জনবল ছাড়াই শহর পরিষ্কার রাখবে ‘অটো ড্রেন ক্লিনার’

নগরায়নের এই যুগে শহরের প্রাণসঞ্চার রাখতে ড্রেনেজ ব্যবস্থা সক্রিয় রাখাটাই প্রধান কাজ। তবে সনাতন পদ্ধতিতে ড্রেনেজ ব্যবস্থা নিরবচ্ছিন্ন রাখাতে হিমশিম খেতে হয় সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে। 

অনেক সময় বাসিন্দাদের অসদিচ্ছা আর পরিচ্ছন্নকর্মীদের অক্ষমতায় বন্ধ হয়ে যায় ড্রেন পরিচ্ছন্নতার কাজ। যার দরুন বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা আর মশাদের উপদ্রোপের পাশাপাশি দেখা দেয় নানা রোগ-জীবাণু। পানি মাটি দূষণে ভারসাম্য হারায় পরিবেশ। এই অবস্থা থেকে বাঁচতে ‘অটো ড্রেন ক্লিনার’ উদ্ভাবন করেছেন বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশা ইউনিয়নের মধ্য পাংশা গ্রামের শরীফ বাড়ির তরুণ বিজ্ঞানী ওবায়েদুল ইসলাম। তার উদ্ভাবিত প্রযুক্তিতে জনবল ছাড়াই স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিষ্কার হয়ে যাবে ড্রেন। 

একই সঙ্গে ড্রেনের ময়লা ও পানি আলাদা হয়ে আবর্জনা জমা হবে নির্ধারিত স্থানে। আর পানি চলে যাবে নদী কিংবা খালে। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, শুধু জনবলই নয়, অটো ড্রেন ক্লিনার পদ্ধতি ব্যবহারে লাগবে না কোনো জ্বালানি। পুরো প্রকল্পটিই চলবে সৌর বিদ্যুতে।

ক্ষুদে বিজ্ঞানী ওবায়েদুল ইসলাম বলেন, ‘অটো ড্রেন ক্লিনার হচ্ছে শহর পরিচ্ছন্ন রাখার আধুনিক প্রযুক্তি। এটি বৃহৎ পরিসরে বাস্তবায়ন হলে নগর কর্তৃপক্ষ পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনের ব্যয়ও কমিয়ে দিবে কয়েকগুণ। নগর পরিচ্ছন্নতার কাজে যে শ্রমশক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে, তা অন্যত্র ব্যবহার করে সমৃদ্ধি আনা যাবে। 

অটো ড্রেন ক্লিনার সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, ‘অটো ড্রেন ক্লিনার হচ্ছে সেন্সরনির্ভর এবং মাইক্রো প্রসেসর নিয়ন্ত্রিত একটি পদ্ধতি। এ পদ্ধতির সেন্সরের কাজে ড্রেনে ময়লা-আবর্জনার স্তর শনাক্ত করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেই স্তর ভেঙে দিয়ে প্রেসার পাম্পের মাধ্যমে পানির গতি বাড়িয়ে নির্ধারিত দূরত্বে ময়লা-আবর্জনা পৌঁছে দেওয়া। পরিশেষে সেন্সরটি থাকবে ড্রেনের ‘বর্হিগমন’ পয়েন্টে। সেখানে ড্রেনের পানি নদী বা খালে নির্গমন না হয়ে যদি উল্টো দিকে প্রবেশ করে তবে বহির্গমন পয়েন্টের সেন্সর সক্রিয় হয়ে নদী বা খালের পানির স্তর ড্রেনের পানির স্তরের নিচে না নেমে আসা অবধি পুরো প্রক্রিয়াটি নিষ্ক্রিয় করে রাখবে।

উদাহরণ টেনে এই তরুণ উদ্ভাবক বলেন, ‘শহরের ময়লা-আবর্জনা ড্রেনের নির্ধারিত পয়েন্ট থেকে ফেলা হলে ড্রেনের পানির স্বাভাবিক গতির সঙ্গে মিশে একটি নির্ধারিত দূরত্বে গিয়ে জমাট বাঁধতে থাকবে। ড্রেনটির পরিমাপের ওপর নির্ভর করে চার স্তরে চারটি সেন্সর স্থাপন করতে হবে। ড্রেনের ময়লা-আবর্জনা যদি প্রথম স্তর পর্যন্ত জমাট বাঁধে তাহলে সেন্সরের সংকেতের মাধ্যমে প্রথম প্রেসার পাম্পটি চালু হয়ে ময়লা-আবর্জনার জমাট বাঁধা অংশের ওপর প্রবল গতিতে পানি ছুড়ে তা ভেঙে দিবে। ড্রেনের স্বাভাবিক পানি ও প্রেসার পাম্পের ছোড়া পানি মিলে ময়লা-আবর্জনা নির্গমন মুখের দিকে স্রোতে ভেসে যাবে। পানি প্রবাহের গতি কমে গিয়ে যেখানে দ্বিতীয় স্তর গড়ে তুলবে, সেখানে স্বয়ংক্রিয়ভাবে দ্বিতীয় সেন্সরের সংকেত প্রেসার পাম্প চালু হয়ে পানি প্রবাহ বাড়িয়ে দিবে।

মহামারি করোনাকালকে তার এই উদ্ভাবনের সহায়ক দাবি করে ওবায়দুল বলেন, করোনার এই সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। একাডেমিক লেখাপড়ার চাপ ছিল না। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে দিনে দিনে অটো ড্রেন ক্লিনার নিয়ে চিন্তার ও কাজের প্রসার ঘটনাতে পেরেছি। 

ওবায়দুলের মামা অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আব্দুল জলিল শরীফ বলেন, তিনি অনেক পরিশ্রম ও গবেষণা করে এই প্রযুক্তিটি উদ্ভাবন করেছে। আমি মনে করি এই প্রযুক্তি ব্যবহারে শহর পরিষ্কার রাখতে জনবলের প্রয়োজন হবে না।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //