চিত্রলেখার বিয়ে

মাংসের পাতিলটা নামিয়ে চিত্রলেখা নিজের ঘরে গিয়ে বসল। ফ্যানটা আগে থেকেই ছাড়া ছিল। ফাঁকা ঘরে ফ্যান ঘুরছে এ দৃশ্য দেখলে চিত্রলেখার মা হনুফা বেগমের এতক্ষণে বাড়ি মাথায় তোলা হয়ে যেত। কিন্তু আজ সারাদিন তার মুখে হাসি। এই বিশেষ বিশেষ দিনগুলোতে হনুফা বেগম মেয়েকে কোনো  কটু কথা বলেন না। আজ চিত্রলেখাকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে। আজকের দিনটা নিয়ে কতবার হলো? চিত্রলেখার মনে নেই। 

ফ্যানের নিচে বেশিক্ষণ বসে থাকার উপায় নেই। গোসল সেরে দুপুরের খাওয়া খেয়ে নিয়ে ঘুমাতে হবে। এই দিনগুলোর এইটাই নিয়ম। হনুফা বেগমের বানানো নিয়ম। তবু চিত্রলেখার বড় অলস লাগছে। ইচ্ছা করছে হাত পা ছড়িয়ে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকে। এবার অবশ্য অনেক দিন গ্যাপ দিয়ে সে পাত্রপক্ষের মুখোমুখি হচ্ছে। বলা বাহুল্য সেটাতে তার নিজের কোনো ভূমিকা নেই। শেষ যেবার এমন দিন এসেছিল সেটা ৫ মাস আগে। চিত্রলেখা চেষ্টা করেও সেই দিনের কথা ভুলতে পারে না।  সেবার বাসায় আয়োজন হয়নি। চিত্রলেখাকে যেতে হয়েছিল পাত্রের মায়ের অফিসে। বড় অদ্ভুত এক দিন! 

সেদিন সন্ধ্যা থেকেই ক্রমাগত বৃষ্টি পড়ছিল। চিত্রলেখার বড় ফুপু বিকাল বিকাল চলে এসেছিল তার লাল গাড়িটা নিয়ে। বড় ফুপুর নাম সালেহা বানু। এসেই তার স্বভাবমতো তাড়া দিয়ে চলছিল। চিত্রলেখার বাবা নজরুল সাহেব মৃদুস্বরে একবার বলেছিল, ‘পাত্রীর স্বয়ং পাত্রের মায়ের অফিসে গিয়ে দেখা দেওয়াটা কি শোভন হবে?’ 

সালেহা বানু  সে বক্তব্য কানে তোলেননি। তোলার অবশ্য কথাও নয়। 

রওনা দেওয়ার পরপরই বৃষ্টি শুরু হওয়ায় বড় ফুপু প্ল্যানে একটু বদল আনলেন। আগে নিজের বাড়ি গেলেন। উপরে না উঠে গাড়ির মধ্যে থেকেই জহির নামক একজনকে ফোন দিলেন। কিছুক্ষণ পরেই সে ব্যক্তি গাড়িতে উঠে বসল। বড় ফুপু পরিচয় করিয়ে দিলেন, ‘বুঝলি চিত্রা! এর নাম জহির। তোর ফুপার অফিসে নতুন ঢুকেছে।’

তারপর গলার স্বর খাদে নামিয়ে বললেন, ‘আর তোর ফুপা একে উঠিয়েছে আমার বাড়িতে। বলে কিনা ব্যাচেলর ফ্ল্যাট নিয়ে থাকার মুরোদ নেই। তুইই বল ঢাকায় কি এখন আর মেস বাড়িটাড়ি নেই? সেখানে কোথাও একটা পাঠিয়ে দিলে হতো না? তা না! এই লোকের সাথে ঘর করাটাই চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে আজকাল।’

চিত্রা বুঝল, ড্রাইভারের পাশের সিটে বসে থাকা এই মানুষটা ফুপুর কাছে এলেবেলে একজন ছাড়া আর কিছুই নয়। যাকে সে নির্দ্বিধায় বলতে পারে, ‘ড্রয়ার থেকে ছাতাটা নিয়ে নিচে এসো তো। আর তুমিও গাড়িতে ওঠো। কখন কী লাগে আবার কে বলতে পারে।’

সন্ধ্যার মুখে সালেহা বানুর গাড়ি এক ক্লিনিকের সামনে থামল। এখানেই বসেন ডা. শীলা চৌধুরী। গাইনোকলোজিস্ট। সালেহা বানু উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে চিত্রলেখাকে বললেন, ‘বুঝলি চিত্রা! খুব ব্যস্ত ডাক্তার। ২/৩ ঘণ্টার আগে সাক্ষাৎই পাওয়া যায় না। তবে আমাদের সাথে আরও আগেই দেখা করবেন। কথা বলা আছে।’ 

চিত্রলেখা বলল, ‘চেম্বারেই কেন দেখা করতে আসলে ফুপু?’ 
---আরে কী মুশকিল! সে তো বাসায় থাকেই অল্প কিছু সময়ের জন্য। তার মধ্যে সে কারোর সাথে ফোনেও কথা তেমন বলে না। আর বলবেই বা কী করে! সারাদিন কত ধকল যায় বল!

চিত্রা আর কিছু বলল না। ক্লিনিকের রিসেপশনে এসে সালেহা বেগম পরিচয় দেওয়ার পর একজন লোক তাদেরকে একটা আলাদা ঘরে নিয়ে বসালো। সেখানে চিত্রলেখারা ছাড়া আর কেউ নেই। কিছুক্ষণের জন্য হলেও ব্যাপারটা স্বস্তিদায়ক। 

সোফায় বসেই সালেহা বানু জহির নামক লোকটাকে বলল, ‘এই জহির, দাঁড়াও দাঁড়াও! এখনি বোসো না। বৃষ্টি দেখে তো পথে আর নামাই হলো না। যাও তো চট করে দু কেজি মিষ্টি নিয়ে এসো। ক্রিম জাম আর রসমালাই।’

তারপর টাকা বের করতে করতে চিত্রলেখাকে বললেন, ‘আর চিত্রা তোর ফোন থেকে তোর ফুপাকে একটা কল দে তো। আমার ফোনটায় চার্জ নেই।’

চিত্রলেখা বলল, ‘আমার ফোনে ব্যালেন্স নেই যে ফুপু।’

সালেহা বানু বিরক্ত গলায় তাকে হালকা ভর্ৎসনা করে জহিরের হাতে আরও দুইশ টাকা ধরিয়ে দিয়ে বললেন, ‘চিত্রার ফোনে ফ্লেক্সিলোডও করে এসো। এই চিত্রা! তুই তোর নাম্বারটা ওকে একটা কাগজে লিখে দে।’ চিত্রা তাই দিল। আর দিতে গিয়ে প্রথমবার জহির নামক লোকটার দিকে ভালো করে তাকাল। তার মনে হলো পুরুষ মানুষের এত সুন্দর চেহারা সে খুব কম দেখেছে। এত বড় বড় চোখ কোনো লোকের হয়! লোকটা বলাটাও বোধহয় ঠিক হচ্ছে না। চেহারা দেখে মনে হচ্ছে তার বয়স খুব বড়জোর ২৯ হবে! চিত্রলেখার নিজের বয়সও তাই। 

ছেলেটার বয়সের সাথে নিজের বয়সের তুলনা করে চিত্রলেখা মনে মনে নিজের কাছেই কেমন যেন বিব্রত হয়ে গেল। 

তবে একটা ব্যাপার খটকা লাগছে। ছেলেটাকে দেখে শিক্ষিত বলেই মনে হলো। ফুপার অফিসে একেবারেই ছোট পোস্টে মনে হয় না সে ঢুকেছে। তাহলে বড় ফুপুর ছুড়ে দেওয়া এই তাচ্ছিল্যের কারণ? শুধুই দারিদ্র্য? 

যখন আধা ঘণ্টার মধ্যেও তারা শীলা চৌধুরীর ডাক পেল না তখন বড় ফুপু নিজেই ভিতরে গেলেন খোঁজ নেওয়ার জন্য। আর তার পরই জহির দু প্যাকেট মিষ্টি নিয়ে ঘরে ঢুকল। সেখানে চিত্রলেখাকে একা বসে থাকতে দেখে খুব জড়োসড়ো হয়ে গেল। 

চিত্রলেখা অবাক হয়ে দেখল ছেলেটা মাথা নিচু করে দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। ভেতরে ঢুকছে না। যেন সে আসতে না বলবে আসবেও না। চিত্রলেখা বলল, ‘দাঁড়িয়ে আছেন কেন? আসুন! এসে সোফায় বসুন।’

জহির ভিতরে ঢুকে টেবিলে মিষ্টির প্যাকেটটা রেখে বসল। কিছু বলল না। চিত্রলেখা নিজ থেকে আবারও কথা বলল,

‘ফুপার অফিসে কতদিন হলো ঢুকেছেন?’
---১ মাস।

চিত্রলেখা হকচকিয়ে গেল। জহিরের কণ্ঠস্বর অস্বাভাবিক সুন্দর। আচ্ছা আসলেই কি তাই? তার মনের ভুল না তো। সে আবার প্রশ্ন করল, ‘ঢাকা এসেছেন কত দিন হলো?’
---১ মাস ১০ দিন।

চিত্রলেখা মোটামুটি নিশ্চিত হলো তার ধারণার ব্যাপারে। তার খুব ইচ্ছা করছে আরও কিছুক্ষণ কথা বলতে। কিন্তু আর কীই বা প্রশ্ন সে করতে পারে! তবু সে চেষ্টা চালিয়ে গেল
---আপনি জানেন ফুপু আমাকে এখানে কেন নিয়ে এসেছে?
---জানি।
---আপনাকে বলেছে?
---না। 
---তাহলে? ধারণা করে নিয়েছেন?
---জি।
---আপনার কী মনে হয়? ডা. শীলা আমাকে পছন্দ করবে? না রিজেক্ট করে দিবে? 

জহির এবার পূর্ণ দৃষ্টিতে চিত্রলেখার দিকে তাকাল। তাকিয়েই হেসে ফেলল আর বলল, ‘কেন অপ্রয়োজনীয় ব্যাপার নিয়ে ভাবছেন?’ 

বিরক্তি, গ্লানি আর হতাশায় ভরপুর কুৎসিত সন্ধ্যাটা হঠাৎই চিত্রলেখার কাছে কেমন যেন হয়ে গেল। সে আর কোনো কথা বলল না। তার পাশের খোলা জানালাটার দিকে তাকিয়ে রইল। বৃষ্টি এখনো পড়ছে গুঁড়ি গুঁড়ি। বাইরের পেট্রলের গন্ধ, খোলা দোকানে ভাজা নানান খাবারের গন্ধকে ছাপিয়ে অতি দীর্ঘদিনের পরিচিত বৃষ্টি ভেজা মাটির গন্ধ তার নাকে আসছে। ভালো লাগার মতো কিছুই হয়নি! তবু তার খুব ভালো লাগছে। 

‘চিত্রা! চল চল! শীলা পার্সোনাল চেম্বারে চলে এসেছে। আমাদেরকে যেতে বলেছে।’

চিত্রা দরজায় দাঁড়ানো তার ফুপুর দিকে তাকাল। সালেহা বানুর মুখ ভর্তি হাসি। 

ডা. শীলা চৌধুরীর রুমটা দেখার মতোই সুন্দর। বিশাল বড় ওয়াল টু ওয়াল জানালা। এক কোনায় কফি টেবিল। তার পাশেই একটা রকিং চেয়ার। রুমের মাঝখানে বিশাল বড় এক টেবিল। সেটারই বিপরীত প্রান্তের চেয়ারে শীলা চৌধুরী বসে আছেন। চিত্রাদের রুমে ঢোকার জন্য আঙুলে ইশারা তিনি দিয়েছেন ঠিকই কিন্তু মুখে এখনো কিছু বলেননি। ফোনে কার সাথে যেন কথা বলছেন। বোঝাই যাচ্ছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কল।

ফোন রাখার পর পরই সালেহা বানু চিত্রলেখার সাথে তার পরিচয় করাল। চিত্রলেখা সালাম দিল আর কিছুটা বিস্মিত হয়েই লক্ষ করল শীলা চৌধুরী তার সালামের কোনো উত্তর করলেন না। আবারও হাতের ইশারায় চিত্রলেখা আর ফুপুকে তার সামনের দুই চেয়ারে বসতে বললেন। 

তারা সেই চেম্বারে ১৫ মিনিট ছিল। এই ১৫ মিনিটে একবারও শীলা চৌধুরী চিত্রলেখার দিকে তাকালেন না এবং পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা জহিকে কোথাও বসতে বললেন না। 

অপমানে যতটুকু নীল হয়ে যাওয়ার কথা চিত্রলেখার ছিল ততটুকু সে হলো না। শুধু মন বড় খারাপ করতে লাগল, খুব অভিমান হতে লাগল। আর এ দুটোর কোনোটাই তার নিজের জন্য নয়। 

ফেরার পথে গাড়িতে ফুপু কিছুটা অপরাধী মুখেই ছিলেন। যদিও সেটা খুব বেশিক্ষণের জন্য নয়। তিনি বললেন, ‘তুই তো মেক আপই করতে চাস না। এত নাম করা বড়লোক এরা। বুঝিসই তো এরা একটু ফর্সা মেয়ে খোঁজে।’ 

‘তাহলে তুমি আমায় নিয়ে এলে কেন?’
---আরে আমি তো চেয়েছিলাম তোকে পার্লার থেকে সাজিয়ে আনতে। যা-ই হোক! এ রকম কত পাত্রপক্ষের সাথে দেখা হবে! সবকিছু এত ধরলে চলে না। আর সবকিছু ধরার মতো অবস্থা তোরও নেই। তোর বাপেরও নেই।

চিত্রলেখাদের ঘুপচি গলির মুখে গাড়ি যখন থামল তখন রাত ৯:৩০ বাজে। ফুপু বললেন, ‘আমি আর ভিতরে যাব না রে। জহির তুমি চিত্রাকে বাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে এসো।’

চিত্রলেখা বলল, ‘না ফুপু! আমি একাই যেতে পারব।’

ফুপু বললেন, ‘একা যাওয়ার কোনো দরকার নেই। তাছাড়া বৃষ্টি এখানো তো পড়ছে।’

হাঁটার সময় তারা দুজন কোনো কথাই বলল না। শুধু বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে চিত্রলেখা জহিরের দিকে তাকাল। বলল,
---যাই?

জহির কিছু বলল না। তাকিয়ে রইল। চিত্রলেখা যে মুহূর্তে বাড়ির ভেতর ঢুকবে ঠিক তখন সে খুব কোমল গলায় বলল,  ‘আপনি একদম মন খারাপ করবেন না। মন খারাপ করার মতো কিছুই হয়নি। এসব খুবই তুচ্ছ ব্যাপার।’

চিত্রলেখা কিছু না ভেবেই বলল, ‘আমার মন অবশ্য খারাপ। তবে সেটা কোনো তুচ্ছ ব্যাপারে নয়।’

চিত্রলেখা বাড়ির ভেতর ঢুকে গেল। জহিরকে একবারও বসতে বলল না। 

মায়ের প্রবল ঝাঁকুনিতে চিত্রলেখার ঘুম ভাঙল। হনুফা বেগম ভয়ার্ত গলায় বলছে, ‘কী সর্বনাশ! তুই গোসল না করে না খেয়ে দেয়ে এতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলি। ওরা তো প্রায় চলে এসছে!’

চিত্রা উঠে বসল। সত্যিই আর তেমন সময় নেই। ইচ্ছা থাকুক বা না থাকুক তৈরি হয়ে নিতে হবে। সে দ্রুত স্নান সেরে নিল। চুলে তোয়ালে জড়িয়ে মুখে একটু ক্রিম দিল। চোখে হালকা করে কাজল দিল। তারপর ভালো করে আয়নার দিকে তাকাল। কালো রঙের অতি রূপবতী একটা মেয়েকে দেখা যাচ্ছে। যেন সে এখন ইউনিভার্সিটিতে যাবে ক্লাস করতে। যাওয়ার আগে হালকা সাজগোজ। 

চিত্রলেখা ছোট একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। 

কিছুক্ষণ পর বাবা নজরুল সাহেব তার ঘরে আসলেন। বললেন, ‘মা শোন! ওখানে গিয়ে সামনে বসে থাকার কোনো দরকার নেই। তোর মা যখন বলবে তখন শুধু চায়ের ট্রে নিয়ে যাবি, সালাম দিবি। চলে আসবি। ব্যস। আচ্ছা ঠিক আছে। রেস্ট নে। আমি এখন যাই।’

নজরুল সাহেব মেয়েকে অস্বস্তি থেকে যতটুকু সম্ভব বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। সব সময়ই করেন। তার সাধ্য থাকলে অবশ্যই হতো সে তার মেয়েকে সকল ধরনের অস্বস্তিবিহীন একটা জীবন দিতেন। সে সাধ্য তার আর হলো কোথায়!

যথাসময়ে চিত্রার মা চিত্রাকে ডেকে পাঠাল, চিত্রা ট্রে নিয়ে ড্রইংরুমে গেল, এক বারের জন্যও দৃষ্টি না উঠিয়ে বসে থাকা সবার উদ্দেশে সালাম দিল। তারপর আলতো পায়ে চলে এলো। 

রুমে ঢুকেই সে লাইট অফ করে দিল। আপাতত হয়তো তাকে আর যেতে হবে না। তাই বরং কিছুক্ষণ শুয়ে থাকা ভালো। বিকালে দু ঘণ্টা টানা ঘুমানোর পরও তার বড় ক্লান্ত লাগছে। 

তার কিছুক্ষণ পর হন্তদন্ত হয়ে হনুফা বেগম ঘরে ঢুকলেন। ঢুকেই লাইট জ্বালিয়ে কথা বলা শুরু করলেন,
---এই চিত্রা! ছেলেকে তোর কেমন লাগল বল তো।
---আমি দেখিনি।
---ও মা! তুই তাকাসই নি?
---না।
---কী অদ্ভুত কাণ্ড! যা হোক। ওই ছেলের কিন্তু তোকে খুব পছন্দ। ও নাকি তোকে আগে থেকেই চেনে। আগেই দেখেছিল। কিন্তু এদিকে তো আরেক বিপত্তি! তোর বড় ফুপু তো এইবারের পাত্র দেখাদেখির কথা কিছুই জানত না। আল্লাহই জানে তোর বাবা কেন এবার তাকে কিছু না জানিয়েই এসব আয়োজন করল! এখন  বুঝুক! তোর বড় ফুপু একদম নাকচ করে দিয়েছে। 

চিত্রা পুরোপুরি হতভম্ব হয়ে বলল, ‘আমাকে আগে থেকেই চেনে? তোমাদের পাত্রের নাম কী?’ 

হনুফা বেগম আবারও বলতে লাগল, ‘এখন আর নামধাম জেনে কী হবে? তোর ফুপু তো বাদই করে দিয়েছে। আমরা কি তোর ফুপুর কথার বাইরে যাব? ছেলের নাম জহির। তোর বড় ফুপার কোম্পানিতেই চাকরি করে। তোর ফুপু আজ সব জেনে তো তেলেবেগুনে আগুন। বলল এক্ষুন এই চালচুলাহীন ছেলের চাকরি তোর ফুপাকে দিয়ে নট করাবে। যদিও তোর বাবার আবার ছেলেটাকে পছন্দ হয়েছে। তার কথা ছেলে শিক্ষিত, ভদ্র, দেখতে রাজপুত্রের মতো। অবশ্য এসব এখন বলেই আর কী লাভ! সে কি তার বোনকে চেনে না? কেন যে তোর ফুপুর কাছ থেকে সব গোপন করে কনে দেখার আয়োজন করতে গেল লোকটা!’

হনুফা বেগম আরও অনেক কথা বলে যাচ্ছিল। কিন্তু সেসব আর চিত্রলেখার কানে বিশেষ ঢুকছিল না। কী বলছে মা? কে এসেছিল বাড়িতে? জহির? 

রাত ১টা বাজে। চিত্রার মোবাইল টেলিফোনটা বাজছে। আননোন নাম্বার। অন্য সময় এ জাতীয় ফোনকল সব মেয়েই কেটে দিত। কিন্তু আজ রাতে কি সেটা সম্ভব? 
---কেমন আছেন জহির সাহেব? 
---ভালো না। 
---কেন? চাকরি চলে গিয়েছে নাকি?
---এখনো যায়নি। তবে যাবে। 
---তাহলে তো মহা সমুদ্রে পড়েছেন।
---তা পড়েছি। তবে সে জন্য আমার মন খারাপ না।
---তাহলে?
---আপনি একবারও আমার দিকে তাকালেন না চিত্রা?
---আমি তো জানতাম না যে আজ সামনে ডা. শীলা জাতীয় কেউ নেই। আছে জহির নামের একজন।
---জানলে কী করতেন? 
---ফুপু যখন বাড়িতে ফোন করল তখন সে ফোন বাবাকে ধরতে না দিয়ে নিজে ধরতাম।
---কী বলতেন? 
---বলতাম, ‘ফুপু শোনো! তোমাদের ছত্রধর জহির সাহেবকে নিয়ে তুমি একটু আমার সাথে বের হতে পারবে? আমরা ৩ জন মিলে বিয়ের কেনাকাটা করব।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //