মেরিন ড্রাইভ রোডের সৌন্দর্য ও অন্যান্য

কক্সবাজার জেলার আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে মেরিন ড্রাইভ রোড অন্যতম। কক্সবাজারের কলাতলী বীচ থেকে এই সড়ক চলে গেছে টেকনাফ পর্যন্ত। বিস্তৃতি ৮০ কিলোমিটার। কক্সবাজারের এই রাস্তাটি পৃথিবীর দীর্ঘতম মেরিন ড্রাইভ রোড।

এখানে দেখা যায়, একপাশে পাহাড় আর অন্যপাশে সমুদ্রের বিশাল জলরাশির খেলা। খোলা আকাশ ও সমুদ্রের ঢেউয়ে মন হারানো নাবিকের কাছে মেরিন ড্রাইভ রোড এক অন্যতম আকর্ষণ। পথ ধরে হাঁটলে কিংবা জিপে চড়লে মনে হবে চিরায়িত সেই গান ‘এই পথ যদি না শেষ হয়, তবে কেমন হতো তুমি বলো তো”।

এক অন্যরকম সবুজ পাহাড়, নীল জলের খেলায় মেতে উঠবে এখানে বেড়াতে আসা পর্যটক। বুক ভরে নিঃশ্বাস নেয়ার জন্য এই পথটি উপযুক্ত স্থান। সড়কের পাশে প্রহরীর মতো দাঁড়িয়ে আছে সুপারি, নারকেল গাছ ও ঝাউবিথী গাছের সারি। এছাড়াও এখানে রয়েছে অনেক লতা-গুল্ম ও ফল ফলাদির গাছ।


৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রোডটি নির্মাণে সময় লেগেছে ২৪ বছর। ব্যয় হয়েছে ৪০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নির্মাণ প্রকৌশল ব্যাটালিয়ন কতৃক ১৯৯৩ সালে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে ব্যয় হয়েছে ৪০ কোটি টাকা। 

মেরিন ড্রাইভ রোড ধরে মাইক্রোবাস, জিপ, অটোরিকশায় যাতায়াত করার সময় চোখে পড়বে নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। পাহাড়ের মাঝে ঝর্ণার ছন্দ তালে পানির পতনও দেখা যাবে। দেখা যাবে বিশাল সমুদ্র সৈকত, বিস্তৃত সড়ক, ইনানী পাথুরে সৈকত, জেলেদের মাছ ধরার চমৎকার দৃশ্য।

এই রোড ধরে যাওয়া যায় টেকনাফ পর্যন্ত। টেকনাফের চিরহরিৎ বনও উপভোগ করা যায় এই রোড দিয়ে চলাচল করলে।

রোডের পাশের বীচে চাইলে ক্যাম্পিংও করা যায়। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত থেকে খানিক দূরে হওয়ায় এখানে জনমানবের হৈচৈ, কোলাহল নেই। নীরব প্রকৃতির মাঝে নীরব ও শান্ত পরিবেশ।


ক্যাম্পিংয়ের জন্য মেরিন ড্রাইভ রোড ধরে চলে যেতে পারেন শামলাপুর বীচে। শামলাপুর বীচ কলাতলী থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এখানে বিশৃঙ্খলতা নেই, যানযট নেই, কোলাহল নেই। আছে প্রকৃতির অপরূপ রুপ ও কোলাহল মুক্ত শান্ত পরিবেশ। 

মেরিন ড্রাইভ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য

মেরিন ড্রাইভ রোডের বিস্তৃতি ৮০ কিলোমিটার। জিপে চড়ে এই রোডের নৈসর্গিক সৌন্দর্য দেখতে চাইলে আগে থেকে ড্রাইভারকে বলে রাখুন নয়তো কলাতলী কিংবা ইনানী ও আশেপাশের জায়গা ঘুরিয়ে আপনাকে ফিরিয়ে আনবে। 

এই পুরো রোড ঘুরতে সময় লাগবে প্রায় ৫ ঘন্টা।

অটোরিকশা, সিএনজি দিয়ে পুরো রোড ঘুরতে সময় লাগবে আরো বেশি। 

সেনাবাহিনী চেকপোস্ট রয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে কার্পণ্য করবেন না। ভ্রমণে গেলে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি সাথে রাখুন।

দিনের আলো থাকতেই এই সড়ক ঘুরে ফেলা উত্তম।

যাওয়ার উপায়

মেরিন ড্রাইভ রোড কক্সবাজারে অবস্থিত। তাই দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে প্রথমে কক্সবাজারে যেতে হবে। ঢাকার মহাখালি, গাবতলী ও অন্যান্য স্থান থেকে বিভিন্ন গাড়ি কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে যায়। এসি ও ননএসি উভয়ই রয়েছে। মানের তারম্যের উপর নির্ভর করে ভাড়ার তারতম্য। প্রতিজনের ভাড়া বাবদ ব্যয় হবে ৯০০- ২০০০ টাকা পর্যন্ত। 

ঢাকা থেকে ট্রেনে যাওয়া যায় চট্রগ্রাম। কমলাপুর থেকে গোধুলী, মহানগর প্রভাতী, সুবর্ণ এক্সপ্রেসসহ আরো ট্রেন ছেড়ে যায় চট্রগ্রামের উদ্দেশ্যে। সেখান থেকে বাসে যাওয়া যায় কক্সবাজার। ক্ষেত্র বিশেষে ভাড়া খরচ হবে ২৫০- ৫৫০ টাকা।

থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা

এখানে অনেক হোটেল রয়েছে। আপনার পছন্দ ও রুচি অনুযায়ী যেকোনো একটি হোটেলকে বেছে নিতে পারেন। উন্নতমানের হোটেলে খেতে পারবেন। রোদেলা, ধানসিঁড়ি, নিরিবিলি, পৌষি ইত্যাদি মাঝারি মানের বেশ কিছু রেস্টুরেন্ট আছে। এগুলোতেও ভালো খাবার পাওয়া যায়। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //