স্বপ্নবাজ তরুণ সুমন

ইউটিউবে বাজিমাত, ড্রোন বানিয়ে চমক

জীবনে বড় হতে হলে স্বপ্নবাজ হওয়া খুবই জরুরি। এমনই একজন স্বপ্নবাজ তরুণ সুমন। যার পুরো নাম- মো. সুমন ইসলাম। কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী সুমনের কোনো কারিগরি শিক্ষা না থাকলেও তিনি নিজের উদ্ভাবনী ও মেধা শক্তি কাজে লাগিয়ে ড্রোনসহ নানা ইলেকট্রনিক সামগ্রী বানিয়ে এবং সেগুলোর ভিডিও ইউটিউব চ্যানেলে ছেড়ে এখন শেরপুরের এক বিস্ময়কর স্বপ্নবাজ তরুণ হিসেবে পরিচিত। সেইসঙ্গে তিনি এখন আলোচিত ইউটিউবার ও ইউটিউব চ্যানেল ‘ক্রেজি থিঙ্ক’-এর জনক। অন্যদিকে ড্রোন বানিয়ে চমক সৃষ্টির পাশাপাশি ইউটিউবেই তিনি ঘরে বসেই মাসে আয় করছেন ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। সচেতন মহলের ধারণা, তাকে কারিগরি সহায়তা ও পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হলে তিনি অচিরেই হয়ে উঠতে পারেন একজন সেরা ইউটিউবার। দেশের লাখ লাখ বেকার তরুণ-যুবকদের জন্য হয়ে উঠতে পারে এক অনুকরণীয়-অনন্য দৃষ্টান্ত।

জানা যায়, শেরপুর সদর উপজেলার বাজিতখিলা ইউনিয়নের প্রত্যন্ত পল্লী পশ্চিম কুমড়ি গ্রামের দুলাল মিয়া ও সমতা বানুর ছেলে সুমন ইসলাম। তিনি ৩ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে তৃতীয়। সুমন গত বছর এইচএসসি পাসের পর এবার স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছেন শেরপুর সরকারি কলেজে। পিতা হতদরিদ্র রিকশাচালক হওয়ায় তিনি নিজ এলাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন বাসাবাড়িতে বৈদ্যুতিক কাজ করার পাশাপাশি লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এরপরও ছোট থেকেই বৈদ্যুতিক খুটিনাটি বিষয়ে নাড়াচাড়াসহ নতুন কিছু তৈরি বা উদ্ভাবনের প্রবল ইচ্ছা তার মধ্যে কাজ করছিল। 

ইউটিউবে বিভিন্ন সামগ্রী ও যন্ত্রপাতি তৈরির প্রযুক্তি দেখে সুমন নিজে নিজেই শিখেছেন কৌশল। ক্যামেরাসহ ড্রোন, ফ্যান, রিচার্জেবল হট এয়ারগান, রিচার্জেবল পাওয়ারফুল এয়ারকুলার, ওয়্যারলেস, সিসিটিভি ক্যামেরা, ফ্লাইং হেলিকপ্টার, ৫ ধরনের এয়ারফোন, সিম ছাড়া ওয়াইফাই রাউটার, পাওয়ারফুল ওয়াটার পাম্প, হ্যান্ড কন্ট্রোল আরসি ড্রোনসহ অসংখ্য ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও যন্ত্রপাতি তৈরি করেছেন নিজেই। পুরনো ফেলে দেওয়া ইলেকট্রিক যন্ত্রাংশ, কাগজ, গাম, আর কিছু নতুন যন্ত্রাংশ ব্যবহারে তৈরি করেছে নানা আকর্ষণীয় খেলনা, ব্যবহার্য সামগ্রী ও যন্ত্রপাতি। ওইসব যন্ত্রপাতি হাতে-কলমে তৈরির ভিডিও ধারণ করে সেগুলো নিজের ইউটিউব চ্যানেলে ছেড়ে দিয়ে প্রতি মাসে আয় করছেন সুমন।

ইউটিউবার সুমন ইসলাম জানান, বাবা অনেক কষ্ট করে কাজ করতেন। আমরা একটা ঝুপড়ি ঘরে গাদাগাদি করে থাকতাম। একপর্যায়ে আমি বৈদ্যুতিক মিস্ত্রির কাজ শুরু করি। এসএসসি পাস করার পর শেরপুরের ডা. সেকান্দর আলী কলেজে ভর্তি হলে সেখানে ফ্রি ইন্টারনেট সুবিধা পাই ওয়াইফাই লাইনের মাধ্যমে। তখন ইউটিউবে ঢুকে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি তৈরির ভিডিও দেখি। আমিও বিভিন্ন যন্ত্র তৈরি শুরু করি। 

তিনি জানান, প্রথমে খালি ম্যাচের প্যাকেট দিয়ে একটি এয়ারকপ্টার তৈরি করে ইউটিউবে দিই। এটিতে ব্যাপক সাড়া পড়ে, ভিডিওটিতে প্রায় ৯ কোটি ভিউ হয়। ৬ শতাধিক যন্ত্রপাতি তৈরির ভিডিও আমি ইউটিউবে ছেড়েছি। বর্তমানে আমার ইউটিউব চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার ৬ লাখের কাছাকাছি। মাসে ইউটিউব থেকে আয় হয় ৭০-৮০ হাজার টাকা। আমাদের সংসারে এখন আর আগের মতো অভাব নেই। 

সুমন আরও জানান, আমি একটি ড্রোন বানিয়েছি, যা অনেক উঁচুতে এবং দূরত্বে যেতে পারে। দেশের সবচেয়ে বেশি ওজনবাহী একটি ড্রোন তৈরি করতে চাই। ওই ড্রোন মশা নিধনে কীটনাশক ছিটাতে পারবে। এ ছাড়া ড্রোনটি বিভিন্ন ধরনের তথ্যচিত্র ধারণ করতে পারবে। তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে তিনি জানান, একজন সেরা ইউটিউবার হতে চাই।

স্থানীয় কিশোর মোশারফ জানান, ড্রোন তো আমি জীবনে দেখিনি। সুমন ভাই বানাইছে। তাই দেখবার আইছি। এইডা আকাশে এত উপরে উঠে যে, পরে তা তাকিয়ে থেকেও দেখা যায় না! 

বাজিতখিলা ইউপি চেয়ারম্যান আমির আলী সরকার বলেন, সুমনের মধ্যে বড় হওয়ার আকাঙ্ক্ষা আছে। সরকারিভাবে সহায়তা করলে সে সামনের দিকে আরও এগিয়ে যাবে। দেশকে অবাক করার মতো আরও নতুন কিছু উপহার দেবে। 

এ ব্যাপারে শেরপুরের জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব দরিদ্র পরিবারের সন্তান সুমনের ড্রোন তৈরি ও ইউটিউবে মাসিক আয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, তার মতো মেধাবীদের জন্য জেলা প্রশাসনের সহযোগিতার দুয়ার সবসময় খোলা। সে আমাদের বেকার তরুণ-যুবকদের জন্য অনুকরণীয় হতে পারে। কাজেই তাকেও দেওয়া হবে প্রয়োজনীয় সহায়তা।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //