নিজে কেঁদে সবাইকে কাঁদিয়ে ফেদেরারের বিদায়

চোখ কান্নাভেজা। কণ্ঠ বাষ্পরুদ্ধ। রজার ফেদেরারকে এমন আবেগের স্রোতে ভেসে যেতে কখনোই দেখা যায়নি। লন্ডনের ও২ অ্যারেনায় ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচটি খেলতে নেমে আবেগ ধরে রাখতে পারেননি ফেদেরার। ম্যাচ শেষে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তো কেঁদেই ফেললেন সুইস কিংবদন্তি। ফেদেরার নিজে কাঁদলেন। কাঁদালেন দর্শকদেরও। কাঁদতে কাঁদতেই দর্শকদের ধন্যবাদ জানিয়ে ফেদেরার শেষ বারের মতো জানিয়ে দিলেন, তার পেশাদার টেনিসের অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি। আর কখনো প্রতিযোগিতামূলক টেনিসে দেখা যাবে না তাকে।

ফেদেরার ঘোষণাটা দিয়েছিলেন আগেই। জানিয়ে দিয়েছিলেন লেভার কাপই তার শেষ। বৃহস্পতিবার আরও স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, শুক্রবার রাতে লেভার কাপের দ্বৈত ম্যাচটিই হবে তার শেষ। যে ম্যাচে তার জুটি ছিলেন রাফায়েল নাদাল। ক্যারিয়ারজুড়ে কোর্টে যিনি সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ ছিলেন, বিদায়ী ম্যাচটিতে সেই নাদালের সঙ্গে জুটি বেঁধে খেললেন ফেদেরার। ম্যাচ শেষে যখন কোটের বাইরে বসে যখন কান্নাভেজা কণ্ঠে বিদায় প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছিলেন ফেদেরার, তার পাশে বসে কাঁদছিলেন নাদালও। কিংবদন্তি ফেদেরারের বিদায়ী ম্যাচে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি তিনিও।

শুধু নাদাল নয়, ফেদেরারের বিদায়ী ম্যাচে কোর্টে উপস্থিত ছিলেন কেঁদেছেন টেনিসের ‘বিগ ফোর’-এর অন্য দুই সদস্য নোভাক জোকোভিচ ও অ্যান্ডি মারেও। স্রেফ দীর্ঘদিনের সতীর্থ বন্ধু ফেদেরারকে কোর্ট থেকে বিদায় জানাতেই লন্ডনের ও২ অ্যারেনায় হাজির হয়েছিলেন তারা। নাদালের মতো তাদের চোখ দিয়েও পানি গড়িয়েছে। নোনা পানিতে সিক্ত হয়েছে ও২ অ্যারেনায় উপস্থিত সাড়ে ১৭ হাজার দর্শকদের চোখও। ফেদেরারের মতো মহাতারকার বিদায়ী ম্যাচ, এমন পরিস্থিতিতে চোখকে শান্ত রাখে, সাধ্য কার! 

আগে থেকেই ঘোষণা থাকায় কিংবদন্তিকে ফেদেরারকে রাজকীয় বিদায় জানানোর সব রকম প্রস্তুতিই নিয়ে রাখা হয়েছিল। ফেদেরারও শেষ ম্যাচে খেলতে িএসেছিলেন পরিবারের সব সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে। গ্যালারিতে উপস্থিত ছিলেন সাবেক অনেক তারকাই। সবারই চাওয়া ছিল বিদায়ী ম্যাচটাতে ফেদেরার যেন জিতে। দীর্ঘ ২৪ বছরের স্বর্ণালী ক্যারিয়ারে এতে এত ম্যাচ জিতেছেন যিনি, জিতেছেন এত এত শিরোপা, সেই ফেদেরারের শেষটা জয় হোক,এই চাওয়াটা যুক্তিসংগতই ছিল।

কিন্তু আফসোস সেটা হয়নি। দুঃখজনকভাবে শেষ ম্যাচে জয় হাসি হাসতে পারেননি ফেদেরার। সঙ্গী নাদালকে নিয়ে লেভার কাপের দ্বৈতের ম্যাচটা হেরেছেন ফেদেরার। টিম ইউরোপের হয়ে দ্বৈত জুটি হিসেবে নামা ফেদেরার ও নাদাল হেরেছেন টিম ওয়ার্ল্ডের জুটি ফ্রান্সিস তিয়াফো ও জ্যাক সকের কাছে। ৪-৬, ৭-৬ (৭ /২), ১১-৯ গেমের হারে শেষটা রাঙাতে পারেননি ফেদেরার। তবে এই হারে টেনিসভক্তদের অতৃপ্তি থাকার কথা নয়। 

অতৃপ্তি বলে যদি কিছু থেকে থাকে, সেটি ২০টি গ্র্যান্ড স্লামজয়ী সুইস কিংবদন্তিকে আর কখনো কোর্টে দেখতে না পাওয়ার অনুভূতি। হারের পর বিদায়ী ভাষণে তা মনে হতেই সম্ভবত চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি ফেদেরার। কেঁদেছেন শিশুর মতো। পাশে বসা নাদালের চোখও ভিজেছে। পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা জোকোভিচ, অ্যান্ডি মারের মুখের দিকেও তাকানো যাচ্ছিল না। 

ক্যারিয়ারের সেরা এসব প্রতিদ্বন্দ্বীকে পাশে নিয়েই ফেদেরার তাঁর বিদায়ী ভাষণে আবেগ সামাল দিতে পারেননি, ‘আমরা এটা (দুঃখের সময়) কাটিয়ে উঠব। দিনটা দারুণ। সবাইকে বলেছি, আমি সুখী। খারাপ লাগছে না। শেষবারের মতো নিজের জুতার ফিতা বাঁধা উপভোগ করেছি। সবকিছুই ছিল শেষবারের মতো।’ 

পেশাদার টেনিসের ইতি টানলেও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে ঘুরে মাঝেমধ্যে প্রীতি-প্রদর্শনী খেলবেন দর্শকদের আশ্বস্ত করেছেন ফেদেরার। ৪১ বছর বয়সী ফেদেরার বলেছেন, ‘এখানেই সবকিছুর শেষ নয়; জীবন জীবনের মতোই এগিয়ে চলবে। আমি একটি বার্তা দিতে চাই, খেলাটির প্রতি আমার ভালোবাসা থাকবে। ভক্তদের জানাতে চাই, আবারও দেখা হবে, বিশ্বের অন্য কোথাও, আলাদা কোনো টেনিস কোর্টে। তবে কবে, কোথায়, কীভাবে হবে, তা নিয়ে এখনো কোনো পরিকল্পনা করিনি। এমন সব জায়গায় গিয়ে খেলতে চাই, যেখানে আগে কখনো খেলিনি। যারা আমাকে এত দিন ধরে সমর্থন দিয়েছেন, সামনের বছরগুলোয় তাদের সবাইকে শুধু ধন্যবাদ জানিয়ে যেতে চাই।’

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //