ভ্রমণপিপাসুদের জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ‘মায়াকুঞ্জ’

শেরপুরের প্রত্যন্ত গ্রামে এক ব্যতিক্রমী সেবামূলক প্রতিষ্ঠান ‘মায়াকুঞ্জ’ এখন ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

জেলা শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে নকলা উপজেলার প্রত্যন্ত চিথলীয়া গ্রামে স্থানীয় মনসুর এবং তার পুত্র পুলিশ কর্মকর্তা ওসমান গণির পরিকল্পনায় তাদের নিজস্ব ৩ একর জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে ‘মায়াকুঞ্জ’। বর্তমানে ২৭ জন এতিমকে বাংলা ও আরবি শিক্ষায় পড়ানোর পাশাপাশি থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে এখানে।

মায়াকুঞ্জ চাইল্ড কেয়ার হোমকে ঘিরে গড়ে তোলা হয়েছে বিশাল আকারের একটি দীঘি ও দুইটি পুকুর। সেখানে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করা হয়। রয়েছে একটি ডেইরি ফার্ম, ভেড়া-ছাগল পালন ও হাঁস-মুরগির ফার্ম। এছাড়া দীঘি ও পুকুরের দু’পার জুড়ে রোপন করা হয়েছে আম, জাম, লিচু, পেয়ারা, মাল্টা, জাম্বুরা নারিকেল গাছসহ নানা প্রজাতির ফলদ, বনজ ও ফুলের গাছ। এছাড়া বিভিন্ন মৌসুমে চাষ করা হয় নানা ধরনের সবজি। মাছ ও পশুর খামার থেকে আয় থেকে ময়াকুঞ্জের কেয়ার টেকার ও এতিমদের পিছনে ব্যায় করা হয়। তারপরও প্রতি মাসের খরচের বেশ কিছু অংশ প্রকল্পের মালিককে বহন করতে হয়। 

প্রকৃতির মনোরম দৃশ্য এবং দীঘির জলে রয়েছে প্যাডেল বোর্ড, মায়াকুঞ্জের বাহির সাইটের দুইটি পুকুর পাড়ে সান বাঁধানে ঘাট ও বিভিন্ন বাহারি ফুলের দৃশ্যে আপনাকে মোহিত করবে। ভ্রমণপিপাসুদের বিনোদনের জন্য মায়াকুঞ্জের ভিতরে রয়েছে কফি ও টি ঘর। সেখানে নির্ধারিত মূল্যে পরিবার পরিজন নিয়ে বসে আড্ডার পাশাপাশি চা ও কফিও খেতে কখন যে সন্ধ্যা নেমে যাবে বুঝতেই পারবেন না। এ মায়াকুঞ্জে প্রবেশে নেই কোন টিকিট বা প্রবেশ মূল্য।

গ্রামীণ পরিবেশের এ মায়াকুঞ্জে প্রচ- গরমে সবাই যখন হা-হুতাশ করে তখন এ ঝির ঝির বাতাস মনকে প্রফুল্ল করে তুলে। মনে হবে এখানেই সবুজের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ি। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যে কোন সর্বসাধারণ এখানে এসে বেড়াতে পারবেন। তবে মায়াকুঞ্জের ভিতর কোন ফুল ও ফল গাছে হাত দেয়া একেবারেই নিষেধ। কারণ এখানে উৎপাদিত বিভিন্ন ফল এতিম শিশুদের জন্য বরাদ্দ। 

মায়াকুঞ্জের সত্বাধিকারী মনুসর আলী জানায়, প্রায় তিন বছর আগে মায়াকুঞ্জটি তিনি বৃদ্ধাশ্রমের টার্গেট নিয়ে প্রতিষ্ঠা কররেও প্রায় এক বছর কোন বৃদ্ধ না পেয়ে পরি পরিকল্পনা করেন এতিম শিশুদের এনে বিনামূল্যে লালন-পালনসহ আরবি ও বাংলা পাড়াশোনা করাবে। প্রথম পর্যায়ে তিনি ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত টার্গেট নিলেও পরবর্তিতে এখানে এইএসসি পর্যন্ত পড়ানোর পাশাপাশি কম্পিউটার প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের কর্মসংস্থানের পরিকল্পনা করেছেন। মনসুর আলী আরো জানায়, এ বিষয়ে তিনি এখনও সরকারি কোন সুযোগ-সুবিধা পায়নি। ফলে তিনি প্রকল্প থেকে আয় দিয়ে পুরো খরচ উঠানো সম্ভব নয় বিধায় বাকি টাকা নিজেদের পারিবারিক আয় থেকে ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে। 

মায়াকুঞ্জের মূল পরিকল্পনাকারী পুলিশের ঢাকা এসবি শাখার এসআই ওসমান গণি জানায়, মূলত সেবামূলক কিছু একটা করার জন্য এ প্রকল্পটি প্রায় ৯ বছর আগে থেকেই পরিকল্পনা করে আস্তে আস্তে কাজ শুরু করা হয়। পরবর্তিতে ২০১৫ সালে সমাজসেবা থেকে নিবন্ধন করা হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত সরকারি কোন সহযোগিতা পাইনি। তবুও নিজ খরচে এটি চালিয়ে যাচ্ছি। মানবসেবার পাশাপাশি এখানের প্রকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে আরো পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। যাতে নিটোল গ্রামীণ পরিবেশে মানুষ একটু প্রশান্তির জন্য এখানে এসে বেড়াতে পারে সেজন্যও উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। তবে কোন প্রবেশ মূল বা ফি নেই এখানে ঘুরতে। এছাড়া ইতিমধ্যে এখানে ফ্রি চিকিৎসা কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য একজন ডাক্তার, একজন স্বাস্থ্য সহকারী, ওষুধ ও মেডিকেল বিভিন্ন সরঞ্জামাদির জন্য বেশ কয়েকটি কক্ষ নির্মান করা হয়েছে এলাকার অসহায় ও দুস্থ মানুষের জন্য। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে এই মূহুর্তে এটি চালু করতে পারছি না। তবে ধিরে ধিরে তা বাস্তবায়নের চিন্তা করছি। এখানে কেউ ব্যক্তিগত ভাবে এতিম ও বৃদ্ধাশ্রমের জন্য অনুদান দিলে তা নেয়া হবে।


সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //