ঢালিউড
মাহমুদ সালেহীন খান
প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০২০, ০৮:৫৭ এএম
আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২০, ০৯:০৫ এএম
প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০২০, ০৮:৫৭ এএম
ঢালিউড
মাহমুদ সালেহীন খান
আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২০, ০৯:০৫ এএম
বাংলা সিনেমায় মহানায়কের মুকুট তার মাথায় ওঠেনি; কিন্তু অনেক সিনেমা বিশ্লেষক মনে করেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ অভিনয় শিল্পীদের একজন। তার রক্তে অভিনয়টা থাকলেও প্রথম দিকে সিনেমা তাকে টানেনি। বরং সৌমিত্র মেতে ছিলেন আবৃত্তি আর মঞ্চনাটকে।
সত্যজিত রায়ের হাত ধরেই হয় বড় পর্দায় তার। এরপরের গল্প তো সবারই জানা। কলকাতার বেলভিউ ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৫ নভেম্বর দুপুরে না ফেরার দেশে চলে গেলেন এই গুণী অভিনেতা সবাইকে কাঁদিয়ে।
৮৫ বছরের জীবনে ছয় দশকের বেশি সময় কেটেছে অভিনয়ের নেশায়। তিনশ’র বেশি চলচ্চিত্রে তার দাপুটে অভিনয় দেখেছে বাংলা সিনেমার দর্শক। ‘অপরাজিত’র অপু আর বাঙালির নিজস্ব গোয়েন্দা চরিত্র ‘ফেলুদা’ই তাকে বাঁচিয়ে রাখবে সবসময়।
নদিয়ার কৃষ্ণনগরের আইনজীবী বাবা মোহিত কুমার চট্টোপাধ্যায় ও মা আশালতা চট্টোপাধ্যায় ছিলেন মঞ্চনাটকের সাথে জড়িত। আশালতা ছিলেন স্থানীয় নাটকের দল ‘প্রতিকৃতি’র প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। সেই হিসেবে অভিনয় গুণ সৌমিত্রের জন্মসূত্রেই পাওয়া। ১৯৩৫ সালের ১৯ জানুয়ারি কৃষ্ণনগরে তার জন্ম। পরিবারে ডাক নাম ছিল ‘পুলু’। বাড়ির বসার ঘরে নিয়মিত নাটকের মহড়া দেখে বেড়ে উঠলেও অভিনয়ের সাথে তার সখ্য তৈরি হয় আরও অনেক পরে।
সৌমিত্র কৃষ্ণনগরের সেন্ট জোনস বিদ্যালয়ের পাট চুকিয়ে কলকাতার সিটি কলেজে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক আর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর করেন। ছাত্রজীবনেই প্রখ্যাত অভিনেতা ও নির্দেশক অহীন্দ্র চৌধুরীর হাত ধরে মঞ্চনাটকে পা রাখেন তিনি। উইলিয়াম শেকসপিয়রের ‘কিং লেয়ার’ অবলম্বনে নির্দেশক সুমন মুখোপাধ্যায়ের ‘রাজা লিয়র’ নাটকে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকের মনে স্থায়ী আসন তৈরি করে নেন সৌমিত্র। অনেকের বিচারে এটিই তার সবচেয়ে প্রশংসিত মঞ্চনাটক। তবে সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালী’ দেখে তার সেই ভাবনা পাল্টে যায়। সৌমিত্র তখন ভাবলেন, সিনেমাও তো করা যায়!
তখন অপু ট্রিলজির দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ‘অপরাজিত’র জন্য অপু চরিত্রের অভিনয়শিল্পী খুঁজছিলেন সত্যজিৎ রায়। তার সহকারী নিত্যানন্দ দত্তের সাথে সৌমিত্রের বন্ধুত্ব ছিল। বন্ধুর সাথে সেই চলচ্চিত্রের জন্য অডিশনও দিতে গিয়েছিলেন সৌমিত্র। তবে চরিত্রের সাথে সৌমিত্রের বয়স না মেলায় সেবার শিকে ছেঁড়েনি। অপুর সংসারে সৌমিত্রের বিপরীতে অভিনয় করেন ১৩ বছর বয়সী শর্মিলা ঠাকুর। সেই সিনেমাতেই রুপালি পর্দায় অভিষেক ঘটে দু’জনের। অপুর সংসার দর্শকমহলে সাড়া ফেলার পর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক চলচ্চিত্রে অভিনয় করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।
সত্যজিতের ৩৪টি সিনেমার ১৪টিতেই অভিনয় করেছেন সৌমিত্র। অপু ছাড়াও ফেলুদা চরিত্রেও অভিনয় করে সমালোচকদের কাছে প্রশংসিত হয়েছেন। ‘সাত পাকে বাঁধা’, ‘চারুলতা’, ‘বাক্স বদল’, ‘আকাশ কুসুম’, ‘মনিহার’, ‘কাঁচ কাটা হীরে’, ‘ঝিন্দের বন্দি’, ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’, ‘সোনার কেল্লা’, ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’ ও ‘হীরক রাজার দেশে’।
অভিনয় খ্যাতি এনে দিলেও সৌমিত্র কবিতা আর আবৃত্তি ছাড়েননি একদিনের জন্যও। সমানতালে চলেছে লেখালেখি, মঞ্চ নাটকের নির্দেশনা। ‘টিকটিকি’, ‘নামজীবন’, ‘রাজকুমার’, ‘নীলকণ্ঠ’ তারই লেখা নাটক। ‘সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ কবিতা’, ‘মধ্যরাতের সংকেত’, ‘হায় চিরজল’, ‘জন্ম যায় জন্ম যাবে’, ‘যা বাকি রইল’, ‘হে সায়ংকাল’- তার লেখা কবিতার বইয়ের কয়েকটি।
আবৃত্তিতে সবসময়ই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জীবনানন্দ দাশের কবিতা তাকে টেনেছে। তাদের কবিতা সৌমিত্র কণ্ঠে পেয়েছে ভিন্নমাত্রা। সত্যজিৎ রায়ের ‘অশনি সংকেত’ চলচ্চিত্রে সৌমিত্রের সাথে অভিনয় করার সুযোগ হয় বাংলাদেশে সত্তর ও আশির দশকের জনপ্রিয় নায়িকা ববিতার। তিনি বলেন, তার মতো শিল্পীর মৃত্যু হয় না; দর্শকদের হৃদয়ে তিনি চিরকাল ছিলেন, আছেন ও থাকবেন।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh