মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (নাসা) আয়োজিত ইন্টারন্যাশনাল স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ এ হ্যাট্রিক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হলো বাংলাদেশ। এবার ১৫২টি দেশের ৮৭১৫টি দলকে হারিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করলো বাংলাদেশের “টিম ভয়েজার”। বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার রাত দশটায় বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করে নাসা।
চার ধাপের ‘এক্যুয়া এক্সপ্লোরার’ গেইম বানিয়ে নাসা’র বেস্ট স্টোরি টেলিং ক্যাটাগরিতে বিশ্বচ্যম্পিয়ন হয়েছে দলটি। রাজশাহী বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের টিম ভয়েজারের টিম লিড খালিদ সাকিব। তিনিই লিখেছেন মূল গল্পটি। পুরো প্রক্রিয়ায় গবেষণা সহযোগী ছিলেন ফাহমিদা আকতার। ঘটনাটি মোবাইল অ্যাপে তুলে ধরেন আব্দুল মালেক। এছাড়াও এই কাজে ইউআইইউএক্স নকশাকার ছিলেন মো. সাখাওয়াত হোসেন এবং লেভেল ডিজাইনার মো. আতিক।
রাজশাহী অঞ্চলের বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের টিম ভয়েজার্স- দলনেতা সাকিব ডিজিবাংলাকে জানিয়েছেন, প্রজেক্টের মূল প্রতিপাদ্য “এভরিথিং স্টার্টস উইথ ওয়াটার”। পৃথিবীতে ৩৭০ কোয়িন্টিলিয়ন গ্যালন পানি রয়েছে, তবে এরমধ্যে আমাদের ব্যবহার্য নিরাপদ পানির পরিমাণ শুধুমাত্র ০.০১আমাদের মিশন ছিল পৃথিবীতে সম্পূর্ণ পানি প্রবাহের পথ বোঝানোর জন্য একটি দৃশ্যাত্মক সরঞ্জাম তৈরি করা। এর মাধ্যমে আমরা ছাত্রছাত্রীদের পৃথিবীর সিস্টেমে পানির প্রবাহ পথ এবং এই অমূল্য সম্পদ কিভাবে আমাদের জলবায়ু পরিবর্তনে ভূমিকা রাখছে তা বোঝানোর চেষ্টা করেছি। এ কাজে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করা থেকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়া, এই যাত্রাটা এতো সহজ ছিল না আমাদের জন্য। তবে এখন বিশ্ব দরবারে নিজের দেশের নাম তুলে ধরতে পেরে আমরা প্রত্যেকেই খুবই উদ্বেলিত। আবারো মহান আল্লাহর শুকরিয়া, আলহামদুলিল্লাহ!
নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ ২০২৩, বাংলাদেশে পর্বের উপদেষ্টা ছিলেন আরিফুল হাসান অপু এবং মাহদী-উজ-জামান। আর বাংলাদেশ পর্বের আহ্বায়ক এবং বেসিসের পরিচালক তানভীর হোসেন খান।
বিজয়ীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে তানভীর বলেন, “এই বিশ্বজয় আমাদের সৃজনশীলতা এবং প্রযুক্তিগত সক্ষমতার প্রমাণ। বাংলাদেশ আবারও দেখিয়েছে যে বৈশ্বিক মঞ্চের সর্বোচ্চ স্তরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে কিভাবে বিজয় ছিনিয়ে আনতে হয়। আমরা আমাদের চ্যাম্পিয়নদের জন্য অত্যন্ত গর্বিত এবং তাদের কঠোর পরিশ্রমের জন্য অভিনন্দন জানাচ্ছি।”
বেসিস-এর সভাপতি রাসেল টি আহমেদ বলেন, “নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জে আমাদের এই বিশ্বজয় বাংলাদেশিদের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সম্ভাবনা এবং উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে যে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে তা আবারও প্রমাণ করেছে। এবারের হ্যাট্রিক জয়ের মাধ্যমে সর্বমোট চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশের পতাকা বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরায় আমি উষ্ণ অভিনন্দন জানাই আমাদের বিশ্বজয়ী টিমকে এবং এর সাথে যুক্ত সকল উপদেষ্টা, মেন্টর, বিচারক এবং ভলেন্টিয়ারদের কে।
প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্র্রেশন-নাসা আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্বের ১৫২টি দেশের প্রযুক্তিবিদ, বিজ্ঞানী, ডিজাইনার, আর্টিস্ট, শিক্ষাবিদ, উদ্যোক্তাদের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রের মেধাবী তরুণদের একত্রিত করে পৃথিবীর বিভিন্ন বৈশ্বিক সমস্যা সমাধানে উদ্ভাবনী সমাধান খুঁজে বের করার লক্ষ্যে এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে, এরই অংশ হিসেবে এবছরের অক্টোবরে বেসিসের উদ্যোগে বাংলাদেশের ৯টি শহরে (ঢাকা, চট্রগ্রাম সিলেট, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, রংপুর, ময়মনসিংহ এবং কুমিল্লা) বাংলাদেশ পর্বের আয়োজন করেছিল। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ‘লুনার ভিআর প্রজেক্ট’ বেস্ট ইউজ অব ডাটা ক্যাটাগরিতে চাঁদে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা দিবে এমন ভার্চুয়াল অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘টিম অলীক। ২০২১ সালে ‘বেস্ট মিশন কনসেপ্ট’ ক্যাটাগরিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয় খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) এবং বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (বাউয়েট) সম্মিলিত দল ‘টিম মহাকাশ’ এবং ২০২২ সালে “টিম ডায়মন্ডস” – “সবচেয়ে অনুপ্রেরণামূলক” বিভাগে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh