প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর নরসুন্দা লেক

কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের বুক চিরে বয়ে চলা নরসুন্দা নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে নরসুন্দা লেক। পৌর নাগরিকদের জীবন মান বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে নরসুন্দা প্রকল্প বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে ৫টি দৃষ্টিনন্দন সেতু ও ২টি ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর নরসুন্দা লেকের পাশেই গুরুদয়াল সরকারি কলেজ। কিশোরগঞ্জের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত নরসুন্দর লেকটি শহরবাসির বিনোদনের অন্যতম এক স্থান। কিশোরগঞ্জে থাকেন অথচ নরসুন্ধা লেকে ঘুরতে যাননি; এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।

ভোর থেকেই নানা বয়সী ভ্রমণকারীর পদচারণে মুখরিত হয়ে ওঠে নরসুন্দা লেক। দিনের আলো ফোটার আগেই অনেকে বেরিয়ে পড়েন ঘর থেকে। অনেকে ফজরের নামাজ আদায় করে মসজিদ থেকেই সরাসরি চলে আসেন।


শরীর ফিট রাখতে এ লেক ধরে দৈনিক অনেকেই প্রাতঃকালীন ভ্রমণে বের হন। অনেকে সকাল-বিকেল দুই বেলা হাঁটতে বের হন। কেউ চিকিৎসকের পরামর্শে, কেউ বা নিজে থেকেই শরীরের ঘাম ঝরাতে ছুটে আসেন খোলা জায়গায়, কোনো পার্কে বা উদ্যানে।

তখনো পাখিদেরও ঘুম ভাঙেনি। তাতে কি! প্রকৃতির কাছাকাছি এসে বুকভরে নিঃশ্বাস নেয়ার সুযোগ তো হয়। পুবাকাশে তখন লাল আভা। সূর্য উঠি উঠি করছে। ভোরের পাখিরা স্বাগত জানায় প্রাতঃভ্রমণকারীদের। নরসুন্ধা লেকের সূর্যোদয় একটু অন্যরকম।


এখানে ওখানে দলবেঁধে শরীরচর্চা করছেন অনেকে। কেউ বা হাঁটা শেষ করে বেঞ্চে একাকী বসে বিশ্রাম নিচ্ছেন। মুক্তমঞ্চ চত্বর সকলের কাছে পরিচিত হয়ে উঠেছে শরীরচর্চা কেন্দ্র হিসেবে। নানা বয়সী মানুষের আড্ডা, সংগীত অনুষ্ঠান কী না হয় মুক্তমঞ্চে!

গাছের পাতায় রোদের ঝিকিমিকি। পাতার ফাঁক গলিয়ে সূর্যের আলো একসময় পৌঁছে যায় মাটিতে। বৃক্ষতলে রৌদ্রচ্ছায়া। কি অপরূপ সে দৃশ্য! যেন শিল্পীর নিপুণ হাতে আঁকা ছবি! লেকের ভিতরে বহুমুখী চলাচল। সবাই স্রোতের মতো ছুটছেন।


দুপুরের দিকে ঝিমিয়ে পড়ে মুক্তমঞ্চে। বিকেল গড়াতেই বৈকালিক ভ্রমণকারীদের পদচারণে আবার মুখরিত হয়ে ওঠে নরসুন্দা লেক। উৎসবের দিনগুলোয় মুক্তমঞ্চ বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয়। পহেলা বৈশাখে, ভালবাসা দিবসসহ নানা উৎসবে মুক্তমঞ্চের অনুষ্ঠানের আকর্ষণই আলাদা।

নদীর দুই পাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ এবং হাঁটাচলা করার জন্য তৈরি করা হয়েছে সুপরিসর ওয়াকওয়ে। এছাড়াও গুরুদয়াল সরকারি কলেজের সামনে অবস্থিত পুকুর প্রাঙ্গণ, মুক্তমঞ্চ এবং ওয়াচ টাওয়ার সর্বদা মুখর থাকে বিনোদনপ্রেমী মানুষের পদচারণায়।

ফলে মুক্তমঞ্চ ও পর্যবেক্ষণ টাওয়ার ঘিরে গড়ে উঠেছে বাহারি খাবারের দোকান ও টি স্টল। চিত্তবিনোদনের উদ্দেশ্যে আগতরা চাইলে গুরুদয়াল কলেজ মাঠে কিংবা নরসুন্দা নদীতে নৌকা ভ্রমণের মাধ্যমে আনন্দ উপভোগ করতে পারেন।


সেইসঙ্গে সুউচ্চ ওয়াচ টাওয়ারের চূড়ায় উঠে এক নজরে দেখে নিতে পারেন কিশোরগঞ্জ শহরের রূপ বৈচিত্র্য। এ ছাড়াও পৌরবাসীদের চিত্তবিনোদনে নতুন মাত্রা যোগ করতে গৌরাঙ্গবাজার সেতুর পশ্চিমে একটি বিনোদন পার্ক নির্মাণ করা হয়েছে।

মানুষ এখন অনেক বেশি পরিবেশ সচেতন। নগর জীবনকে স্বস্তি দিতে প্রয়োজন বিনোদন কেন্দ্রের। নরসুন্দা লেক হোক আরো সবুজ ও সুন্দর, এটিই কিশোরগঞ্জ বাসির প্রত্যাশা।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //