশ্যমান হওয়ার পর
আজকে বাবার খুক খুক কাশি, মায়ের পঙ্গুত্ব
সদ্য কিশোরী সময়ে ফুলের আহ্লাদের বিরূপতা। বাবার রমরমা ব্যবসা, বাড়ির আনন্দময় পরিবেশ, পুকুরের ঘাট ওর বড় প্রিয় একটা জায়গা। সলিম তার
বন্ধুকে নিয়ে সরাসরি পুকুর ঘাটে চলে আসতো। ফুলকে এখানেই পাবে সেটা নিশ্চিত জেনে।
সলিমের বন্ধু সুলতান জেলা শহরের এক ভূমি কর্মকর্তার ছেলে। তাঁর প্রদর্শন বাতিকতা
এমন যে সলিমের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব উপহাসের মতো মনে হয়। ফুলের কাছে এমন ভাবে ধরা
পড়ে ছোট ভাইয়ের স্বভাবের প্রত্যাখ্যান অযোগ্য সহজে গ্রহণ করা যায় না। তার সঙ্গে
মিল খুঁজতে সুলতানকে ভিন্নভাবে আবিষ্কার করে। সুলতানের আপত পারিপাটি চলাফেরার মাঝে
তার নির্বোধ জড়তা দেখে ফুলের আবেগ সলিমের প্রতি ফেটে পড়ে। সলিমের জন্য ওর বুকের
গভীর থেকে বলতে থাকে সলিম যেন তার স্বপ্নের জগতে মূল্যবোধে সাবলীল থাকে। বাবার
ব্যবসার কমতি সবকিছু গ্রাস করতে ছুটে আসছে। ফুল গাড়িতে কলেজে যেত। নজির বিশ্বাসের
সরল রৈখিক চরিত্রের কারণে অনেকের পছন্দের না হলেও বেশ মর্যাদা নিয়ে ব্যবসা চালিয়ে
যাচ্ছিলেন। এর ভেতরে বেড়ে উঠল ক্ষয়ের ছত্রাক। বড় মনোহরি দোকানের চাকচিক্য মাছের
ঘোলা চোখের মতো হয়ে উঠছে। এসব ভাবতে ভাবতে ফুল আবার মার ঘরের দিকে তাকাল। ওর
অনু-পরমাণুতে ¯œায়ুর জালে যৌবনের
নীল তরঙ্গ বয়ে গেল। গান গাওয়ার তৃষ্ণা মিইয়ে জেগে উঠছে অন্য অচেনা শিহরণ। সেদিনের
সন্ধ্যা ভয় শিহরণের যে অভিজ্ঞতা দিয়েছিল। তা এখন বীভৎস চেহারা নিয়ে ওর সামনে
দাঁড়ায়। মার চেহারা ভেসে উঠলো, অপূর্ব সুন্দরী এক নারী, অটুট একহারা দেহ, বিস্তৃত চুল, কাঁচা হলুদ গায়ের রঙ।
কাঠিন্যে ঘেরা মায়ের ভেতর অতৃপ্তির হাহাকার। বাবার সঙ্গে মার ব্যবহারের
পাতলা শীতল পর্দা ফুলের চোখ এড়িয়ে যেতে পারে নি। সলিমের উপস্থিতিতে মার অস্থির
থাকা সময়ে বাড়িতে উল্লাসের জোয়ারে ফুল নুরী সলিমের সঙ্গে মায়ের আসল রূপ ফিরে পেত।
ওদের দু’জনের নজরে না এলেও ফুলের নিজস্ব বোধ ওর মাকে বোঝার ব্যাপারে
সহায়তা দিয়েছে। বাবার একা সময় কাটানো,
বন্ধের
দিন অন্য কোথাও না-যাওয়া, ফুল অনুসরণ করত
মার গতিবিধি। বাবার উপস্থিতি মার আবেগে আলোড়ন তুলতে পারত কিনা তাতে ফুল বিভ্রান্তির ঘোরে আচ্ছন্ন। অদৃশ্য আবরণে বাবার
অবয়ব ঢাকা , যা তার মুখোশ; কখনো সখনো মুখোশ খুলে পড়লে মূল আবেগের চমক
ফুলকে এ উপলদ্ধি দিয়েছে, ভদ্রলোক দোকান
ব্যবসায়ী হলো কী করে! ফুলের এ ভাবনায় বোধহয় ক্ষয়ের শুরু। মা কখনো বাবার এ আবেগ ধরতে
পারেনি বা আমলে নেয়নি। কিন্তু মা যে উচ্ছ্বসিত হতে পারে, তা যে কূল কিনারাহীন বয়ে যেতে চায় সে-অভিজ্ঞতা
ফুলের আছে। সলিম কলেজে ভর্তি হওয়ার সময়ের ঘটনা- ভর্তি হওয়ার টাকার অংক শুনে বাবা
বিরক্ত হয়ে বলেছিল, এক সঙ্গে এত টাকা
কোথায় পাব। সলিম বাবার নিষ্ঠুরতা নিতে না পেরে মাকে জড়িয়ে খুব কেঁদেছে, মা ওকে জড়িয়ে ধরলে সলিম প্রবল বন্যার বেগে
নিজেকে ভাসিয়ে দেয়। সলিমের ভর্তির টাকা মা দিলে বাবার মনে এ বিশ্বাস দৃঢ় হয় যে তার
জানার বাইরে স্ত্রীর অনেক কিছু আছে।
বাবার কাশির দমকের সঙ্গে বাড়ির চারিধারে নজর বুলায়। সাজানো
একটা বাড়ি কেমন যেন হয়ে গেছে। দক্ষিণের ঘরটার দিকে তাকালো। সংরক্ষিত স্মৃতি এখনো
যে মলিন হয়নি তাতে ফুল নিজেকে মনে করলো এসব অবস্থা তার জন্যেই তৈরি হয়েছে। হঠাৎ
দক্ষিণ থেকে ঠা-া বাতাস বয়ে গেল। ফুলের ¯œায়ুতন্ত্রে প্রবল
ঝাঁকুনি চলছে, ঠা-া বাতাস তার সঙ্গে মিশে ফুলের ভেতরে আমূল নাড়িয়ে
দিল। নাড়া দেয়ারই কথা, ফুটন্ত দুপুরে মার
সঙ্গে ঐ ঘরে থেকে যাকে বেরিয়ে আসতে দেখলো,
মাকে
নিয়ে ফুল যে ভাব গড়ে তুলেছিল, বাবার কাশির দমকে
বিরক্ত হওয়ার কারণে নিজেকে দুয়ো দিল। আবার এটা ভেবে খুব নিঃস্ব লাগল। সলিম একদিন
ওকে বলল আপু জানিস। কোনো কিছুর প্রতি কোনো আকর্ষণ নেই। একটা কথা ভেবে কূলকিনারা
পাই না। সবকিছু যেমন দেখছি তার বিপরীত নয়
কেন! সলিমের এ কথার ভেতর দিয়ে ফুল বুঝতে চাচ্ছিল তার চাহিদা কী। আজকের বর্তমান
সলিম কোথায় ফুল জানে না আর কেন এমন হলো তাও জানে
না। তবে আছে নেই এর মাঝে সলিমের অস্তিত্ব অবুঝ আশা জাগিয়ে রাখে। মা হঠাৎ
করে কী স্বাস্থ্যবান বিকারহীন, একজনের জন্যে মাঝে
মাঝে ঝলমলিয়ে ওঠে, তার এই অবস্থা হবে
ভাবা যায় না। মার ঘরের দিকে তাকিয়ে নীল আলোর যন্ত্রণা সইতে হলো। সলিম যখন ওকে বললো, সবকিছু যে রকম তার বিপরীত নয় কেন, ফুল আদরে ছোট ভাইটিকে জড়িয়ে ধরলো। ওর বুকের
ঢিব ঢিব শব্দে বাক্য উচ্চারিত হচ্ছিল,
সলিম
যেন তার মূল্যবোধে সাবলীল থাকে। বাবার ক্ষয়ে যাওয়ার কারণ হয়ে বিরাজ করছে শুকতারা, তারা ফুফু, ফুল তার দৃশ্যপটে এসব কিছু দেখে ওর বস্তুগত অবস্থার তরঙ্গে
চিত্র তৈরি করে। বাবার মামার মেয়ে তারা সুন্দরী এবং তরুণ বয়সে বিধবা। বাবা তাকে
ভালোবাসত কিন্তু প্রেমের বিয়ের অকাল মৃত্যু তাকে শূন্যবোধে নিক্ষেপ করে।
দাম্পত্যজীবন বিষয়ে অনীহা এত তীব্র জেগে ওঠে যে সে নিজেকে কয়েদিতে পরিণত করে। ও
বাড়িতে বাবার অবাধ যাতায়াত, বাবার সেখানে
যাওয়া এবং দৃশ্যমান উপস্থিতি বিষয়ে অন্যদের ভাবনার মাঝে যে বিরাট ফারাক তা শুধু
ফুল জানে। ফুল যে ভাবে দেখেছে, এই দেখা যে কেন
তার তৈরি হয়, ওর নিউরন ক্লান্ত
হয়ে ঝিমিয়ে পড়ে। তখন সে গলা ছেড়ে গানে মেতে উঠতে চায়। আজকে তা না হওয়ার কারণে ওর ¯œায়ুতে অন্য কিছুর কিলবিল মাঝে মাঝে প্রবল
হচ্ছে। ওর অজান্তেই ওর চোখ চলে যায় মার ঘরে নীল আলোর ডিম লাইটের দিকে। বাবার ক্ষয়ে
যাওয়ার সঙ্গে শুকতারার অবদান সবাই স্বীকার করলেও ফুল বোঝে অন্যকিছু। বাবা গভীরেই
ধীরস্থির হয়ে গেলে সব কিছুর মাঝে তাকে উদ্দেশ্যহীন আগন্তুকের মত লাগে। বাবার নীরব
হওয়া ফুলের কাছে স্পষ্ট না বলে তার প্রতিক্রিয়া হয়েছে সুবিধা হারানো হাহাকারে ভরা।
বাবাকে নিয়ে ভেসে বেড়ানো অনেক কথা ফুলকে সুস্থির হতে দেয় না। ছলিম ছিল তার একমাত্র
খেলার সাথী। পাগলাটে ধরনের ভাইটাকে নিয়ে ওদের ছিল সব স্বপ্ন। সংসারের চাপে বাবা
বলতো, সলিম কেন আয়ের চিন্তা করে
না। অথচ সে তখন কলেজের ছাত্র, অনেক সম্ভাবনাময়।
সলিমের পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেল। বেশির ভাগ সময় বাড়ির বাইরে কাটাতো, দু’চারটা যা কথা হতো শুধু মার
সঙ্গে। নূরী তখন ছোট, ফুলের অনেক কথা
মনে আছে।
সে প্রায়ই বাড়ি ফিরত না। বাবার রাগারাগিতে মার নীরব কান্না , উইয়ের ঢিবির মতো বসে থাকা, যদি সলিম আসে, দরজা বন্ধ দেখে যেন ফিরে না যায়। সবাই ঘুমিয়ে পড়লেও মার চোখে ঘুম নেই। কিন্তু কোনোদিন মায়ের কান্না
ওরা দেখেনি। ফুলের মনটাও খাঁ খাঁ করতো। হঠাৎ সলিম এসে হাজির যখন, হয়ত তখন বাবা বাড়ির বাইরে, মার আভাময় মুখটা মলিন করে সলিম আর ফিরলো না।
দু’বোনের খুব মিল, নূরী জানিয়েছে
একটা ছেলে তাকে পছন্দ করে। ফুলের কাছে কোনো কথা সে লুকিয়ে রাখতে পারে না। নূরীর
আদুরী ভাবটা এখনো আছে। বাড়িটা আস্তে আস্তে ঝিমিয়ে পড়ছে। থেকে থেকে বাবার কাশির
শব্দ শোনা যাচ্ছে। মার ঘরে নীল আলো তীব্র ঠিকরে পড়েছে উঠোনে। আকাশ ঢাকনা খুলে
চাঁদের আলো ঢেলে দিচ্ছে। গাছগুলো জবুথবু দাঁড়িয়ে আছে। নূরী বারান্দায়। ফুল সেই যে
গান থামিয়েছে, ঠাঁয় বসে আছে।
নূরী তার দিকে এগিয়ে গেল। ফুলের মুখ থমথমে। নূরী ফিরে এলো। সব কিছু চুপচাপ। ফুল
গেটের কাছে গিয়ে কী যেন দেখল। পেয়ারা গাছের নিচে চাপ কলটা একা দাঁড়িয়ে আছে। ফুলের
বস্তু পরিবেশ ধসে যায়, সুলতান দাঁড়িয়ে, ছোট ভাইয়ের বন্ধু...
ফুল গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে ওঠে। নূরী চমকে গেল। ফুল চিৎকার
করছে, নীল আলো নীল আলো নীল নীল
নীল...। বাবা কাশতে কাশতে ফুলের কাছে এসে দেখলো, সে চেতনা হারিয়েছে।
নূরী নীল আলোর ডিম লাইটটা ভেঙে ফেলল।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
বিষয় : গল্প নীল আলো ডিমদতোগঊ কেতু মণ্ডল
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh