সাপ প্রাণ বিবর্তনের ইতিহাসে এক বিস্ময়

পৃথিবী সৃষ্টির পর যেসব প্রাণী এই গ্রহে অবাধে বিচরণ করত, তার মধ্যে সবচেয়ে সফল প্রাণীর নাম ডাইনোসর। প্রায় ১৪ কোটি বছর ধরে দানবীয় এই প্রাণীটির বিভিন্ন প্রজাতি পৃথিবীজুড়ে একক আধিপত্য বিস্তার করেছিল; কিন্তু পৃথিবীর ওপর এক বিশাল গ্রহাণু আছড়ে পড়ায় ডাইনোসররা সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। 

নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রহাণুর আঘাতে ডাইনোসর নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলেও, এই দুর্ঘটনার কারণেই সাপ ছড়িয়ে পড়ে সারাবিশ্বে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ওই মহাবিপর্যয়-পরবর্তী বিশ্বে হাতে-গোনা অল্প কিছু প্রজাতির সাপ বেঁচে থাকতে সক্ষম হয়েছিল। তাদের ছিল অসাধারণ দুটি দক্ষতা। যথা- মাটির নিচে লুকিয়ে থাকা এবং কোনো ধরনের খাদ্য ছাড়াই দীর্ঘ সময় বেঁচে থাকার ক্ষমতা। 

যুক্তরাজ্যের বাথ ইউনিভার্সিটির করা এই গবেষণার নেতৃত্বে ছিলেন ড. ক্যাথরিন ক্লেইন। তিনি বলেছেন, ‘গ্রহাণুর আঘাতে পরিবেশের খাদ্যচক্র ধ্বংস হয়ে যায়; কিন্তু এর মধ্যেও কিছু সাপ বেঁচে থাকতে সক্ষম হয়। আরও পরে এসব সাপ ছড়িয়ে পড়ে নতুন নতুন মহাদেশে। ভিন্ন পরিবেশে বেঁচে থাকার জন্য এরা উদ্ভাবন করে নতুন নতুন কৌশল।’ গ্রহাণুর ওই আঘাতের ঘটনা ছাড়া এসব সাপ আজকের পর্যায়ে পৌঁছাতে পারতো না বলেই মনে করেন তিনি।

যেসব ঘটনায় তুলনামূলক অল্প সময়ের মধ্যে প্রায় অর্ধেক প্রজাতির প্রাণীর মৃত্যু ঘটে এ রকম বিপর্যয় পৃথিবীর ইতিহাসে মাত্র কয়েকবারই ঘটেছে। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, সাপে বিবর্তনের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য সময় হচ্ছে, যখন এই পৃথিবী উষ্ণ থেকে ঠান্ডা জলবায়ুতে রূপান্তরিত হয়েছিল তখন। এর অল্প কিছু পরেই শুরু হয় বরফ যুগ। 

পৃথিবীতে বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে সাপ অত্যন্ত সফল একটি প্রাণী। এখন পর্যন্ত যতো দূর জানা যায়, সাপের সর্বমোট ১৫টি পরিবার, ৪৫৬টি গণ, এবং ২ হাজার ৯শ’টিরও বেশি প্রজাতি রয়েছে। সুদূর উত্তর গোলার্ধের স্কান্ডিনেভিয়া থেকে দক্ষিণে একেবারে অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত এদের বসবাসের বিস্তৃতি। অ্যান্টার্কটিকা ছাড়া সব মহাদেশেই সাপের উপস্থিতি দেখা যায়। তা হতে পারে সমুদ্রের গভীরতম তলদেশে অথবা পর্বতের সুউচ্চ শানুদেশে প্রায় ষোলো হাজার ফিট ওপরে হিমালয় পর্বতমালাতেও। তবে কিছু দ্বীপ বা দ্বীপপুঞ্জ আছে যেখানে সাপের দেখা পাওয়া যায় না। যেমন- আয়ারল্যান্ড, আইসল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড (যদিও নিউজিল্যান্ডের জলে পেটের কাছে হলুদ রঙ এমন সামুদ্রিক সাপ আর ডোরাকাটা সামুদ্রিক ক্রেইট এর দেখা পাওয়া যায়)। 

এদের আকার কখনো খুব ছোট, ১০ সে.মি. (থ্রেড সাপ) থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২৫ ফুট বা ৭.৬ মিটার (অজগর ও অ্যানাকোন্ডা) পর্যন্ত হতে পারে। সম্প্রতি আবিষ্কৃত টাইটানোবোয়া সাপের জীবাশ্ম প্রায় ১৩ মিটার বা ৪৩ ফুট লম্বা।

কীটপতঙ্গ ইঁদুর ব্যাঙ ইত্যাদি শিকার করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এই সাপ। সাপ প্রকৃতপক্ষে মানুষ শিকার করে না এবং সাপকে কোনো কারণে উত্তেজিত করা না হলে বা সাপ আঘাতগ্রস্ত না হলে তারা মানুষের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলে। তবু ভীতিকর মনে হওয়ায় অনেক মানুষ এদের মেরে ফেলতে চায়। এ কারণে যে সাপ গণবিলুপ্তির মতো ঘটনায় টিকে গিয়েছিল, তাদের বহু প্রজাতিই এখন মানবসৃষ্ট বিলুপ্তির হুমকিতে রয়েছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //