প্রত্যাবর্তন

আজকের দিনটা যদিও বেশ রৌদ্রোজ্জ্বল, তবুও কেন জানি না ইভানের মনটা আজ ভালো নেই। আকাশের কোণে কোনো মেঘের অস্তিত্ব না থাকলেও, ইভানের মনের আকাশে মেঘের ঘনঘটা। বৃষ্টি নামার আগে যেমনটি হয় ঠিক তেমনটি। ইভান বসে আছে ঝিলের পাড়ে। এই ঝিলটা তার বড্ড প্রিয়। যখনই তার মন খারাপ হয় তখনই সে চলে আসে এখানে; কিন্তু এখন খুব একটা আসা হয়ে ওঠে না তার এখানটায়। গত সাতটি বছর ধরে সে আছে প্রবাসে। পড়াশোনার জন্য সে পাড়ি জমিয়েছিল সুদূর তুরস্কে।

তখন ২০১২ সালের আগস্ট মাস। অল্প কিছু দিনের ব্যবধানে ইভান বেশ কিছু সাফল্য অর্জন করেছিল। একদিকে জিসিই এ লেভেলে সন্তোষজনক ফলাফল, অন্যদিকে কানাডার স্বনামধন্য দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে চান্স পেয়ে যাওয়া। এর পরপরই তুরস্কের একটি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়েও একই বিষয়ে চান্স পেয়ে যায় সে। 

ছোটবেলা থেকেই ইভানের করা শত পরিশ্রমের স্বীকৃতি যেন এইগুলো। স্কুলজীবনের অক্লান্ত অধ্যাবসায়, ও লেভেল, এ লেভেলের ভালো রেজাল্ট, বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রম, বিভিন্ন পুরস্কার, শিক্ষাবৃত্তি এসব কিছুর পূর্ণতা প্রাপ্তি ঘটল যেন এতদিনে। বিদেশে উচ্চশিক্ষা অর্জনের যে স্বপ্ন সে দেখেছিল ছোটবেলা থেকে তারই দ্বার যেন উন্মোচিত হলো এতদিনে। এতগুলো প্রাপ্তি যেন ওর আত্মবিশ্বাস আরও অনেক অনেক গুণ বাড়িয়ে দিল। 

তিন তিনটে বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার পর ইভান ঠিক করল সে তুরস্কের ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ইঞ্জিনিয়ারিং পড়বে। কারণ ওয়ার্ল্ড র‌্যাঙ্কিংয়ে প্রথম ১০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলো তুরস্কের ওই বিশ্ববিদ্যালয়। সে ভেবেছিল এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে যাতে করে সত্যিকার অর্থে সে কিছু শিখতে পারে, যেখান থেকে অর্জিত জ্ঞান দিয়ে সে দেশের কল্যাণে, মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারে। তাই ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করার পর পরই সে ফিরে আসে দেশের টানে, দেশের মানুষের টানে। 

কিন্তু জীবনতরী সর্বদা একদিকে প্রবাহিত হয় না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জীবনের বাঁকও পরিবর্তিত হয়। স্বপ্নীল সময়ের পর এবার বাস্তবতার সম্মুখীন হবার পালা ইভানের। দেশে ফেরার পর বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য হন্যে হয়ে ঘুরেছে ইভান। বিদেশ থেকে যথেষ্ট ভালো সিজিপিএসহ ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করার পরও চাকরিক্ষেত্রে সুবিধা করতে পারল না সে। কারণ বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানেই হয় উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের পরিচিতির মাধ্যমে অথবা অর্থের বিনিময়ে চাকরি প্রাপ্তি ঘটে। যেহেতু ইভানের এর একটিও নেই তাই ইভানের চাকরিও হচ্ছে না। আজও ইভানের একটি চাকরির ইন্টারভিউ ছিল; কিন্তু আজও ভিন্ন কোনো ঘটনা ঘটেনি। আশাহত হয়ে ফিরতে হয়েছে ইভানকে। তাইতো আজ এতদিন পর সে আবার এসে বসলো তার প্রিয় ঝিলের পাড়ে। 

ইভানের ইদানীং মনে হয়, হয়তো দেশে ফিরে আসার সিদ্ধান্তটা ভুল ছিল। হয়তো ওরও উচিত ছিল অন্য বন্ধুদের মতোন বিদেশেই সেটেল করে যাওয়া। এমনই আকাশ-পাতাল ভাবনায় ইভান যখন ডুবে আছে, ঠিক তখনই তার চোখ পড়ে যায় দূরের একটি গাছে উঠতে যাওয়া কাঠবিড়ালির দিকে। কাঠবিড়ালিটি গাছে উঠবার খুব চেষ্টা করছে। যতবারই সে উঠতে যাচ্ছে গাছটায় ততবারই সে পিছলে পড়ে যাচ্ছে, কারণ একটি পায়ে সে বোধ করি আঘাত পেয়েছে। তাই আঘাত পাওয়া পা নিয়ে খুব বেশি সুবিধে করতে পারছে না। তবুও সে দমবার পাত্র নয়। বারবার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বারবার চেষ্টার পর শেষ পর্যন্ত গাছে উঠতে পারল সে। তৎক্ষণাৎ ওর মনে পড়ে গেল রবার্ট দ্য ব্রুসের ঘটনাটি। যেখানে রবার্ট ব্রুসের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছিল একটি মাকড়সা। 

ইভান ঠিক করে নিয়েছে সে কি করবে। রবার্ট ব্রুস যখন হার মানেনি, তখন সে কি করে হার মেনে নেবে? উঠে দাঁড়াল ইভান। নতুন উদ্যমে, নতুন সংকল্পে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //