সবাইকে ছাড়িয়ে রাফায়েল নাদাল

তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে 
সব গাছ ছাড়িয়ে 
উঁকি মারে আকাশে...

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই ছড়াটি হয়তো রাফায়েল নাদাল কখনোই পড়েননি। পড়লে ‘তালগাছের’ জায়গায় নিজের নামটি লিখে নিজেই ছড়া হয়ে যেতে পারতেন! কবিগুরুর ‘তালগাছ’ যেমন সব গাছ ছাড়িয়ে আকাশে উঁকি মারে, তেমনি নাদালও দুনিয়ার সবাইকে ছাড়িয়ে এখন উঁকি মারছেন আকাশে। তিনি আসলে আকাশেই উঠে গেছেন। যে উচ্চতায় দুনিয়ার আর কেউ উঠতে পারেননি, সেটা তো আকাশসম উচ্চতাই!

টেনিসপ্রেমী মাত্রই বুঝে গেছেন সদ্য গড়া নাদালের সর্বোচ্চ গ্র্যান্ড স্লাম শিরোপা জয়ের রেকর্ড প্রসঙ্গেই বলা হচ্ছে। জানুয়ারি পর্যন্তও একই সমান্তরালে দাঁড়িয়ে ছিলেন বিশ্ব টেনিসের ‘বিগ থ্রি’ রজার ফেদেরার, নোভাক জোকোভিচ ও রাফায়েল নাদাল। তিনজনের নামের পাশেই ছিল সমান ২০টি করে গ্র্যান্ড স্লাম এককের শিরোপা; কিন্তু এখন আর তারা একই সমান্তরালে নেই। পড়ে গেছেন পেছনে। গত ৩০ জানুয়ারি অস্ট্রেলিয়া ওপেনের শিরোপা জয়ের মধ্যদিয়ে নাদাল ইতিহাসের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে গড়েছেন ২১টি গ্র্যান্ড স্লাম শিরোপা জয়ের নতুন রেকর্ড। তৈরি করেছেন ঊর্ধ্বাকাশের নতুন সিঁড়ি।

রাফায়েল নাদাল।

গ্র্যান্ড স্লামের পুরুষ এককের শিরোপা সংখ্যা হিসেবে ‘২১’ কতটা উঁচু, কতটা আকাশচুম্বি, সেটি অনুধাবণ করতে হলে, টেনিসের সুদীর্ঘ ইতিহাসের দিকে চোখ ফেরাতে হবে। বর্তমান দুনিয়ায় যত ইভেন্টে খেলা হয়, তার মধ্যে টেনিসই সবচেয়ে প্রাচীন খেলা বলে গণ্য হয়। যেটি মূলত লন টেনিস মানেও পরিচিত। তো এই লন টেনিস বা টেনিসের জন্ম কত সালে এবং কোথায়? বেশির ভাগ ইতিহাসবিদেরই অভিমত, টেনিসের বীজ বপন হয়েছিল ফ্রান্সে। সেটি সেই দ্বাদশ শতাব্দীর কথা। মানে প্রায় ৯০০ বছর আগে! 

শুরুতে খেলাটির ধরন ছিল বড় অদ্ভূত। কাঠের তৈরি গোলক বানিয়ে তা হাতের তালু দিয়ে আঘাত করা হতো! বিচিত্র ভঙ্গিমার খেলাটির প্রচলন ঘটিয়েছিলেন ফ্রান্সের উত্তরাঞ্চলের রাজারা। শুরুতে খেলাটির নাম ছিল ‘জিউ ডি পাউমে’ বা ‘গেম অব পাম’। খাঁটি বাংলায়- ‘(হাতের) তালুর খেলা’। খেলাটির প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে যার নামটি ইতিহাসবিদরা উদ্ধার করতে পেরেছেন, তিনি রাজা লুইস এক্স। মানে ফুটবল, ক্রিকেটের মতো শুরুতে টেনিসও ছিল ‘রাজকীয় খেলা’। রাজা লুইস এক্সের পর রাজা প্রথম ফ্রাঙ্কোইস, প্রথম হেনরি ও অষ্টম চার্লস খেলাটির বড় অনুরাগী ছিলেন।

রাফায়েল নাদাল।

কাঠের তৈরি গোলক (বল) হাত দিয়ে আঘাত করতে গিয়ে হাতে প্রচণ্ড ব্যথা পেতেন রাজারা। ফলে ব্যথা থেকে বাঁচার উপায়ও বের করে ফেলা হয় দ্রুত। চামড়া দিয়ে তৈরি করা হয় এক ধরনের দস্তানা। যে দস্তানা পরে সহজেই কাঠের বলকে আঘাত করতে পারতেন তৎকালীন রাজ খেলোয়াড়রা। পরবর্তীতে আরও সুবিধার জন্য দস্তানায় সংযোগ ঘটানো হয় হাতল। এভাবেই যুগের পর যুগ, শতাব্দীর পর শতাব্দী পেরিয়ে নানা রূপ বদলের মধ্যদিয়ে আজকের আধুনিক টেনিস। জন্মলগ্নের সঙ্গে যা আপাদমস্তক পার্থক্য।

এই যে বিবর্তন, বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয়ে ওঠা, এই প্রসারের পেছনে ফ্রান্সের রাজাদের রক্তও ঝরেছে। এই টেনিস খেলতে গিয়েই প্রাণ হারান ফ্রান্সের দু’জন রাজা। মৃত্যুর প্রথম শিকার ইতিহাসের প্রথম টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে পরিচিত রাজা লুইস এক্স। হ্যাঁ, নিজের উদ্ভাবিত শখের খেলা খেলতে গিয়েই প্রাণ হারান রাজা লুইস এক্স। বরফের মধ্যে খেলতে গিয়ে প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় হিম হয়ে যান তিনি। সেই তীব্র ঠাণ্ডার কারণেই মারা যান তিনি।

রাজা লুইস এক্সের মতো রাজা অষ্টম চার্লসও একই রকম ট্র্যাজেডির শিকার। ম্যাচ খেলতে গিয়ে কাঠের তৈরি শক্ত বল তার মাথায় আঘাত করে। নিজেই সার্ভ করতে গিয়ে বল নিজের মাথায় হিট করে বসেছিলেন তিনি, না-কি প্রতিদ্বন্দ্বীর আঘাত করা বল মৃত্যু-শেল হয়ে তার মাথায় আঘাত করে, সেটি স্পষ্ট করে জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হয়, সার্ভ করতে গিয়ে অসাবধানতায় নিজেই হয়তো নিজের মাথায় বল আঘাত করে বসেন তিনি। মুহূর্তেই ঢলে পড়েন মৃত্যুর কোলে।

সস্ত্রীক রাফায়েল নাদাল 

ফ্রান্সের দু’জন রাজা জীবন দিলেও টেনিসকে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় করে তোলার পেছনে সবচেয়ে বড় ভ‚মিকা রেখেছেন ইংল্যান্ডের রাজকীয় সদস্যরা। নানা উদ্ভাবনীর মাধ্যমে টেনিসকে আধুনিক রূপও দিয়েছেন ইংরেজরাই। ১৬ শতকে ফ্রান্সের রাজাদের উদ্ভাবিত হাতের তালুর খেলাটি ইংল্যান্ডের রাজাদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠে। ইংল্যান্ডের রাজাদের মধ্যে খেলাটির প্রতি প্রথম অনুরাগী হন পঞ্চম হেনরি। তবে অনুরাগী খেলোয়াড় হিসেবে তাকেও ছাপিয়ে যান ইংল্যান্ডের রাজা অষ্টম হেনরি।

তার সময়েই ফরাসি রাজাদের ‘(হাতের) তালুর খেলাটি’ ‘রিয়াল টেনিস’ নামে ইংল্যান্ডে জনপ্রিয় হয়ে উঠে। সেটি ১৫০৯-১৫৪৭ সালের কথা। এরপর রাজ পরিবারের সদস্যের বাইরে সমাজের অন্যান্য উচ্চ ও ধনী শ্রেণির লোকরাও খেলাটির প্রতি আসক্ত হয়ে ওঠেন। শুরু হয়ে যায় টেনিসের গণজোয়ার। এরই পরিপ্রেক্ষিতে অক্সফোর্ড, ক্যামব্রিজ, ফকল্যান্ড প্যালেস, হাম্পটন কোর্ট প্যালাস- নানা জায়গায় তৈরি করা হয় টেনিস কোর্ট। রাজা জেমসের সময়ে (১৬০৩-২৫) এক লন্ডনেই তৈরি হয় ১৪টি টেনিস কোর্ট।

এসব কোর্টে প্রতিনিয়তই টেনিস খেলা হতো। তবে সব ম্যাচই হতো শখের বশের প্রীতি-প্রদর্শনী। ছিল না আনুষ্ঠানিক নিয়ম-নীতির বালাই। এরপর ইংল্যান্ডের মেজর হ্যারি জেম ও স্প্যানিশ বনিক আগুরিও পেরেরা নামের দুই ডাক্তার বন্ধু মিলে ১৮৭৪ সালে গঠন করেন লিমিংটন টেনিস ক্লাব। ইতিহাসের প্রথম টেনিস ক্লাব এটাই। প্রতিষ্ঠার বছরেই লিমিংটন টেনিস ক্লাব আয়োজন করে ইতিহাসের প্রথম বার্ষিক টেনিস টুর্নামেন্ট।

তবে লিমিংটন ক্লাবের দুই প্রতিষ্ঠাতা নন, আধুনিক লন টেনিসের রূপকার বলা হয় ব্রিটিশ সেনা কর্মকর্তা ওয়াল্টার ক্লপটন উইংফিল্ডকে। এই সেনা কর্তাই দীর্ঘ দেড় বছর গবেষণার ১৯৭৩ সালে আনুষ্ঠানিক লন টেনিস ম্যাচের রূপ- রেখা তৈরি করেন। নেট, পোলস, র‌্যাকেট, বল- খেলাটির জন্য এসবের উদ্ভাবন করেন তিনিই। লেখনীর মাধ্যমে নিজের উদ্ভাবিত টেনিস ম্যাচের রূপরেখা দুনিয়াজুড়ে ছড়িয়েও দেন তিনি। বিশ্ব পেয়ে যায় আনুষ্ঠানিক টেনিস ম্যাচ খেলার প্রাথমিক ধারণা। 

উইংফিল্ডের উদ্ভাবিত রূপরেখা মেনেই লিমিংটন টেনিস ক্লাব পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম অনানুষ্ঠানিক টেনিস ম্যাচের আয়োজন করে; কিন্তু ম্যাচ পরিচালনা করতে গিয়ে দেখা দেয় বড় বিপত্তি। প্রথম ম্যাচে যে নেট ব্যবহার করা হয়, সেটি ছিল অনেক বেশি উঁচু, প্রায় ৮ ফুট! খেলোয়াড়রা সর্বশক্তি দিয়ে সার্ভ করেও বল নেট অতিক্রম করতে পারছিলেন না। শুধু নেট নিয়েই নয়, বিপত্তি দেখা দেয় আরও অনেক বিষয়েই। পয়েন্ট কীভাবে হিসাব করা হবে, ম্যাচ জয়ের মানদণ্ড কী হবে- এসবের কোনো নিয়মই যে জানা নেই কারও!

ব্যস, এই বিপত্তি দূর করার জন্য শুরু হয় নিরন্তর গবেষণা। চলতে থাকে বৈঠকের পর বৈঠক। তার আগেই যেহেতু লন্ডনের মেরিলিবোর্ন ক্রিকেট ক্লাব ক্রিকেট খেলার নিয়ম-কানুন তৈরি করেছিল, টেনিস-প্রেমীরাও তাই স্মরণাপন্ন হয় ১৭৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত মেরিলিবোর্ন ক্রিকেট ক্লাবের (এমসিসি)। সেখানেই চলতে থাকে টেনিস ম্যাচের নিয়ম-নীতি তৈরির গবেষণা। প্রায় এক বছর ধরে বৈঠকের পর বৈঠক ও গবেষণার পর ১৯৭৫ সালে মেরিলিবোর্ন ক্রিকেট ক্লাবের পক্ষ থেকেই তৈরি করা হয় লন টেনিসের ‘প্রাথমিক’ নিয়ম-কানুন। মজার বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন? মান-মর্যাদা, ঐতিহ্য, জনপ্রিয়তা- সব দিক থেকেই ক্রিকেটের চেয়ে এগিয়ে টেনিস; কিন্তু এই টেনিস খেলার প্রাথমিক নিয়ম-কানুনের জন্ম ক্রিকেট ক্লাব এমসিসিতে!

রাফায়েল নাদাল।

এমসিসির তৈরি প্রাথমিক নিয়ম-কানুন মেনেই ইংল্যান্ডজুড়ে অনুষ্ঠিত হতে থাকে টেনিসের অনানুষ্ঠানিক ম্যাচ। এরপর ১৮৭৭ সালে ইংল্যান্ডের উইম্বলডনে প্রতিষ্ঠিত হয় অল-ইংল্যান্ড লন টেনিস অ্যান্ড ক্রোকেট ক্লাব। যেটি মূলত অল-ইংল্যান্ড ক্লাব নামেই পরিচিত। এই ক্লাবটি প্রতিষ্ঠার বছরেই আয়োজন করে আনুষ্ঠানিক টেনিস টুর্নামেন্টের। টুর্নামেন্টের নামকরণ করা হয় উইম্বলডন ওপেন। যেটি এখনো বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদার গ্র্যান্ড স্লাম টুর্নামেন্ট হিসেবে বিবেচিত। উইম্বলডনের যাত্রা শুরুর পর দ্রুতই টেনিস নিয়ে সোরগোল পড়ে যায় বিশ্বজুড়ে। অল্প সময়েই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে টেনিস নামের নতুন খেলা। সেই জনপ্রিয়তার ভিত্তিতেই ৪ বছর পর ১৯৮১ সালে যাত্রা শুরু হয় বছরের বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা গ্র্যান্ড স্লাম টুর্নামেন্ট ইউএস ওপেনের। ১৮৯১ সালে শুরু হয় ফ্রেঞ্চ ওপেন। এর ১৪ বছর পর ১৯০৫ সালে যাত্রা শুরু অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের।

বিশ্বের অন্য সব টুর্নামেন্টের কথা বাদ দিয়ে শুধু ৪টি গ্র্যান্ড স্লাম টুর্নামেন্টের জন্মসূত্র উল্লেখ করার কারণটা এই প্রতিবেদনের বিষয়েই স্পষ্ট। প্রতিবেদনটিই তো রাফায়েল নাদালের গ্র্যান্ড স্লাম জয়ের রেকর্ড নিয়ে। ১৮৭৭ সালে উইম্বলডনের যাত্রা, তখন থেকেই শুরু হয়েছে গ্র্যান্ড স্লাম শিরোপার হিসাব-নিকাশ। সেই থেকে বিগত ১৪৫ বছরের ইতিহাসে সব গ্র্যান্ড স্লাম টুর্নামেন্ট মিলিয়ে পুরুষ এককে সর্বকালের সর্বোচ্চ শিরোপা জয়ী নাদাল। শুরুর ইতিহাস মিলিয়ে রেকর্ডটা তো প্রায় ৯০০ বছরের! নাদালের রেকর্ডটা কত যে বড়, তা সহজেই অনুমেয়। 

মেয়েদের টেনিস মিলালে অবশ্য নাদাল সর্বোচ্চ গ্র্যান্ড স্লাম জয়ির তালিকার ৪ নম্বরে থাকবেন। কারণ এককের শিরোপা হিসেবে তিনজন নারী তাঁর চেয়ে বেশি গ্র্যান্ড স্লাম জিতেছেন। মেয়েদের মধ্যে এককে সবচেয়ে বেশি শিরোপা জিতেছেন অস্ট্রেলিয়ান মেয়ে মার্গারেট কোর্ট, ২৪টি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৩টি শিরোপা জিতেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সেরেনা উইলিয়ামস। তৃতীয় সর্বোচ্চ ২২টি জার্মান সুন্দরি স্টেফি গ্রাফ। মার্গারেট কোর্ট অবশ্য তাঁর ২৪টি শিরোপা জিতেছেন ১৯৬৮ সালে টেনিসের উন্মুক্ত শুরুর আগে-পরে মিলিয়ে। এর ১৩টি জিতেছেন উন্মুক্ত যুগ শুরুর আগে, ১১টি জিতেছেন উন্মুক্ত যুগে। শুধু উন্মুক্ত যুগ হিসেবে তাই মেয়েদের মধ্যে সবচেয়ে গ্র্যান্ড স্লাম এককের শিরোপা জয়ি সেরেনা উইলিয়মস।

উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, পুরুষ এককের শিরোপা জয়ির সঙ্গে মেয়েদের এককের শিরোপা জয়ের তুলনা চলে না। কারণ পুরুষ এককে প্রতিদ্বন্দ্বীতা অনেক অনেক বেশি। সে কারণেই মেয়েদের টেনিস অনেক পরে শুরু হওয়ার পরও শিরোপা সংখ্যায় মেয়েরা এগিয়ে। সে যাই হোক, এই প্রতিবেদনের প্রতিপাদ্য পুরুষ এককে নাদালের সর্বোচ্চ গ্র্যান্ড স্লাম শিরোপার রেকর্ড। আকাশসম উচ্চতার যে রেকর্ডটি এমনি এমনিই নাদালের হাতে আসেনি। এ জন্য অনেক কাটখড় পোড়াতে হয়েছে তাঁকে। 

লড়াই করতে হয়েছে দীর্ঘ ২০টি বছর। ২০০২ সালে ১৫ বছর বয়সে পেশাদার টেনিসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে অভিষেক হয়েছে তাঁর। সেই থেকে গত দুই দশক ধরে লড়াই-সংগ্রামের পর গত ৩০ জানুযারি এককভাবে পেয়েছেন রাজ-আসন। যে সিংহাসন পেতে তাঁকে কোর্টে লড়াই করতে হয়েছে রজার ফেদেরার ও নোভাক জোকোভিচ নামের দুই জীবন্ত কিংবদন্তির সঙ্গে। লড়াই করতে হয়েছে ইতিহাসের সঙ্গে, এমনকি যুদ্ধ করতে হয়েছে নিজের সঙ্গেও। চোট কত বার যে নাদালের ক্যারিয়ারটাকে সংশযের মধ্যে ফেলে দিয়েছে! কিন্তু নিজের সঙ্গে নিরন্তর লড়াই করে ঠিকই ফিরে এসেছেন কোর্টে। রেকর্ডটি সেই কঠোর অধ্যবসায়, চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞা, হার না মানা মানসিকতা আর লক্ষ্যে অবিচল থাকারই ফসল।

রাফায়েল নাদাল।

যেভাবে হাত বদল করে রেকর্ডটি নাদালের হাতে

রেকর্ড ভাঙা গড়ার খেলা। সেই খেলায় গত ১৪৫ বছরে মোট ৯ জনের হাত বদল করে রেকর্ডটি নাদালের হাতে এসেছে! মানে নাদালের আগেও মোট ৮ জন সর্বোচ্চ গ্র্যান্ড স্লাম জয়ের রেকর্ডের স্বাদ পেয়েছেন। ১৮৭৭ সালে প্রথম উইম্বলডন জিতে প্রথম রেকর্ডটির সূচনা করেন স্পেন্সার গোরে। এরপর ১৮৭৯ ও ১৮৮০ সালে, টানা দুবার উইম্বলডন শিরোপা জিতে রেকর্ডটি নিজের করে নেন জন হার্টলি। এরপর ১৮৮১ সালে শুরু হয় বিশ্বের দ্বিতীয় গ্র্যান্ড স্লাম ইউএস ওপেন। এই টুর্নামেন্ট প্রবর্তনের পর সর্বোচ্চ গ্র্যান্ড স্লাম জয়ের রেকর্ডটি নিয়ে শুরু হয় তুমুল লড়াই। উইম্বলডনে ১৮৮১ থেকে ১৮৮৬, টানা ৬ বার শিরোপা জেতেন উইলিয়ান রেনশ। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দিয়ে ইউএস ওপেনেও ওই ৬ বারই শিরোপা জিতে নেন রিচার্ড সেয়ার্স। দু’জনেই যৌথ মালিক হিসেবে নতুন করে রেকর্ডটিকে নিয়ে যেতে থাকেন। তবে ১৮৮৭ সালে টানা সপ্তম বারের মতো ইউএস ওপেনের শিরোপা জিতে রেকর্ডটি একান্তই নিজের করে নেন যুক্তরাষ্ট্রের তারকা রিচার্ড সেয়ার্স।

তার ৭ গ্র্যান্ড স্লাম শিরোপার রেকর্ডটি দীর্ঘ ৩৮ বছর আটকে ছিল। যদিও এর মধ্যে ৪টি গ্র্যান্ড স্লাম টুর্নামেন্টই শুরু হয়ে যায়। যাত্রা শুরু করে ফ্রেঞ্চ ওপেন এবং অস্ট্রেলিয়ান ওপেনও; কিন্তু ৪টি গ্র্যান্ড স্লাম টুর্নামেন্ট মিলেও রিচার্ড সেয়ার্সের রেকর্ডটি কেউ ভাঙতে পারছিলেন না; কিন্তু জন্মই যার ভাঙার জন্য, সেই রেকর্ড কত দিন আর থাকে!

অবশেষে ১৯২৫ সালে রিচার্ড সিয়ার্সকে সরিয়ে রেকর্ডটি নিজের করে নেন তারই স্বদেশি বিল টিলডেন, যার গ্র্যান্ড স্লাম শিরোপা জয়যাত্রা শুরু হয় ১৯২০ সালে, উইম্বলডন জয়ের মধ্যদিয়ে। ওই বছর ইউএস ওপেনের শিরোপাও জিতে নেন বিল টিলডেন, যার মধ্যদিয়ে তিনি ইতিহাসের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে গড়েন একই বছরে ২টি গ্র্যান্ড স্লাম জয়ের রেকর্ড। পরের বছরও উইম্বলডন এবং ইউএস ওপেনের শিরোপা জিতেন তিনি। ফলে দুই বছরেই ৪টি গ্র্যান্ড স্লাম হয়ে যায় তার। এরপর ইউএস ওপেনে টানা আরও ৪টি শিরোপা জিতে টিলডেন গড়েন ৮ গ্র্যান্ড স্লাম জয়ের নতুন রেকর্ড।

পরে আরও দুটি শিরোপা জিতে বিল টিলডেন নিজেই নিজের রেকর্ডটি ভেঙে গড়েন নতুন করে। থামেন ১০টি গ্র্যান্ড স্লাম জিতে। মজার বিষয় হলো, এই মার্কিন তারকা গ্র্যান্ড স্লাম দৌড়টা যেমন উইম্বলডন দিয়ে শুরু করেছিলেন, শেষটাও করেন উইম্বলডন জিতেই। ১৯৩০ সালে নিজের শেষ গ্র্যান্ড স্লামটা তিনি জিতেন উইম্বলডনেই। টিলডেন অবসর নিলেও তার রেকর্ডটি বেঁচে ছিল ৩৭ বছর; কিন্তু শেষ পর্যন্ত ১৯৬৭ সালের জানুয়ারিতে ভেঙে যায় তার রেকর্ড। টিলডেনকে দুইয়ে ঠেলে রেকর্ডটি নতুন করে গড়েন অস্ট্রেলিয়ান তারকা রয় এমারসন। ওই বছরের জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়া ওপেন জয়ের মধ্য দিয়ে রয় এমারসন নিজের নামে পাশে করে ফেলেন ১১তম গ্র্যান্ড স্লাম। ওই বছরই ফ্রেঞ্চ ওপেন জিতে তিনি শেষ পর্যন্ত থামেন ১২তে গিয়ে। 

রয় এমারসনের ১২ গ্র্যান্ড স্লামের নতুন রেকর্ডের বিশেষ তাৎপর্য ছিল, ৪টি গ্র্যান্ড স্লাম টুর্নামেন্টেই অন্তত ২টি করে শিরোপা জিতেছেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ান হিসেবে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনেই শিরোপা জিতেছেন বেশি অর্থাৎ ৬টি। ফ্রেঞ্চ ওপেন, উইম্বলডন ও ইউএস ওপেন- এই ৩টি গ্র্যান্ড স্লাম টুর্নামেন্টেই তিনি শিরোপার হাসি হাসেন সমান দু’বার করে। যার মধ্য দিয়ে ইতিহাসের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে দুবার ‘ক্যারিযার গ্র্যান্ড স্লাম’ গড়ার কৃতিত্ব দেখান তিনি। এখনো পর্যন্ত যে কীর্তি আছে আর মাত্র দু’জনের। জোকোভিচ ও রাফায়েল নাদালের। এমারসন, জোকোভিচের পর 

তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে নাদাল তো এই কীর্তিটা ছুঁয়েছেন এবার, রেকর্ড সৃষ্টিকারী অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জয়ের মাধ্যমে। মানে এবার অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিতে এই রেকর্ডেরও স্বাদ পেয়েছেন তিনি।

যাই হোক, রয় এমারসনের ১২গ্র্যান্ড স্লাম রেকর্ডটি ইতিহাসের পাতায় টিকে ছিল ৩৩ বছর। অর্থাৎ ১৯৬৮ সালে উন্মুক্ত যুগ শুরুর পরও এমারসনের রেকর্ডটি ভাঙতে বা ছুঁতে পারছিলেন না কেউ। অবশেষে সেই খামতি দূর করেন পিট সাম্প্রাস। ১৯৯৯ সালে উইম্বলডন জয়ের মধ্য দিয়ে এই মার্কিনি ছুঁয়ে ফেলেন এমারসনের ১২ শিরোপার রেকর্ড। ২০০০ সালে সেই উইম্বলডন জিতেই সাম্প্রাস গড়েন ১৩ গ্র্যান্ড স্লাম জয়ের নতুন রেকর্ড। এরপর ২০০২ সালে ইউএস ওপেন জয়ের মাধ্যমে রেকর্ডটি ১৪তে নিয়ে থামেন সাম্প্রাস।

পিট সাম্প্রাসের এই কীর্তি কেউ কখনো ভাঙতে পারবে না বলেই আলোচনা হচ্ছিল তখন; কিন্তু ওই যে রেকর্ডের জন্মই হয় ভাঙার জন্য। তখন অবিশ্বাস্য মনে হওয়া রেকর্ডটিও টিকেনি। মাত্র ১০ বছর পরই তার রেকর্ডটি ভেঙে দিয়ে রজার ফেদেরার টেনিস দুনিয়াকে নতুন করে বিশ্বাস করান, রেকর্ড ভাঙার জন্যই। সাম্প্রাস যখন থামেন, ঠিক তার পরের বছর থেকে গ্র্যান্ড স্লাম দৌড় শুরু করেন রজার ফেদেরার। মানে ২০০৩ সালে প্রথম গ্র্যান্ড স্লাম জেতা ফেদেরার ২০০৯ সালেই ভেঙে দেন সাম্প্রাসের রেকর্ড। ২০০৯ সালেই ফ্রেঞ্চ ওপেন জিতে প্রথমে সাম্প্রাসের ১৪ ছুঁয়ে ফেলার পর উইম্বলডন জিতে ফেদেরার গড়েন ১৫’-এর নতুন বিস্ময় রেকর্ড। সেখানেই থামেননি ফেদেরার। পরে আরও ৫টি গ্র্যান্ড স্লাম জিতে সুইস কিংবদন্তি রেকর্ডটাকে ‘নতুন অবিশ্বাস্য’ ২০-এর ঠিকানায় নিয়ে তোলেন। 

এবার যেন টেনিস পণ্ডিতেরা আরও বেশি নিশ্চিত হয়ে যায়, ফেদেরারের এই রেকর্ড ভাঙার মতো নয়; কিন্তু সেই বিশ্বাসকেও মিথ্যে বানিয়ে ছাড়লেন নাদাল। অবশ্য এর আগে নাদাল ও জোকোভিচ পেছন ধেয়ে ছুঁয়ে ফেলেন ফেদেরারকে। ফেদেরার যখন ২০ করেন, নাদাল তখন দাঁড়িয়ে ছিলেন ১৬- তে। জোকোভিচের ছিল ১২। সেখান থেকে নাদাল ৪টি ও জোকোভিচ আরও ৮টি গ্র্যান্ড স্লাম জিতে ফেদেরারকে ছুঁয়ে ফেলেন। ফেদেরার আর একটিও জিততে না পারায় ‘বিগ থ্রি’র তিন সদস্যই দাঁড়িয়ে যান সমান্তরালে। তিনজনের নামের পাশেই গ্র্যান্ড স্লাম সংখ্যা দাঁড়ায়-২০, ২০. ২০। 

তখনই নিশ্চিত হয়ে ফেদেরারের গড়া সর্বোচ্চ ২০ গ্র্যান্ড স্লামের রেকর্ডটি ভাঙতে যাচ্ছে; কিন্তু প্রশ্ন ওঠে, রেকর্ডটি প্রথম ভাঙবেন কে, জোকোভিচ না-কি নাদাল? জোকোভিচ দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন, র‌্যাঙ্কিংয়েরও এক নম্বরে তিনি। ওদিকে নাদাল চোটে আক্রান্ত, ফর্মেও ভাটার টান। সব মিলে জোকোভিচই নতুন রেকর্ড গড়বেন বলে বিশ্বাস করতে শুরু করেছিল সবাই; কিন্তু সেই বিশ্বাসকে উড়িয়ে দিয়ে নাদালই হলেন নতুন রেকর্ডের মালিক। এতে অবশ্য জোকোভিচের ভ‚মিকা আছে! অস্ট্রেলিয়া ওপেনে রেকর্ড ৯ বার শিরোপা জিতেছেন জোকোভিচ। এবারও অস্ট্রেলিয়ান ওপেন শুরুর আগে দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন সার্বিয়ান তারকা। র‌্যাঙ্কিংয়েরও এক নম্বরে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। 

কিন্তু ‘করোনার টিকা নেব না’-নিজের এই পণে অটল থাকায় এবারের অস্ট্রেলিয়া ওপেনে অংশই নিতে পারেননি তিনি! করোনার টিকা না নেওয়ায় কর্তৃপক্ষ তাকে খেলার অনুমতি দেয়নি। ব্যস, জোকোভিচের অনুপস্থিতিতেই নাদালের সামনে প্রশস্ত হয়ে যায় সম্ভাবনার দুয়ার। ওদিকে চোটের কারণে বুড়ো ফেদেরারও ছিলেন না। তাদের অনুপস্থিতিতে তৈরি হওয়া সুযোগটা দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছেন নাদাল।

রাফায়েল নাদাল।

যে শিরোপায় ‘২১’-এর রেকর্ড

নাদালের রেকর্ড গড়া শিরোপা জয়ের মধ্যেও রয়েছে বিশ্বের উদীয়মান তরুণ তারকাদের জন্য অনুকরণীয় শিক্ষা। এর আগে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে একবারই মাত্র শিরোপা জিতেছিলেন নাদাল। সেটি ২০০৯ সালে। যেটি ছিল তার ৬ষ্ঠ গ্র্যান্ড স্লাম। এরপর ফ্রেঞ্চ ওপেন, উইম্বলডন, ইউএস ওপেন মিলিয়ে আরও ১৪টি গ্র্যান্ড স্লাম শিরোপা জেতেন তিনি; কিন্তু অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে নিজের দ্বিতীয় শিরোপার দেখা পাচ্ছিলেন না কিছুতেই। দ্বিতীয়ের আশায় অংশ নিয়েছেন প্রতিবারই। সব বাধা পেরিয়ে বেশ কয়েকবার ফাইনালেও উঠেছেন; কিন্তু ‘দ্বিতীয়’ লাভ হয়নি। এই যে বার বার স্বপ্নভঙ্গের বেদনা নিয়ে ফিরে যাওয়া, তারপরও নাদাল হাল ছেড়ে দেননি।

বছর শেষে নতুন করে স্বপ্ন সাজিয়ে ঠিকই মেলবোর্নে এসেছেন। অবশেষে দীর্ঘ এক যুগ পর দ্বিতীয় শিরোপার উৎসব করলেন মেলবোর্নে। যে উৎসবটি হয়ে থাকল তার আকাশে ওঠার স্বাক্ষীও। এই এক যুগের অপেক্ষার ফসল। সেটিও ধরা দিয়েছে চরম নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে। জোকোভিচ-ফেদেরারের অনুপস্থিতিতে অনেকটা অনায়াসেই ফাইনালে পা রাখেন স্প্যানিশ কিংবদন্তি; কিন্তু ফাইনালে গিয়ে কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হন নাদাল। 

এক নম্বর র‌্যাঙ্কধারী জোকোভিচহীন আসরে দুই নম্বরে র‌্যাঙ্কিংয়ে থাকা ডানিল মেদভেদেব নিশ্চিতভাবেই ফেবারিট ছিলেন। সেই তকমার সুবিচার করেই ফাইনালে উঠেন মেদভেদেব। নাদালের বিপক্ষে ফাইনালটাও রুশ তারকা শুরু করেছিলেন স্বপ্নে মতো। নাকালের নাকে-মুখের জল এক করে প্রথম দুটি সেটই জিতে নেন মেদভেদেব। মেলবোর্ন পার্কে তখন একটাই বিশ্বাস- আরও একবার হতাশা নিয়ে ফিরতে হচ্ছে নাদালকে। মেদভেদেব জিততে যাচ্ছেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় গ্র্যান্ড স্লাম! উন্মুক্ত যুগ শুরুর পর অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনালে প্রথম দুই সেট হেরে যাওয়ার পর কেউ কখনো জিততে পারেনি। নাদাল কি করে পারবেন?

নাদাল পেরেছেন। পেরেছেন অবিশ্বাস্যভাবে। ম্যাচের চিত্রনাট্য যেন বলে দিচ্ছে, নাদালকে জেতানোর জন্যই পণ করে বসেছিলেন ভাগ্যদেবী। অদৃশ্যে বসে তাই ভাগ্যদেবী কলকাটি নেড়ে নাদালকে জিতিয়ে দিয়েছেন। নয়তো কি! তৃতীয় সেটেও সমানতালেই লড়ছিলেন মেদভেদেব। এমনকি এক পর্যায়ে এগিয়েও ছিলেন তিনি। ওই সময়ে ছোট্ট একটা ভুল করে না বসলে মেদভেদেবই হয়তো হাসতে পারতেন শিরোপা হাসি; কিন্তু ভাগ্যদেবী তাকে দিয়ে ভুল করালেন। যে ভুলের ফসল হিসেবে পয়েন্ট তুলে নেন নাদাল। এরপর ঘুরে দাঁড়িয়ে সেটটাও জিতে আশা বাঁচিয়ে রাখেন নাদাল। 

মনোবল ফিরে পেয়ে চতুর্থ সেটটি নাটকীয়তা ছাড়াই জিতে নেন নাদাল। ম্যাচে তখন ২-২ সমতা। এরপর ম্যাচ নির্ধারণী পঞ্চম সেট। যেখানে নাটকীয়তা হয়েছে সবচেয়ে বেশি। তবে সব নাটকীয়তা শেষে ২-৬, ৬-৭ (৫-৭), ৬-৪, ৬-৪, ৭-৫ গেমে বিজয়ী হন নাদাল। গড়েন উন্মুক্ত যুগে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে প্রথম দুই সেট হারের পরও ফাইনাল জয়ের রেকর্ড। যে রেকর্ডের মধ্যদিয়ে গড়েছেন ‘২১’-এর আকাশে উঠে যাওয়ার রেকর্ড। টেনিস বোদ্ধাদের অভিমত, প্রচÐ মানসিক শক্তির জোরেই তলানি থেকেও ঘুরে দাঁড়িয়ে জিতেছেন নাদাল। মেদভেদেব হেরেছেন অনভিজ্ঞতা আর নাদালের অদম্য মানসিকতার কাছে।

ফাইনালে হারলেও একটা পুরস্কার অবশ্য এরই মধ্যে পেয়েছেন মেদভেদেব। নোভাক জোকোভিচকে হটিয়ে ক্যারিয়ারে প্রথম বারের মতো পা রেখেছেন র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বরে। রেকর্ডধারী নাদালও একধাপ এগিয়ে এখন ৪ নম্বরে। নাদালের ২১-এর রেকর্ডটা আগামী মে’তেই ২২ হতে যাচ্ছে কি-না, এখন সেই আলোচনাই হচ্ছে। কারণ মে মাসেই যে তার সবচেয়ে প্রিয় টুর্নামেন্ট ফ্রেঞ্চ ওপেন। এ পর্যন্ত জেতা ২১ শিরোপার মধ্যে ১৩টিই তিনি জিতেছেন ফ্রেঞ্চ ওপেনে। বাকি ৮টির মধ্যে ৪টি ইউএস ওপেনে, অস্ট্রেলিয়ান ওপেন ও উইম্বলডনে জিতেছেন দুটি করে। এই তথ্যই বলছে, নাদালের ২১ দ্রুতই ২২ হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। 

লেখাটি দেশকাল পত্রিকার (৫ম বর্ষ-১ম সংখ্যা ) জানুয়ারি-মার্চ ২০২২ থেকে সংগৃহীত

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //