১.
মুরগির বাচ্চাগুলি সকালে ঘুম ভাঙ্গার পর দেখে খোঁয়াড়ের ভিতর তাদের মা নেই। মুরগির মালকিন খোঁয়াড় খুলে মুরগির বাচ্চাগুলি ছেড়ে দিতেই তারা চিচ্চির মিচ্চির চেঁও চেঁও করে সারা পাড়া মাথায় তুললো। তন্নতন্ন করে খুঁজে কোথাও তাদের মাকে পেলো না।
দুপুর হয়ে এলো। আমাকে খেতে ডাকছে যেহেতু আমি অতিথি। সামিয়ানা টাঙ্গিয়ে বাড়ির সামনে টেবিলের উপর খাবার পরিবেশন করা হয়েছে। বেগুন ভাজি, মাসকালাই ডাল ও মুরগির মাংস। খেতে খেতে পাশে দেখি মুরগির বাচ্চারা একত্রিত হয়ে চেঁও চেঁও করছে। এর অর্থ হচ্ছে তাদেরকে কিছু খেতে দিতে হবে। মুরগির মাংসের তরকারি নিয়ে খেতে গিয়ে দেখলাম এটা বয়লার মুরগির না, দেশি মুরগির মাংস। খুব সুস্বাদু হয়েছে। জিজ্ঞাসা করলাম- তোমাগো পালা মুরগির নাকি? বিপরীত পক্ষ থেকে উত্তর এলো- হু।
আমি একটা মুরগির রানের হাড় চিবিয়ে উচ্ছিষ্টাংশ মুরগির বাচ্চাগুলির দিকে ছুড়ে মারলাম। ওরা আনন্দচিত্তে খাওয়ার জন্য হামলে পড়লো। নিজেদের অজ্ঞাতসারে কিংবা জ্ঞাতসারে ওরা এখন খাচ্ছে ওদের মায়ের হাড়ের উদ্দিষ্টাংশ।
২.
সুইডেন প্রবাসী মন্টি চৌধুরী মিলি বছরে একবার দেশে আসেন। থাকেন গুলশানে নিজের আলিশান বাড়িতে। মিলির দুবার বিয়ে হয়েছে। দুইটাই ডির্ভোস। তারপর তিনি একটা পুরুষ জার্মান শেফার্ড পালা শুরু করেন; যার নাম রাখেন বিলবার্ড। তার কাছে মনে হয়ে বিলবার্ডের চেয়ে বেশি আপন তার আর দুনিয়াতে কেউ নেই। সর্বক্ষণ বিলবার্ড তার সঙ্গী, এমনকি অফিসেও।
অতঃপর...
চার বছর আগে অনলাইনের মাধ্যমে তার সঙ্গে বাংলাদেশি এক স্মার্ট, সুদর্শন যুবকের সঙ্গে প্রেম হয়। মূলত তার সঙ্গে একান্ত কিছু সময় কাটাতে বছরে এক মাস সময় তিনি গুলশানের বাড়িতে কাটান। বিয়ের প্রতি কোনো ঈমান নেই আর মন্টি চৌধুরী মিলির। দুবার ডির্ভোস হওয়ার পর তার মনে হয়েছে লিভ টুগেটার করে যদি মনে হয় বিয়ে করা যায় তবেই তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবেন নচেৎ না। এবারও তিনি এসেছেন তার প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করতে। তবে এবারের আসাটা অন্যবারের মতোন না। তিনি তার প্রেমিককে বলে রেখেছেন এবার এসে বিবাহ করবেন। অতঃপর তাকে নিয়ে সুইডেন চলে যাবেন। যথারীতি তার প্রেমিক এয়ারপোর্ট থেকে তাকে রিসিভ করে গুলশানের বাড়িতে গিয়ে উঠলো। ৩-৪ দিন তারা একসঙ্গে থাকলো-খেলো-সেক্স করলো-জড়িয়ে ধরে ঘুমালো। যা যা করা সম্ভব সবই করলো; কিন্তু ৫ দিন পর মিলি তার প্রেমিককে বিবাহের কথা বললে সে দোনামোনা করতে থাকলো। আস্তে আস্তে বিয়ে নিয়ে তাদের মধ্যে তর্ক ঝগড়া শুরু হতে থাকলো;
কিন্তু রাতের বেলা শরীর জাগলে তারা শরীরকর্ম করতে ভুলেন না। যতই মিলির ছুটির দিন শেষের দিকে যাচ্ছে বিয়েকেন্দ্রিক এ ঝগড়া ক্রমশ বাড়তেই আছে। ব্যাপারটা এমন দাঁড়ালো তার প্রেমিকের বিয়ে করা ছাড়া উপায় নেই। সারমর্ম অনেকটা এরকম যেহেতু তুমি আমাকে ভালোবাসো তবে বিয়ে করতে সমস্যা কী? কিন্তু বিয়ে করলে কী সমস্যা সেটা তার প্রেমিকই ভালো জানে। তার প্রেমিকের কাছে ব্যাপারটা গড়াতে গড়াতে এমন জায়গায় এসে ঠেকলো যে তার মনে হচ্ছে হয় মিলিকে বিয়ে করতে হবে নচেৎ মার্ডার। মাসের শেষের দিকে একদিন সঙ্গমরত অবস্থায় মিলিকে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে মেরে ফেলে তার প্রেমিক।
অবশ্য কাজটা সহজ হইছে ওয়াইনের সঙ্গে ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে খাওয়ানোতে। বিলবার্ড তখন ঘুমাচ্ছিল সোফায়। মিলিকে খুন করে রাতে বেলা বাড়ি থেকে বের হয়ে যান তার প্রেমিক। বাসে করে তার গ্রামের বাড়িতে পৌঁছান। পুনরায় রাত এলে তার স্ত্রী ও ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে ঘুমিয়ে থাকেন। এদিকে বিলবার্ড প্রথমদিন ক্ষুধায় ফ্রিজ থেকে খুলে এবং বাহির থাকা খাবারদাবার খেয়ে শেষ করলো। সাতদিন পর ডিবি পুলিশ যখন বাড়িতে প্রবেশ করলো তারা দেখলো বিলবার্ড মিলির বুকের উপর থেকে মাংস খাচ্ছে, তার মুখভর্তি রক্ত!
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
বিষয় : মিলু হাসান গল্প ক্ষুধা সাহিত্য
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh