ভ্রমণ
জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া
প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০১৯, ১২:৫৯ পিএম
আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০১৯, ০৩:৩৮ পিএম
প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০১৯, ১২:৫৯ পিএম
ভ্রমণ
জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া
আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০১৯, ০৩:৩৮ পিএম
তাহিরপুরের বিকিবিল যেন লাল শাপলার গালিচা। এখানে ভোরের সূর্যোদয়ের সাথে সাথে অজস্র লাল শাপলা ফোটে। ভোরের রক্তিম সূর্যের আলোকেও হার মানায় শতসহস্র লাল শাপলা। প্রথম দেখাতেই যেকোনো মানুষের চোখ ও মনের প্রশান্তি মিলবে। এখানে গেলে মনের অজান্তেই আপনার মনে বেজে উঠতে পারে, 'তুমি সুতোয় বেঁধেছ শাপলার ফুল,নাকি তোমার মন'।
হাওরের জল ও লাল শাপলার অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে, স্রষ্টাকে কুর্নিশ করতে ইচ্ছে করবে যেকোনো মানুষের। কারণ এক অপার্থিব সৌন্দর্যে বিমোহিত হবেন। এখানে আপনি শুনতে পাবেন দেশীয় নানা প্রজাতির পাখির কিচিরমিচির। সেই সাথে উপভোগ করবেন ভারতের মেঘালয়ের অপরুপ রূপ।
খানিক সময়ের জন্য আপনার মনে হতে পারে, প্রকৃতি যেন তার রূপের সঙ্গে নিজে বাদ্যযন্ত্রে্র ঝরনাধারা ছড়িয়ে দিয়েছে। এখানের আর্কশনীয় লাল শাপলা হাওরের আশপাশের পরিবেশ, এবং গ্রাম গুলোকে মনোমুগ্ধকর করে তুলেছে।
বিকিবিলের এই নয়নাভিরাম রূপ দেখতে হলে আপনাকে যেতে হবে সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলায়। এটি উত্তর বড়দল ইউনিয়নের কাশতাল গ্রামের পাশে অবস্থিত।
শুধু লাল শাপলার উৎস নয়, এটি যেন লাল শাপলার গ্রাম। এখানে ছুটে আসে স্থানীয় প্রকৃতি প্রেমীরা। তবে স্থানটি টাংগুয়ার হাওর,বারেকটিলা,যাদুকাটা,শহীদ সিরাজ লেকসহ সীমান্তের কয়েকটির ছড়ার মতো পর্যটক ও দর্শনার্থীদের কাছে পরিচিতি পায়নি।
সূযের্র উপস্থিতির সঙ্গে সঙ্গে শাপলা তার আপন সৌন্দর্যকে গুটিয়ে নেয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শাপলার সৌন্দর্য ম্লান হতে থাকে। সূর্যোদয় থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত লাল শাপলার সৌন্দর্য দৃশ্যমান থাকে।
জানা যায়, বিকিবিল হাওরের ১শত কিয়ারের অধিক(৩০শতাংশে এক কিয়ায়)জমি নিয়ে এর অবস্থান। বর্ষার ছয় মাস পানিতে নিমোজ্জিত থাকে এ হাওরটি। আর বাকি ছয় মাস এখানে চাষ হয় এক ফসলি বোরো জমি। মাত্র কয়েক মাসের জন্য শাপলা ফুল ফুটে এখানে। জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি শাপলার উপস্থিতি দেখা যায় এ হাওরে।
এখানে লাল শাপলার পাশাপাশি সাদা ও বেগুনি রঙের শাপলাও জন্মে। সাদা ও বেগুনি রঙের শাপলা মূলত লাল শাপলার তুলনায় অপ্রতুল। অনেকে স্থানীয়ভাবে সহজলভ্য হওয়ায় এলাকার লোকজন শাপলা তুলে খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে এবং বিভিন্ন হাটে বিক্রি করে থাকেন।
হাওরের পাশের গ্রামের বাসিন্দা সমাজের সেবক মাসুক মিয়াসহ অনেকেই জানান, কোনো প্রকার চাষ ছাড়াই জন্মেছে লাল শাপলা। বর্ষার শুরুতে শাপলা জন্ম হলেও হেমন্তের শিশির ভেজা রোদ মাখা সকালের জলাশয়ে চোখ পড়লে রং-বেরংয়ের শাপলার বাহারী রূপ দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়।
আশরাফুল আলম আকাশসহ স্থানীয়দের সঙ্গে কথা জানা যায়, এই হাওরে অনেকেরই জমি আছে। বর্ষা মওসুমের শুরুতে এ ফুল ফোটা শুরু হয়। প্রায় ৬মাস পর্যন্ত বিল ঝিল জলাশয় ও নিচু জমিতে প্রাকৃতিক ভাবেই জন্ম নেয় লাল শাপলা। রান্নাবান্নার তরকারি হিসেবে ও বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে সংগ্রহের কারণে সাদা শাপলার সংখ্যা দিন দিন সংকীর্ণ হচ্ছে। এই লাল সাদা সব ধরনের শাপলা ফুলের গন্ধে গোটা হাওর মুখরিত হয়ে ছড়িয়ে পরে আশপাশের গ্রামগুলোতে।
আশরাফুল আলম আকাশ জানান,বর্তমান সভ্যতায় বাড়তি জনগণের চাপের কারণে আবাদি জমি ভরাট করে বাড়ি,পুকুর মাছের ঘের বানানো এবং অপরিকল্পিত ভাবে জমিতে সার প্রয়োগের ফলে এর পরিমাণ যেমন কমেছে, তেমনি শাপলা জন্মানোর জায়গাও কমে আসছে।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh