দক্ষিণ এশিয়ার নারী টেনিস মুখের বিদায়

টেনিসের জন্য জন্ম যার, দক্ষিণ এশিয়া, এশিয়ার গণ্ডি পেরিয়ে যিনি বিশ্ব টেনিসে নিজের অবস্থান পোক্ত করেছেন, যিনি ভারতীয় ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড়, তিনি আর কেউ নন, তিনি সানিয়া মির্জা। মুসলিম নারী হওয়ায় তাকে মানসিক চাপ ও প্রতিহিংসার সঙ্গে লড়েই টেনিস ভক্তদের হৃদয়ে স্থান করে নিতে হয়েছে। তার অবসরের ঘোষণায় কোটি কোটি সমর্থক হতাশ হয়েছে। 

দুবাইয়ে ডব্লিউটিএ টেনিস টুর্নামেন্টের আগেই জানুয়ারি মাসে সানিয়া সব ধরনের পেশাদার টেনিস থেকে অবসরের ঘোষণা দেন। তার বিদায়ী টুর্নামেন্টটি তার জন্য সুখকর হয়নি। ডাবলসের প্রথম রাউন্ডের ম্যাচেই তিনি হেরে যান। যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাডিসন কেইসকে সঙ্গী করে খেলেন পেশাদার টেনিসের শেষ ম্যাচটি। 

১৯৮৬ সালের ১৫ নভেম্বরে জন্ম এই খ্যাতিমান ভারতীয় টেনিস সেনসেশনের। হায়দরাবাদের সেন্ট মেরি কলেজে লেখাপড়া করেন তিনি। ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি উচ্চতার সানিয়ার ২০০৩ সালে পেশাদার টেনিস খেলা শুরু হয়। তখন থেকেই তিনি অসাধারণ নৈপুণ্য দেখিয়ে অসংখ্য রেকর্ড গড়তে থাকেন। ২০০৩ সাল থেকে ২০১৩ সালেরও বেশি সময় ধরে তিনি ভারতীয় টেনিসের একক ইভেন্টে এক নম্বরে ছিলেন।

তবে একক ছেড়ে দ্বৈতের দিকে নজর দেওয়ার পর অঙ্কিতা রায়না ওই স্থান দখল করেন। আর দ্বৈতে তিনি বিশ্বসেরা হন। দ্বৈতে ছয়টি গ্র্যান্ডস্লাম শিরোপা লাভ করেন সানিয়া। ডানহাতি খেলোয়াড় হলেও দুই হাতি ব্যাকহ্যান্ডার ছিলেন তিনি। টেনিস খেলে আয় করেছেন প্রায় ৩২ লাখ মার্কিন ডলার। 

এককে তার সর্বোচ্চ র‌্যাংকিং ২৭তম। এককে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে দুইবার তৃতীয় রাউন্ডে, ফ্রেঞ্চ ওপেনে দুইবার দ্বিতীয় রাউন্ডে, উইম্বলডনে দুইবার দ্বিতীয় রাউন্ডে এবং ইউএস ওপেনে একবার চতুর্থ রাউন্ডে উঠতে পেরেছেন। গ্র্যান্ডস্লামের নারী দ্বৈতে ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন, ২০১৫ সালে উইম্বলডন এবং ২০১৫ সালে ইউএস ওপেনের শিরোপা লাভ করেন।

আর মিশ্র দ্বৈতে ২০০৯ সালে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন, ২০১২ সালে ফ্রেঞ্চ ওপেন এবং ২০১৪ সালে ইউএস ওপেনের শিরোপা জয় করেন। ক্যারিয়ারে এককে ২৭১টি ম্যাচের মধ্যে ১৬১টিতে জয়লাভ করেছেন, আর দ্বৈতে ৫৩১টি ম্যাচ খেলে ২৪২টিতে জয়লাভ করেছেন। এককে ক্যারিয়ারে একটি মাত্র শিরোপা পেলেও দ্বৈতে শিরোপা পেয়েছেন ৪৩টি। এছাড়া ট্যুর ফাইনাল আসরের শিরোপা জিতেছেন দুইবার ২০১৪ ও ২০১৫ সালে। 

ভারতীয় টেনিস রানি সানিয়া এবার যুক্ত হয়েছেন ক্রিকেটে। নারী আইপিএলে তিনি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু দলের মেন্টরের দায়িত্ব পালন করবেন। ওই টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হবে মার্চে। এই দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তাব পেয়ে খানিকটা অবাক হয়েছিলেন সানিয়া। তবে নতুন কিছুর সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টিকে অর্জন বলেই মনে করেন। সানিয়া বলেন, কিছুটা আশ্চর্য হয়েছিলাম মেন্টরের ভূমিকায় কাজ করার প্রস্তাবে। তবে আমি রোমাঞ্চিত। খেলাধুলা যে নারীদের ক্যায়িয়ারে প্রথম পছন্দের হতে পারে, সেই বিশ্বাসটা আমি মেয়েদের মধ্যে তৈরি করতে চাই। নতুন প্রজন্মকে আমি বলতে চাই, যত বাধাই আসুক লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব। 

সানিয়া তার ক্যারিয়ারে এককে খুব বেশি মনোযোগী হতে না পারলেও ৯১ সপ্তাহ দ্বৈতের বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে সেরা অবস্থানে ছিলেন। তার এটাই সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব। দ্বৈতে টানা ৪৪ ম্যাচ অপরাজিত ছিলেন সানিয়া, যা বিশ্ব দ্বৈত টেনিসের অন্যতম বড় রেকর্ড। ২০০৫ সালে ‘টাইম’ ম্যাগাজিনের বিচারে এশিয়ার ৫০ জন সেরা নারীর মধ্যে স্থান পান সানিয়া। ২০১০ সালে ‘দ্য ইকোনমিক টাইম’ ভারতকে গর্বিত করার ইতিহাস সেরা ৩৩ জন নারীর মধ্যে স্থান দেয় সানিয়াকে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //