মৃতের চিঠি

এক 

-তুই কখনো ভূত দেখেছিস?

নীলু ভাবলেশহীন তাকিয়ে রইল। 

আবীরের উৎসাহে তাতে ভাটা পড়ল না। সে বলেই গেল।

-বল না, ভূত দেখেসনি কখনো? তোদের বাড়িতে তো চিপাচাপার অভাব নেই। এত বড় বাগান, এত গাছ। এর মধ্যে কোথাও কিছু দাড়িয়ে থাকতে দেখিসনি?

-না। 

-শোন, এইসব সব জায়গাই থাকে। শুধু দেখার ইচ্ছা থাকা লাগে। 

-আবীর, তোরা চা খেয়েছিস?

-না। 

-দাঁড়া, দিতে বলছি।

-আচ্ছা। চা নিয়ে তাড়াতাড়ি আয়।

জহির এতক্ষণ চুপ ছিল। এখন কথা বলল

-নীলু, আমি চা খাব না। 

নীলুর ভাবলেশহীন মুখে একটু হাসি দেখা দিল।

-তুমি খাবে না আমি জানি। তুমি বাইরে চা কফি ঠিকই খাও, আমাদের বাসায় এলেই খাও না। 

জহির চুপ করে রইল। নীলুদের বাড়ির সবই ভালো। শুধু ভালো না, অসাধারণ। খালি চা-টাই ভালো না। বড় বাড়িগুলোতে ছোটখাটো দু-একটা খুঁত থাকে। খুঁতগুলো বেমানান বলেই হয়তো খুব প্রকট হয়ে চোখে পড়ে। নীলুদের বাড়ির চা সেরকমই একটা খুঁত। 

নীলু রুম থেকে চলে গেছে চা আনতে। আবীর বেশ আয়েশ করেই নীলুর রকিং চেয়ারে দোল খাচ্ছে। ভাব দেখে মনে হচ্ছে এটা ওরই রুম। অবশ্য আবীর নীলুর সবচেয়ে কাছের বন্ধু। তাই তার এখানে নামমাত্র জড়তা থাকারই কথা। ওদের ৪ বন্ধুর মধ্যে নীলু একমাত্র আবীরের সাথেই সবচেয়ে সহজ। নীলুর ভালো নাম নীলুফার রহমান। যুগের তুলনায় নামটা একটু সেকেলে। অবশ্য নীলুকে অনেক বেশি আধুনিক ঠিক বলাও যায় না। নীলুদের বাড়িটাও কিছুটা সেরকমই। বিশাল লোহার গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকলে কিছুক্ষণ থমকে তাকিয়ে থাকতে হয়। সামনের ছোট উঠানটার উপর একটা।

কৃষ্ণচূড়া গাছ। নিচটা বাঁধানো। তার উপর একটা বুড়ো লাল সাদা বেড়াল সবসময় শুয়ে থাকে। উঠানটা পার করলেই নীলুদের ছাই রঙের দোতলা বাড়িটা। যার একতলার বারান্দায় নীলুর বাবা রিটায়ার্ড কার্ডিওলজিস্ট আশফাক সাহেব বেশিরভাগ সময় একটা সাদা বেতের সোফায় আধশোয়া হয়ে শুয়ে থাকেন। মুখের সামনে সবসময়ই থাকে একটা কাঠখোট্টা টাইপ বই। বইয়ের নাম দেখে প্রথমেই তার সম্পর্কে যে ধারণাটা জন্মে তিনি তার সম্পূর্ণ বিপরীত। 

সকাল, দুপুর, সন্ধ্যা যখনই কেউ তার বাড়িতে উপস্থিত হয় তিনি সেই অতিথি দেখে অতি উচ্ছ্বসিত হয়ে যান। তার সেই উচ্ছ্বাসে কোনো কপটতা নেই, মিথ্যা নেই। আর সে কারণেই বোধহয় আবির আর সঞ্জু প্রায়ই নীলুদের বাড়িতে আসতে পারত। এ বাড়ির এত নিখুঁত বর্ণনা বারবার আবিরের মুখেই শুনেছে জহির। সে নিজে আসে না খুব বেশি এখানে। তাদের ৪ বন্ধুর মধ্যে একমাত্র সেই আজীবন কিছুটা জড়সড়। বন্ধুদের সামনেও কিছুটা চুপচাপ। নাহ।

জহিরকে একমাত্র বলাটা বোধহয় ঠিক হলোও না। নীলুও কিছুটা জহিরের মতোই। জংলার মধ্যে থাকা বিকালবেলার দিঘির মতো সে শান্ত। তাদের দোতলা বাড়ির উপরের তলার টানা বারান্দায়, ছাদ থেকে নেমে আসা বাগানবিলাস গাছের ডালের আড়ালে নীলুকে যখন জহির দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তখন ওকে জহিরের কিছুটা দুঃখী রাজকন্যার মতোই লাগে। 

হঠাৎ আবিরের ডাকে তার টনক নড়ল। 

-নীলু এতক্ষণ ধরে কী করছে রে? চা দেয়ার নাম নেই।

-আমি কী করে বলব?

-নিজেই চা বানাচ্ছে নাকি?

-বানাতে পারে। তবে না বানানোই ভালো।

-না বানানো ভালো কেন?

-নীলুর চা ভালো হয় না।

-আশ্চর্য! তুই কি এখানে চা খেতে এসেছিস? আমরা না আংকেলের জরুরি কলের ভিত্তিতে এসেছি?

-চা-র কথা তো তুইই তুললি।

-আচ্ছা। আমারই ভুল হয়েছে। মানলাম। তুই এখন আমাকে নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে নীলুকে নিয়ে মাথা ঘামা। ওর সমস্যার কী সমাধান করব?

-জানি না।

-আশ্চর্য! তুই এরকম গা ছাড়া চালে কথা বলছিস কেন? তুই চাস না নীলু আগের মতো হাসিখুশি হয়ে যাক?

-নীলু কখনোই খুব হাসি খুশি ছিল না।

-হ্যাঁ কিন্তু এখন তো আরও ১০ গুণ বেশি মুখ কালো করে ঘুরে বেড়ায়। ওকে তো এভাবে চলতে দেওয়া যাবে না। ওকে বোঝাতে হবে যে মৃত্যু একটা চিরন্তন ব্যাপার।

-এ কথা তুই বলে না দিলেও ও জানে বলে আমার ধারণা। ছোটবেলায় ভাব সম্প্রসারণে এ নিয়ে লিখেছে নিশ্চয়ই।

-ফাজলামো করছিস?

-তো আর কী করব? সঞ্জুর মৃত্যুটা আমাদের কাছে যেমন নীলুর কাছে যে ঠিক তেমন না সেটা আমরা দুজইনই জানি। এমনকি আশফাক আংকেলও জানেন। ওকে সময় দেয়াটাই আপাতত সমাধান বলে আমার ধারণা।

-অল্প সময়ে ব্যাপারটার সমাধান হবে বলে তও মনে হচ্ছে না। সঞ্জুর ওই রাতের চিঠিটাই তো সব গণ্ডগোল করল। জহির একটু চুপ করে রইল। তারপর বলল, আবীর তুই থাক। আমি বরং যাই। 

-ও মা! একসাথে আসলাম। আলাদা আলাদা যাব? তুই চুপচাপ বস তো। তোকে সমাধান ভাবতে হবে না।

আবীর বসে রইল। তার খুব অস্বস্তি হচ্ছে। কারোর বাড়িতে গেলেই তার অস্বস্তি হয়। নীলুদের বাড়িতে এলে আরও বেশি হয়। তাও ভালো এখন নীলু আশেপাশে নেই। 

জহির চুপচাপ নীলুর ঘরটা দেখতে লাগল। আগেও দেখেছে। তবু প্রতিবারই তার নতুন করে দেখতে ইচ্ছা করে। বিশাল বড় এই ঘরে আসবাবপত্র খুব কম। ঠিক মাঝখানে একটা বড়সড় বিছানা। একদিকের ওয়ালে একটা কিছু পেইন্টিং ঝোলানো। অন্যদিকের দেয়াল ঘেঁষে একটা কাবার্ড। ঘরের এক কোনায় ছোট একটা গোল টেবিল। এই ঘরে নীলু থাকে। হাঁটে চলে ফেরে... ভাবলেই জহিরের বড় মন কেমন করে ওঠে। 

নীলু কিংবা নীলুর সাথে জড়িত কিছুর মুখোমুখি হলে এই মন কেমন করে ওঠার অসুখ জহিরের অনেক বছরের। দীর্ঘ ৮ বছর ধরে এই অসুখের কথা সে গোপন করে রেখেছে সবার কাছ থেকে। বিশেষ করে নীলুর কাছ থেকে। খুব কষ্ট হতো প্রথম প্রথম। ইচ্ছা করত সব চিন্তা বাদ দিয়ে ওদের বাড়ির এই কৃষ্ণচূড়ার কাছে এসে দাঁড়ায়। নীলু নিশ্চয়ই এক সময় বারান্দায় এসে দাঁড়াবে। তখন তাকে দেখতে পেয়ে নিশ্চয়ই সে নিচে নেমে আসবে। নীলু সামনে এলেই জহির ওকে ওর অসুখের কথা জানাবে। আর তারপর...তারপর নীলু সেই অসুখ সারিয়ে  দেবে। 

এসব শুধু ভাবনা পর্যন্তই থেকে যায়। বাস্তবে নীলু সামনে আসলে জহিরের কিছুটা শীত শীত করতে শুরু করে। আবার হাতের তালুও ঘামতে শুরু করে। জহির শুধু সন্তর্পণে সেসব লুকায়। এর বাইরে আর কিছুই করতে পারে না। 

নীলুর প্রেম তো ছিল সঞ্জু। সেই প্রেম নীলুর চোখ মুখ ঠিকঠাক লুকাতে পারত না। বলা বাহুল্য, লুকানোর অনেক চেষ্টা বেচারি করত। কিন্তু ধরা পড়ত সবার কাছে। এমনকি সঞ্জুর কাছেও। সঞ্জু অবশ্য মুখে কিছু বলে নীলুকে অস্বস্তিতে ফেলেনি। তবে নীলু কি কখনো সেই অস্বস্তিতে পড়তে চায়নি? 

সঞ্জু ছিল অতি অসাধারণদের একজন। সে গান গাইতে জানত, কবিতা লিখত, মঞ্চ নাটক করত। তবে ওর সব গুণের মধ্যে যেটার কথা সবার মুখে মুখে ফেরে সেটা সঞ্জুর বুদ্ধি। আর সেই বুদ্ধির কারণেই একমাত্র সঞ্জুর কাছেই ধরা পড়ে গিয়েছিল জহিরের অসুখটা। 

নীলু চা নিয়ে এসেছে। জহির ভয়ে ভয়ে কাপের দিকে তাকাচ্ছে। নীলু চা দেবার পর মাঝে মাঝে জিজ্ঞেস করে বসে ‘চা কেমন হয়েছে?’  আশ্চর্য! জহির মিথ্যা বলতে পারে না। সত্য শুনে নীলু কিছুটা হয়তো কষ্টও পায়। অতি লক্ষ্নী মেয়েগুলো বোধহয় একটু বোকা হয়। 

-চা কেমন হয়েছে আবীর?

-খারাপ না। চলে।

জহির মনে মনে হাঁপ ছেড়ে বাঁচে। যাক তাকে তো জিজ্ঞেস করেনি।

-ইয়ে নীলু।

-বল।

-তোকে কিছু কথা বলতে চাচ্ছিলাম।

-বল, শুনছি।

-তুই অফিসটফিস করছিস তো ঠিকমতো?

-হ্যাঁ, করব না কেন?

আবীর আবারও কথার খেই হারিয়ে ফেলল। 

-আবীর, তুই যা বলতে চাচ্ছিস বলে ফেল।

আবীর একটু থেমে বলল, ‘সঞ্জুর বডিতে একটা চিঠি পাওয়া গেছিল তা তো তুই জানিসই। ওটা কি তুই তোর কাছে রাখবি?’

-আমার কাছে কেন রাখব?

-কারণ ওটা তোর চিঠি। তোকে লেখা। তুই তো সবই জানিস। 

-আমাকে লেখা হলেও সঞ্জু আমাকে ওটা দেয়নি। ওটা নিয়েই ফেরত চলে গিয়েছিল।

-কিন্তু তোকে দেয়ার জন্যই তো এসেছিল সেদিন। তোর হাতে দিয়েওছিল। তাই হিসাব মতো ওটা তোর কাছেই থাকা উচিত।

-দেয়নি। পড়ে শুনিয়েছিল। তারপর আধা ঘণ্টা সময় চেয়ে চলেও গিয়েছিল। তাই ওই চিঠি আমার সেটা বলা যায় না।

-তুই বুঝতে পারছিস না। আমার কাছে হারিয়ে যেতে পারে। আমার বাসা ভর্তি আমার ভাইয়ের বদ পুলাপান। এরা আমার ব্যাগ, ড্রয়ার সবকিছু হাতায়।

-তাহলে জহিরের কাছে থাকুক। জহির চমকে উঠল। বলল, ‘না, আমার কাছে কেন?’

-কেন? সমস্যা কোথায়? তোমরা একটা প্রিন্ট করা কাগজকে এত গুরুত্ব কেন দিচ্ছ?

-কাগজটা গুরুত্বপূর্ণ তাই।

-বেশ আমার কাছে রেখে যাও। আর আবীর শোন। সঞ্জু মারা গেছে ১ মাসও হয়নি। মৃত বন্ধুর জন্য কিছুদিন মন খারাপ থাকা এমন কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা না। এর জন্য তোদের বা বাবার এত চিন্তা করার কিছু নেই। ঘরের পরিবেশ ভারী হয়ে আসছিল। আবীর এইসব ভারী আবহাওয়া একদম নিতে পারে না। সে উঠে পড়ল। 

দুই 

আবীররা যাওয়ার পর নীলু ওদের বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াল। এখান থেকে ওদের বাড়ির সামনের অংশটা দেখা যায়। কৃষ্ণচ‚ড়া গাছ আর তার কিছু সামনেই প্রধান ফটক। ইনসমনিয়া থাকায় রাতের বড় একটা সময় তার কাটে বারান্দায়। সেদিন রাতেও সে এখানেই দাঁড়ানো ছিল। রাত তখন দুটার কাছাকাছি। আকাশে মেঘের ঘনঘটা। একটু পর পর বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। শ্রাবণ মাসের অতি পরিচিত অপূর্ব রাত। সে বুঝতে পারল তাদের প্রধান ফটকের ওই পাশে কেউ এসে দাঁড়িয়েছে। চাপা গলায় তাকে ডাকছে। নীলু সঞ্জুর গলা চিনতে পারল। 

কিছুটা হতভম্ভ আর ঘোর লাগা অবস্থায় সে নিচে নেমে এলো। চাবি গিয়ে গেট খুলল। দেখল সঞ্জু হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে। তাকে দেখে বরাবরের মতো ফুর্তিবাজের গলায় বলল? ‘কি রাজকন্যা নীলু রানী! চমকে গেছিস নাকি?’ নীলু তখনো হতভম্ব অবস্থাতেই আছে। সে অবস্থায়ই বলল, তুমি এত রাতে এখানে?

-অবাক হয়েছিস তাই না? তোর আরও অবাক হওয়া বাকি আছে। তোর জন্য একটা গিফট এনেছি।

-কী?

-একটা গল্প। যদিও ছন্দে ছন্দে লেখা। গল্পের নায়িকার নাম নীলু। নায়কের নাম আপাতত বলা যাবে না। শুনবি?

সঞ্জু ওর পকেট থেকে একটা কাগজ বের করল। তারপর পড়তে লাগল। 

পড়া শেষ করে সঞ্জু যখন তার দিকে তাকাল তখন দেখল নীলুর চোখে পানি। নীলু খুব মৃদু স্বরে বলল, ‘তুমি আমার জন্য লিখেছ সঞ্জু?’ 

সঞ্জুর মুখটা হঠাৎ অন্যরকম হয়ে গেল। সে একটু সময় নিয়ে বলল 

-হ্যাঁ। তোর জন্য লিখেছি।

-সত্যি বলছ?

সঞ্জু আবারও চুপ করে গেল। কিছুক্ষণ নীলুর দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, ‘নীলু, তুই একটু দাঁড়া, আমি আধাঘণ্টার মধ্যে আসছি। তুই কোত্থাও যাবি না। এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবি। আমি একটা খুব জরুরি কাজ সেরেই আসছি। আধাঘণ্টার মধ্যে চলে আসব।’

সঞ্জু চলে গেল। রাত সাড়ে ৩টায় হসপিটাল থেকে আবীরের ফোন পাওয়ার আগ পর্যন্ত নীলু ওখানেই দাঁড়িয়েছিল। সেই রাতে কবিতাটা সঞ্জু একবার পড়লেও নীলুর সেটা মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল। আর সে কারণেই এরপর থেকে তার খটকা লাগছে। আবীরের অনেক কবিতাই সে পড়েছে। সে বেশ ভালো লিখত। কিন্তু ওদিনের লেখা কবিতাটা ছিল যথেষ্ট কাঁচা। কবিতায় নীলু নামের এক কন্যার আর এক ভীতু যুবকের কথা লেখা।

যে যুবক এক রাতে নীলুর বাড়ির কৃষ্ণচূড়া গাছের সামনে এসে দাঁড়ায়। সেই রাতে সঞ্জুর নীলুদের বিশাল গেটে এসে কড়া নাড়ার দৃশ্য যত অপূর্বই হোক, সে দৃশ্যের সাথে কবিতার যুবকের কোনো মিল নেই। নীলুর বারবার মনে হচ্ছে মিলটা বের করা খুব সহজ। সে বোকা বলেই পারছে না। 

তিন 

বাড়িতে ফিরতে ফিরতে বিকাল হয়ে গেল জহিরের। ফেরার সময় একবার মনে হলো নীলুকে বলে, ‘দাও, চিঠিটা আমি নিয়ে যাচ্ছি।’ পরে মনে হলো থাক।

জহিরের মন সব সময়েই খারাপ থাকে। সঞ্জু সেটাকে আরও কয়েক গুণ খারাপ করে দিয়ে গেল পাকাপোক্তভাবে।

সেদিন রাত ১টায় হঠাৎ করেই জহিরের মেস বাড়িতে সে এসে উপস্থিত। অবশ্য রাত দুপুরে বাড়িতে উপস্থিত হওয়ার মতো কাজ সে আগেও করত। এসেই বলল, ‘চা করে আন। এক্ষুনি আন, পরে অন্য কথা।’ অগত্যা সঞ্জুকে বসিয়ে রেখে জহির চা করতে গেল। তার একবারও মনে পড়ল না, টেবিলের ওপর রাখা কম্পিউটারে তার লেখা চিঠিটা ঝুলছে। 

চা নিয়ে এসে সে শুধু একটা চিরকুট পেল। তাতে লেখা ‘তোর প্রেমের খবর আমি আগেই টের পেয়েছিলাম। চিঠিটা মেইলে নিয়ে গেলাম। দেখি তোর দুঃখী রাজকন্যাকে তোর কাছে নিয়ে আসা যায় কিনা। স্বপ্নকে সত্যি করতে শেখ শালা।’

এরপর জহির সঞ্জুকে অনেকবার ফোন করেছে। সঞ্জু ধরেনি। শেষমেশ যখন ধরল তখন সঞ্জুর গলার স্বর বড় অন্য রকম শোনাল। সঞ্জু ফোনে বলছিল যে জহিরের সাথে তার নাকি খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে। সেটা বলতেই সে ফিরছে। 

সঞ্জু আর ফেরেনি। তার সাথে জহিরের দেখা হলো হসপিটালে। দেখা আদৌ হলো কি? 

চার 

নীলু আজ আবারও সেই ছায়া মূর্তিটাকে খেয়াল করল বাড়ির আশেপাশে। গেটের কাছে দাঁড়িয়ে আছে নিশ্চয়ই। আর সেটারই ছায়া পড়েছে রাস্তায়। ছায়ামূর্তিটা ক্রমাগত সিগারেট খেয়ে যাচ্ছে। 

উচিত অনুচিত চিন্তার কিছুটা মাঝেই নীলু নিচে নেমে এলো। গেট খুলে বাইরে উঁকি দিল। আর তার মনে হলো সঞ্জুর ওই দিনের বলা গল্পের দৃশ্যর সাথে এই দৃশ্যটা পুরোপুরি মিলে যাচ্ছে। আশ্চর্য! এই অতি সহজ ব্যপারটা ধরতে তার এত দিন লাগল? 

- তুমি এখানে কী করছ জহির? জহির ভূত দেখার মতো চমকে উঠে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল। তার হাতের সিগারেট পড়ে গেল।

-জহিরকে তোমার চিঠিটাসহ কি তুমিই পাঠিয়েছিলে এখানে? সে একটু সময় নিয়ে বলল,  ‘না, নীলু!’

-তুমি যে পাঠাওনি সে আমি বুঝতে পেরেছি। এত সাহস তোমার নেই। জহির শোনো! তুমি ভয়াবহ অন্যায় করেছ! আমি না তোমার ছোটবেলার বন্ধু? অনেক কিছু বলতে ইচ্ছা করার পরও জহির চুপ করে রইল। 

-এই অপরাধের শাস্তি তোমাকে দেওয়া হবে। তুমি এখন থেকে রোজ রাতে এখানে এসে সিগারেট ধরাবে। তারপর আমার বানানো বিশ্রী এক কাপ চা খাবে। তারপর যাবে। 

জহির সিগারেটে টান দিতে নিল। তারপর খেয়াল হলো সিগারেট তার হাতে নেই। অনেক আগেই মাটিতে পড়ে নিভে গেছে। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //