মঙ্গলগ্রহে প্রাপ্ত তুষার আস্তরণ

মঙ্গল গ্রহের দক্ষিণাংশের উচ্চভূমিগুলো বিচ্ছিন্ন হয় ৩.৯-৩.৫ মিলিয়ন বর্ষ প্রাচীন উপত্যকার সমষ্টি বা ভ্যালি নেটওয়ার্ক দ্বারা। এটিই ছিল মঙ্গলীয় পৃষ্ঠে পানির উপস্থিতির প্রমাণ। 

নতুন গবেষণা মতে, এই ভ্যালি নেটওয়ার্ক ক্ষোদিত হয়েছে জমাটবাঁধা বরফের গলে যাওয়া পানি থেকে, পূর্বকৃত ধারণা মতে কোনো প্রবাহিত নদী থেকে নয়। 

‘চার যুগ আগে যখন মঙ্গলীয় ভ্যালিগুলো প্রথম আবিষ্কার করা হয়, তখন ধরে নেয়া হয় যে, মঙ্গলে এক সময় নদী বহমান ছিল যার থেকে এই উপত্যকাগুলো উৎপত্তি লাভ করে’, বলেন লেখক ড. আনা গ্রো গেলোফার, গবেষক, ডিপার্টমেন্ট অব আর্থ, অশেন অ্যান্ড এটমোস্ফেরিক সায়েন্স, ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়া এবং দ্য স্কুল অব আর্থ অ্যান্ড স্পেস এক্সপ্লোরেশন, আরিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটি।

তিনি আরো বলেন, ‘মঙ্গল গ্রহে শত শত উপত্যকা রয়েছে যার প্রত্যেকটি একে অপরের থেকে ভিন্নতর। যদি কোনো উপগ্রহ থেকে পৃথিবীকে দেখা হয় তবে অসংখ্য উপত্যকা দেখা যাবে, যার কয়েকটির উৎপত্তি নদী হতে, কয়েকটি হিমবাহ থেকে, আবার কয়েকটি অন্য কোনো প্রক্রিয়ায় গঠিত এবং প্রত্যেকটিই বিশেষ আকৃতি সম্পন্ন। মঙ্গল গ্রহের চিত্রও পৃথিবী হতে ভিন্ন নয়। উপত্যকাসমূহ বৈচিত্র্যপূর্ণ এবং একে অপরের থেকে ভিন্ন। বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় এসব উপত্যকা ক্ষোদিত হয়। 

মঙ্গলীয় উপত্যকাসমূহ ও কানাডার আর্কটিকে অবস্থিত ডেভন দ্বীপের হিমবাহের মধ্যকার প্রাপ্ত সাদৃশ্য ড. গ্রো গেলফার এবং তার সহকর্মীদের নতুন করে গবেষণার প্রেরণা জোগায়। 

‘ডেভন দ্বীপ হলো পৃথিবীতে প্রাপ্ত মঙ্গলগ্রহের উৎকৃষ্টতম উপমা। এটি হলো একটি শীতল, শুষ্ক, মেরু মরুভূমি ও এর দীর্ঘ শীতল ভীত হলো এর হিমবাহ’, বলেছেন সহলেখক অধ্যাপক গরডন অসিনকি, গবেষক, ডিপার্টমেন্ট অব আর্থ সায়েন্সেস অ্যান্ড দি ইনস্টিটিউট ফর আর্থ স্পেস এক্সপ্লোরেশন, ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অন্টারিও। 

ওই গবেষণায় বিজ্ঞানীরা ১০ হাজার ২৭৬টি মঙ্গলীয় উপত্যকার নমুনা বিশ্লেষণ করেন ও গবেষণাকালীন সময়ে তারা গাণিতিক পদ্ধতি অবলম্বনে এর বিশ্লেষণ প্রক্রিয়া অনুধাবন করেন। তারা ইউরোপীয়ান স্পেস এজেন্সির মারস এক্সপ্রেস অরবিটারের ওপর নাসার মারস গ্লোবাল সারভেয়ার স্পেসক্রাফট ও হাই রেজলিউশন ক্যামেরা (এইচআরএসসি) ব্যবহার করেন। একইসাথে মারস অরবিটার লেজার অ্যালটিমিটার (মোলা) যন্ত্রের সাহায্যে উপাত্ত সংগ্রহ করেন। 

 ‘এই গবেষণা হতে সর্বপ্রথম প্রাপ্ত ফলাফলই ছিল প্রাচীন বরফের আস্তরণের নিচে গলে যাওয়া পানির প্রবাহ কর্তৃক সৃষ্ট বরফের ভাঙনের প্রমাণ’- বলেন সহলেখক অধ্যাপক মারক জেলিনেক, ডিপার্টমেন্ট অব আর্থ অ্যান্ড সায়েন্সেস, ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অন্টারিও। 

এই তত্ত্ব থেকে আরো প্রমাণিত হয় যে, কি করে ৩.৮ বিলিয়ন বছর পূর্বে মঙ্গলীয় উপত্যকাগুলো এমন একটি গ্রহে উৎপত্তি লাভ করে, যা কিনা সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্বের থেকেও অধিক দূরত্বে অবস্থিত এবং তা এমন একটি সময়ে যখন সূর্য ছিল বর্তমানের তুলনায় কম তীব্র।

ড. গ্রো গেলফারের মতে, ‘জলবায়ুর মডেলিং থেকে ধারণা করা হয় যে, মঙ্গল গ্রহের প্রাচীন জলবায়ু ছিল অনেক শীতল যখন উপত্যকা গঠিত হয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা সব ধারণার সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে একটি অভিমতে পৌঁছাই যে, উপত্যকা ও হিমবাহ উভয়ই বরফের আস্তরণের তলায় গঠিত হতে পারে জল নির্গমন প্রক্রিয়ার অংশরূপে, যা প্রাকৃতিক উপায়ে বরফের আস্তরণের নিচে তৈরি হয় যখন সেখানে পানির সঞ্চার ঘটে।’ 

এই পরিবেশকে মঙ্গল গ্রহের সম্ভাব্য প্রাচীন জীবের টিকে থাকার জন্য উত্তম শর্তরূপে ধারণা করা হয়। বরফের আস্তরণ নিম্নভাগে অবস্থিত পানির জন্য স্থায়ী সুরক্ষার কারণ বলে বিবেচ্য, যা কিনা চৌম্বক ক্ষেত্রের অনুপস্থিতিতে পানিকে সুরক্ষা প্রদান করে। একদা মঙ্গল গ্রহে যার উপস্থিতি পরিলক্ষিত থাকলেও বিলিয়ন বর্ষ পূর্বে তা বিলীন হয়ে যায়।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //