ত্রিপুরার রবীন্দ্র কাননের ‘ডল মিউজিয়াম’

ভারতের পূর্বাঞ্চলের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলার প্রাণকেন্দ্র সার্কিট হাউজের পাশে নয়নাভিরাম উদ্যান 'রবীন্দ্র কানন'। সারাদিন ত্রিপুরার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেহের ক্লান্তি দূর করতে বিকেলটা কাটাতে পারেন রবীন্দ্র কাননে। দৃষ্টিনন্দন উদ্যানটির বিভিন্ন রকমের ফুল, পাতাবাহার আর নানান প্রজাতির গাছগাছালি মুহূর্তেই দূর করে দেবে আপনার ক্লান্তি। 

এখানে আরও একটি বিশেষ আকর্ষণ রয়েছে। তাহলো 'ডল মিউজিয়াম' বা পুতুলের যাদুঘর। এ যেনো হরেক রকমের পুতুলের রাজ্য। এখানে প্রবেশ করলে আপনি ক্ষণিকের জন্য ভারতের বহু ভাষাভাষী ও জাতি ধর্মের বাহারি পুতুল দেখে সেই পুতুল রাজ্যে ঢুকে যাবেন। পূর্ব ভারতের সেভেন সিস্টার খ্যাত ৭টি রাজ্যসহ প্রাচীন ভারতের কৃষ্টি-কালচার সম্বলিত বাহারি পুতুল সাজিয়ে রাখা হয়েছে এই ডল মিউজিয়ামে।

প্রতিটি প্রদেশের কৃষ্টি সম্বলিত জোড়ায় জোড়ায় ও থরে থরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে পুতুলগুলো। পুতুলগুলোর মধ্যে অনেকের গায়ে বাহারি পোশাক ছাড়াও আদিবাসীদের ড্রেসও রয়েছে। রয়েছে আরও ভারতীয় বিভিন্ন নাচের ড্রেস। বিভিন্ন ভঙ্গিমায় তৈরি করা পুতুলগুলো ভারতের কৃষ্টি-কালচারের পাশাপাশি অনেক ইতিহাসকেও তুলে ধরা হয়েছে। নিরাপত্তা ও অক্ষত রাখার স্বার্থে পুতুলগুলো বিশাল কাঁচের বক্সে রাখা হয়েছে। 

সেই কাঁচঘর ঘুরে ঘুরে পুতুলগুলো যখন দেখবেন তখন মনে হবে পুতুলগুলো আপনার কানের কাছে ফুঁস ফুঁস করে কি যেনো বলছে। আপনি মুচকি হাসবেন, সেই সাথে পুতুলগুলোও যেনো হেসে উঠবে। প্রচীণ ভারতের ইতিহাস সংরক্ষিত এ ডল মিউজিয়ামটি ছাড়াও ভারতের দিল্লিসহ অনেক প্রদেশে এমন ডল মিউজিয়াম রয়েছে।

রবীন্দ্র কানন উদ্যানটি মূলত ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে। এর উত্তরে রাজভবন, দক্ষিণে সার্কিট হাউজ, পূর্বে পাম্প হাউজ ও পশ্চিমে এয়ারপোর্ট রোড। পুরো উদ্যানটিই শক্ত লালচে পাথুরে মাটি দিয়ে বানানো।

এ রবীন্দ্র কাননের ইতিহাসও রয়েছে। তা হলো, মানিক্য রাজার পরিবারের সাথে বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকায় আগরতলায় এই উদ্যানটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামে নাম করণ করা হয় 'রবীন্দ্র কানন'।

উদ্যানে ঢুকেই ডানদিকে চোখে পড়বে শিশুদের খেলা ও বিনোদনের জন্য রয়েছে বিভিন্ন রাইডস ও খেলনা। এসবের মধ্যে রয়েছে- সুয়িং ১২টি, মেরিগো রাউন্ড ১টি ও স্লিপার ২টি। এছাড়া রয়েছে বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাস্কর্য। এখানে বিভিন্ন সময়ে নানান অনুষ্ঠান হয়ে থাকে।

উদ্যানটির ইনচার্জ দত্ত বাবু জানান, প্রতিদিন বিকেলে দুইশ লোক বাগানটিতে হাঁটতে ও এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন। ছুটির দিনে এ সংখ্যা পাঁচশোতে গিয়ে ঠেকে। প্রতিবছর ১৫ আগস্ট পাতাবাহার প্রদর্শনী এবং ২৩ জানুয়ারি ফুল প্রদর্শনী হয়ে থাকে। এছাড়াও ২৫ বৈশাখে কবিগুরুকে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেয়া হয়। 

তিনি আরও জানান, আগে স্থানীয়দের মর্নিংওয়াকের জন্য সকাল বেলা উদ্যানটি খোলা থাকতো। এখন মর্নিংওয়াকের জন্য আলাদা অনেক জায়গা হওয়ায় রবীন্দ্র কানন সকালে খোলা হয় না।  

শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে ৬টা পর্যন্ত উদ্যানটি খোলা থাকে। দর্শনার্থীদের প্রবেশ ফি মাত্র ১০ টাকা।  

লেখক: সাংবাদিক ও কবি, শেরপুর।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //