মঙ্গলগ্রহে মার্স এক্সপ্রেসের চমকপ্রদ আবিষ্কার

মঙ্গলগ্রহে এই মুহূর্তে প্রাণের চিহ্ন পাবার সম্ভাবনা ক্ষীণ হলেও অতীতে যে প্রাণের অস্তিত্ব ছিল, এমন ধারণার সপক্ষে নানা লক্ষণ পাওয়া যাচ্ছে। 

 ২০০৪ সাল থেকে ইউরোপের মহাকাশযান মার্স এক্সপ্রেস জটিল যন্ত্রপাতির সাহায্যে মঙ্গলগ্রহে অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে। ইউরোপের উদ্যোগে কোনো গ্রহ সম্পর্কে সাক্ষাৎ গবেষণার প্রথম প্রচেষ্টা এটি। 

গ্রহ সংক্রান্ত ভূতাত্ত্বিক অধ্যাপক রাল্ফ ইয়াউমান বলেন, বলতেই হবে যে, প্রযুক্তিগত দিক থেকে এটা সত্যি অসাধারণ সাফল্য। একটি মহাকাশযান কোনো রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়াই প্রায় ২০ বছর ধরে চরম বিকিরণ সত্ত্বেও অত্যন্ত কঠিন পরিবেশে ভুলত্রুটি ছাড়াই কাজ করে চলেছে! সত্যি খুবই ভালো কথা।

মার্স এক্সপ্রেসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র হলো বিশেষভাবে তৈরি এক ক্যামেরা। রাল্ফ ইয়াউমানও সেটি তৈরির কাজে অংশ নিয়েছিলেন। সেই ক্যামেরা প্রায় নিখুঁত ছবি তুলতে পারে। সেটি কাজে লাগিয়ে প্রথমবার মঙ্গলগ্রহের ত্রিমাত্রিক ও রঙিন মানচিত্র তৈরি করা সম্ভব হয়েছে।

সেই সব মডেলের ভিত্তিতে সেখানকার ভূতাত্ত্বিক বিকাশ ও জলবায়ুর ইতিহাস সম্পর্কে অনেক নতুন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। মঙ্গলগ্রহে পৌঁছানোর কিছুকাল পরেই এই যান জমাট পানি আবিষ্কার করেছিল, যার ফলে পৃথিবীতে সাড়া পড়ে যায়। ফলে সেখানে যে এককালে প্রচুর পরিমাণ পানি বয়ে যেতো, সেই তত্ত্বের সপক্ষে আরো প্রমাণ পাওয়া গেল। 

ইয়াউমান বলেন, আমরা পাহাড়ের উচ্চতা সম্পর্কে জানি। উপত্যকার গভীরতাও আমাদের জানা আছে। তার ভিত্তিতে কোথায়, কতকাল ধরে কত পরিমাণ পানি ছিল, সে বিষয়ে ধারণা পাওয়া যায়। মঙ্গলগ্রহে কখনো প্রাণ ছিল কিনা, তা জানার জন্য এই তথ্য অত্যন্ত জরুরি। ভবিষ্যতেও সেখানে বসতি স্থাপনের ক্ষেত্রে সেই জ্ঞান কাজে লাগবে।

সেই এলাকার উপর দিয়ে যে নদী বয়ে যেতো, সেটি অনেকটা পৃথিবীর রাইন নদীর মতো। এমনকি ঠিক রাইনের মতো সেই নদীও সেকেন্ডে ৩,০০০ থেকে ৫,০০০ ঘন মিটার পানি পরিবহণ করতো।

মার্স এক্সপ্রেস মঙ্গলগ্রহের সবচেয়ে বড় আগ্নেয়গিরির মধ্যে তাজা লাভার চিহ্নও পেয়েছে। মাত্র ২০ লাখ বছর আগে সেখানে অগ্নুৎপাত ঘটেছিল। আজও মাটির নীচে গরম অংশ থাকতে পারে, যা জীবাণুর বিকাশের সহায়ক হতে পারে।

বিষুবরেখা ও ক্রান্তীয় অঞ্চলে আরো একটি চমকপ্রদ আবিষ্কার করেছে মার্স এক্সপ্রেস। সেখানে হিমবাহের চিহ্ন পাওয়া গেছে। 

ইয়াউমান বলেন, সেখানে কোনো এক সময়ে উলকার ধাক্কায় তৈরি গর্তে বরফ বয়ে যেত। প্রথম গর্তের নীচে দ্বিতীয় আরেকটি গর্ত রয়েছে। প্রথমটি উপচে পড়ে দ্বিতীয়টি ভরিয়ে দিতো। সেটা জেনে আমি খুবই অবাক হয়েছিলাম। পাহাড়ে বড় হয়েছি বলে সে সব খুব নিজের মনে হচ্ছিল।

হিমবাহের চিহ্ন দেখিয়ে দিচ্ছে যে, মঙ্গলগ্রহ এতই অস্থির যে সেখানখার বিষুবরেখা মেরুর দিকে অগ্রসর হচ্ছে ও এর বিপরীতটাও ঘটছে। সে কারণে অতীত যুগে পানির গতিরও বার বার পরিবর্তন ঘটেছে।

সাধারণত নদীর উৎপত্তি ও তার বিনাশের এমন চক্র পূর্ণ হতে লাখ লাখ বছর সময় লাগে। তবে সেগুলোর চিহ্ন থেকে গেছে। -ডয়চে ভেলে

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //