ঘুরে আসুন সবুজ চাদরে ঢাকা কেরালা

ভারতের সবচেয়ে সুন্দর রাজ্যগুলোর একটি কেরালা। ঐতিহাসিকভাবে এটি কেরালাম হিসেবে পরিচিত। এ রাজ্যটি দক্ষিণ ভারতের মালাবার উপকূলে অবস্থিত। ভ্রমণের জন্য কেরালা খুবই উপযুক্ত। প্রচলিত আছে, একবার কেরালা ঘুরলে এখানকার প্রকৃতি মনের মধ্যে প্রশান্তি এনে দেয়। রাজ্যটির নামের সঙ্গেও এই তত্ত্বের ব্যুৎপত্তিগত সম্পর্ক আছে।

রাজ্যটির নাম ‘কেরা’ ও ‘আলাম’ থেকে উদ্ভূত হয়েছে। কেরা শব্দের অর্থ নারকেল গাছ ও আলাম এসেছে মালায়ালাম (রাজ্যের ভাষা) থেকে। কেরালাকে ‘নারকেলের রাজ্য’ নামেও ডাকা হয়। কেরালা কয়েক শতাব্দী ধরে বিকশিত বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির কারণে পরিচিত। কেরালার আছে সবচেয়ে সহজ জীবনধারা, যা তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও শিল্প সমৃদ্ধ ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত। এখানে আছে বন্যপ্রাণী, সৈকত ও ব্যাকওয়াটার। সব মিলিয়ে কেরালার জাদুকরী একটি স্থান। 

যারা ভারতের অপরূপ সুন্দর এই রাজ্যটি ঘুরতে যেতে চান, তারা কেরালার দর্শনীয় ৫টি স্থানের তথ্য জেনে নিন-

আল্লেপি কেরালার অন্যতম দর্শনীয় স্থান। এটি ব্যাকওয়াটার ট্রিপ ও হাউসবোটের জন্য পরিচিত। কেরালা ভ্রমণ করতে চাইলে আলেপ্পি অবশ্যই সেরা পছন্দ। এর চারদিকে ছড়িয়ে আছে সবুজ আর সবুজ। আলেপ্পিকে ‘প্রাচ্যের ভেনিস’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়। এখানকার ব্যাকওয়াটারে হাউসবোট ভ্রমণ, ধান ক্ষেত, ছোট চ্যাপেল, মাছ ধরা অঞ্চল, হাঁস ও শাপলাসহ সব ধরনের ল্যান্ডস্কেপ দৃশ্য দেখার সুযোগ করে দেবে; যা চিরকাল মনে অঙ্কিত থাকবে। আলেপ্পির যেখানেই খাবার খান না কেন কলা পাতায় খাবার সরবরাহ করা হবে। যা এক নতুন অভিজ্ঞতা হবে। আলেপ্পিতে গেলে অবশ্যই ঘুরবেন- আর্থুনকাল চার্চ, ভগবতী মন্দির, শ্রীকৃষ্ণ মন্দির, কৃষ্ণপুরম প্রাসাদ, পাথিরামনাল।

পুরো দক্ষিণ ভারতের সর্বাধিক জনপ্রিয় হিল স্টেশন, অনন্য প্রাকৃতিক দৃশ্য ও সবুজ বলয়ের জন্য পরিচিত মুন্নার। মুন্নার হলো শীর্ষস্থানীয় হিল স্টেশন। এটি ৮০ হাজার মাইল সবুজ চায়ের ক্ষেতে নিজেকে মুড়িয়ে রেখেছে। এর সঙ্গে আছে কুয়াশাচ্ছন্ন পাহাড়ি উপত্যকা, যেখান থেকে উড়ন্ত মেঘ ছুঁয়ে যায়। এখানকার পাহাড়গুলো মূলত চা চাষের জন্য নকশা করা হয়েছে। এর সঙ্গে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগে এটি বিলাসবহুল জৈব উপত্যকায় পরিণত হয়েছে। যেখানে আছে পাহাড়ি সিঁড়ি বা ধাপ, চা বাগান ও অসংখ্য জলপ্রপাত।

ওয়ানাড হলো কেরালার ‘সবুজ স্বর্গ’। কারণ এটি শান্ত, বন্যপ্রাণী, প্রকৃতি, ঐতিহ্য ও সৌন্দর্যের মিশেলে অপরূপ। জীবন ও প্রকৃতি এখানে মিশে একাকার। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে ভ্রমণের জন্য কেরালার সেরা স্থান এটি। এ ছাড়াও ওয়ানাড উপজাতীয় ঐতিহ্যের পাশাপাশি কৃষিপ্রাচুর্যের জন্য বিখ্যাত। এই অঞ্চলে বসবাসকারী আদিবাসীদের জীবনযাত্রা মুগ্ধ করবে ও নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানকার সঙ্গে কেরালার অন্যান্য জেলার তুলনা করা হলে মনে হবে কেরালা খুব কম জনবহুল এলাক। এর ট্র্যাকিং ও অ্যাডভেঞ্চার টুরিজমের কারণে অবশ্যই ভ্রমণ করা উচিত।

কেরালার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে থেক্কাডি বন্যজীবন অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত। এখানে আছে বাঘ, হাতি, গৌর, সাম্বার ও সিংহ, লেজযুক্ত ম্যাকাকসহ অনেক প্রজাতির প্রাণী। থেক্কাডি পেরিয়ার হ্রদের তীরে অবস্থিত একটি বন। এর আয়তন প্রায় ৭৭০ বর্গকিলোমিটার- যার মধ্যে ৩৬০ বর্গকিলোমিটার ঘন বন। এই জায়গাটির বন্যপ্রাণীর পাশাপাশি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বছরের পর বছর ধরে সারা বিশ্বের দর্শনার্থী ও পর্যটকদের আকৃষ্ট করে আসছে। সম্ভবত বন্যপ্রাণীদের জন্য কেরালার সেরা জায়গা থেক্কাডি। এখানকার হ্রদে দুর্দান্ত নৌকা ভ্রমণের সুযোগ আছে। এখানকার ঘন বনটি ভারতীয় হাতি, চিতাবাঘ, ভারতীয় বাঘ, বাইসন, হরিণসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর আবাসস্থল। থেক্কাডি পর্যটন বিভাগ এমন একটি রুট সরবরাহ করে, যেখান দিয়ে হাতির ওপর চড়ে বা হেঁটে বনের মাঝখানে যাওয়া যায়।

আরব সাগরের উপকূলীয় রেখা বরাবর অবস্থিত কোচি কেরালার দর্শনীয় একটি স্থান। এটি দক্ষিণ ভারতের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে আকর্ষণীয় শহর। কোচি কেরালার কেন্দ্রীয় অংশে অবস্থিত। এটি কেরালা ভ্রমণের সেরা জায়গা বলা যেতেই পারে।  যদিও কোচি নামে পরিচিত- তবে পুরো এনারকুলামে এমন কিছু আছে যা মিস করা একদমই উচিত হবে না। কোচি ব্রিটিশ, ডাচ ও পর্তুগিজ সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত পুরনো শিল্প ও স্থাপত্যে পূর্ণ। এনারকুলাম প্রাথমিকভাবে বাণিজ্যের জন্য বিশিষ্ট ছিল এবং পরে কোচিতে রূপান্তর হয়।  এনারকুলাম ‘আরব সাগরের রানী’ নামে পরিচিত। এটি বিশ্বের অন্যতম সেরা বন্দর। ঔপনিবেশিক আমলে ব্রিটিশ, ডাচ, আরব, পর্তুগিজ, এমনকি চীনারাও এখানে এসেছিলেন এবং তাদের ছাপ রেখে গেছেন। মূলত তখন থেকেই চারপাশে শিল্প ভবনসহ একটি আধুনিক শহর হিসেবে গড়ে উঠেছে। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //