ফিরে দেখা ২০২০: মুখ থুবড়ে ঢাকাই চলচ্চিত্র

করোনাকাল! পুরো ২০২০ জুড়েই চলেছে এর প্রভাব। দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রই দুমড়েমুচড়ে পড়েছে এই মহামারির তাণ্ডবে। বিনোদন জগৎও এর থেকে ব্যাতিক্রম নয়।

ঢাকাই চলচ্চিত্রে খড়া চলছে প্রায় বহু বছর ধরেই। কিন্তু এ বছরটা যেনো একটু বেশিই হতাশার ছিলো। 

তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের শেষ শুক্রবার পর্যন্ত মাত্র ১৭টি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে প্রেক্ষাগৃহে। বছরের প্রথম সিনামাটি ছিলো ‘জয়নগরের জমিদার’। যা  মুক্তি পেয়েছিলো ১০ জানুয়ারি। এরপর ২৪ জানুয়ারি মুক্তি পায় সাফটা চুক্তিতে আমদানি করা ভারতীয় সিনেমা ‘হুল্লোড়’। তবে বছরের সবচেয়ে বেশি সিনেমা মুক্তি পায় ফেব্রুয়ারিতে- ‘গণ্ডি’ (৭ ফেব্রুয়ারি), ‘বীর’ (১৪ ফেব্রুয়ারি), আমদানি করা ভারতীয় বাংলা সিনেমা ‘রবিবার’ (২১ ফেব্রুয়ারি) ও ‘হৃদয় জুড়ে’ (২৮ ফেব্রুয়ারি)। ৬ মার্চ একসাথে মুক্তি পায় ‘শাহেনশাহ’, ‘চল যাই’ ও ‘হলুদ বনি’।

‘হলুদ বনি’র পরই নেমে আসে ঢাকাই চলচ্চিত্রের কালো অধ্যায়টি। বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে ১৮ মার্চ থেকে বন্ধ হয়ে যায় দেশের সব প্রেক্ষাগৃহ। প্রায় সাতমাস বন্ধ থাকে এগুলো। যার ফলে বিপাকে পড়ে পুরো ইন্ডাস্ট্রি। পরে ১৬ অক্টোবর ফের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালু করা হয় প্রেক্ষাগৃহ।

প্রেক্ষাগৃহ পুনরায় খোলার পর প্রথম সিনেমা হিসেবে মুক্তি পায় ‘সাহসী হিরো আলম’। ২৩ অক্টোবর মুক্তি পায় ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’। এরপর নতুন সিনেমা সঙ্কটে দেড় মাস পুরনো সিনেমা চলে প্রেক্ষাগৃহগুলোতে। বছর অন্যতম আলোচিত সিনেমা ‘বিশ্বসুন্দরী’ মুক্তি পায় ১১ ডিসেম্বর। একইদিন মুক্তি পায় ‘রূপসা নদীর বাঁকে’। ১৮ ডিসেম্বর ‘একজন মহান পিতা’ ও ‘সুবর্ণ রেখা’ সিনেমা মুক্তি পায়। এছাড়াও মুক্তির তালিকায় রয়েছে ‘তুই আমার রাজা আমি তোর রানি’ ও ‘গোর’। যা ছিলো প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাওয়া সর্বশেষ সিনেমার তালিকায়। 

তবে প্রেক্ষাগৃহে আর কোনো সিনেমা মুক্তি না পেলেও প্রথম বাংলাদেশি সিনেমা হিসেবে এ বছর অ্যাপে মুক্তি পেয়েছে শাকিব খান অভিনীত ‘নবাব এলএলবি’।

এদিকে কেবল ছবি মুক্তির সংখ্যা নয়, হ্রাস পেতে শুরু করেছে সিনেমা হলের সংখ্যাও। এছাড়া ঢাকাই চলচ্চিত্রের নির্ভরযোগ্য কোনো বক্স অফিস নেই। মুক্তির পর তাই কোন সিনেমা কত ব্যবসা করল বা কত লস করল তার নিরেট হিসাব পাওয়া কষ্টসাধ্য ব্যাপার। বিষয়টি ইন্ডাস্ট্রির জন্য বেশ হুমকি স্বরূপ।

পরীমনি

আশার আলো: ফোর্বস

হতাশার মাঝেও অনেকটা আনন্দ বয়ে এনেছে বিশ্বখ্যাত ম্যাগাজিন ফোর্বস। এ বছর এ তালিকায় স্থান করে নিয়েছে বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী পরীমণি। বছরের একেবারে শেষ মাস ডিসেম্বরে একটি তালিকা প্রকাশ করে ফোর্বস। এশিয়ার প্রভাবশালী ‘১০০ ডিজিটাল তারকা’র তালিকায় অমিতাভ বচ্চন, শাহরুখ খান, আলিয়া ভাটদের পাশে জায়গা হলো বাংলাদেশের পরীমণির। ৭০তম স্থান পেলেন ‘বিশ্বসুন্দরী’ অভিনেত্রী।

হারিয়েছি যাদের

করোনাভাইরাস তাণ্ডবের সাক্ষী হয়ে এ বছর নিরবে চলে গেছেন বহু গুণীজন। মাহমারি করোনার শিকার হয়ে মারা গেছেন সারা দুনিয়ার অনেক তারকা। বাংলাদেশেও ব্যাতিক্রম নয়। এছাড়াও নানা রকম অসুখে ভুগে মারা গেছেন নানা অঙ্গনের অনেক তারকা।

এর তালিকার প্রথমেই রয়েছেন প্রযোজক মতিউর রহমান পানু। রয়েছেন- নায়িকা জবা, অভিনেতা রানা হামিদ,  সংগীতঙ্গ আজাদ রহমান।

এই তালিকায় যুক্ত হয়েছেন প্লেব্যাক সম্রাট অ্যান্ড্রু কিশোরও। তার বিদায় সংগীতাঙ্গনকে অনেকটাই ভঙ্গুর করে দিয়েছে। চলতি বছরের ৬ জুলাই সন্ধ্যা ৭টা ১৩ মিনিটের দিকে রাজশাহী মহানগরীর মহিষবাথান এলাকায় তার বোন ডা. শিখা বিশ্বাসের বাড়িতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। দীর্ঘদিন ধরে ব্লাড ক্যান্সারে ভুগছিলেন আটবার চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এই বরেণ্য শিল্পী।


এছাড়া না ফেরার দেশে চলে গেছেন- সুরের যাদুকর আলাউদ্দীন আলী, অভিনেত্রী মিনু মমতাজ, অভিনেতা কে এস ফিরোজ ও সাদেক বাচ্চু। সবশেষে বছরের একেবারে শেষ প্রান্তে এসে যে দুটি মৃত্যু সর্বসাধারণের মনে দাগ কেটে গেলেন তারা হলেন- আলী যাকের ও আব্দুল কাদের।

ক্যান্সারের সাথে চার বছরের লড়াই শেষে ২৭ নভেম্বর চির বিদায় নিয়েছিলেন অভিনেতা, নির্দেশক আলী যাকের। আর ২৬ ডিসেম্বর রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন আব্দুল কাদের।

এছাড়া অভিনেত্রী, নির্দেশক ও আবৃত্তিশিল্পী ইশরাত নিশাত, সুরকার আশরাফ, টেলিভিশন নৃত্যশিল্পী সংস্থার সাবেক সভাপতি, দেশের সুপরিচিত নৃত্যশিল্পী এবং নৃত্য পরিচালক হাসান ইমাম, চলচ্চিত্র প্রযোজক জনাব মোজাম্মেল হক সরকার, নৃত্য পরিচালক এস আলমসহ আরো অনেককেই হারাতে হয়েছে এ বছর।

বিবাহ -বিচ্ছেদ: আলোচনা-সমালোচনা

বহু ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যেও কিন্তু বছর জুড়ে বিনোদন অঙ্গনে বিবাহ-বিচ্ছেদের ঘটনাও কিন্তু ছিলো বেশ আলোচিত ও সমালোচিত। এ বছর বিয়ের খবর জানিয়ে ভক্তদের হৃদয় ভেঙে দেয়ার তালিকা বেশ বড়। আছেন অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়া, মুমতাহিনা টয়া, শখ ও গায়িকা কর্ণিয়া ছিলেন এদের তালিকায়। তবে বিয়ে করে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছেন নুসরাত ফারিয়া ও শমী কায়সার।

এদিকে বিবাহ ও বিচ্ছেদ উভয়ক্ষেত্রেই বেশি আলোচিত হয়েছেন পরীমণি। এছাড়া শুধু বিচ্ছেদে আলোচিত হয়েছেন শাবনূর, অপূর্ব, শবনম ফারিয়া ও মুনমুন। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //