ব্যাডমিন্টন আর টেবিল টেনিসে নোংরা খেলা!

সামনেই দক্ষিণ এশিয়ার অলিম্পিকখ্যাত এসএ গেমসের আসর বসবে নেপালে। দেশটির রাজধানী কাঠমান্ডু ও পোখরায় ১-১০ ডিসেম্বর বসবে একসময় সাফ গেমস নামে অনুষ্ঠিত হওয়া এই আসর। ২৭টি ডিসিপ্লিন নিয়ে এবারের আসরটি অনুষ্ঠিত হবে। যেখানে বাংলাদেশ অংশ নেবে ২৩টিতে। সেখানকার দুটি ইভেন্ট ব্যাডমিন্টন ও টেবিল টেনিস; কিন্তু প্রস্তুতিপর্বের শুরু থেকেই আলোচনায় রয়েছেন এই দুটি খেলা। কেউ কেউ আবার এটিকে নোংরা খেলা হিসেবেও অবিহিত করতে চান। যার শুরুটা ‘ব্যাডমিন্টনে মারামারি এবং পুরুষ দলের ক্যাম্প বর্জন’ দিয়ে। 

দেশের একটি অন্যতম প্রধান জাতীয় দৈনিকে বেশ বড় করে সংবাদও ছাপা হয়। ঘটনার ঠিক পরদিনই বিষয়টি আঁচ করতে পেরে অনুশীলন ক্যাম্প পরিদর্শনে আসে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) কর্মকর্তারা। পুরুষ দলের আটজনের মাঝে সাতজন শাটলার অনুূশীলন বর্জন করায় বিরক্তি প্রকাশ করেন। বিওএ মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা, সহসভাপতি বশির আল মামুন, মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ফখরুদ্দিন হায়দার ও এসএ গেমস ট্রেনিং কমিটির সদস্য সচিব একে সরকার। অনেকটা হঠাৎ করে পুরুষ দলের মধ্যে তুষার ছাড়া বাকি সবাই অনুশীলন বর্জন করেন। লিখিত দাবিতে ফেডারেশনের কাছে তাদের চাওয়া ছিল, কোচ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া মারুফ ও গৌতমকে বাদ দেওয়া। কারণ তাদের অপরিকল্পিত, অপরিপক্ব প্রশিক্ষণে দীর্ঘদিনের কষ্টার্জিত স্বাভাবিক পারফরম্যান্স ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে খেলোয়াড়দের। তাদের অধীনে ক্যাম্প করে এসএ গেমসে ভালো ফলাফল সম্ভব নয়। সুতরাং ভালো ফলাফলের লক্ষ্যে উন্নতমানের দেশি কিংবা বিদেশি কোচ নিয়োগ দেওয়ারও দাবি জানান খেলোয়াড়রা। এর আগে ক্যাম্প শুরুকালীন সময়ে মহিলা জাতীয় চ্যাম্পিয়ন শাপলা আক্তার ও রানার্সআপ এলিনা সুলতানা অনভিজ্ঞ এই দুই কোচের অধীনে অনুশীলন করার বিষয়ে নিজেদের অপারগাতর বিষয়টি ফেডারেশনকে জানায়। 

আর এতে বেশ ক্ষেপেছেন বিওএ মহাসচিব শাহেদ রেজা, তিনি বলেন, ‘একটা বড় আসরের আগে এভাবে অনুশীলন ক্যাম্প করলে পদক জয়েল কোন আশা করা যাবে না। ক্যাম্পের সব খরচ দিচ্ছে বিওএ। অতীতে এমন সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়নি। তারপরও ছেলেরা কেন ক্যাম্প বর্জন করবে। ক্যাম্পে এমন বিশৃঙ্খলা চলতে দেয়া যাবে না। দরকার হলে শুধু মেয়েদের টিম পাঠানো হবে এসএ গেমসে। খুব শিগগিরই ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।’ 

এদিকে ছেলেদের ক্যাম্প বর্জনে অনেক অপ্রকাশিত বিষয় বেরিয়ে আসছে। ব্যাডমিন্টন খেলার সাথে সংশ্লিষ্টরা ষড়যন্ত্রের আভাস পাচ্ছেন। তারা মনে করছেন অস্থিরতা সৃষ্টি করে ব্যাডমিন্টনকে কলঙ্কিত করে পট পরিবর্তন করতে চায় একটি পক্ষ। যাতে বর্তমান সাধারন সম্পাদক আমির হোসেন বাহার বিতর্কের মুখে পড়েন। আর এতে ব্যবহার করা হচ্ছে খেলোয়াড়দের। কলকাঠি নাড়ানো হচ্ছে বাইরে থেকে। বিতর্কিত ব্যাক্তি হিসেবে খ্যাত জাহিদুল হক কচির কারণেই জাতীয় দলের কোচ হয়েছেন মারুফ এবং গৌতম। অলিম্পিকের নির্দেশনার বাইরে গিয়ে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদককে ম্যানেজ করে ক্যাম্পে সুযোগ করে দিয়েছেন খালেদ ও দুলালকে। ফলে ছয় জনের ক্যাম্প হয়ে যায় আটজনের। বিওএ চূড়ান্ত ভাবে ছয়জনকে মনোনীত করতে বললে ক্যাম্প থেকে দুজনের বিদায় নিশ্চিত জেনে অনুশীলন বয়কটের সিদ্ধান্ত নেয় পুরুষ দল। এভাবেই পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে ব্যাডমিন্টনে।

ব্যাডমিন্টনের সাথে যেন পাল্লা দিয়ে চলছে টেবিল টেনিস। জাতীয়ভাবে সফল খেলোয়াড়দের বাদ দিয়েই ক্যাম্প পরিচালনা করছে ফেডারেশন। সেখানে মানস চৌধুরী-সেতুর পর বাদ পড়েছেন রুমিও! এসএ গেমসের টেবিল টেনিস ক্যাম্পে একের পর এক লঙ্কাকান্ড সবাইকে অবাক করে দিয়েছে। দেশসেরা দুই টিটি খেলোয়াড় মানস চৌধুরী ও সালেহা পারভীন সেতুকে আসন্ন এসএ গেমসের ক্যাম্প থেকে বাদ দেয়ার পর ছিটকে পড়লেন নারী টিটির এক নম্বর র‌্যাঙ্কিংধারী খেলোয়াড় মৌমিতা আলম রুমী। যিনি সর্বশেষ ২০১৬ এসএ গেমসের ব্রোঞ্জপদক জয়ের পাশাপাশি চারবারের জাতীয় চ্যাম্পিয়ন। রুমীর অভিযোগ, যেদিন নারী দল নির্বাচন করার দিন ধার্য ছিল তার আগের রাতে তাকে জানানো হয় তিনি জাতীয় দলে নেই। 

জানা গেছে, এক বেলা অনুশীলন করার অপরাধে রুমীকে বাদ দিয়েছে ফেডারেশন। অথচ বাদ দেবার দিনই রুমীর কাছ থেকে ফেডারেশন লিখিত নিয়েছে যে, তিনি দুই বেলা অনুশীলন করবেন। পরদিন সকালে নারী দলের বাছাই শেষে বিকেলে পুরনো পল্টন ময়দান সংলগ্ন শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ ইনডোর স্টেডিয়ামের টিটি ক্যাম্পে ঘটল অনাকাংঙ্খিত এক ঘটনা। সামান্য কথা কাটাকাটিকে কেন্দ্র করে এদিন মারামরিতে লিপ্ত হন মৌমিতা আলম রুমী ও জাতীয় দলের আরেক তারকা সোনম সুলতানা সোমা। রুমী অভিযোগ করে বলেন, সোমা তাকে চড় মেরেছেন। জাতীয় দলের একজন সিনিয়র খেলোয়াড় কীভাবে এমনটি করতে পারেন, যা আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না। সামান্য কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সোমা হঠাৎ আমাকে আক্রমণ করে। সে আমার গালে চড় মারলে আমি হতবাক হয়ে যাই। সোমার আক্রমণ থেকে বাঁচতে গিয়ে আমি ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়ি। আমাদের চিৎকার শুনে পাশের পুরুষ ক্যাম্পে থাকা খেলোয়াড়রা এসে দু’জনকে আলাদা করে দেন।  

এদিকে সোমা জানান, এখানে একটা অনাকাংঙ্খিত ঘটনা ঘটে গেছে। রুমীও আমাকে মেরেছেন। মারামারির এক পর্যায়ে রুমী আমার গায়ের কাপড় ছিঁড়ে ফেলেছেন। এই ঘটনার জের ধরে বাছাই কার্যক্রমে অংশ নেননি জাতীয় দলের ক্যাম্পে থাকা ৮ পুরুষ খেলোয়াড়। 

মানস আর রুমীকে বাদ দেওয়ার বিষয়ে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম জানান, নিয়মের বাইরে এক ইঞ্চিও আমরা যাচ্ছি না। এসএ গেমসের ক্যাম্প বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের নির্দেশনায় হচ্ছে। তারা যেভাবে বলবে সেভাবেই ক্যাম্প চলবে। রুমী যে জায়গায় চাকরি করে সে স্কুল থেকে জানানো হয় তাকে কোনো ছুটি দিতে পারবে না। ফলে সে দুবেলাও প্র্যাকটিস করতে পারবে না। বিওএর নিয়ম অনুযায়ী দুইবেলা ক্যাম্প না করলে সে এমনিতেই বাদ হয়ে যাবে। এ জন্যই সে বাদ।’ মানসের ব্যাপারে সাধারণ সম্পাদক বলেন, সে যখন উকিল নোটিশ পাঠিয়েছে তখন আমরা আইনগতভাবেই সেটির উত্তর দেব। বিওএ বলেছে, ক্যাম্পের বাইরে থেকে কেউ এসে সিলেকশন ফাইট দিতে পারবে না। সে যেহেতু ক্যাম্পে ছিল না, সেহেতু সে বহিরাগত হিসেবেই বিবেচিত হবে। এত নোংরামির পর ব্যাডমিন্টন আর টেবিল টেনিস থেকে ভালো কিছু কি আশা করা যায়?


সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //