কর্পোরেট কমিউনিকেশন কেমন হওয়া উচিত

পৃথিবী এগিয়ে চলছে কমিউনিকেশনের মাধ্যমে। যার কমিউনিকেশন যত ভালো তার চাহিদা তত বেশি। ব্যক্তি জীবন বা কর্পোরেট অফিস সব জায়গায় কমিউনিকেশনের ছড়াছড়ি। 

সংজ্ঞায় যদি সংজ্ঞায়িত করা হয় তাহলে বলা যায়, কথা বলা, লেখার মাধ্যমে বা অন্য কোনও মাধ্যম ব্যবহার করে তথ্য সরবরাহ বা বিনিময় করাকে যোগাযোগ বলা হয়। সফল ধারণা পৌঁছে দেওয়া বা ধারণা এবং অনুভূতি ভাগ করে নেওয়াকেও যোগাযোগ বলে। যদি পাঠ্যক্রমের বাইরে একটু সহজ করে বলি তা হলো- আমার কথা আপনাকে বুঝাতে পারাটাই আমার কমিউনিকেশন। 

কিন্তু কর্পোরেট কমিউনিকেশন একটু আলাদা। এখানে অল্প সময়ে আপনাকে অনেক কিছু বুঝাতে হবে। আপনার প্রতিষ্ঠানের আইডেন্টিটি সঠিকভাবে স্বল্প সময়ে সঠিক ব্যক্তির সামনে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার জন্য লিখিত ও মৌখিক উভয় ধরনের কমিউনিকেশনের ক্ষেত্রে আপনাকে উপযুক্ত শ্রুতিমধুর ভাষা ব্যবহার করতে হবে । 

কর্পোরেট কমিউনিকেশনে আপনাকে প্রথমেই গ্রহণযোগ্য হতে হবে। মনে রাখবেন, আপনি যদি গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে না পারেন আপনি হাজারটা কাজ করেও নাম কামাতে পারবেন না। 

ধরেন, আপনি যখন সকালে অফিসে যান তখন প্রতি দশজনে ছয়জনকে বলতে হবে - ভাই কি অবস্থা? কখন আসছেন? চা খাবেন নাকি?

আর যদি আপনি অফিসে গিয়ে আপনার মত কাজ করলেন, কেউ আপনাকে ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করলো না তাহলে বুঝতে হবে আপনার গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়নি।

আপনার মধ্যে অসম্ভব রকমের প্রফেশনালিজম নিয়ে আসতে হবে। আরেকজন করে দিবে তার নামের উপর দিয়ে আপনি চলে যাবেন সেই দিন শেষ। আপনি বস মানুষ, অফিসে বা কোন মিটিংয়ে আপনি চাইলেই দশ মিনিট দেরি করে যেতে পারেন। কিন্তু আপনি যদি অন্তত দুই মিনিট আগে মিটিংয়ে জয়েন করে থাকেন সেই মিটিং আপনি দেরিতে আশা মিটিংয়ের থেকে ফলপ্রসূ হবে। প্রতিটি কাজে সৌন্দর্য তুলে ধরুন। একটি ডকুমেন্টেশন বানিয়েছেন বা কাউকে মেইল করেছেন যেখানে শুধুমাত্র করতে হবে তাই করছি এই চিন্তাভাবনা থেকে সড়ে আসুন। কাজকে নিজের মনে করে করতে হবে তাহলে অসম্ভব সুন্দর একটি কাজ বের হয়ে আসবে কেননা নিজের সন্তানকে আমরা সবসময় পরিপাটি রাখি। তাই নয় কি?

লিংকড-ইনের মাধ্যমে আপনি বিশাল কর্পোরেট নেটওয়ার্ক তৈরি করতে পারবেন। কিন্তু বাধা আসবে ওই কমিউনিকেশনে। কারণ সেখানে সবাই হাই প্রোফাইল লোকজন। তারা কিন্তু অনেক বেশি ব্যস্ত। আপনার হাই হ্যালো কেমন আছেন শুনার জন্য কেউ বসে নাই। এসব লিখলে সবাই সিন করে রেখে দিবে। আপনি কি বলতে চাচ্ছেন তা ছোট করে সুন্দর ভাবে বুঝিয়ে লিখুন। ওপাশ থেকে উত্তর আসবে। অর্থাৎ আপনি একটি কোম্পানির এম.ডির সাথে দেখা করতে চান আপনাকে লিখতে হবে- শুভ সকাল। আপনি মেহেদী হাসান, অমুক কোম্পানির ফাউন্ডার। আপনাকে আমাদের আগামী 'ক' তারিখে অনুষ্ঠিত 'খ' অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। এই সামগ্রিক বিষয়ে আপনার সাথে কথা বলতে চাইছি। 

আশা করি এম.ডি সাহেব নিষ্ঠুর হবেন না। 

আপনি কোন একটি সামিট বা কনফারেন্সে গিয়েছেন। বর্তমানে এগুলো নেটওয়ার্কিং এর জন্য খুবই ভালো যায়গা। কিন্তু সেখানেও আপনার কমিউনিকেশন স্কিল ভালো না হলে আপনি নেটওয়ার্কিং করতে পারবেন না৷ প্রথমেই বলবো চেষ্টা করবেন পরিচিতদের সাথে না বসার। কারণ পরিচিতদের  সাথে বসলে আপনার কথা তাদের সাথেই হবে নতুন কারো সাথে হবে না। দেখছেন দু'জন কথা বলছে আপনি শুনবেন বা প্রয়োজনে হাসিমাখা মুখ রাখবেন তারপর তাদের কনভারসেশনের যেকোনো একটি কথায় সহমত বা অনিচ্চা প্রকাশ করুন। দেখবেন তারাই আপনাকে কনভারসেশন চালিয়ে নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করবে। আপনার বিজনেস কার্ডটি তাদের হাতে দিয়ে আপনি কথা বলা শুরু করুন। 

সর্বোপরি, কর্পোরেট কমিউনিকেশনে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পায় ই মেইল। আপনি চাইলেই হয়তো হোয়াটসঅ্যাপ বা ফেসবুকে ফাইল পাঠাতে পারেন। কিন্তু আপনি যখন একবার মেইলে করতে অভ্যস্ত হয়ে যাবেন তখন আপনার কমিউনিকেশন আরো বেশি ভালো হবে। 

মেইলের কমিউনিকেশন নিয়ে বলতে গেলে একটি বিষয় প্রথমেই চলে আসে আর সেটি হচ্ছে প্রফেশনালিজম বা পেশাদারিত্ব। মেইল কিভাবে করছেন, সাবজেক্ট বা বিষয়ে কি লিখছেন, মেইল বডি দেখতে কেমন ইত্যাদি। 

জানেন, ৩৩% মেইল খোলা হবে কিনা সেটা যাচাই হয়ে যায় সাবজেক্ট লাইন দেখে। ৪০ শতাংশ মেইল আমরা এখন মোবাইলে দেখি যেখানে মাত্র ৪/৫ শব্দ দেখা যায়। অর্থাৎ আপনার বিষয় লাইনটির প্রথম কয়েকটি শব্দেই আপনি কি চাচ্ছেন এটা বুঝিয়ে ফেলতে হবে বা মেইলটি খোলার জন্য আগ্রহ জমাতে হবে। 

তারপরই গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ইমেল সেলুটেশন অর্থাৎ সম্বোধন। আপনি যাকে মেইল করছেন তাকে কিভাবে সম্বোধন করছেন এটার উপর নির্ভর করে আপনি আপনার ইমেলটি পড়ার জন্য উৎসাহ দিচ্ছেন কি না। তারপর খুবই নির্দিষ্টভাবে আপনি বলবেন আপনি কেন মেইল করেছেন৷ মনে রাখবেন আপনি যাকে মেইল করছেন তিনি হাজারো মেইল পায় প্রতিদিন। আপনার মেইল যদি স্পেসিফিক না হয় তাহলে সে অন্য মেইল গুলোর মত আপনার মেইলও ইগ্নোর বা অগ্রাহ্য করে রাখবে। মেইলটি পাঠানোর পূর্বে অবশ্যই বানান, গ্রামার ইত্যাদি বার বার চেক করে নিবেন। কারণ মনে রাখবেন আপনার ছোট একটি ভুল বানান অপর পাশের মানুষটির কাছে আপনাকে সারাজীবনের জন্য ছোট করে দিবে এবং সে আপনি ভুল শোধরানোর সুযোগ নাও পেতে পারেন। 

সর্বোপরি ইমেইল ক্লোজিং - এ ফর্মালভাবে আপনার পরিচয় তুলে ধরতে হবে যেখানে আপনার নাম্বার, এড্রেস থাকা বাঞ্ছনীয়। যাতে প্রফেশনালিজমের জন্য আপনাকে একটি ধাপও পিছিয়ে যেতে না হয়। 

লেখক: কো-ফাউন্ডার, বেস্ট এইড লিমিটেড

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //