বিশ্বের বৃহত্তম রকেটের সফল উড্ডয়ন

বিশ্বের বৃহত্তম এবং সবচেয়ে শক্তিশালী রকেটের সফল উৎক্ষেপণ সম্পন্ন করল ইলন মাস্কের কোম্পানি স্পেসএক্স। টেক্সাসের নীল আকাশে এতো বড় ও শক্তিশালী রকেটটির দিকে নজর রাখেন হাজার হাজার মানুষ। 

আজ শনিবার (১৮ নভেম্বর) স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ২০ মিনিটে টেক্সাসের বোকাচিকা উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে এটি উৎক্ষেপণ করা হয়। 

এদিন ঠিক সকাল ৭টায় কাউন্টডাউন শুরু হয়। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০ মিনিটের মাথায় বিশাল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে উর্ধ্বকাশে যাত্রা করে রকেটটি। 

মূলত রকেটটির এই দ্বিতীয় পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ প্রথমটির চেয়ে অনেকখানি সফল হয়েছে। কারণ এটির বুস্টার অংশটি সফলভাবে আলাদা হয়েছে। যদিও কিছুক্ষণের মধ্যেই বুস্টারটি বিস্ফোরিত হয়। স্পেসএক্সের প্রকৌশলীরা জানিয়েছে, এটি তাদের পরিকল্পনায় ছিল না। বুস্টারটির ভূমিতে ফিরে আসার কথা ছিল। 

এরপর রকেটটি দ্বিতীয় ধাপের জন্য উর্ধ্বাকাশে উঠতে থাকে। তবে কয়েক মিনিট পরেই স্পেসএক্স থেকে জানানো হয়, নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সঙ্গে এর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

রকেটের ওপরের অংশটির সাড়ে আট মিনিট পর্যন্ত ওড়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের কিছু আগে বা পরে রকেটের কম্পিউটারের আত্মঘাতী প্রোগ্রাম সক্রিয় হয়। রকেটটি বিস্ফোরিত হয়ে আটলান্টিক মহাসাগরে পড়েছে। 

রকেটটি ধ্বংস করার প্রধান কারণ হলো এটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আফ্রিকার ভূমিতে আছড়ে পড়ার আশঙ্কা ছিল। ধ্বংস হওয়ার আগে এটি ভূমি থেকে প্রায় ১৪০ কিলোমিটার ওপরে যে গতিতে উড়ছিল তাতে এর ধ্বংসাবশেষ আফ্রিকায় গিয়ে পড়তে পারতো।

স্পেসএক্সের এই স্টারশিপ রকেটে জ্বালানি ছিল ৪ হাজার ৫০০ টন। এর উচ্চতা ১২০ মিটার এবং এটি ১ লাখ ৫০ হাজার কেজি ওজন (পে লোড) বহনে সক্ষম। 

স্টারশিপকে স্বপ্নের প্রকল্প বলে বর্ণনা করেন ইলন মাস্ক। তার লক্ষ্য এই রকেটে করেই মানুষকে মঙ্গলে পাঠানো। মঙ্গলে মানুষের উপনিবেশ স্থাপন করতে চান তিনি।

কোটি কোটি ডলার খরচ করে বানানো রকেট এভাবে ধ্বংস হয়ে যাওয়াকে কি বড় ক্ষতি বলা যায় না? এতো টাকা আটলান্টিকে গেলেও স্পেসএক্স এটিকে বড় সাফল্য হিসেবেই দেখছে। তারা বলছেন, এই উৎক্ষেপণের সব তথ্য–উপাত্ত তারা এখন বিশ্লেষণ করে বোঝার চেষ্টা করবেন সমস্যাটা কোথায় ছিল। 

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার প্রধান বিল নেলসন স্পেসএক্স টিমকে অভিনন্দন জানিয়ে এক্স প্ল্যাটফর্মে পোস্ট করেছেন। এই পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জিত হওয়ায় সংশ্লিষ্টদের অভিনন্দন জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেছেন, মহাকাশে উড়ান হলো সাহসী অভিযাত্রা, এতে লাগে ‘আমরাও পারি’ বলার মতো মানসিক শক্তি এবং সাহসী উদ্ভাবন। আজকের এই পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ অনেক শেখার এবং আবার উড়ানের একটি সুযোগ।

বিল নেলসন আরও বলেছেন, নাসা এবং স্পেসএক্স চাঁদ, মঙ্গল এবং এসব ছাড়িয়ে মহাবিশ্বে মানুষকে পৌঁছে দেবে।

স্পেসএক্সের মালিক ইলন মাস্কও এই প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত সবাইকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। স্টারশিপের মাধ্যমেই মানুষকে আন্তগ্রহ প্রজাতি রূপে উন্নীত করার স্বপ্নের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন তিনি। 

এর আগে প্রথম পরীক্ষায় স্টারশিপটি সফলভাবে উৎক্ষিপ্ত হলেও বুস্টার বিচ্ছিন্নকরণের সময় এটি বিস্ফোরিত হয়। গত এপ্রিলে প্রথম পরীক্ষা চালায় স্পেসএক্স। দ্রুত দ্বিতীয় পরীক্ষার কথা থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অথোরিটির অনুমোদনের অপেক্ষায় প্রায় ছয় মাস পেরিয়ে গেছে। 

সূত্র- এএফপি

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //