মরদেখাইয়ের গোঁফ ও স্ত্রীর বিড়াল

এক
তেল আবিবের হাজারো মানুষের মতো মরদেখাইও একজন সাদাসিধে মানুষ। যদিও সে মনে করে তার মতো সাদামাটা জীবন কম লোকই যাপন করে। তার এই সহজ ও আরামদায়ক জীবনযাপন সে উপভোগ করে। কাউকে যেমন কষ্ট দেয় না, তেমনি কারও কাছ থেকে কষ্ট পায়ও না। কাউকে সে বিরক্ত করে না। এ জন্য প্রতিবেশীরাও মরদেখাইকে পছন্দ করে। 

মরদেখাই সেনাবাহিনিতে চাকরি করত। অবসরের পরও নিজেকে সৈনিক হিসেবে ভাবতেই পছন্দ করে। আর ভাববেই বা না কেন, সে যে এখনো রিজার্ভ সৈন্য। এরপর সাধারণ নাগরিক হিসেবে জীবিকা নির্বাহের জন্য সে নানা ধরনের চাকরি আর ছোটখাটো ব্যবসার চেষ্টা করেছে। বেশ কয়েক বছর মরদেখাই একটি আসবাব তৈরির কারখানায় কাজ করেছে আর সে সময় তার স্ত্রী স্টেলা একটি রেস্টুরেস্টে খাবার পরিবেশনের কাজ করেছে। তাদের দু’জনের আয়ে পরিবারে সম্পদের পাহাড় না গড়ে উঠলেও, তারা তাদের ছেলে-মেয়েকে বড় করে তুলতে পেরেছে। ছেলে পাড়ায় পরিচিত মুখ। পাশের বাড়ির এক মেয়েকে বিয়ে করে সংসার পেতেছে। এখন শহরের আরেক প্রান্তে বাস করছে। আর মেয়ে পরিবার ছেড়ে তার ছেলে বন্ধুর সঙ্গে ছোট একটি এপার্টমেন্টে উঠেছে। 

ছেলে-মেয়ে বাড়ি ছাড়ার পর মরদেখাই স্টেলাকে নিয়ে নির্বিঘ্নে জীবন কাটানোর প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। দু’জনেরই বয়স পঞ্চাশের ওপর। অবসরে এখন। জীবনের শেষ দিনগুলো শান্তি আর নিরাপত্তায় কাটুক, এটি তাদের অধিকার। যদিও মরদেখাইয়ের মতো স্টেলা মাঝে মধ্যে বিহ্বল হয়ে পড়ে। 

তাদের নতুন জীবন তারা সাজাতে শুরু করে। স্টেলা এপার্টমেন্টে তিনটি বিড়াল নিয়ে আসে। দুটি বাদামি আর একটি কালো রঙের। কালোটার চোখ দুটি তীক্ষ্ণ। শিকার করার অবিশ্বাস্য ক্ষমতার জন্য এ বিড়ালটি স্টেলার বিশেষ পছন্দ। আর এ দিকে মরদেখাই তার গোঁফ মুখের নিচের ‘সেক্টর’ পর্যন্ত বাড়াতে থাকে। (সেনাবাহিনীতে ব্যবহার করা শব্দ ব্যবহার করতে মরদেখাই সব সময় পছন্দ করে।)

প্রথম দিকে স্ত্রীর আনা বিড়ালগুলো নিয়ে মরদেখাইয়ের কোনো অভিযোগ ছিল না। জীবনের কোনো এক বাঁকে এটি একটি অপরিহার্য অংশ। নইলে সব কিছু এক ঘেয়েমি হয়ে যেত। আর স্বামীর গোঁফ নিয়ে প্রথমদিকে স্টেলারও তেমন মাথাব্যথা ছিল না। বরং এটিকে ইসরায়েল, এমনি কি তাবৎ দুনিয়ার সৈনিক আর কমান্ডিং অফিসাররা এ প্রথা মেনে চলে, এমনটিই ভেবে নিয়েছিল সে। সামরিক বাহিনীর লোকেরা তাদের মোটা ও লম্বা গোঁফ দিয়ে নিজেদের অন্যদের থেকে আলাদা করে। 

যাই হোক, মরদেখাইয়ের গোঁফের অবাধ্য বেড়ে ওঠা তার কাছে প্রথম প্রথম অসন্তুষ্টির কারণ হওয়া শুরু হলো। পরে তা মানসিক যন্ত্রণা আর বিহ্বলতার কারণ হয়ে দাঁড়াল। দু’অংশের গোঁফকে দুটি আলাদা অস্তিত্ব হিসেবে ভাবতে শুরু করল- বাম আর ডান গোঁফ। গভীর রাতে ঘুম থেকে জেগে স্টেলা হয়তো দেখলো স্বামী তার পাশে শুয়ে গভীর ঘুমে নিমগ্ন। প্রচণ্ড বিরক্ত হয়ে খেয়াল করল মরদেখাইয়ের ডান দিকের গোঁফ স্টেলার নাকের একেবারে কাছাকাছি। সে হয়তো সেটা পাকিয়ে তার কাছ থেকে সরিয়ে দেয় বা কম্বলের তলায় ঢুকিয়ে দেয়; কিন্তু তা দ্রুত আগের জায়গায় ফেরত চলে আসে আর স্টেলার নাক বরাবর আবার অবস্থান করে। ফলে সে ওটি থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে মরদেখাইকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলতে বাধ্য করে। মরদেখাই হয়তো কখনো বাম দিক ফিরে শোয়; কিন্তু তখন তার ডান দিকের সুচালো গোঁফ মরুভূমির গাছের মতো বিছানায় ছড়িয়ে থাকে; কিন্তু ও এক পাশ হয়ে বেশিক্ষণ শুয়ে থাকতে পারে না। তাই স্টেলার নাকে নিশ্চিতভাবেই রাতভর উৎপাত চলতেই থাকে। 

ভোরের দিকে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে যখন স্টেলার বিড়ালগুলো বিছানায় ঝাঁপিয়ে পড়ে। আর অতি আরামে তারা ঘড় ঘড় করে ঘুমোতে থাকে। মরদেখাই কখনো কখনো বিড়ালগুলো থেকে দূরে সরে যায় আর অনুযোগ করে বিড়ালগুলো তার সকালের মূল্যবান ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। স্টেলা স্বামীর এ অভিযোগ শুনতে পছন্দ করে না। 

‘তুমি এখন আর বাড়িতে থাকতে পছন্দ করো না’, স্টেলা অনুযোগ করে। মরদেখাইও মনে করে স্ত্রী তার কাছ থেকে দূরে থাকতে চায়। বিশেষ করে গোঁফ থেকে দূরে থাকতে চায়- যে গোঁফ পুরো তেল আবিব না হলেও এ এলাকার মধ্যে সব চেয়ে বড়। নাস্তার সময় স্টেলা স্বামীকে বলে, ‘নাস্তার জন্য আসো- সঙ্গে তোমার গোঁফকেও এনো।’ মরদেখাই স্ত্রীর এ খোঁচা সহ্য করে; কিন্তু দিনের পর দিন স্টেলার এ ধরনের মশকরা তার কাছে এখন বিদ্রুপ বলে মনে হয়- যা সে ইচ্ছে করেই করে। এত কিছুর পর তার গোঁফ যদি দশ ফুট লম্বাও হয় তাও সে আর কাটবে না। মনে মনে সে প্রতিজ্ঞা করে। 

দুই
মরদেখাই আর স্টেলা রাতে খাবার টেবিলে মুখোমুখি বসা। এক পাশে স্টেলা আর তার তিন বিড়াল। অন্যপাশে মরদেখাই আর তার গোঁফ। যেন টেবিলে দুটি আলাদা পক্ষ। স্টেলা গভীর মনোযোগ দিয়ে গোঁফ পর্যবেক্ষণ করে। ডান ও বাম দিকে এমনভাবে গোঁফ ছড়িয়ে রয়েছে যেন তা উড়োজাহাজের একেকটা পাখা। সহসা সে বলে ওঠে, ‘আমি যেন প্লেনের মধ্যে বসে আছি।’ মরদেখাই হেসে ওঠে। স্ত্রীর এ ধরনের মন্তব্যকে সহজভাবে রসিকতা হিসেবে ভেবে নেওয়ার চেষ্টা করে; কিন্তু অন্তরের গভীর থেকে অনুভব করে স্টেলা তাকে ঠাট্টা করেই এ মন্তব্য করেছে। 

মরদেখাইও স্ত্রীর অনেক ভুল খুঁজে পায়। সে সহজেই বিড়ালগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনতে পারে; কিন্তু তা থেকে সে নিজেকে বিরত রাখে। এটি এক ধরনের শ্রদ্ধা আবার সে স্ত্রীকে ক্ষেপাতেও চায় না। বাদামি বিড়ালটা পা দিয়ে তীক্ষ খোঁচা দেয়, তীব্র স্বরে ঘড়ঘড় শব্দ করে, মুখ দিয়ে লালা বের হয়; কিন্তু তার খাওয়ার ইচ্ছে কমে না আদৌ। মরদেখাইয়ের থালার কাছাকাছি হঠাৎ কালো বিড়ালটি টেবিলের ওপর লাফিয়ে উঠে আর বক্রোক্তি করে তাকায়। আর লেজটি এমনভাবে ওপরের দিকে উঁচু করে ধরে যে, ওটিকে এন্টিনা বলে ভ্রম হয়। মরদেখাই সংকুচিত হয়ে যায়। দেখে মনে হয়, বিড়ালটি যেন কোনো নিউজ বুলেটিন পড়ার জন্য আগ মুহূর্তে তৈরি হচ্ছে! 

মরদেখাই খবর পাঠের এ দৃশ্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। সে এ ধরনের দৃশ্য কখনই সহ্য করতে পারে না। খাওয়া বন্ধ করে, তার বদলে চায়ে চুমুক দেয়। গতকাল তেল আবিবে সামরিক অভিযানের বিস্তারিত পড়ে। পত্রিকাটিকে সে কিছুটা ভাঁজ করে হঠাৎই স্ত্রীকে বলে ওঠে:

‘মিলিটারি ডিউটি করার জন্য চুক্তি করতে যাচ্ছি।’ 

‘এই বয়সে? তোমাকে ওরা এ বয়সে নেবে না।’

‘আমি এই বয়সের অনেককে জানি, যারা চেকপয়েন্টে স্বেচ্ছাসেবা দেয়। তারা সেখানে গেছে।’ 

স্টেলা জানে মরদেখাইয়ের তেজ কমে এসেছে। তাই তাকে বরং উৎসাহ দেওয়া দরকার। ওর হাতে এখন অফুরন্ত সময়। একা একা সে আওড়ায়, ‘অন্তত বাড়ির বাইরে তো থাকবে কিছু সময়ের জন্য।’ 

মরদেখাই কখনো তাকে বলেনি যে বাড়ির পরিবেশে সে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। বরং তার বদলে সে শান্তিবাদী ইয়োনি বেইলিন আর পৃথক রাষ্ট্রের ধারণা নিয়ে তার মত জানায়। 

‘এই বেইলিনটা দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে লেগেছে। আমাদের দায়িত্ব তার এই ধ্বংসাত্মক প্রচেষ্টা প্রতিহত করে দেশটিকে বাঁচানো।’ 

বামপন্থী লেখকদের ওপর সে বেজায় ক্ষ্যাপা। এরাই ইসরায়েলের মানুষের মনকে বিষিয়ে তুলছে। ইয়েডিয়ত এ প্রকাশিত এক প্রবন্ধের কথা স্ত্রীকে জানায়। যে প্রবন্ধে লেখক যুক্তি দিয়েছে, যদি এভাবে ‘দখলদারিত্ব’ চলতে থাকে তবে সরকার সিফিলিস রোগে আক্রান্ত হবে! 

তিন
মরদেখাই মিলিটারি পোশাক পরে। এম-১৬ রাইফেল হাতে নিয়ে কালানদিয়া চেকপয়েন্টে রওয়া হয়। পুনরায় ফিরে পাওয়া হেলমেট মাথায় দিয়ে সেখানে সে সিমেন্টের দেয়ালের পেছনে আক্রমণের ভঙ্গিতে হাঁটু গেড়ে বসে। তার মুখ, গোঁফ ও কাঁধের ওপরের অংশ দেয়ালের ওপার থেকে দেখা যায়।

এবারই মরদেখাই জীবনে প্রথমবারের মতো ফিলিস্তিনিদের মুখোমুখি। তীক্ষ্ণ ভাবে তাদের সে পরখ করতে থাকে। সে লক্ষ্য করল পুরো দলটিই নিশ্চুপ আর তাদের উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছে। চেকপোস্টের সামনে তারা লম্বা লাইনে দাঁড়ানো। সবাই চেকপোস্ট পার হওয়ার সুযোগ খুঁজছে। মরদেখাই সবাইকে ঠিকঠাক লাইনে দাঁড় করাল। তারা যেন নানারকমের মানুষ মিলে এক ব্যাগ মানবতা। নানা বয়সের পুরুষ আর বয়স্ক নারী- যারা কোনোরকমে দাঁড়িয়ে আছে। যুবতীরা জিন্সের প্যান্ট পরা, যা তাদের শরীরের সঙ্গে টাইট হয়ে লেগে আছে। অন্য মেয়েরা গায়ে ঐতিহ্যবাহী লম্বা জালাবি আর মাথায় সাদা অথবা রঙিন স্কার্ফ পরা। 

নানা রকমের চিন্তা মরদেখাইয়ের মাথায় আছড়ে পড়তে থাকে। নিরস্ত্র ও প্রতিরোধহীন মানুষগুলোর প্রতি তার কণ্ঠে প্রায় সহানুভূতির স্বর বেরিয়ে আসার উপক্রম হয়। যারা কেবল তার হাতের ইশারার জন্য অপেক্ষা করছে; কিন্তু দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে যা আর সব বিবেচনার উর্ধ্বে, তার এ ধরনের অতি স্পর্শকাতর আবেগ মন থেকে উধাও করে দেয়। কারণ শেষ বিচারে এ মানুষগুলো তো ইসরায়েলের শত্রু! 

মনের এ ধরনের অদ্ভুত অনুভূতি দূর করার জন্য, মরদেখাই মন থেকে সব শিশুকে বের করে দেয়। সঙ্গে বয়স্ক পুরুষ ও নারীও। তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি যুবকদের প্রতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, যারা রাষ্ট্রের ভয়ংকর শত্রু বা ক্লাশিন। তারাই বিপদের উৎস। সব সমস্যার মূল। তারা জঙ্গি। কোমরে বিস্ফোরক বেল্ট বা পারকা জামার নিচে মেশিনগান লুকিয়ে রাখে আর ইসরায়েলিদের মধ্যে মৃত্যু বপন করে। 

অপেক্ষমান জনতার উদ্দেশে মরদেখাই তার প্রথম বাক্য উচ্চারণ করে, ‘কোনো গণ্ডগোল না। হৈচৈ নিষিদ্ধ এখানে। তোমরা অন্যায়ভাবে সীমা লঙ্ঘন করছো।’ 

জনতার দিক থেকে পরিষ্কার কোনো সাড়া পাওয়া গেল না। কেবল কিছু অস্পষ্ট গুঞ্জন শোনা যায়। চেকপয়েন্ট পার হতে ফিলিস্তিনিদের কোনো ধরনের দ্রুততা ইসরায়েলের জন্য ভয়ংকর বিপদের কারণ হতে পারে! মরদেখাইয়ের ঠিক সামনের চেকপয়েন্ট অবশ্য ইলেক্ট্রিক গেটে তল্লাশির মাধ্যমে তাদের পার হতে হয়। তাই কারও পক্ষে বিস্ফোরক বা আগ্নেয়াস্ত্র পাচার করার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। 

কিন্তু চেকপয়েন্ট তারা কোনো ধরনের বাধাহীন ও নির্বিঘ্নে পার হয়ে গেলে তাদের মাঝে এক ধরনের ভুল ধারণা তৈরি হতে পারে। তারা মনে করতে পারে রাষ্ট্র অনেক ঢিলা হয়ে গেছে। যার ফলে ফিলিস্তিনিরা ঔদ্ধত্য হয়ে পড়তে পারে। এতে তারা রাষ্ট্র ও তার নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। 

সবচেয়ে বড় কথা হলো দায়িত্বের প্রথম দিনে মরদেখাই চায় না কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা আর তার কাজের ব্যর্থতা অন্যের সামনে চলে আসুক। তার অবহেলার কারণে কোনো সন্দেহভাজন চেকপোস্ট পার হলে অন্য সৈন্যরা কী ভাববে? তার সম্পর্কে স্টেলাই বা কী ভাববে? 

মরদেখাই স্বভাবে শান্ত প্রকৃতির হলেও প্রয়োজনে সে কড়া সৈনিক বনে যেতে পারে। সৈনিক হিসেবে যতগুলো যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে, সব যুদ্ধে সে তা প্রমাণ করেছে। তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ফিলিস্তিনিরা যে সত্যিই নিষ্পাপ আর সন্দেহের ঊর্ধ্বে তার নিশ্চয়তা কে দিতে পারে? ব্যাপারটি মরদেখাইয়ের আয়ত্তে থাকলে সে চেকপয়েন্ট বন্ধ করে দিতো এবং মিনিটে মিনিটে বাড়তে থাকা মানুষগুলো যদি তার দিকে আসতে থাকত তবে অপেক্ষমানদের সে বলত:

‘না! ফিরে যাও! ফিরে যাও! লেইক ! কেউ এ দিক দিয়ে পার হতে পারবে না!’ 

সবকিছু মরদেখাইয়ের নিয়ন্ত্রণে না থাকলেও, সে এমন ভাবভঙ্গি করছিল যে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ভয়ংকর কেউ ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে, সে তা ভুল করে দেবে। সে তো সর্বজ্ঞ ঈশ্বর নয়। কীভাবে সে জানবে ফিলিস্তিনিদের মনের গোপন খবর? 

এ রকম পরিস্থিতিতে সুস্থির আর ঠাণ্ডা মাথার মানুষই বিজয়ী হয়। মরদেখাই লক্ষ্য করল এক দঙ্গল মানুষ চেকপোস্টের কাছে জড়ো হয়েছে। মনে হচ্ছে এভাবে দাঁড় করে রাখার জন্য তারা প্রতিবাদ শুরু করেছে। 

‘শেকেট। চুপ করো সবাই। আমি হই হট্টোগোল পছন্দ করি না! তোমরা অন্যায়ভাবে সীমা লঙ্ঘন করছো।’ 

সবাই কথা বলতে থাকায় গুঞ্জন শোরগোলে পরিণত হয়ে যায়। ইলেক্ট্রিক ডিটেকশন গেটের কাছে দাঁড়ানো সৈন্যকে মরদেখাই সহসা ইঙ্গিত করল। এ ইঙ্গিত পরস্পরের চিরচেনা। সৈন্যটা লাফ দিয়ে এসে গেট বন্ধ করে দিল। উপস্থিত ফিলিস্তিনিরা বিশৃঙ্খলা শুরু করে দিল। এখন তাদের মাঝে অবিশ্বাস জন্ম নিয়েছে। এর মাঝে মরদেখাই আবারও তার আদেশ ঘোষণা করল, ‘চুপ কর সবাই। তোমাদের পার হতে দেওয়া হবে। বুঝেছো?’ 

ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ভাগ দেখা গেল। এক পক্ষ প্রস্তাব করল তারা চুপচাপ থাকবে; কিন্তু অন্যপক্ষ চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দিল এবং উত্তেজিত বক্তব্য দিতে থাকল; কিন্তু শেষে প্রথম মতেরই জয় হলো। 

চেকপয়েন্ট বন্ধ হওয়ায় মরদেখাইয়ের কল্পনা করার সুযোগ সৃষ্টি হয়। সে দিবাস্বপ্ন দেখা শুরু করে। এ চিন্তা তার স্নায়ুচাপ উপশম করে। আর এর সঙ্গে সে তার নিজ জীবন নিয়ে ভাবনার ফুরসৎ পায়। সে নিজের কামনার কল্পনার পাখা উড়ায়। গোঁফে তা দিতে দিতে নারীর শরীর কল্পনা করা শুরু করে। সে গভীর কামনা বুকে নিয়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা নারীদের অবলোকন করতে থাকে। 

সে নিজে নিজেই বলে ওঠে, ‘ফিলিস্তিনিদের মাঝে অনেক সুন্দরী মেয়ে আছে।’ কল্পনায় দ্রুত সে তেল আবিবের মেয়েদের সঙ্গে এই ফিলিস্তিনি মেয়েদের তুলনা করে। শেষে সিদ্ধান্তে আসে, ‘তেল আবিবের মেয়েরা বেশি সুন্দরী।’ এসব চিন্তার মাঝে তার মন বিষাদে ভরে যায়। তেল আবিবের কিছু মেয়ে বেপরোয়া। সে ডিজেনগফ স্ট্রিটে এক সুন্দরী মেয়েকে এক যুবকের হাত ধরে চলতে দেখেছে। ওই যুবক ‘বৈধ আরব’ বা ‘রাষ্ট্রস্বীকৃত আরব’। মরদেখাইয়ের মতে, ইসরায়েলি আরব। ওই যুবককে সে আক্রমণ করেছিল। যদি না পাশের এক পথচারী বাধা দিত, তবে সে যুবকটিকে মেরেই ফেলত।

কোনো ইসরায়েলি মেয়ে আরব যুবকের হাত ধরে চলুক, এটি মরদেখাই কোনোভাবেই চায় না। ‘জালিকা ফল ঘিউর হানাস’ অশুদ্ধ আরবিতে বলে ওঠে যার মানে- ‘এটি ঠিক না।’ 

‘ইহুদি মেয়েরা যাতে আরব ছেলেদের বিয়ে না করতে পারে তার জন্য সরকারের আইন প্রণয়ন করা উচিত।’ সে চিন্তা করে। মরদেখাই এটি ভেবে খুব আহত হয় যে, রাষ্ট্র এ মর্মে ঠিক কাজটি করছে না। সব ধরনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের আরও কঠোর আইন পাস করা উচিত। মেলাইখিয়া আরবদের খাবার। এই মেলাইখিয়া বন্ধের জন্য আইন পাস করা উচিত। সবুজ রঙের হালকা এ খাবার আরবদের প্রিয়। আর্মির কাছ থেকে অনুমতি ছাড়া এটি তাদের রান্না করতে দেওয়া উচিত না। মরদেখাই কোনো দিনই একটি কৌতুক মাথা থেকে বের করতে পারে না। এটি আরবের একটি পত্রিকার মাধ্যমে ইসরায়েলি সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছিল। কৌতুকটি আরব প্রেসের কোনো এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বলেছিল। মরদেখাই নিশ্চিত যে, ওটি কোনো নিছক কৌতুক না। আসলে এর আড়ালে আছে আরবদের দুষ্টু বুদ্ধি। কৌতুকে বলা হয়েছে, আরবদের ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধের জন্য কোনো অস্ত্রের প্রয়োজন হয় না। তার জন্য দরকার কোটি আরবের জর্ডান নদীর তীরে জড়ো হওয়া। তারপর তাদের এক সপ্তাহ খাবার বন্ধ করা। এরপর গুজব ছড়ানো যে, তেল আবিবে এ মুহূর্তে মেলাইখিয়া রান্না হচ্ছে। তখন দেখা যাবে একসঙ্গে কোটি মানুষ তেল আবিবের দিকে রওনা দিবে। ইসরায়েল তাদের ওপর অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে হামলা করবে- যার ফলে অর্ধেক আরব মারা যাবে। আর বাকি অর্ধেক রয়ে যাবে। আর ইসরায়েলের সংসদ নেসেটে ভোট দেবে এবং তা দখল নেবে। এভাবেই একদিন তারা ইসরায়েলের ক্ষমতা দখল নেবে! 

এ চিন্তা মরদেখাইকে ভাবিয়ে তোলে। রাষ্ট্রের একটি মহান দায়িত্ব যে, যখন তেল আবিবে মেলাইখা রান্না হয়, তখন সীমান্তে কড়া নজর রাখা। আর এ জন্য তেল আবিবে হামবার্গার রান্না হলেও আরবদের গভীরভাবে পর্যবেক্ষণে রাখা উচিত। এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই যে, আরবরা হামবার্গার পছন্দ করে না!

এক বয়োবৃদ্ধ নারীর কণ্ঠ শুনে মরদেখাইয়ের দিবাস্বপ্ন ভাঙে। সেই নারী ক্রসিং পয়েন্টের কাছাকাছি চলে আসে। 

‘আমরা কি চেকপয়েন্টেই রাত কাটিয়ে দেব? কি করব আমরা? আপনাদের কাছ থেকে এ কী ব্যবহার পাচ্ছি আমরা?’ 

যেখান থেকে এসেছে, সেখানে ফেরত যেতে বৃদ্ধাকে আদেশ করে মরদেখাই; কিন্তু সে দৃঢ়তার সঙ্গে সেখানেই ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকে। আরেক সৈন্য যে মরদেখাইয়ের বন্ধু সে তাকে জোরে ধাক্কা দেয়। ধাক্কা খেয়ে সে গর্জন করে ওঠে। চিৎকার দেয়। দু’হাতের মাংসপেশি দেখিয়ে সৈনিকটিকে শাসায়। তাকে পার হতে দেওয়া ছাড়া তাদের আর উপায় থাকে না। 

সে সৈনিকটাকে হাত নাড়িয়ে সংকেত দিল, যাতে বৃদ্ধা পার হয়ে যেতে পারে। এরপর অতি সতর্কতার সঙ্গে অন্যান্য ফিলিস্তিনিদের তল্লাসি করে পার হতে দেয়। 

শ্রান্তি দূর করার জন্য মরদেখাইয়ের বিশ্রাম প্রয়োজন। সে ফিলিস্তিনিদের শান্ত থাকা ও অপেক্ষা করার আদেশ করল। আর এই সুযোগে সে তার গোঁফ মোচড়াতে মোচড়াতে দিবাস্বপ্নে বিভোর হলো। স্টেলার কথা মনে পড়লো তার। সঙ্গে সঙ্গে শরীরে এক ধরনের উষ্ণ অনুভূতি খেলে গেল। সে হিসাব করে দেখে তিন মাস হয়ে গেল সে স্টেলাকে কাছে পায়নি। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল, আজ রাতে সে স্টেলার কাছে গিয়ে তাকে অবাক করে দেবে- যা স্টেলা কল্পনাও করতে পারবে না। সে তাকে বলবে সেনাবাহিনিতে কাজ করাই আসল জীবন। কারণ এই রাষ্ট্রের জন্মই হয়েছে সেনাবাহিনির কল্যাণে। এটি এক ধরনের জীবন্ত শেকড়ের মতো। 

এ সব সুখকর কল্পনায় প্রলুব্ধ হয়ে আবার চেকপয়েন্টে অতিরিক্ত মানুষের চাপের কারণে আরেক ব্যাচ মানুষকে চেকপয়েন্ট পার হওয়ার সুযোগ করে দেয়। (‘তারা নিজেরা দাবি করে অল্প জনসংখ্যার জাতি; তবে আমি বাজি ধরে বলতে পারি, এদের সংখ্যা ভবিষ্যতে চীন দেশের চীনাদের থেকেও বেশি হবে।’- নিজে নিজে আওড়ায়)। মরদেখাইয়ের দায়িত্ব পালন শেষ না হওয়া পর্যন্ত অসহ্য ধীরগতিতে চেকপয়েন্টে মানুষ পার হয়। দায়িত্ব পালন শেষে মরদেখাই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। 

বাড়িতে স্টেলা দু’হাত বাড়িয়ে মরদেখাইকে সাদরে গ্রহণ করে। নিজ চোখে দেখা অসংলগ্ন ফিলিস্তিনিদের গল্প শোনায় সে। এসব শুনে স্টেলা মৃদু হেসে ওঠে। আবার মাঝে মাঝে তাদের জন্য দুঃখিতও হয়। একেকবার তাদের প্রতি ঘৃণায় তার বুক ভরে ওঠে। তার এই অনুভূতিকে নানা রঙে রাঙিয়ে দেয় তার স্বামী। মরদেখাই তাকে শোয়ার ঘরের দিকে নিয়ে যায় আর বলে, ‘আজ রাতে তোমার ওপর বোমাবর্ষণ হবে।’ 

মরদেখাই কিছু সময়ের জন্য নীরব থেকে বোঝার চেষ্টা করে তার কথার প্রভাব স্ত্রীর ওপর পড়েছে কিনা। কোনো প্রতিক্রিয়া টের না পেয়ে সে বলা শুরু করে, ‘স্নিগ্ধ আলোয় আজ তোমাকে আদর করব।’

স্টেলার চোখে মুখে বিরক্তি ফুটে উঠে। সে বলে উঠে, ‘সেই পুরাতন অভিধানেই ফেরত গেছ তুমি। তোমার না এসব ভুলে যাবার কথা?’ 

মরদেখাই দাবি করে, ‘আমি এ ধরনের শব্দ ব্যবহার থেকে কীভাবে বিরত থাকব? এসব শব্দ তো আমাকে উত্তেজিত করে তোলে!’ 

কিন্তু স্টেলা উত্তর করে, ‘আমি কোনো দেয়াল নই। তুমি যদি বোমাবর্ষণ করতে চাও, তোমার সামনে তো দেয়াল আছে সেখানে মারো। তোমার নতুন শক্তি দিয়ে মারো।’ 

মরদেখাই নিশ্চুপ হয়ে যায়। 

সকালে মরদেখাই চেকপয়েন্টে ফেরত আসে। প্রথম দিনের তুলনায় সে আজ আরও বেশি নজরদারির সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে থাকে। তার ধৈর্যচ্যুতির আগ পর্যন্ত ফিলিস্তিনিদের অপদস্ত করতে থাকে। 

সে খেয়াল করে যখনই সে তার গোঁফে তা দেয়, তখনই ফিলিস্তিনিরা মুখে এক অদ্ভুত শব্দ করতে থাকে। প্রথমে সেভাবে এটি হয়তো দৈব ঘটনা। পুরাপুরি অনিচ্ছাকৃত; কিন্তু তাদের মুখের ভাবভঙ্গি দেখে তার মনে সন্দেহ বাড়তে থাকে। সে বারবার চিৎকার করতে থাকে। ‘শেকেট! শেকেট! (থামো! থামো!) 

তারা চুপ করে যায়। এই সুযোগে মরদেখাই গোঁফে তা দিতে দিতে সুন্দরী মেয়েদের আদর করার কথা চিন্তা করতে থাকে; কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার তার কানে সেই অদ্ভুত শব্দ ভেসে আসে; কিন্তু এটি তার কাছে পরিষ্কার না যে, এ শব্দ কোথা থেকে বা কার কাছ থেকে আসছে। তবে এটি এখন তার কাছে পরিষ্কার যে, অন্য যে কারণই থাকুক না কেন, তাকে এবং তার গোঁফকে নিয়ে তারা এ শব্দ করছে! এ মুহূর্তে তার কী-ই বা করার আছে? সে কি তবে সবার মুখের ওপর চেকপয়েন্ট বন্ধ করে দেবে? একবারে সবার জন্য বন্ধ করবে! সেটি তো সম্ভব না! ওপর থেকে নির্দেশ আছে তাদের চেকপয়েন্ট পার হতে দিতে হবে। 

তবে কি যারা এই অদ্ভুত শব্দ করছে তাদের গ্রেফতার করবে? (তারা সম্ভবত উঠতি বয়সী হবে)। এই অদ্ভুত বিরক্তিকর শব্দ করার অপরাধে তাদের গ্রেফতার করার কোনো আইন নেই। তাছাড়া মরদেখাই কোনোভাবেই চায় না, তার গোঁফের কারণে কোনো ধরনের লজ্জাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হোক। সে ক্ষেত্রে বামপন্থী পত্র-পত্রিকা বিষয়টি আর তাকে নিন্দা জানাবে। আর সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে ইউসি বেইলিন সব চেকপয়েন্ট আর আর্মি তুলে নেওয়ার জন্য আহ্বান জানাবে! 

তবে কি মরদেখাই তার গোঁফে তা দেওয়া বন্ধ করে দেবে আর সে সুখ থেকে বঞ্চিত হবে? সেটা কঠিন- ভীষণ কঠিন কাজ; কিন্তু তার গোঁফের মর্যাদা রাখতে গেলে এ ছাড়া তার আর কোনো গত্যন্তর নেই। 

‘তোমরা শান্ত হও- তাহলে সবাই পার হতে পারবে। বুঝেছ?’ 

এরপর থেকে মরদেখাই চেকপয়েন্টে এলেই সতর্ক থাকে, যাতে কোনোভাবেই তার হাত গোঁফের দিকে চলে না যায়; কিন্তু তারপরও সেই অদ্ভুত আওয়াজ বন্ধ হয় না। ফিলিস্তিনিরা তাকে দেখলেই সেই অদ্ভুত শব্দ করতে থাকে। এটি তারা করে সুনিপুণভাবে। এমনকি মরদেখাইয়ের সৈনিক ভাইদেরও দু’মুখো ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়। তারা এই শব্দের জন্য প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য সংকল্প ব্যক্ত করে; অন্যদিকে ফিলিস্তিনিদের থেকে দূরে এসে তারা হেসে একে অপরের ওপর গড়াগড়ি খায়। 

মরদেখাই বুঝতে পারে তাকে এখন একটি কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। হয় অপমান থেকে রক্ষা পেতে তাকে চেকপয়েন্টের চাকরি ছাড়তে হবে। এর ফলে তাকে ইসরায়েলের প্রতি প্রবল আনুগত্য থেকে সরে আসতে হবে। অথবা তার গোঁফ ফেলে দিয়ে ইসরায়েলের প্রতি তার আনুগত্য দেখিয়ে যেতে হবে। (অবশেষে সে সিদ্ধান্ত নেয় সরকার ঘোষিত রাষ্ট্রের একজন ‘আদর্শ নাগরিক’ প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে, যার পুরস্কার মূল্য ৫০ হাজার সেকেল। সে নিশ্চিত এই পুরস্কারের জন্য সে প্রথম বিজয়ী হবে।) 

পরিশেষে যা ঘটল: মরদেখাই তার গোঁফ ফেলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। সে তার এই সিদ্ধান্তকে এক ধরনের বিনিয়োগ মনে করল। ফলে সে বাড়ি থেকে স্ত্রীর বিড়ালগুলোকে বের করে দেওয়ার সুযোগ পায়। মরদেখাই নিশ্চিত যে এর ফলে স্টেলা তার ‘বেদনাদায়ক’ ছাড় দিতে বাধ্য হবে। কারণ বিড়ালগুলোকে সে অত্যন্ত পছন্দ করে। তার গোঁফকে ভীষণ অপছন্দ করে। ফলে এই দুই পরিস্থিতির মধ্যে একটি রফা করতে বাধ্য হবে, যার অর্থ হলো নিজে বাস করবে আর অন্যকেও বাস করতে দেবে। 

মরদেখাই তার স্ত্রীর সঙ্গে তিক্ত সমঝোতায় গেল। শেষে যা ফল দাঁড়াল- তাতে দু’পক্ষেরই কিছু কিছু লাভ হলো। স্টেলা তার বাদামি রঙের বিড়াল দুটিকে বাড়ি থেকে বের করে দিতে বাধ্য হলো। তবে কালো বিড়ালটি রাখতে সক্ষম হলো। আর মরদেখাই তার গোঁফ ফেলে দিল। 

মরদেখাই এবার গোঁফ ফেলে দিয়ে চেকপয়েন্টে দায়িত্ব পালন করা শুরু করল। এবার ফিলিস্তিনিরা খেয়াল করল যে, চেকপয়েন্টের নিয়ম-কানুন কিছুটা শিথিল হয়েছে। সম্ভবত তারা এখন বলতে পারে যে, মরদেখাইয়ের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও পূর্ব ধারণার কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। 

লেখক পরিচিতি : মাহমুদ শুকাইরের জন্ম ১৯৪১ জেরুজালেমে। দামেস্ক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন ও সমাজবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর। পেশা শিক্ষকতা ও সাংবাদিকতা। সংস্কৃতিবিষয়ক পত্রিকা আল তালিয়ার (ভ্যানগার্র্ড) এবং দাফাতির তাকওয়াফিয়ার (কালচারাল ফাইল) এর প্রধান সম্পাদক। রাজনৈতিক মন্তব্যের কারণে ইসরায়েল সরকার তাকে দু’বার কারাগারে পাঠিয়েছে। ১৯৭৫ সালে বহিষ্কৃত হয়ে লেবাননে নির্বাসন। জেরুজালেমে ফেরত ১৯৯৩। ২৫টির মতো বই প্রকাশ হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে- ছোটগল্প, প্রবন্ধ, নাটক, শিশুতোষ বই। অনূদিত গল্পটি ২০০৪ সালে আল-কারমেল পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয়। আরবি থেকে মাইকেল কে. স্কটকৃত ইংরেজি থেকে অনূদিত। 

অনুবাদক: মাজহার জীবন

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //