প্ল্যান্ট ব্রিডিং: ভবিষ্যৎ পৃথিবীর খাদ্য নিরাপত্তা

বর্তমান পৃথিবীতে জনসংখ্যা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। সেইসঙ্গে কমে যাচ্ছে ফসলি জমির পরিমাণ। তাই অল্প জমিতে বেশি ফসল উৎপাদন বিজ্ঞানীদের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এই সমস্যা সমাধানসহ বিভিন্ন উদ্ভিদের জাত উন্নয়ন ও প্রতিকূলতা সহনশীলে রূপান্তরকরণে প্ল্যান্ট ব্রিডিং-এর মাধ্যমেই উত্তরণের পথ খুঁজছেন তারা। বিজ্ঞানের যে শাখায় প্রতিনিয়ত জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে নতুন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন উদ্ভিদ তৈরি করা হয়, তাকে বলে প্ল্যান্ট ব্রিডিং। 

বর্তমানে অনেক বিজ্ঞানী আছেন, যারা নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছেন কৃষিবিজ্ঞানের এই অসামান্য দিকটি নিয়ে, যেখানে কোনো শস্যের সামান্য জেনেটিক কোড পরিবর্তন করার মাধ্যমেই ঘটে যেতে পারে খাদ্যের বড় বিপ্লব।

প্ল্যান্ট ব্রিডিংয়ের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীদের ভাবনায় থাকে যেসব দিক 

খনিজ এবং ভিটামিনের মাত্রা : পৃথিবীর ৮০০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ বর্তমানে তাদের শক্তি চাহিদা পূরণের পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার থেকে বঞ্চিত। এ কারণে, বিজ্ঞানীরা প্রচলিত এবং সহজলভ্য কিছু শস্য ও সবজির মধ্যে জেনেটিক পরিবর্তন সাধনের মাধ্যমে বিভিন্ন খনিজ এবং ভিটামিনের মাত্রাকে বাড়িয়ে তুলতে চেষ্টা করছেন এবং অনেক ক্ষেত্রে সাফল্য ধরাও দিচ্ছে।

ফসল উদ্ভিদের উন্নয়ন : ফসল উদ্ভিদের উন্নয়ন বলতে মূলত এর গুণাগুণ, ফলন, সংরক্ষণ এবং জৈব ও অজৈব পীড়নের বিরুদ্ধে সহনশীলতা বৃদ্ধিকে বোঝায়। তবে, গেল কয়েক দশকে প্ল্যান্ট ব্রিডিংয়ের খাবারে স্বাদ ও পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন উদ্ভিদের আঞ্চলিক জাত উদ্ভাবনের দিকে গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে।

উদ্ভিদের লবণাক্ততা সহনশীল জাত উদ্ভাবন : সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকাগুলোতে লবণাক্ততা সহনশীল জাত ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা পালন করছে। বর্তমানে ব্রিডাররা অনেক বছরের চেষ্টার পর সম্প্রতি লবণাক্ততা সহনশীল ধানের জাত সফলভাবে উদ্ভাবন ও সংরক্ষণ করতে পেরেছেন। লবণাক্ততার জন্য উদ্ভিদে যে সকল আয়নিক পীড়ন এবং আস্রবণশীল পীড়নের সৃষ্টি হয় তার বিপরীতে উদ্ভিদের বেঁচে থাকা এবং ফলন বাড়ানোর জন্যই মূলত লবণাক্ততা সহনশীল জাত গুরুত্বপূর্ণ।

রোগবালাই সহনশীল জাত উদ্ভাবন : প্ল্যান্ট ব্রিডিং ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সাহায্যে কিছু কিছু উদ্ভিদের ডিএনএতে প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন জিন স্থাপন করে এমন সব ফসল ফলানো সম্ভব হচ্ছে, যারা নিজেরাই বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড়ের আক্রমণ ও রোগবালাই থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারে। 

জল সাশ্রয়ী এবং খরা সহনশীল ফসল : বিশ্বব্যাপী পানির স্বল্পতা এবং খরার কারণে অনেক ফসলেরই ফলন কমে গিয়েছে। তাই বিশ্বে খাদ্য নিরাপত্তা বাড়াতে জল সাশ্রয়ী এবং খরা সহনশীল ফসলের নতুন ব্রিড নিয়ে আসার গুরুত্ব বেড়েই চলেছে। বিজ্ঞানীরা একই প্রজাতির উদ্ভিদের মধ্যে সাধারণ মেন্ডেলিয়ান বিভাজনের মাধ্যমেই নতুন বৈশিষ্ট্যের উদ্ভিদ তৈরি করতে পারছেন। 

সকল উদ্ভিদেরই প্রতিকূল প্রাকৃতিক পরিবেশে টিকে থাকার জন্য উন্নত জিনগত বৈশিষ্ট্য রয়েছে। উদ্ভিদ যাতে পানিসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদ আরও পারদর্শিতার সঙ্গে ব্যবহার করতে পারে, সে ব্যাপারটি মাথায় রেখে প্ল্যান্ট ব্রিডাররা নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন। বিজ্ঞানীরা আশাবাদী, এই প্ল্যান্ট ব্রিডিং প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার করা গেলে পৃথিবীতে ভবিষ্যতে আর কোনো খাদ্য সংকট থাকবে না। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //