দিগন্ত ভরে উঠুক আলোয় আলোয়

প্রকৃতি এখন বেশ শীতল। ঝরছে শিশির। ভোর হলেই উঁকি দেয় ঝলমলে সূর্যের আলো। উদ্ভাসিত হয় চেনা পৃথিবী, দূর হয়ে যায় কুয়াশার আঁধার। সোনালি আলোয় স্বচ্ছ হয়ে ওঠে চারদিক। আর মাসখানেক পরই নতুনের আবাহনে আসবে ঋতুরাজ বসন্ত। তারপর কাঠফাটা রোদেলা দিন পেরিয়ে বাদলঝরা সময়। এভাবেই প্রকৃতি তার আপন নিয়মে চলছে। তবুও একটা সময় আর পেরে ওঠে না।

মনুষ্যসমাজের অত্যাচার-অনিয়মে বেঁকে বসে, প্রতিবাদী হয়, প্রতিশোধে উন্মত্ত হয়ে ওঠে। এটাই কি তবে থমাস ম্যালথাস কথিত ‘প্রকৃতির প্রতিশোধ’? আমরা নির্বিচারে গাছ কেটে বসতি বানিয়েছি, বাণিজ্যিক পশু পালনের জন্য একরের পর একর জঙ্গল সাফ করেছি, সাপ-ব্যাঙ-ইঁদুর-বাদুর খাবার তালিকা থেকে বাদ যায়নি কিছুই। বহাল তবিয়তে দিব্যি পরিবেশ ধ্বংস করে মনুষ্যত্বের জয়ধ্বনি উড়িয়েছি। কিন্তু প্রকৃতি বেচারাই বা কত এই অত্যাচার সহ্য করবে! এবার যেন তার প্রতিশোধ নেওয়ার পালা। এমনটাই বলেছেন বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ও ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ডের বিশেষজ্ঞরা। গত দুটি বছরে করোনার তীব্র ছোবল তছনছ করে দিয়েছে সবার জীবন ও বাস্তবতাকে। অদৃশ্য এ জীবাণুর থাবায় প্রায় থমকে গেছে পুরো পৃথিবী।

নতুন বছরে আবারও ফুঁসে উঠেছে করোনার তৃতীয় ঢেউ; কিন্তু সেই আগ্রাসী ঢেউয়ের ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে এগিয়ে যাচ্ছে সাম্প্রতিক দেশকাল। কোভিডে আমাদের কর্মীদের অনেকেই আক্রান্ত হয়েছেন; কিন্তু একটি মুহূর্তও আমাদের দায়িত্ব পালন থেমে থাকেনি। দেশের কথা, মানুষের কথা আমরা তুলে ধরেছি। গণতন্ত্র, উন্নয়ন, সুশাসন, মানবিকতা যেমন তুলে ধরেছি; তেমনি কোনো অন্যায়ের সঙ্গে আপোষ করিনি। একঝাঁক দীপ্ত তরুণ কলমসৈনিক আছেন আমাদের সঙ্গে।

আনন্দের বিষয়, নানা বাধা-বিপত্তি পেরিয়েও আজ সাম্প্রতিক দেশকাল নবম বছরে পা দিল। আমাদের নবম যাত্রায় প্রত্যাশা- ধীরে ধীরে পৃথিবী সুস্থ হয়ে উঠবে, কেটে যাবে সব আঁধার। দিগন্তে দেখা দেবে আলোর রেখা। শেষ পর্যন্ত জয় হয় মানুষের। সে পরাজিত হয়নি, হবে না। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ২০১৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ভিন্ন চিন্তা নিয়ে যাত্রা শুরু করে। বিগত বছরগুলোতে নানা বাধাবিপত্তি সত্ত্বেও তার নীতি থেকে এক চুলও নড়েনি। সাম্প্রতিক দেশকাল এখন আর নিছক একটি সংবাদপত্র নয়, গণমানুষের মুখপত্রে পরিণত হয়েছে এবং দেশের সর্বাধিক প্রচারিত সাপ্তাহিক। দেশের প্রতিটি জেলা/উপজেলায় খবরের ভেতরের খবর নিয়ে সাম্প্রতিক দেশকাল পৌঁছে যাচ্ছে। গত আট বছরে সাম্প্রতিক দেশকালের দিগন্ত অনেক বিস্তৃত হয়েছে। আমাদের পরিবারেরই আরেক সদস্য ‘ত্রৈমাসিক দেশকাল পত্রিকা’ ইতিমধ্যে দেশের রুচিশীল ম্যাগাজিন হিসেবে পাঠকের মনে জায়গা দখল করেছে। দেশকাল পত্রিকা ই-ম্যাগাজিন আকারে পাওয়া যাচ্ছে অনলাইনেও। সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকালও ছাপার অক্ষরের পাশাপাশি ই-পেপারে পাওয়া যায়।

এখন আমরা বলি, ডিজিটাল ফার্স্ট। ডিজিটাল মাধ্যমে সাম্প্রতিক দেশকাল পড়া হবে সবার আগে। সাম্প্রতিক দেশকাল ডটকম, সাম্প্রতিক দেশকালের ফেসবুক পেজ, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব, ভিডিও-ডিজিটাল মাধ্যমের সব কটিতেই ২৪ ঘণ্টা সদা সক্রিয়। তথ্য প্রযুক্তির এ যুগে মুহূর্তে মুহূর্তে পাঠকের তথ্য ক্ষুধা নিবারণে আমাদের অনলাইন কর্মীরা সচেষ্ট। ডিজিটাল মিডিয়ার আদলে আমরা সাজিয়েছি দেশকাল লাইভ। দ্রুতই এটির সম্প্রচার শুরু হবে। আমাদের সুসজ্জিত স্টুডিওতে যেমন চলবে ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ের ওপর অনুষ্ঠান, আবার ক্যামেরার চোখ থাকবে মাঠে-ঘাটে। উঠে আসবে অজানা আর না বলা কথা। 

কবি বলেছেন- ‘সমুদ্রে পেতেছি শয্যা, শিশিরে কী ভয়।’ আমরাও সেই আপ্তবাক্যের প্রতিধ্বনি করি। বিশ্বাস করি, নিবর্তনমূলক নানা পদক্ষেপ ও আস্ফালন সৎ, সাহসী এবং দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার কাছে পরাভূত হবে। সাংবাদিকতার পথ কখনোই কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। এসব প্রতিকূলতা মোকাবেলা করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। 

নতুন প্রত্যয়ে এগিয়ে যাব বলে যখন আশায় বুক বাঁধছি, তখন মনে পড়ে যাচ্ছে, বিগত বছরগুলোয় আমরা যাদের হারিয়েছি। সাম্প্রতিক দেশকালের উপদেষ্টা মো. জাহিদ হোসেন মুসা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন দুই বছর হয়ে গেল। আজ তাঁর জন্মদিন। শিল্পসাহিত্যপ্রেমী এ মানুষের জন্মদিনেই সাম্প্রতিক দেশকাল যাত্রা শুরু করেছে। তার রেখে যাওয়া সাম্প্রতিক দেশকাল আজ যখন নবম বছরে পা দিচ্ছে, তখন তিনি আমাদের মাঝে নেই। আমরা তাঁকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি। তাঁর আদর্শের পতাকা ঊর্ধ্বে তুলে ধরে বলব, আমরা সৎ থাকব, বিনয়ী ও আদর্শবাদী থাকব, নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ থাকব, স্বাধীন ও সাহসী থাকব; আমাদের কলম থাকবে শৃঙ্খলমুক্ত। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গণতান্ত্রিক, বৈষম্যমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক ও একটি মানবিক আধুনিক দেশ গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়েই পরিচালিত হবে আমাদের সব কার্যক্রম। করোনাকালে আমরা হারিয়েছি সাড়ে ২৮ হাজারের মতো মানুষকে। তাঁদের অনেকই ছিলেন দেশের জন্য নক্ষত্র। চলে যাওয়া মানুষগুলোকে আমরা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। 

প্রিয় পাঠক, আমাদের লক্ষ্য ছিল সাম্প্রতিক দেশকাল হবে এমন একটি সাপ্তাহিক, যেটি মানুষের পক্ষে আসল চিত্র তুলে ধরবে। গত আট বছরে আমরা সাহস নিয়েই সেই দায়িত্ব পালন করেছি। আমাদের কাছে অর্থ কখনই মুখ্য ছিল না, তাইতো প্রচারসংখ্যায় সাম্প্রতিক দেশকাল দশ হাজার ছাড়িয়ে গেলেও বিজ্ঞাপনে আমরা পিছিয়ে আছি। কারণ কোনো বড় প্রতিষ্ঠান কিংবা ব্যক্তিকে যেমন ছাড় দেইনি, তেমনি কোনো গোষ্ঠীর স্বার্থে আমরা নিজেকে বিকিয়ে দেইনি। রঙ না মেখে যা ঘটে তাই তুলে ধরেছি। আমরা চেয়েছি সাম্প্রতিক দেশকালের মাধ্যমে এ দেশের রুচিশীল-সৃজনশীল মানুষের একটি মেলবন্ধন তৈরি করতে।

পাঠকসংখ্যার দিকে তাকালে কৃতজ্ঞতায় নুয়ে আসে আমাদের মস্তক। ধন্যবাদ, সম্মানিত পাঠক। আপনাদের কারণেই আমরা এই অবস্থানে পৌঁছেছি। আপনাদের কারণেই আমরা আরও ভালো কাজ করতে অঙ্গীকারবদ্ধ হই।

গত আটটি বছরে বেশকিছু বিজ্ঞাপনদাতা, শুভানুধ্যায়ী, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, কবি, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, শিল্পী, সংস্কৃতিসেবী, শিক্ষকসহ অনেক বিজ্ঞজন আমাদের পাশে ছিলেন। আশা করি, সামনের দিনগুলোতেও আমাদের সঙ্গে থাকবেন। সাম্প্রতিক দেশকালের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা।

ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ,
সম্পাদক, সাম্প্রতিক দেশকাল।
বিশেষ সম্পাদকীয়,
৯ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বিশেষ সংখ্যা, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //