সৌমিত্রর চলে যাওয়ার এক বছর আজ

দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০২০ সালের ১৫ নভেম্বর টানা ৪০ দিন মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করে ৮৫ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি দেন এই বরেণ্য অভিনেতা।

তিনি ছিলেন বাংলা সিনেমার কিংবদন্তী অভিনেতা। কবিতাচর্চা, রবীন্দ্রপাঠ, সম্পাদনা, নাট্যসংগঠন তার বিপুল বৈচিত্র্যের একেকটি দিক। একসঙ্গে অনেককিছু নিয়েই তিনি ছিলেম অনন্য।

১৯৩৫ সালের ১৯ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের নদীয়ার কৃষ্ণনগরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি। তার বাবা ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী। জীবনের প্রথম ১০টা বছর সৌমিত্র কাটিয়েছিলেন কৃষ্ণনগরে। তার দাদার নাটকের দল ছিল।

বাড়িতে নাট্যচর্চার পরিবেশ ছিল। ছোটবেলা থেকেই নাটকে অভিনয় শুরু করেন তিনি। কলকাতার সিটি কলেজ থেকে বাংলা সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা শেষ করে সৌমিত্র ভর্তি হন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর করেন।

কলেজের ফাইনাল ইয়ারে হঠাৎ একদিন মঞ্চে শিশির ভাদুড়ীর নাটক দেখার সুযোগ হয় তার। সেদিনই জীবনের মোড় ঘুরে যায়। তিনি পুরোদস্তুর নাটকে মনোনিবেশ করেন।

শিশির ভাদুড়ীকে গুরু মানতেন সৌমিত্র। নিজেই বলেছেন, অদ্ভুত এক বন্ধুত্ব ছিল তাদের। সব রকম আলোচনা হতো দুজনের।

বাংলা সিনেমাজগতের আরেক কিংবদন্তি ছবি বিশ্বাসের সঙ্গে সৌমিত্রকে পরিচয় করিয়ে দেন সত্যজিৎ রায়। তখনই সিনেমার জগতে হাতেখড়ি হয় সৌমিত্র। ‘অপুর সংসার’-এ অপু হন তিনি। যা তাকে কালজয়ী এক অভিনেতায় পরিণত করেছে।

সত্যজিতের প্রায় ১৪টি সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন সৌমিত্র। একমাত্র অভিনেতা তিনিই যার সৌভাগ্য হয়েছে সৌমিত্রের এতগুলো সিনেমায় অভিনয়ের। সত্যজিতের সৃষ্টি ‘ফেলুদা’কেও বড় পর্দায় জীবন্ত করেছিলেন তিনিই।

দীর্ঘ ৬০ ক্যারিয়ারে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় সত্যজিত রায় ছাড়াও মৃণাল সেন, তপন সিংহসহ বহু নামী পরিচালকের প্রায় দুইশয়ের মত ছবিতে অভিনয় করেছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। তার খুবই জনপ্রিয় ছবিগুলোর মধ্যে আছে মৃণাল সেনের ‘আকাশ-কুসুম’, তপন সিংহের ‘ক্ষুধিত পাষাণ’, ‘ঝিন্দের বন্দী’, অজয় করের ‘অতল জলের আহ্বান’, ‘সাত পাকে বাঁধা’, ‘পরিণীতা’, আশুতোষ বন্দোপাধ্যায়ের ‘তিন ভুবনের পারে’ ইত্যাদি।

আরও আছে ‘অশনিসংকেত’, ‘সোনার কেল্লা’, ‘দেবদাস’, ‘নৌকাডুবি’, ‘গণদেবতা’, ‘হীরক রাজার দেশে’, ‘আতঙ্ক’, ‘গণশত্রু’, ‘তিন কন্যা’, ‘আগুন’, ‘শাস্তি’, ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’ প্রভৃতি।

মঞ্চ নাটকেও তার পদচারণা ছিলো দুর্দান্ত। নাটক লিখেছেন, অভিনয় করেছেন। বাংলাদেশেও মঞ্চ মাতিয়ে গেছেন তিনি। একজন কবি ও কবিতা আবৃত্তি শিল্পী হিসেবেও ছিলেন নন্দিত।

অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন সৌমিত্র। ২০০৪ সালে তাকে পদ্মভূষণে সম্মানিত করা হয়। এ ছাড়া জাতীয় পুরস্কার, দাদাসাহেব ফালকেসহ অনেক পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।

১৯৬০ সালে সৌমিত্র বিয়ে করেন দীপা চট্টোপাধ্যায়কে। তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //