নিজের মস্তিষ্কে মাইক্রোচিপ প্রতিস্থাপন করতে চান ইলন মাস্ক

স্পেসএক্স, টেসলা কিংবা টুইটারের মালিক হিসাবে বিশ্বের কাছে পরিচিত হলেও বায়োইঞ্জিনিয়ারিং জগতেও বেশ প্রভাব রয়েছে ইলন মাস্কের। তিনি অ্যান্ড্রয়েড টেকনোলজির বিকাশের জন্য নিউরালিঙ্ক নামক একটি বিশেষ সংস্থা গড়ে তুলেছিলেন। এই সংস্থার লক্ষ্য ছিল, এমন এক ডিভাইস তৈরি করার যা মানব মস্তিষ্ক অতিক্রম করে যেতে পারে সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে।

২০২২ সালের শেষে প্রকাশ্যে আসে প্রযুক্তি নির্মাণে নিউরালিঙ্কর সফল হওয়ার খবর। নিউরালিঙ্ক এমন একটি মাইক্রোচিপ তৈরী করেছেন, যা মস্তিষ্কে প্রতিস্থাপন করলেই মানব সভ্যতার নতুন ধারার সৃষ্টি হবে। মস্তিষ্কের সমস্ত কার্যকলাপ রিড ও রেকর্ড করার ক্ষমতা রয়েছে এই চিপে। তাছাড়া এই চিপকে কাজে লাগিয়েই পক্ষাঘাতগ্রস্ত কোনো মানুষ ফোন করতে পারবেন, নাড়াচাড়া করতে পারবেন তাঁর অঙ্গ। এই প্রযুক্তিতে বিশেষ করে স্নায়ু অকেজ হয়ে যাওয়া, যাঁরা দৃষ্টি কিংবা শ্রবণ শক্তি হারিয়েছেন তাঁরা বিশেষভাবে উপকৃত হবে। এই মাইক্রোচিপের মাধ্যমে এক ব্যাংক থেকে আরেক ব্যাংকে অর্থ বিনিময়ও করা যাবে।

২০২২ সালের অক্টোবর মাসে এই বিশেষ প্রযুক্তির মানব ট্রায়ালের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্টেশনের কাছে আবেদন করেছিলেন ইলন মাস্ক। তবে শেষ পর্যন্ত মাস্কের এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে এফডিএ।

গত ডিসেম্বরেই বিশেষ রিপোর্ট প্রকাশ করে এই সংস্থা জানিয়েছিল, মানুষ তো বটেই অন্যান্য প্রাণীর ক্ষেত্রেও মাস্কের এই প্রযুক্তি নিরাপদ নয়। তদন্তে উঠে আসে, ২০১৮ সালের পর এই মাইক্রোচিপের পরীক্ষণ ও প্রস্তিস্থাপনের কারণে মৃত্যু হয়েছে দেড় হাজারের বেশি প্রাণীর। 

নিউরালিঙ্ক স্বীকারও করে এ-কথা। অন্যদিকে এই মাইক্রোচিপে ব্যবহার করা হচ্ছে লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি। যা মস্তিষ্কে ভয়াবহ বিষক্রিয়া করতে পারে বলেই দাবি এফডিএর। তাছাড়া এই যন্ত্র প্রতিস্থাপনে যে ধরনের তার ব্যবহার করা হচ্ছে, তা মস্তিষ্কের একাধিক অংশকে অকেজো করে তুলতে পারে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে। মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে পারে মানুষকে। 

অবশ্য এফডিএ-র এই রিপোর্টের সারমর্ম প্রকাশ্যে এলেও, আনুষ্ঠানিকভাবে অফিসিয়াল রিপোর্টটি এতদিন গোপন রাখা হয়েছিল। নানা নাটকীয়তার পর অবশেষে মাস্কের আবেদন সম্পূর্ণভাবে খারিজ করে দিল মার্কিন স্বাস্থ্য সংস্থাটি। যদিও এখনও নাছোড় বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ধনকুবের। নিজের মাথাতেই এই মাইক্রোচিপ প্রতিস্থাপন করতে চান, এমনটাই জানাচ্ছেন তিনি। 

প্রসঙ্গত, বছর কয়েক আগে নেটফ্লিক্সে প্রকাশিত হয়েছিল ডেস্টোপিয়ান ওয়েব সিরিজ ‘ব্ল্যাক মিরর’। সেখানেও দেখানো হয়েছিল এমনই এক প্রেক্ষাপট। মাথার মধ্যে প্রতিস্থাপিত মাইক্রোচিপের মাধ্যমেই কীভাবে বাহ্যিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় মানুষের মস্তিষ্ক, কীভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় নিজের আবেগ। মাস্কের প্রযুক্তি ব্যবহারিক প্রয়োগের জন্য এখনও পর্যন্ত সম্পূর্ণ নিরাপদ নয়— সেটা তো নিশ্চিত।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

Ad

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2023 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //