দেশেই তৈরি হচ্ছে বৈদ্যুতিক গাড়ি

সাশ্রয়ী, পরিবেশবান্ধব হওয়ায় সারা বিশ্বেই বৈদ্যুতিক গাড়ির উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়ছে। বাংলাদেশ সরকারও ২০৫০ সালের মধ্যে দেশের ৫০ ভাগ মানুষকে বৈদ্যুতিক গাড়ি সুবিধার আওতায় আনার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এর ফলে জ্বালানি ব্যবহারে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে আর সাশ্রয় হবে বিপুল পরিমাণ অর্থ। 

এরই মধ্যে দেশ বৈদ্যুতিক গাড়ির যুগে প্রবেশ করেছে। এখন তাই দেশেই গড়ে তোলা হচ্ছে ইলেকট্রিক বা বৈদ্যুতিক গাড়ি (ইলেকট্রিক ভেহিকেল) তৈরির কারখানা। কারখানা তৈরিতে ১ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। এ কারখানা করতে ৭৯০ কোটি টাকা জোগান দিচ্ছে ১০টি ব্যাংক মিলে। বাকি টাকা উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করছেন। চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে অর্থনৈতিক অঞ্চলে ১০০ একর জমির একাংশের ওপর গড়ে তোলা হচ্ছে এই কারখানা। বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজের উদ্যোক্তারা চলতি বছরের মার্চে বৈদ্যুতিক গাড়ি বাজারে ছাড়ার পরিকল্পনা করলেও এখনো তা আলোর মুখ দেখেনি। তবে আশা করা যায় খুব শীঘ্রই নিজ দেশে তৈরি বৈদ্যুতিক গাড়ি কেনার সুযোগ পাবে মানুষ। যার মুল্য অনেকটাই মধ্যবিত্তের হাতের নাগালে থাকবে বলে  জানা যাচ্ছে।

১৮৩০-এর দশকে প্রথম বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি করেছিলেন স্কটিশ আবিষ্কারক রবার্ট অ্যান্ডারসন। কিন্তু এই গাড়ির প্রযুক্তি অভাবনীয় উন্নত হয়েছে গত কয়েক বছরে। এতটাই যে, তা এখন প্রতিযোগিতামূলক দামে বিক্রি সম্ভব হচ্ছে। এ বিষয়ে ক্যালিফোর্নিয়ার সিঙ্গুলারিটি ইউনিভার্সিটির জ্বালানি ও পরিবেশ বিভাগের প্রধান রামেজ ন্যাম বলেছেন, ‘আমরা এখন সেই স্তরের কাছাকাছি এসে গেছি, যখন বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরির খরচ, পেট্রল-ডিজেলচালিত গাড়ির তুলনায় প্রতিযোগিতামূলক হয়ে যাবে। এই বিন্দুতে পৌঁছে গেলেই ফসিল জ্বালানি-চালিত মোটরযানের খেলা শেষ হয়ে যাবে।’ 

বর্তমানে দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোতে শতাধিক বৈদ্যুতিক গাড়ি চলছে, এর ৯৮ শতাংশই চলছে ঢাকায়। এর মধ্যে আছে টেসলা, অডি, পোরশে ও মার্সিডিজ ব্র্যান্ডের ইলেকট্রিক কার। তবে দেশে এখনো আশানুরূপ বাড়েনি বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহার। কারণ তেলে চালিত গাড়ির তুলনায় দাম বেশি হওয়ায় আগ্রহ কম। এ ছাড়া চার্জিং স্টেশনও কম। যেসব দেশে বৈদ্যুতিক গাড়ি আছে সেখানে কয়েক কিলোমিটার পরপর বৈদ্যুতিক গাড়ির চার্জিং স্টেশন দেখা যায়। বাংলাদেশে বৈদ্যুতিক গাড়ির চার্জিং স্টেশনও উল্লেযোগ্য হারে বাড়েনি।

এদিকে ২০২২ সালে বৈদ্যুতিক গাড়ির জন্য নীতিমালা হয়েছে। ঢাকায় ও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে বৈদ্যুতিক গাড়ির চার্জিং স্টেশন। বিদ্যুৎ বিভাগের অধীন ছয়টি বিতরণ কোম্পানিকে সঙ্গে নিয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে উদ্বুদ্ধ করতে ছয়টি ইলেকট্রিক ভেহিকল চার্জিং স্টেশন স্থাপন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে রাজধানী ঢাকায় দুটি এবং ঢাকার বাইরে যশোরে একটিসহ মোট তিনটি চার্জিং স্টেশন উদ্বোধন করা হয়েছে। বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহার বৃদ্ধি পেলে পর্যায়ক্রমে চার্জিং স্টেশনের সংখ্যা বাড়ানো হবে। 

বৈদ্যুতিক গাড়ির যেমন কিছু সুবিধা আছে তেমনি অসুবিধাও আছে। এসব গাড়িতে কোনো প্রকার জ্বালানি শক্তির ব্যবহার না হওয়ায় গাড়ি থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ হয় না। তাতে করে পরিবেশের ওপর কোনো প্রভাব পড়ে না। বৈদ্যুতিক গাড়িগুলো একবার চার্জে ২০০ থেকে ৪০০ কিলোমিটার পর্যন্ত পথ পাড়ি দিতে পারে। ডিজেলে এক লিটারে গাড়ি চলে ১০ কিলোমিটার। প্রতি কিলোমিটারে খরচ পড়ে ১৩ টাকা। কিন্তু বৈদ্যুতিক চার্জে গাড়িপ্রতি কিলোমিটার আড়াই টাকা থেকে দুই টাকা ৯০ পয়সা খরচ পড়বে। এই গাড়িগুলো একবার চার্জ দিয়ে স্বল্প দূরত্বে প্রায় এক সপ্তাহের মতো ব্যবহার করা সম্ভব।

তবে গ্যাসচালিত গাড়ির তুলনায় বৈদ্যুতিক গাড়ির দাম ১০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি হয়ে থাকে। তবে দেশে উৎপাদন করা হলে এইসব গাড়ির দাম কমে আসার কথা।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //