বিবাহোত্তর

অফিস থেকে ফেরার পথে ইরিনার শরীর খারাপ লাগছিল। মনে হচ্ছিল গাড়ির একজন ড্রাইভার রেখে দিলে ভালো হতো স্টিয়ারিংয়ে হাত দিয়ে জ্যামে বসে সামনের আটকে থাকা ভিড় ঠেলে বেরিয়ে পড়ার চিন্তা না করে কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিতে পারত। বাড়ি ফিরে লম্বা শাওয়ার নিয়ে আয়নার সামনে মিনিট পাঁচেক বসে নিজেকে দেখছিল। কলিংবেল বাজল দুইবার। মনে মনে রাগ লাগছিল ইরিনার। সাফিকে অনেক বার বলেছে, একবার বেল বাজিয়ে ওয়েট করবে। দরজা পর্যন্ত আসতে সময় লাগে। সাফির এই ভুল কখনো শোধরায়নি। সাফি ইরিনার সাথে কথা না বলেই ঘরে ঢুকল। ইরিনা রাতের খাবার গরম করে খাবার টেবিলে পরিবেশন করে সাফির জন্য অপেক্ষা করছে। এ বহুদিনের অভ্যেস, বিয়ের বয়স আট বছর পেরোবে এই নভেম্বরে। সাফি মিনিট দশেকের মধ্যে ফ্রেশ হয়ে এসে খেতে বসল। সারাদিন পর দুজন অফিস থেকে ফিরলে আগে যেমন কথা হতো তেমনটা আর হয় না।

সাফি : আজকেও কিছু রান্না করোনি? কালকের খাবারই গরম করেছো?
ইরিনা : শরীরটা ভালো লাগছে না, ইচ্ছে করছিল না।
সাফি : একজন পারমানেন্ট হেল্পিংহ্যান্ড রাখলে পারো তো। সব কিছুতে অতিরিক্ত খুঁত খুঁত তোমার। 
ইরিনা : আমি নিজের কাজ নিজে করতে পছন্দ করি। আর রিতা তো আমাকে কাজ গুছিয়ে দিয়ে যায়, দরকার কী সারাদিন পর এসে আর একজন বাইরের মানুষ নিজের ঘরে দেখতে ভালো লাগে না আমার।
সাফি : তোমার কষ্ট হয় বলেই বললাম। 
শরীর বেশি খারাপ লাগলে ডাক্তার দেখাও।
ইরিনা : তুমি কী আজকাল বেশি ব্যস্ত হয়ে গেছো?
সাফি : একটু প্রেশার যাচ্ছে আর কী।

ইরিনা আর কোনো কথা বাড়ায় না, খাবার শেষ করে এঁটো বাসনগুলো ধুয়েমুছে তুলে রাখে। সাফি আগে ঘরের কাজে ওকে ভালোই সাহায্য করত এখন সব সময় উদাসীন ভাব যেন প্রয়োজনীয় কথাটুকু সারতে পারলেই বাঁচে। ইরিনা শোবার ঘরে ঢুকল সাফি নাক ডাকছে। কী শান্তির ঘুম, বিছানায় গা দিতেই ঘুমোতে পারে।

ইরিনা ঘরের লাইট অফ করে দিয়ে বারান্দায় বসেছে। শরীর নাকি মন খারাপ ঠিক বুঝতে পারছে না। জীবন একঘেয়ে হয়ে গেছে সকাল সন্ধ্যা অফিস, ঘরের কাজ, মাঝেমধ্যে পার্টিতে অ্যাটেন্ড করা, উইকেন্ডে ঘুমিয়ে বসে কাটানো, ব্যস। এলোমেলো চিন্তা মাথায় নিয়ে বিছানায় এসে বরের পাশে শুলো। আগের মতো সফির গায়ের স্পর্শে গিয়ে ঘুমোতে ইচ্ছে করে না ইরিনার। মুগ্ধতা, কমনীয়তা মরে গেছে অথচ এই মানুষটাকে পাওয়ার জন্য কী যুদ্ধটাই না করেছিল। এখনো বাবা মায়ের সাথে সম্পর্ক ঠিক হয়নি। তিন ভাই-বোনের মধ্যে ইরিনা সবার ছোট, বড় দুই ভাই আমেরিকায়। আদর ঐশ্বর্যে বড় হয়েছে, কোনো কমতি রাখেননি ওর বাবা-মা। তারা কখনো চাননি মেয়ে দেশে সেটেল্ড হোক। একরোখা মেয়েকে কিছুতেই কথা শোনাতে পারেনি। পরিবারের সবাই চলে গেলেও ইরিনা দেশ ছাড়েনি সাফির জন্য।

সেদিন সন্ধ্যায় বান্ধবীদের সাথে রেস্তোরাঁয় খেতে গিয়েছিল, বের হয়ে রাস্তার অপর পাশে একটা মেয়ের হাতে হাত রেখে সাফিকে হাঁটতে দেখেছিল। সেই থেকে মনের মধ্যে খচখচ করছে। কিছু জানতে চায়নি পাছে ভয়, সন্দেহ সত্যি হয়। সাফির অনেক পরিবর্তন হয়েছে। সময় রঙ বদলায়। যদিও পরিবর্তন স্বাভাবিক বিষয়; কিন্তু তাই বলে এতটা? মাসে একবার বা দুই মাসে একবার সাফির অফিসের কাজে ট্যুর বা বন্ধুর বাড়িতে আড্ডায় রাত্রি যাপন করতে হয়। তবে বরের ফোন ঘাঁটা বা সন্দেহ বাতিকের মতো এটা ওটা জানতে চাওয়া, জেরা করা এসব নিচু কাজ কখনো করেনি ইরিনা। মাথায়ও আসেনি বা ইচ্ছেও জন্মায়নি।

সাফি : এ কী ঘুমাওনি? শরীর খারাপ? 
ইরিনা : হুম, একটু।
সাফি : কাল অফিস থেকে ফেরার পথে যেয়ো।
ইরিনা : দেখি।

সাফি আবার ঘুম।
ইরিনা স্লিপিং পিল নিলো। পাশ বালিশটা জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ল। সাফি মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। তবে দারুণ মেধাবী বলেই নিজের একটা ভালো অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে। সুখী যুগল ইরিনা সাফি বাইরের সমাজের কাছে। চকচকে ফার্নিচার ঘুণে ধরলে যতক্ষণ না পর্যন্ত ক্ষয়ে পড়ে ততক্ষণে কেউ টেরও পায় না ভেতরটা ফাঁপা হয়ে যাচ্ছে। ইরিনা কী করবে বুঝতে পারছে না, সাফিকে ফলো করবে? সত্যি সত্যি যদি বিদঘুটে কিছু বেরিয়ে আসে? তখন কী হবে? সাফিকে ছেড়ে চলে যাবে, নাকি ফিরিয়ে আনতে চাইবে? কেমন করেই বা জানতে চাইবে ওর কাছে, কখনো ইরিনার কাছাকাছি থাকা অবস্থায় কোনো আনওয়ান্টেড ফোন কল আসেনি সাফির, সোশ্যাল মিডিয়া নিয়েও ব্যস্ত দেখেনি।

পরের দিন রাতে ইরিনা হঠাৎ সাফিকে বলে বসল, আমরা কোথাও বেড়াতে যেতে পারি না?
সাফি : কোথায় যেতে চাও, বলো?
ইরিনা : পাহাড়ে যাওয়া যায়।
সাফি : আচ্ছা, যাবো।
ইরিনা : তোমার কি মনে হয় না আমাদের জীবন নির্জীব হয়ে যাচ্ছে? 
সাফি : এটাই তো বাস্তবতা। এ নিয়ে এত চিন্তা করার কিছু নেই। আমার ধারণা তুমি বেশি স্ট্রেসের মধ্য দিয়ে যাচ্ছো। কদিন ছুটি নাও।
ইরিনা : তুমি কি আমায় ভালোবাসো?
এই প্রশ্নে সাফি নড়েচড়ে বসল।
সাফি : কথার এমন ছিরি কেনো, বউ? আর কাকে ভালোবাসব আমি। সব তো ঠিকই চলছে?
ইরিনা : ঠিক চলছে না সাফি। আমাদের সম্পর্কটা এখন অভ্যস্ততা হয়ে গেছে। আর কিছু অবশিষ্ট আছে কিনা আমার জানা নেই।
সাফি কী বলবে বুঝতে পারছে না। ইরিনার মাথায় হাত রাখল। কথা বলল না।
ইরিনা: মেয়েটা কে গো?
সাফি : কোন মেয়েটা?
ইরিনা : যাকে নিয়ে প্রায়ই ডেটে যাও?
সাফি : তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে। অফিসের কারোর সাথে দেখেছ হয়তো।
ইরিনা : আমি তো সন্দেহ বাতিক মেয়ে নই গো। তুমি ভালোভাবে বুঝতে পারছ যথেষ্ট যুক্তি প্রমাণ ছাড়া, এ কথা আমি বলিনি। সম্পর্কে ধুলো পড়েছে সাফি। তোমার যদি মনে হয় আমাকে ছাড়া চলবে তাহলে আমার আপত্তি নেই। প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে বেঁধে রাখার চেষ্টা অর্থহীন। শান্তভাবে কথাগুলো বলে ইরিনা কিচেনের দিকে গেল। দু কাপ চা নিয়ে ফেরত আসলো। সাফি কী বলবে, কী করবে বুঝতে পারছে না। হাত বাড়িয়ে চা নিলো। চুমুক দিচ্ছে থেকে থেকে কিন্তু মুখে কথা নেই। কী বা বলার থাকবে ইরিনার আন্দাজ তো মিথ্যা নয়। নিজের থেকে খুব ছোট বয়সের একটা মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছে। মেয়েটাও জানে না সাফি বিবাহিত। বিবেক বাধা দিচ্ছিল ঠিকই; কিন্তু প্রয়োজনের কাছে হেরে গেছে।

ইরিনার কথা সাফির চিন্তায় ছেদ পড়ল। ইরিনা : আমাদের বাচ্চা নেই এটা সমস্যা সাফি?
সাফি : যা ভাবছ ওসব কিছু না।
ইরিনা : আর পাঁচটা মেয়ের মতো তোমাকে আটকাব না। বাধা হব না। মিথ্যা কোনো কিছু আমার পছন্দ না, লোক দেখানো সম্পর্কও না। তুমি আমাকে বলতে পারো। সাফি এবার ঝেড়ে কাশল। 
সাফি : সুজানার সাথে আমার সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিচয়, ওর দোষ না। দোষটা আমারই। সত্যি বলতে ওর সাথে সময় কাটাতে ভালো লাগে। বন্ধু শুধু আর কোনো সম্পর্ক নেই। তুমি চাইলে সেটুকুও থাকবে না।
ইরিনা : তোমার ভালো লাগা খারাপ লাগায় হস্তক্ষেপ করার কেউ নই আমি। সাফি ঘুমাব সরে বসো। 

ইরিনা ঘুমের ভান করে বিছানায় পড়ে রইল। হিসেব মেলে না। জীবনে সুখের বাড়াবাড়ি অসুখে পরিণত হয়েছে। আত্মসম্মানে বাধে অন্যের ঘরভাঙার গল্প এখন নিজের জন্য সত্যি হচ্ছে। ওরা যে ফ্ল্যাটে থাকে এটা ইরিনার বাবা ওকে দিয়েছিল। সাফি আসতে চায়নি। শ্বশুরের দেওয়া ঘরে থাকবে না। ইরিনা অনেক বুঝিয়ে এনেছে। সাফির পাশে শুলেও সাফোকেশন হয় ইরিনার। নিজের মানুষ যখন পর হয় তখন তার মতো বাজে আর কিছু হয় না। ঘরের মধ্যে একই খোলসে অন্য মানুষ। ওদের মধ্যে দাম্পত্য প্রেমেও ঘাটতি পড়েছে। কবে সাফির সাথে রমরমা প্রেমে মেতেছিল গুনে বার করতে হয়। কাকে শেয়ার করবে বুঝতে পারছে না ইরিনা। মাকে বড় মুখ করে আর বলার মতো কিছু নেই। অফিসের এক জুনিয়র কলিগের সঙ্গে ইরিনার বন্ধুর মতোন সম্পর্ক। জুঁইকে আগেই বলে রেখেছিল আজকে অফিস ছুটির পর ওর আপত্তি না থাকলে ডিনার করতে একসাথে। পরের দিন উইকেন্ড বিধায় জুঁই আপত্তি করেনি। ইরিনা সাফির ব্যাপারটা জুঁইকে শেয়ার করল নিজের মধ্যে জমিয়ে রেখে কষ্ট হচ্ছিল খুব। জুঁই ওদেরকে কোথাও আউটিংয়ে যাওয়ার পরমর্শ দিল। যেহেতু আগামীকাল ছুটি আছে ঢাকার মধ্যে বা আশেপাশে কোথাও বেড়িয়ে এলে মন্দ হয় না। ইরিনার বাড়ি ফিরতে রাত দশটা বাজল, সাফি অনেক আগেই ফিরেছে। 

সাফি : ফোন ধরলে না যে?
ইরিনা : খেয়াল করিনি। আজকে ডিনার করে এসেছি, তুমি খেয়েছ? খাবার করে দেই?
সাফি : খেয়েছি। 
ইরিনা : আগামীকাল ফ্রি আছো?
সাফি : আছি, কেন?
ইরিনা : কোথাও একটা বেড়িয়ে আসি। পূর্বাচলে অনেকগুলো রিসোর্ট আছে। তুমি রাজি থাকলে বুক করে দেই?
সাফি : অফিসে বলে দুদিন ছুটি ম্যানেজ করো দূরে কোথাও যাই।
ইরিনা : (খুব খুশি) সত্যি?
কত কত দিন পর ইরিনা সাফিকে জড়িয়ে ধরল খুশিতে। সাফি ইরিনার কপালে চুমু খেয়ে বলল গুছিয়ে নাও কাল সকালে বেরোবো। 
ইরিনা : আচ্ছা ঠিক আছে। 

রাত বেড়েছে। ইরিনা জিনিসপত্র গুছিয়ে সাফিকে জড়িয়ে ধরে শুয়েছে। 
সাফি : তোমার শরীর এখন ঠিক আছে?
ইরিনা : ঠিক আছে। আমাদের কী হয়েছে গো?

সাফি নিজের দুই পায়ের মধ্যে ইরিনার পা নিয়ে চেপে ধরে বলে কিছু হয়নি। ঘুমোও।

সকালে সিলেটের উদ্দেশে রওনা করল। অনেক দিন পর সাফিকে পুরনো দিনের মতো দুরন্ত লাগছে। ওই ব্যাপারটা তুলে সুন্দর সময় নষ্ট করতে ইচ্ছে করছে না ইরিনার। যদিও মনের মধ্যে সত্যি মিথ্যা নিয়ে দ্বন্দ্ব। মনে মনে প্রার্থনা করছে সত্যি না হোক।  সাফিকে ছাড়া বেঁচে থাকা এত সহজ হবে না; কিন্তু নিজের আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে থাকাও সম্ভব নয়। 

সাফি : কী হলো বেড়াতে এসেও মন কোন দিকে, কও তো? কী এত ভাবছ? তুমি ছাড়া অন্য কেউ আমার আপন নয়। 
ইরিনা : না, ঠিক আছি একদম।

ইরিনা ভয় পেয়ে গেছে ট্যুর থেকে ফেরার পর সবসময়ই চেষ্টা করে বরের কেয়ার করতে সুন্দর সময় পার করতে। বেশ ভালোই দিনকাল যাচ্ছিল। ওদিন কলিগ জুঁইকে নিয়ে শপিংয়ে গেল। একটা শপে ঢুকতেই দেখল সাফির হাত জাপটে ধরে সেই মেয়েটা জিনিসপত্র দেখছে। সাফিও খেয়াল করেছে ইরিনাকে; কিন্তু কোনো ধরনের রিয়্যাক্ট করল না- এমন ভাব ইরিনাকে চিনতেই পারছে না। ইরিনা কী করবে বুঝতে পারছিল না। পায়ের নিচের মাটি সরে যাচ্ছিল। জুঁই খেয়াল করল ইরিনাকে অসুস্থ লাগছে। 

জুঁই : আপু আপনার খারাপ লাগছে? 
ইরিনা : হঠাৎ মাথা ঘুরছে,আমাকে বাসায় পৌঁছে দাও না। 
জুঁই ইরিনা দোকানটা থেকে বেরিয়ে গেলেও সাফি ঠিকঠাক কেনাকাটা নিয়ে ব্যস্ত। 
ইরিনা : ওই ছেলেটাকে খেয়াল করেছ, জুঁই? 
জুঁই : কাকে?
ইরিনা : শপে দেখলে না, আমার বর। ভেবেছিলাম সব কিছু ঠিকঠাক হয়ে গেছে। আসলে কিছু ঠিক হয়নি। আমার কী করা উচিত? ওকে মুক্তি দেওয়া?
জুঁই : আপনি মাথা ঠান্ডা করেন আপু। মেয়েটার ঠিকানা জোগাড় করে ওর সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে। 
ইরিনা : তাতে কী হবে? আমার নিজের বরকে ওর কাছে ভিক্ষা চাইব? এতটা নিচে নামব?
জুঁই : এমনও হতে পারে মেয়েটি আপনার ব্যপারে জানেই না।
ইরিনা : সাফিকে আমার দেখতে ইচ্ছে করছে না বোন। কোথায় যাব আমি বলো তো?
জুঁই : সব ঠিক হয়ে যাবে আপু। এমন এক যুগ এই সমস্যাটা এখন কমন হয়ে গেছে। 
জুঁই নিজের বাড়িতে চলে যায়। ইরিনা কাঁদছে অঝোরে; যা সন্দেহ করছে তা সত্যি হলো। সাফি কয়েকবার ফোন করেছিল। ইরিনা ফোন ধরেনি। 

বাড়ি ফিরলে একটা কথা বলেনি সাফির সাথে। 

সাফি নিজ থেকে বলছিল আমি চাইনি ওখানে কোন সিনক্রিয়েট হোক তাই কথা বলিনি। আমি সরে আসব। ইরিনা রোবটের মতো পড়ে রইল বিছানায়। এই ঘর ওর নিজের কাছে বিষ লাগছে। 

মাঝরাতে সাফিকে ডেকে তুলল। 

ইরিনা : তুমি সেপারেশন চাও?
সাফি : না।
ইরিনা : দুজনার সাথে সংসার পেতেছ? আমার জীবনটা নষ্ট করলে কেন?
সাফি : তুমি যেমন ভাবছ সুজানার সাথে তেমন অ্যাটাচমেন্ট না। 
ইরিনা : নতুন করে প্রেমের মজা নিচ্ছ? ঘরের বউ তো আটপৌরে। তুমি আমাকে দিয়ে ছোট লোকের মতোন ব্যবহার করাচ্ছ। মেয়েটা জানে আমার কথা?
সাফি : না। আমি ভুল করেছি। 
ইরিনা : সাফি আমি এভাবে তোমার সাথে বাঁচতে চাইনি, পারবও না। আমি চাই আগামীকাল থেকে আমরা আলাদা থাকি। তুমি বরং সুজানাকে নিয়ে ভালো থাকো। সাফি চুপচাপ চোরের মতো বসে আছে। 

দিন দশেকের মধ্যে জুঁই আর ইরিনা সুজানার সব ডিটেইলস বার করে ফেলেছে। একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছে, ভালো পরিবারের মেয়ে। ইরিনা চিন্তা করল ওর ইউনিভার্সিটিতে মিট করবে। কয়েক দিনের খোঁজখবরে আসা-যাওয়া এবং ভার্সিটিতে স্টে করার সময়টা বুঝে নিয়েছে। ক্যাম্পাস থেকে বার হতেই ইরিনা সুজানার সামনে দাঁড়ালো।

ইরিনা : হাই সুজানা। 
সুজানা : হ্যালো, চিনতে পারলাম না।
ইরিনা : আমি ইরিনা,সাফি আহমেদের স্ত্রী। 
সুজানা : কোন সাফি।
ইরিনা : যার সাথে সেদিন বসুন্ধরায় শপিংয়ে গিয়েছিলেন। 
সুজানা : আপনি কী বলছেন, ও ম্যারেড? 
ইরিনা : পেপারস দেখবেন? আমি জানতে এসেছিলাম আপনি ওর সাথে থাকবেন কিনা? তাহলে ওকে মুক্তি দিব। কিছু মনে না করলে গাড়িতে উঠুন- আমরা কোথাও বসি। 

সুজানা গাড়িতে উঠে বসল। 

সুজানা : আসলে আমি জানতাম না। আর আমাদের সাথে রিলেশন ছয় সাত মাসের মতোন। ওর সাথে থাকার মানেই হয় না। সরি একজন মেয়ে হয়ে অজান্তে আপনাকে কষ্ট দিলাম। 
সুজানা কাঁদছে। জোরে জোরে ফুপিয়ে কাঁদছে। 
ইরিনা সুজনার হাতটা ধরল।
ইরিনা : আমি ভালোবেসেই সাফিকে বিয়ে করেছিলাম। পুরুষ মানুষের মন হয়তো ফিউশন চায়। আমার হয়তো নিজের মধ্যে সেটা তৈরি করা দরকার ছিল। মন খারাপ কোরো না। তোমরা চাইলে আমি পথের কাঁটা হবো না। 
সুজানা : না আপু, ওর শাস্তি হওয়ার দরকার আছে। 
ইরিনা : তাহলে আমাদের দেখা হওয়ার ব্যাপারটা এড়িয়ে গিয়ে ওকে অ্যাভয়েড করতে পারো। আসলে এমন যুগ পড়েছে না সব কিছু হাতের মুঠোয়। মানুষ হাত বাড়ালেই অসংখ্য হাত। অজান্তে কত ঘর ভেঙে গেছে, ভেঙে যায়। সামাজিকতার পোশাকে যেটা বেঁচে থাকে ওটা কি আর সংসার থাকে?
সুজানা : আপনি নিশ্চিত থাকুন আমাকে দিয়ে আপনার কোনো ক্ষতি হবে না।
ইরিনা : সে আমি জানি; কিন্তু কার সাথে থাকব বলো? ভাঙা বিশ্বাসের সাথে বাকি জীবন আলোছায়ায় বাঁচার চেষ্টা হয়তো। 

সুজানাকে ওর বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে ইরিনা বলল, ভালো থাকবে, নিজেকে যত্নে রাখবে। 

গাড়ি ছুটছে ইরিনার মনের মধ্যে হু-হু, নিজেকে নিজে বুঝাতে পারছে না। কার সাথে বসবাস করছি? মানুষটার সাথে নাকি একটা সম্পর্কের সাথে!

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //