২৩-এর ঊর্ধ্বাকাশে নোভাক জোকোভিচ

‘সর্বকালের সেরা কিনা, আমি সেই বিষয়ে যেতে চাই না। সেই রায় দেওয়ার দায়িত্বটা অন্যদের। আমি শুধু আমার নিজের ইতিহাসটা লিখে চলেছি।’ ২৩-এর ঊর্ধ্বাকাশে গমন করে এভাবেই নিজের বিনয় প্রকাশ করেছেন নোভাক জোকোভিচ। চাইলে তিনি নিজেই নিজেকে ‘সর্বকালের সেরা দাবি করতে পারতেন।’ সেটা অমূলকও হতো না। বিশ^ টেনিসের ইতিহাসে কোনো পুরুষ খেলোয়াড় যা কখনো করতে পারেননি, নিজের অবিশ্বাস্য দক্ষতা-ক্যারিশমায় সার্বিয়ান তারকা সেই কীর্তিই গড়েছেন। এবারের ফ্রেঞ্চ ওপেন জয়ের মধ্য দিয়ে সার্বিয়ান তারকা গ্র্যান্ডস্লামের পুরুষ এককে ইতিহাসের বাকি সবাইকে ছাপিয়ে পা রেখেছেন ২৩ শিরোপার ঊর্ধ্বাকাশে। রাফায়েল নাদাল, রজার ফেদেরার পড়ে গেছেন তার পেছনে।

পুরুষ-মহিলা টেনিস মিলিয়ে এখনো সর্বোচ্চ গ্র্যান্ডস্লাম জয়ের রেকর্ডটা অস্ট্রেলিয়ার সাবেক নারী তারকা মার্গারেট কোর্টের দখলে। মেয়েদের এককে তিনি শিরোপা জিতেছেন ২৪টি। তবে এর ১৩টি শিরোপা জিতেছেন তিনি ১৯৬৮ সালে ‘উন্মুক্ত যুগ’ শুরুর আগে। বাকি ১১টি শিরোপা জিতেছেন উন্মুক্ত যুগে। তারপরই যৌথভাবে দুই নম্বরে আছেন জোকোভিচ ও যুক্তরাষ্ট্রের নারী তারকা সেরেনা উইলিয়ামস। দুজনের নামের পাশেই সমান ২৩টি করে গ্র্যান্ডস্লাম এককের শিরোপা। জোকোভিচের সামনে সুযোগ আছে মার্গারেট কোর্টকেও ছাড়িয়ে সম্মিলিত তালিকায় সর্বোচ্চ গ্র্যান্ডস্লাম জয়ের রেকর্ড গড়ার। কে জানে, হয়তো জুলাইয়ে উইম্বলডনেই জোকোভিচ ভেঙে ফেলতে পারেন মার্গারেটের ২৪ শিরোপার রেকর্ড।

এখানে একটা বিষয় স্মরণ রাখাটা খুবই জরুরি যে, পুরুষ একক আর নারী এককের প্রতিদ্বন্দ্বিতাটা এক রকম নয়। বরং দুটির মধ্যে পার্থক্য আকাশ-পাতাল। পুরুষ এককের সঙ্গে নারী এককের কোনো তুলনাই চলে না! পুরুষ এককে ২৩টি গ্র্যান্ডস্লাম জেতাটা সত্যিকার অর্থেই আকাশ ছোঁয়ার মতো। তাছাড়া জোকোভিচ ‘২৩’-এর কীর্তি গড়লেন বিশ^ টেনিসের সবচেয়ে সোনালি সময়ের সোনালি প্রজন্মের তারকাদের সঙ্গে লড়াই করে। জোকোভিচ, নাদাল, ফেদেরার- সর্বকালের সেরা তিন তারকার ত্রিমুখী দ্বৈরথটা নিশ্চিতভাবেই বিশ্ব টেনিসের ইতিহাসের সর্বকালের সেরা।

২৩-এর কীর্তি গড়ার পর বিশ্বের টেনিস বোদ্ধাদের অনেকেই জোকোভিচকে সর্বকালের সেরার সার্টিফিকেট দিয়ে দিয়েছেন। জোকোভিচ নিজেও নিজেকে সর্বকালের সেরা মনে করেন কিনা, এই প্রশ্নের উত্তরেই উপরোক্ত কথাগুলো বলেছেন সার্বিয়ান তারকা। নিজেকে নিজে ‘সর্বকালের সেরার আসনে’ না বসিয়ে দায়িত্বটা ছেড়ে দিয়েছেন বিশ্ববাসীর ওপর। বিনয়ের অবতার হয়ে জোকোভিচ আরও একবার প্রমাণ করেছেন গ্রেটরা বিনয়ীই হয়। 

সাধারণভাবে ২৩ সংখ্যাটা হয়তো মামুলি একটা সংখ্যাই মাত্র। কিন্তু বিশ্ব টেনিসের ইতিহাসের সঙ্গে ২৩ সংখ্যাটার বিচার করতে গেলেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে, ২৩ শুধুই একটা সংখ্যা নয়। ২৩ মানে আকাশ ছোঁয়া। ২৩ মানে ভিনগ্রহী বনে যাওয়া। ১৮৭৭ সালে বিশ্ব টেনিসের যাত্রা শুরুর পর বিগত ১৪৬ বছরে কোনো পুরুষ টেনিস তারকাই এই কীর্তি গড়তে পারেননি। কোনো একজন খেলোয়াড় ২৩টি গ্র্যান্ডস্লাম শিরোপা জিততে পারেন, এই কয়েক বছর আগেও এমনটা কেউ কল্পনাও করতে পারেননি! জোকোভিচ মানব কল্পনার সেই বাইরের সীমা ছুঁয়েছেন অবলীলায়। শুধু ছুঁয়েই ক্ষান্ত হননি। সার্বিয়ান তারকা উচ্চকণ্ঠে ঘোষণা দিয়েছেন, নিজেকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার। বলেছেন, ‘আমি আমার ইতিহাসটা লিখেই যাব।’ সেটা কত দিন, সেটা কারও জানা নেই। জোকোভিচ নিজেও নিজের শেষ সীমাারেখা আঁকিয়ে দেননি!

পুরুষ এককের গ্র্যান্ডস্লাম শিরোপা সংখ্যার বিচারে ২৩ কত বড়, সেটি প্রমাণে আর একটি বিষয় উল্লেখ করা যেতে পারে। অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি রয় এমারসনের ১২ গ্র্যান্ডস্লাম শিরোপার রেকর্ড ভেঙে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিংবদন্তি পিট সাম্প্রাস যখন ১৩ গ্র্যান্ডস্লামের নতুন রেকর্ড গড়েন এবং ২০০২ সালে তিনি যখন সংখ্যাটাকে ১৪-এ উন্নীত করে অবসর নেন, তখন বিশ^ টেনিস বোদ্ধাদের প্রায় সবাই একযোগে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, সাম্প্রাসের রেকর্ড কেউ কখনো ভাঙতে পারবে না! সাম্প্রাসের ১৪ শিরোপার রেকর্ডটিকে অমরত্বের মোড়কে মুড়িয়েছিলেন। 

কিন্তু মাত্র ৭ বছর পরই টেনিসবোদ্ধাদের নতুন করে ভবিষ্যদ্বাণী করতে হয়। কারণ সাম্প্রাসের রেকর্ডটাকে অমর থাকতে দেননি রজার ফেদেরার। ২০০৯ সালের উইম্বলডন শিরোপা জিতে ফেদেরার যখন সাম্প্রাসের ১৪ শিরোপার রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ ১৫ গ্র্যান্ডস্লাম শিরোপার নতুন রেকর্ড গড়েন, তখন আবার বোদ্ধাদের সম্মিলিত রায়, ফেদেরারই সর্বকালের সেরা। তার এই রেকর্ড অমর। এটা কেউ কোনো দিন ভাঙতে পারবে না! পরে সেই ফেদেরারই সংখ্যাটাকে ২০-এ নিয়ে থামেন।

ফেদেরার নিজের গ্র্যান্ডস্লাম সংখ্যা ২০ বানান ২০১৭ সালে সেই উইম্বলডন শিরোপা জিতেই। এরপর আবার আলোচনা শুরু, সুইস কিংবদন্তির এই কীর্তি কারও পক্ষে ছোঁয়া সম্ভব নয়। কারণ গ্র্যান্ডস্লাম শিরোপা দৌড়ে তার প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী নাদাল ও জোকোভিচ তখনো অনেক পেছনে। ২০১৭ সালে ফেদেরারের উইম্বলডন জয়ের সময় নাদালের শিরোপা সংখ্যা ১৫, জোকোভিচের ১২টি।

কিন্তু এবারও বোদ্ধাদের ভবিষ্যদ্বাণী সঠিক থাকেনি। ফেদেরার কোর্টে থাকতেই তার রেকর্ড ভেঙে ২১ গ্র্যান্ডস্লাম শিরোপার নতুন রেকর্ড গড়েন নাদাল। ২০২০ সালে ফ্রেঞ্চ ওপেন জিতে ফেদেরারের ‘২০’ স্পর্শ করেন নাদাল। প্রায় দুই বছর পর ২০২২ সালে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের শিরোপা জিতে স্প্যানিশ কিংবদন্তি গড়েন ২১-এর নতুন আকাশে। এরপর ২০২২ সালেই ফ্রেঞ্চ ওপেনে নিজের ১৪তম শিরোপা জয়ের মধ্য দিয়ে নাদাল রেকর্ডটা ২২-এ উন্নীত করেন।

মজার ব্যাপার হলো, বারবার ‘অমরত্বের’ রায় দিয়ে ধোঁকা খাওয়া বোদ্ধারা এবার সতর্ক হয়ে যান। মুখ ফসকেও কেউ নাদালের রেকর্ডটিকে অমরত্বের ঢাকনা দেননি। কারণ তত দিনে জোকোভিচ দুর্বার গতিতে একের পর এক সিঁড়ি পেরিয়ে নাম লিখিয়ে ফেলেছেন ফেদেরারের পাশে। বনে গেছেন ২০ গ্র্যান্ডস্লাম শিরোপার মালিক।

২০২২ সালেই উইম্বলডন জিতে জোকোভিচ সংখ্যাটা ২১ বানিয়ে ফেলেন। এরপর চলতি ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে নিজের ১০ম শিরোপা জয়ের মাধ্যমে সার্বিয়ান তারকা ছুঁয়ে ফেলেন নাদালের ‘২২’-এর রেকর্ড। সর্বশেষ নাদালেরই প্রিয় কোর্ট রোঁলা গারোর লালদুর্গে জোকোভিচ পেছনে ফেলে দিলেন নাদালকে। ফ্রেঞ্চ ওপেনকে নিজের টুর্নামেন্ট হিসেবেই প্রমাণ করেছেন নাদাল। প্যারিসের রোঁলা গারোর লালদুর্গে তিনি রেকর্ড ১৪ বার শিরোপা জিতেছেন। সেই নাদাল এবার চোটের কারণে ফ্রেঞ্চ ওপেনে নামতেই পারেননি। এই বছর তিনি কোর্টে নামতে পারবেন না। নাদালের অনুপস্থিতিতে জোকোভিচের জন্য কাজটা অনেকটা সহজই হয়ে যায়। সার্বিয়ান তারকা কাজটা সম্পন্নও করেছেন সহজেই। একের পর এক ধাপ পেরিয়ে ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিলেন ক্যাসপার রুদের। নরওয়ের তারকা রুদ এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো গ্র্যান্ডস্লামের ফাইনালে উঠেছিলেন। ফ্রেঞ্চ ওপেনে দ্বিতীয়বারের মতো। কাজেই তার স্বপ্ন ছিল ক্যারিয়ারের প্রথম গ্র্যান্ডস্লাম শিরোপা উঁচিয়ে ধরার। কিন্তু জোকোভিচের রেকর্ড ক্ষুধার কাছে তার সেই বাসনা পূর্ণ হয়নি। তাকে সরাসরি ৭-৬ (৭-১), 

৬-৩, ৭-৫ গেমে হারিয়ে ‘২৩’-এর রেকর্ড গড়েছেন জোকোভিচ। এই শিরোপার মধ্য দিয়ে আরও দুটি রেকর্ড গড়েছেন সার্বিয়ান তারকা। প্রথমত ফ্রেঞ্চ ওপেনে সবচেয়ে বেশি বয়সে পুরুষ এককের শিরোপা জয়ের রেকর্ডটি এখন তার দখলে। দ্বিতীয়ত ইতিহাসের একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে তিনি গড়েছেন প্রতিটি গ্র্যান্ডস্লাম টুর্নামেন্টে অন্তত তিনটি করে শিরোপা জয়ের রেকর্ড। মানে ইতিহাসের একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে তিনবার গ্র্যান্ডস্লাম ক্যারিয়ার পূর্ণ করেছেন জোকোভিচ। এ ছাড়া বিশ্ব র‌্যাংকিংয়েও আবার এক নম্বরে পা রেখেছেন সার্বিয়ান তারকা।

রোঁলা গারোর সাফল্যের পর অনেক টেনিসবোদ্ধাই জোকোভিচকে সর্বকালের সেরার মুকুট পরিয়েছেন। বিবিসি, ইনডিপেনডেন্ট, ফোর্বসসহ বিশ্বের অনেক প্রভাবশালী গণমাধ্যমও নানা তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে তাকেই ‘সর্বকালের সেরা’র তকমা পরাতে চেয়েছে। 

এক নজরে সেই তথ্যগুলোতে চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক
১. গ্র্যান্ডস্লাম এককের শিরোপা : জোকোভিচ ২৩, নাদাল ২২টি, ফেদেরার ২০টি

২. এটিপি শিরোপা : তৃতীয়বারের মতো ফ্রেঞ্চ ওপেন জয়ের মধ্য দিয়ে জোকোভিচের মোট এটিপি শিরোপার সংখ্যা এখন ৯৪টি। তার চেয়ে বেশি এটিপি শিরোপা জিতেছেন ইতিহাসে মাত্র দুজন। সর্বোচ্চ ১০৯টি এটিপি শিরোপা জিতেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কিংবদন্তি জিমি কনর্স। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১০৩টি শিরোপার মালিক ফেদেরার। ৪ নম্বরে জায়গা পাওয়া নাদাল জিতেছেন ৯২টি শিরোপা।

৩. ক্যারিয়ারে মোট ম্যাচ জয়ের হার: পুরুষ এককের ইতিহাসে ম্যাচ জয়ের হারে সবার ওপরে জোকোভিচ। তিনি ক্যারিয়ারের মোট ম্যাচের ৮৩.৪ শতাংশ ম্যাচেই জয় লাভ করেছেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮২.৯ শতাংশ ম্যাচে জয় লাভ করেছেন নাদাল, বিয়ন বোর্গের জয়ের হার ৮২.৪ শতাংশ, ফেদেরারের জয়ের হার ৮২ শতাংশ। তবে ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ জিতেছেন জিমি কনর্স, ১২৭৪টি। এই তালিকায় এরপর পর্যায়ক্রমে আছেন ফেদেরার (১২৫১ জয়), নাদাল ও ইভান ল্যান্ডল জিতেছেন সমান ১০৬৮টি করে ম্যাচ। তারকার পাঁচ নম্বরে জায়গা পাওয়া জোকোভিচ জিতেছেন ১০৫৮ ম্যাচে। পাঁচ জনের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে কম ম্যাচ খেলেছেন, ১২৬৮ ম্যাচ। 

৪. র‌্যাংকিংয়ের শীর্ষ ১০-এ থাকা খেলোয়াড়ের বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি জয়: এই তালিকায় সবার ওপরে জোকোভিচ। র‌্যাংকিংয়ের শীর্ষ ১০-এ থাকা খেলোয়াড়দের বিপক্ষে তিনি সর্বোচ্চ ২৪৫ ম্যাচে জিতেছেন। ফেদেরার জিতেছেন ২২৪ ম্যাচে, নাদাল ১৮৬ ম্যাচে। 

৫. সবচেয়ে বেশিবার এক নম্বরে থেকে বছর শেষ করা: এই তালিকাতেও সবার ওপরে জোকোভিচ। ইতিহাসের একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে ৭ বার র‌্যাংকিংয়ের এক নম্বরে থেকে বছর শেষ করেছেন তিনি। নাদাল ও ফেদেরার এই কীর্তি গড়েছেন ৫ বার করে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬ বার এক নম্বর থেকে বছর শেষ করেছেন পিট সাম্প্রাস।

৬. সবচেয়ে বেশি সময় র‌্যাংকিংয়ের শীর্ষে অবস্থান: পুরুষ এবং মহিলা একক মিলিয়েই সবচেয়ে বেশি সময় র‌্যাংকিংয়ের শীর্ষে কাটানোর রেকর্ডও জোকোভিচের। ফ্রেঞ্চ ওপেন জয়ের মধ্য দিয়ে তিনি ৩৮৮তম সপ্তাহের মতো র‌্যাংকিয়ের শীর্ষে কাটিয়েছেন। এক্ষেত্রে জোকোভিচ ভেঙে দিয়েছেন জার্মানির সাবেক নারী তারকা স্টেফি গ্রাফের রেকর্ড। স্টেফি ৩৭৭ সপ্তাহ মেয়েদের এককের র‌্যাংকিংয়ের শীর্ষে ছিলেন। পুরুষ এককে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ফেদেরার ৩১০ সপ্তাহ এবং নাদাল ২০৯ সপ্তাহ শীর্ষে ছিলেন। অবশ্য টানা সবচেয়ে বেশি সপ্তাহ শীর্ষে কাটানোর রেকর্ডটা এখনো ফেদেরারের দখলে। তিনি টানা মোট ২৩৭ সপ্তাহ র‌্যাংকিংয়ের শীর্ষে ছিলেন। জোকোভিচ টানা শীর্ষে কাটিয়েছেন ১২২ সপ্তাহ।

৭. ক্যারিয়ার প্রাইজমানি: টেনিস খেলে প্রাপ্ত আয়ের তালিকাতেও এক নম্বরে জোকোভিচ। আর্থিক পুরস্কার হিসেবে তার মোট আয় ১৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় অঙ্কটা ১৮৪৩ কোটি ৩৮ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। টেনিস কোর্ট থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আয় ফেদেরারের, ১৩৫ মিলিয়ন ডলার। নাদালের আয় ১৩১ মিলিয়ন ডলার। টেনিস কোর্টের বাইরের অর্থাৎ বিজ্ঞাপনী চুক্তিসহ অন্যান্য খাত থেকে আয়ে সবার ওপরে ফেদেরার। কোর্টের বাইরে থেকে তার আয় ৯৯০ মিলিয়ন ডলার। এই খাত থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৯০ মিলিয়ন ডলার আয় নাদালের, জোকোভিচের মাত্র ৩৪০ মিলিয়ন ডলার। 

৮. নাদাল ও ফেদেরারের সঙ্গে মুখোমুখি দ্বৈরথ: সর্বকালের সেরার দৌড়ে জোকোভিচের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী এই দুজনই- ফেদেরার ও নাদাল। এই দুজনের সঙ্গেই কোর্টের মুখোমুখি দ্বৈরথে এগিয়ে জোকোভিচ। নাদালের সঙ্গে কোর্টে ৫৯ বারের সাক্ষাতে জোকোভিচ জিতেছেন ৩০ বার, নাদাল ২৯ বার। ফেদেরারের সঙ্গে ৫০ সাক্ষাতের মধ্যে ২৭ বার জয় হাসি হেসেছেন জোকোভিচ, ফেদেরার জয় নিয়ে কোর্ট ছেড়েছেন ২৩ বার। উপরোক্ত পরিসংখ্যানের আলোকে জোকোভিচকে ‘সর্বকালের সেরা’র তকমা তো দেওয়াই যায়।

পরিবারের সামনেই রেকর্ড
জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জয়ের মধ্য দিয়েই নাদালের সর্বোচ্চ ২২ গ্র্যান্ডস্লাম শিরোপার রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলেন জোকোভিচ। তাই জানাই ছিল ফ্রেঞ্চ ওপেন জিতলে নাদালকেও ছাড়িয়ে তিনি উঠে যাবেন নতুন আকাশে। জোকোভিচ ফাইনালে ওঠার পর তার পরিবারের সদস্যরা রেকর্ড উদযাপনের প্রস্তুতি নিয়েই ফাইনাল দেখতে হাজির হয়েছিল গ্যালারিতে। ফাইনাল দেখতে গ্যালারিতে উপস্থিত ছিলেন তার পরিবারের প্রায় সবাই। বাবা সরয়ান জোকোভিচ, মা দিয়ানা, স্ত্রী ইয়েলেনা রিস্তিচ, দুই ছেলেমেয়েসবাই গ্যালারিতে বসে তার ঐতিহাসিক কীর্তির প্রত্যক্ষ সাক্ষী হয়েছেন। প্রতিপক্ষ ক্যাসপার রুদের বিপক্ষে ম্যাচজয়ী পয়েন্টটি পাওয়ার পরই হাত-পা ছড়িয়ে রোঁলা গারোর লাল কোর্টে শুয়ে পড়েন। 

আকাশের দিকে তাকিয়ে বিড় বিড় করে কিছু বলেন। কী বলেছেন তা তিনিই জানেন! তবে ধারণা করে নেওয়াই যায়, অবিশ্বাস্য কীর্তি গড়ার জন্য সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাকবেন তিনি। একে তো সর্বোচ্চ ২৩-এর রেকর্ড, তার ওপর আবার গড়েছেন সবচেয়ে বেশি বয়সে ফ্রেঞ্চ ওপেনের পুরুষ এককের শিরোপা জয়ের রেকর্ড। জোকোভিচ এই রেকর্ডটাও গড়েছেন সেই নাদালের রেকর্ডই ভেঙে দিয়ে। গত বছর সবচেয়ে বেশি বয়সে ফ্রেঞ্চ ওপেনের শিরোপা জয়ের রেকর্ডটা গড়েছিলেন নাদাল, ৩৬ বছর ২ দিনে। আর জোকোভিচ জিতেছেন ৩৬ বছর ২০ দিন বয়সে। 

চ্যাম্পিয়নের স্মারক ট্রফি হাতে ছোট্ট প্রতিক্রিয়ায় ছোটবেলার একটা স্বপ্নের কথা শোনান জোকোভিচ। তিনি বলেন, ‘আমার বয়স যখন ৭ বছর ছিল, তখনই আমি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, একদিন আমি অবশ্যই উইম্বলডন জিতব, বিশ্বের এক নম্বর তারকা হব। আমি 

কৃতজ্ঞ ও আনন্দিত যে, অসাধারণ সব অর্জনের মধ্য দিয়ে সেই আমি আজ এখানে দাঁড়িয়ে।’

তবে এখানেই থামতে চান না সার্বিয়ান তারকা। বরং নিজের ইতিহাসটা আরও লিখেই যেতে চান, ‘আমি বিশ্বাস করি আমার মধ্যে এখনো আরও অনেক টেনিস বাকি আছে। কাজেই আমি আমার ইতিহাসটা লিখে যেতে চাই।’

অভিনন্দন জানিয়ে যা বলেন নাদাল
যার রেকর্ড ভেঙে ‘২৩’-এর কীর্তি গড়েন জোকোভিচ, সেই নাদাল অভিনন্দন জানাতে কার্পণ্য করেননি। একই টুইট বার্তায় নাদাল অবিশ্বাস্য অর্জনের জন্য জোকোভিচকে শুভেচ্ছা জানিয়ে লেখেন, ‘অবিস্মরণীয় এই অর্জনের জন্য তোমাকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা। ২৩ এমন একটা সংখ্যা, কয়েক বছর আগেও যেটা কল্পনা করাটা ছিল অসম্ভব ব্যাপার। তুমি সেটাই সম্ভব করে দেখিয়েছ। পরিবার ও দলের সদস্যদের নিয়ে অবিশ্বাস্য অর্জনটা উপভোগ কর!’

জোকোভিচের প্রোফাইল ও ক্যারিয়ার
নাম : নোভাক জোকোভিচ
জন্ম : ২২ মে ১৯৮৭, বেলগ্রেড, সার্বিয়া
উচ্চতা : ৬ ফুট ২ ইঞ্চি
গ্র্যান্ডস্লাম শিরোপা : ২৩টি
মোট এটিপি শিরোপা : ৯৪টি
বর্তমান র‌্যাংকিং : ১
ক্যারিয়ার প্রাইজমানি : ১৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার
জোকোভিচের ২৩ গ্র্যান্ডস্লাম শিরোপা
অস্ট্রেলিয়ান ওপেন : ১০টি (রেকর্ড)
ফ্রেঞ্চ ওপেন : ৩টি
উইম্বলডন : ৭টি
ইউএস ওপেন : ৩টি

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //