দেশে অস্বাভাবিক হারে মাথাপিছু ঋণ বাড়ছে

বাংলাদেশে এ মুহূর্তে মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ ৪৩২ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ৩৭ হাজার ৫৮৪ টাকা। দক্ষিণ এশিয়ায় অন্য দেশগুলোর ঋণের হিসেবে এর পরিমাণ কম মনে হলেও আসলে ২০১৮ সাল থেকে দেশে দেশি ও বিদেশি ঋণের পরিমাণ অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। 

আজ সোমবার (৯ মে) এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত বাংলাদেশের সরকারি দায়-দেনা শীর্ষক আলাপচারিতায় নাগরিক প্ল্যাটফর্ম কনভেনর ও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য তার প্রবন্ধে এসব তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেন।

ভার্চুয়ালি আয়োজিত অনুষ্ঠানে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশে দায়-দেনা দক্ষিণ এশিয়ার তুলনায় কম এতে সন্দেহ নেই। আইএমএফ এর সূত্রানুযায়ী ২০২০ সাল পর্যন্ত দায়-দেনা জিডিপির ৩৪.০৭ শতাংশ। আর ২০২১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের দায়-দেনা ১৩১.১৪ বিলিয়ন। গত তিন বছরে গড় হিসাবে দায়-দেনা প্রায় সাড়ে ১৬ বিলিয়ন করে বেড়ে গেছে। সার্বিক পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা গেছে, ২০০২ থেকে ২০১১ পর্যন্ত দায়-দেনা বৃদ্ধি হার ছিল ৪৪.১ শতাংশ। কিন্তু ২০১২ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত এটা বেড়ে প্রায় ৬৭ শতাংশ হয়েছে। আমাদের দায়-দেনা পরিস্থিতি চলমান দশকে দেড়গুণ বেড়ে গেছে।

তিনি বলেন, এ মুহূর্তে মাথাপিছু ঋণ হিসাব করলে তা ৪৩২ ডলারে দাঁড়িয়েছে। আমরা প্রতিবছর ১০ বিলিয়ন ডলার করে দায়-দেনা বাড়াচ্ছি। ০.৭ বিলিয়ন ডলার করে প্রতিবছর দেনা পরিশোধ করতে ব্যয় করতে হচ্ছে। দায়-দেনা বৃদ্ধি হার অনেক বেশি হারে বাড়ছে।

এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ দেনা বৃদ্ধি হার খুবই বেশি। অভ্যন্তরীণ দায়-দেনা ৬৯ বিলিয়ন ডলার। গত এক দশকে ওই দেনা বৃদ্ধি হার প্রায় ৫৪ শতাংশ। ২০১৩ সালের পরে এই বৃদ্ধি হার ১৫ থেকে ১৯ শতাংশ হারে বাড়ছে। অন্যদিকে বৈদেশিক দায়-দেনা পরিমাণ ৬০.১৫ বিলিয়ন ডলার। ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বৈদেশিক দায়-দেনা ১৬.৬ শতাংশ থেকে ১৪ শতাংশ এবং ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১৪.৭ থেকে ১৬.৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।  

প্রবন্ধে আরো বলা হয়েছে, ঋণের সুদ পরিশোধের হিসাব করলে দেখা যায়, ২০০৬ সালে বৈদেশিক সুদ পরিশোধ করা লাগতো ৩৮.৯১ শতাংশ ও অভ্যন্তরীণ ৬১.০৯ শতাংশ। যেটা ২০১৩ সালের পর ঋণ বৃদ্ধির কারণে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধের হার বেড়েছে। ২০২১ সালে এসে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় করতে হয়েছে ৬৭.৬৫ শতাংশ এবং অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ৩২.৩৫ শতাংশ পরিশোধে ব্যয় হয়েছে। অর্থাৎ সম্পূর্ণ উল্টোচিত্র। এর কারণ বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ হচ্ছে ক্রমান্বয়ে উচ্চ সুদের হারে।

দেবপ্রিয় বলেন, সরকারি দায়-দেনার সাথে নির্বাচনের একটি সম্পর্ক রয়েছে। ব্যক্তিখাত বিদেশ থেকে টাকা নিয়েছে ১৮.৭ বিলিয়ন। এটা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা জিডিপির পাঁচ শতাংশ। তারা যদি ঠিকমতো ঋণ পরিশোধ না করে তাহলে দেশের জন্য অশনি সংকেত হতে পারে। 

দেশের দায়-দেনা জিডিপি হারের তুলনায় বেশি। আমাদের দায় পরিশোধের ক্ষেত্রে বৈদেশিক ঋণের চাপ বাড়বে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //