স্থাপত্যিক নিদর্শনে অনন্য সোনারগাঁওয়ের পানাম নগর

যারা ইতিহাস ভালবাসেন অথবা যারা শহরের ব্যস্তজীবন ছেড়ে যান্ত্রিকতা-বিবর্জিত কোনো জায়গায় সংক্ষিপ্ত ভ্রমণে যেতে পছন্দ করেন, সেসব ভ্রমণপিপাসুর জন্য কালগর্ভে ‘হারানো’ সোনারগাঁওয়ের পানাম নগর হতে পারে আদর্শ দর্শনীয় স্থান। 

রাজধানী ঢাকার মাত্র ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে অবস্থিত এই প্রাচীন নগরের উত্থান-পতনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে হাজার বছরের ইতিহাস। অনেকের কাছে এটি ‘হারানো নগর’ নামেও পরিচিত। মুঘল আমলে বাংলার বারো ভূঁইয়াখ্যাত ঈসা খাঁর রাজধানী ছিল পানাম নগর। সমগ্র সোনারগাঁয়ের শাসনকার্য পরিচালিত হতো পানাম নগর থেকে। এ নগরের পূর্বে মেঘনা আর পশ্চিমে শীতলক্ষ্যা নদীপথ দিয়ে বিখ্যাত মসলিন কাপড় নিয়ে যেত বণিকেরা। ওই সময়ের বিখ্যাত পানাম নগর আজ পৃথিবীর ১০০টি ধ্বংসপ্রায় ঐতিহাসিক শহরের একটি হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। তবে বর্তমানে যে স্থাপনাগুলো দাঁড়িয়ে আছে সেগুলোর বেশিরভাগই দুইশ বছরের বেশি পুরনো নয়। 

উনিশ শতকে ইংরেজদের সহায়তায় কিছু ধনাঢ্য হিন্দু বণিক পুনরায় হারিয়ে যাওয়া পানাম নগরকে পুনরুজ্জীবিত করেন। নগরের পূর্ব-দক্ষিণে প্রায় ৬০০ মিটার দীর্ঘ ও ৫ মিটার প্রশস্ত সড়কের দুধারে সারিবদ্ধভাবে নির্মিত ৫২টি ভবন-স্থাপনা বর্তমানে টিকে আছে। এর উত্তর দিকে ৩১টি ও দক্ষিণ দিকে ২১টি স্থাপনা অবস্থিত। স্থাপত্যশৈলীতে ইউরোপীয় শিল্পরীতির সঙ্গে মুঘল শিল্পরীতির মিশ্রণ দেখতে পাওয়া যায়। পানাম নগরে গড়ে উঠেছিল সুরম্য অট্টালিকা, মসজিদ, মন্দির, মঠ, গোসলখানা, নাচঘর, খাজাঞ্চিখানা, টাকশাল, দরবারকক্ষ, ভোজনালয়, বিচারালয়, প্রমোদকুঞ্জ, প্রশস্ত দেয়াল প্রভৃতি স্থাপনা। 

নগরীতে এখনো দেখা যায় ৪০০ বছরের পুরনো মঠ-বাড়ির ধ্বংসাবশেষ। এখানে রয়েছে ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির কুখ্যাত ‘নীলকুঠি’। পানাম নগরের নির্মাণ পরিকল্পনায় রয়েছে মুনশিয়ানার ছাপ। নগরের প্রায় প্রতিটি ভবনেই রয়েছে কূপসহ আবাস উপযোগী নিদর্শন। পানি সরবরাহের জন্য দুপাশে পুকুর রয়েছে; রয়েছে পঙ্খীরাজ খাল। শের শাহের আমলে নির্মিত সোনারগাঁও থেকে সিন্ধু পর্যন্ত প্রায় এক হাজার ৬০০ মাইলের ঐতিহাসিক গ্র্যান্ড-ট্রাংক রোডের কিছু অস্তিত্ব আজও পানামে দেখা যায়। সোনালি ইতিহাসের সাক্ষী পানাম নগর প্রতিনিয়ত দেশি-বিদেশি পর্যটকদের মুগ্ধ করছে। 

বর্তমানে পানাম নগরের সার্বিক তত্ত্বাবধানে আছেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সহকারী কাস্টোডিয়ান মো. সিয়াম চৌধুরী। তার সাথে আলাপচারিতায় জানা যায় করোনাপরবর্তী সময়ে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৭০০ থেকে ৮০০ দেশি-বিদেশি পর্যটক ঘুরতে আসে এই প্রাচীন নগরস্থাপত্য দেখতে।  শুক্রবার,শনিবার এবং সরকারি ছুটির দিনগুলোতে এই সংখ্যা প্রায় ৩/৪ গুন বৃদ্ধি পায়। 

তিনি আরও জানান, পানাম নগরে রয়েছে শ্যুটিং-এরও সুব্যবস্থা।  প্রতি ঘন্টার  শ্যুটিং-এ পরিশোধ করতে ভ্যাটসহ ৩,৪৫০ টাকা।

এ নগরে প্রবেশের জন্য দেশি পর্যটকদের জন্য ১৫ টাকা, সার্কভুক্ত দেশের পর্যটকদের জন্য ৫০ টাকা এবং এর বাইরে বিদেশি পর্যটকদের জন্য ১০০ টাকা প্রবেশমূল্য হিসেবে নির্ধারিত।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //