মশার জ্বালায় গোটা শহর অস্থির। মশা মশা মশা। কোথায় মশা নেই। মোতালেব সাহেব অফিসের সামনে রিকশা থেকে নেমে ভাড়া দেওয়ার জন্য মানিব্যাগ খুললেন, সেখান থেকেই দুটি মশা বের হয়ে এলো। নিজের অফিসে ঢুকে পেন্ডিং ফাইল একটা খুলতেই তার ভেতর থেকে পিন পিন করতে করতে গোটা কয়েক মশা বের হয়ে এলো। এর মানে কী? তার অফিস ছ’তলায়, মশাতো নাকি দোতলা তিন তলার বেশি উড়তে পারার কথা না। তার ডানার যে মেকানিজম তাতে সম্ভব না; কিন্তু ছ’তলায় কি করে আসে মশা? উফ অসম্ভব একটা ব্যাপার। এর একটা হেস্ত-নেস্ত হওয়া দরকার। কিন্তু কীভাবে?
হঠাৎ মনে পড়ল তিনি যে বাসায় থাকেন, সেই বাসার তিন তলায় সিটি করপোরেশনের এক অফিসার থাকে তাকে ধরলে কেমন হয়। লোকটা বড় অফিসার, তাতে কী? তাকে দুয়েক কথা শুনাতে পারলেও মনটা যদি একটু শান্ত হয়। সেদিন অফিস থেকে ফিরেই তিনি সোজা তিন তলায় গিয়ে হাজির হলেন। দরজায় নক করতেই সেই ভদ্রলোকই দরজা খুললেন।
কিন্তু পরদিনই বাড়িওয়ালার কেয়ারটেকার একটা কাগজ ধরিয়ে দিল। খুলে দেখেন বাড়ি ছাড়ার নোটিস! মানে কি? কাগজ নিয়ে বাড়িওয়ালার কাছে গেলেন। বাড়িওয়ালা থাকে দোতলায়।
‘ঠিক আছে বাড়ি ছাড়ব তবে এক সপ্তাহ সময় দিন আমাকে’ বলে বাড়িওয়ালাকে ঠেকালেন। এখন একটা ঘটনা ঘটাতে হবে। দাঁত কিড়মিড় করে ভাবলেন মোতালেব সাহেব। তারপর ফোন দিলেন তার এক ছেলেবেলার বন্ধুকে।
মোতালেব সাহেব বললেন তাকে কী করতে হবে। সবটা শুনে ওপাশে মনা চোরার অট্টহাসি শোনা গেল একটা।
এর ক’দিন পরই শুরু হলো খেলা। সেই সিটি করপোরেশনের অফিসারের বাড়িতে আর বাড়িওয়ালার বাড়িতে চুরি হলো। জটিল কিছু চুরি হলো না। দুই বাড়ির সব মশারি, চোর চুরি করে নিয়ে গেল। সে রাতটা মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে পরদিন আবার মশারি কিনল তারা; কিন্তু ফের পরদিন মশারি চুরি হলো। এবং এই প্রক্রিয়া চলতেই থাকল... চলতেই থাকল।
থানায় জানান হলো। ওসি সাহেব শুনে প্রথমে অট্টহাসি দিলেন। তারপর বললেন গরু চোর পর্যন্ত মানা যায়। মশারি চোর... অসম্ভব! দেখেন আত্মীয়স্বজন কেউ আপনাদের সঙ্গে মজা করছে, খোঁজ লাগান।
তারপর একদিন কি মনে করে বাড়িওয়ালা এসে মোতালেব সাহেবের হাতে পায়ে ধরলেন।
এবার মোতালেব সাহেব অট্টহাসি দিলেন, তবে মনে মনে।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
বিষয় : আহসান হাবীব গল্প
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh