আমার বই কই

বইমেলা চলছে। সবারই বই আছে। আমার কোনো বই নাই!

সবাই বইয়ের কত সুন্দর সুন্দর ছবি দিচ্ছে। এই আমসত্বের সাথে বই, এই আমড়া কাঁঠের ঠেকির সাথে বই, এই কাঁঠালের আঁচারের সাথে বই। আমার বই কই?

এক প্রকাশক অল্প পরিচিত। গেলাম তার কাছে। বাপ্পারাজের মতো কাঁদতে কাঁদতে বললাম, ‘কী দোষ করেছিলাম আমি?’ 

প্রকাশক মহৎ মানুষ। রুমাল যে এখনো পকেটে নিয়ে ঘোরেন জানা ছিল না। সেটা বাড়িয়ে দিতে দিতে বললেন, ‘কুমিরের কান্না কাঁদবেন না! যদি এমন বই দেন যেখানে পাঠক এই রকম হাউমাউখাউ করে কাঁদবে, তাইলে আমি ছাপাব!’ 

বললাম, ‘বইয়ের কভার কে করবে?’ 

‘কভারের আর কী! একটা বিদেশি উত্তরাধুনিক ছবিকে কেটে-ছেঁটে সেঁটে দিব। ও নিয়ে চিন্তা করবেন না!’

প্রকাশকের কথা সুবিধা না লাগায় দুই দিন চুপ করে থাকলাম। ঘাসের ছবি, কাদার ছবি, এই শহরের ভাঙা ভাঙা ধূলি রাস্তার ছবি তুললাম। তিনটি এক সাথে মিলিয়ে একটা সুন্দর কভার তো হতে পারে!

প্রকাশককে পাঠালাম। বললাম, দেখেন তো কভার!

প্রকাশক দেখলেন কিনা কে জানে। বললেন, ‘এইসব ধূসর পা-ুলিপি মার্কা কভার ন চলত!’ 

বললাম, ‘যদি দুইটা চাকা লাগিয়ে দিই কভারে, বই চলবে?’ 

প্রকাশক কথা বলেন না। অথচ আমার দিন কাটে না। আমি আবার গিয়ে হাজির হলাম তার কাছে। আমার বই কই?

প্রকাশক বললেন, ‘মেলা আছে আর ৭ দিন। এই ৭ দিনে মেলায় কতদিন আসতে পারবেন?’ 

বললাম, ‘৬ দিন কনফার্ম। মাঝে একটা দিন শুধু দাঁত তুলতে যেতে হবে।’

প্রকাশক চোখ কুঁচকালেন, ‘এই হাফ ডজন দিনে বই নিয়ে মডেলিং পোজে কয়টা ছবি দিতে পারবেন?’ 

বললাম, ‘তা ৬ দু’গুনে ১২টা তো দেয়াই হবে!’ 

প্রকাশক বললেন, হবে না। অন্তত ২৪টা ছবি দিতে হবে। রাজি? 

‘রাজি।’ 

‘ফেসবুকে লেখা দিবেন কয়টা?’

‘কীরকম লেখা হবে বলেন তো? মেলায় আছি, দেখা হবে বন্ধুরা?’

‘ওসব তো থাকবেই; কিন্তু তার সাথে থাকতে হবে কোন বন্ধু কবে আপনার বই কিনেছেন, কবে পড়েছেন, শুয়ে পড়েছেন না বসে পড়েছেন, পড়তে পড়তে ঘেমেছিলেন নাকি হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছিলেন- এইসবের বেত্তান্ত থাকতে হবে!’ 

‘এসব তো ওয়ান-টুয়ের ব্যাপার।’ 

‘আরো কাজ আছে’

‘কী কাজ বলেন না! বইয়ের জন্য জান হাজির!’

‘ভাইবেরাদার জোগাড় করতে হবে। যারা ঘুরেফিরে বইমেলাতে আপনার বই নিয়ে কথা বলবে। উচ্চ প্রশংসা করবে। আপনার বইয়ের উচ্চ প্রশংসা করতে পারে এরকম কয়েক জন কি আছে আপনার? এখনো কিন্তু সরাসরি ভাড়ার সিস্টেম চালু হয়নি। আগামী বছর থেকে হয়তো হয়ে যাবে!’

‘আমি আজই কয়েকজনের সাথে কথা বলে রাখছি। আপনি চিন্তা করবেন না!’

‘ঠিক আছে। কালকে তাহলে আসুন। বই হয়ে যাবে!’

পরের দিন সকালবেলা হাজির হলাম প্রকাশকের কাছে। বললাম, ‘দিন। বই দিন।’

প্রকাশক বললেন, ‘আরে আপনি তো এখনো পা-ুলিপিই পাঠাননি। ছাপব কি?’ 

প্রকাশকের কথা শুনে প্রচণ্ড শক খেয়ে বললাম, ‘যা যা বললেন, সবই তো জোগাড় করলাম। এখন আবার পাণ্ডুলিপি লাগবে কেন?’

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //