সব মিলিয়ে তৃপ্তির হাসি সংগীতাঙ্গনে

কোভিড-১৯ ভাইরাস পৃথিবীকে তছনছ করে দেয়ার পর পরই সবার কাছে বিষ হয়ে ওঠা ২০২০ সাল শেষে এলো ২০২১। দেখতে দেখতে সেই একুশ সালের আয়ুও শেষ! এ যেন বিশ্বাসই হতে চাচ্ছে না। তবে বিশ্বাস না হলেও এটাই সত্য। আমরা এ মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আছি ২০২২ সালের প্রথম মাসে।

এই যখন অবস্থা তখন কালের গর্ভে হারাতে চলা ২০২১ সালের ফেলে আসা দিনগুলোর অনেককিছুই স্মৃতিতে ভেসে উঠছে। বিশেষ করে মনে পড়ছে কোভিডে দুমড়ে মুচড়ে দেওয়া ২০২০ সালের পর করোনা আতঙ্ক ও লকডাউনের হাত ধরে চলা ২০২১ সালে কেমন ছিল এদেশের সংগীত অঙ্গন। 

করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ায় ২০২১ সালের প্রথমদিকে করোনা বোধহয় আর আসবে না এমন ধারণা নিয়ে জনজীবনে আবার চাঞ্চল্য ফিরে এসেছিল। সেই সঙ্গে সংগীত অঙ্গনেও বইছিল সুবাতাস। এ বছরের শুরুর দিকে সকল প্রকার লোক সমাগমের স্থান খুলে দেওয়ার ধারাবাহিকতায় আবারও শুরু হয়েছিল উন্মুক্ত কনসার্টগুলো। ফলে গত এক বছর যাবত টানাপোড়নের জীবন নিয়ে জোগে থাকা কণ্ঠশিল্পী, মিউজিশিয়ানরা একটু ভালো থাকার উদ্দেশ্য বুকে নিয়ে নতুন উদ্যমে আবার নেমে পড়েছিল।

তবে স্টেজ শোগুলো শুরু হতে না হতেই সমাপ্তির ঘণ্টা বাজাতে বাজাতে আবারও হাজির হয় করোনার পরবর্তী ঢেউ। ফলে মঞ্চ নির্ভরশীল গায়ক গায়িকা ও বাদকদের মাঝে আবারও নেমে আসে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ ও হতাশার ছাপ। করোনার প্রকোপে জনসমাগম নিষিদ্ধ থাকার কারণে স্টেজ শোগুলো বন্ধ থাকে বছরের আগস্ট মাস অবধি। আগস্টের দিকে করোনার প্রাদুর্ভাব কমাতে সমস্ত নিষেধাজ্ঞায় শিথিলতা আসায় আবারও শিল্পীরা মঞ্চে ওঠার অনুমতি পায়। তারই ধারাবাহিকতায় শীতের মৌসুম আসতে না আসতেই দেশব্যাপী কনসার্টের ধুম পড়ে যায়, যার রেশ এখনো রয়েছে। এর সত্যতা মেলে জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী কুমার বিশ্বজিতের সঙ্গে কথা বলে। এই গায়ক জানান, এই মুহূর্তে টানা শো চলার কারণে দম ফেলারও ফুরসত নেই তার। তার কথায় বোঝা যায় সংগীত সংশ্লিষ্টরা এখন বেশ ব্যস্ত সময় পার করছেন। 

এবার আসি ২০২১ সালে সংগীতাঙ্গনে উঠে আসা নতুন মুখ ও জনপ্রিয় গানের কথায়। সংগীতাঙ্গনে এ বছর উঠে আসা নতুন মুখগুলোর মধ্যে অন্যতম নাম তশিবা ও মুজা। এ বছরে সবচেয়ে জনপ্রিয় তথা ভাইরাল গান ‘নয়া দামান গানটিও এসেছে এদের থেকে। প্রথমে সিলেটের আঞ্চলিক গান নয়া দামানের কয়েকটি লাইন গেয়ে টিকটকের মাধ্যমে পরিচিতি পান সিলেটের তশিবা। পরবর্তীতে প্রবাসী কম্পোজার মুজার কম্পজিশনে নয়া দামান গানটিতে আবারও কণ্ঠ দেন তশিবা, যা ছড়িয়ে যায় সারা বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষী সব মানুষের নিকট। ফলে আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা অর্জন করে এই গানটি। সেই সঙ্গে তশিবাও পেয়ে বসেন নবাগত জনপ্রিয় সংগীতশিল্পীর তকমা। তবে তশিবা ও মুজার এই অর্জন ছিল ধার করা গান নিয়ে। কেননা নয়া দামান গানটি তাদের মৌলিক গান ছিল না। 

মৌলিক গানের মাধ্যমে এবার বাংলা গানের শ্রোতাদের বুদ করে রাখার কৃতিত্ব দিতে হলে তা দিতে হবে শূন্য ব্যান্ডকে। এ বছরের শুরুর দিকে ইউটিউবে মুক্তি পায় শূন্য ব্যান্ডের দুটি গান। গান দুটি হলো বিবিয়া ও বেহুলা। দুটি গানই শ্রোতাদের বেশ আকৃষ্ট করলেও বেহুলা গানটির সাফল্য ছিল দেখার মতো। সেই সঙ্গে দীর্ঘদিন পর বাংলা ব্যান্ডের কোনো গানে বুঁদ হয়েছিল বাংলা গানের শ্রোতারা। তবে এর বাইরেও ইমরানসহ অনেকের গান ইউটিউবের দর্শকসংখ্যার বিচারে জনপ্রিয়তা অর্জন করলেও তা ছিল ইউটিউবেই সীমাবদ্ধ। সারা বাংলা ও সামাজিক মাধ্যমের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়া নয়া দামান বা বেহুলা গানের ধারের কাছেও ঘেষতে পারেনি এই গানগুলো। 

এবার একটু ভাঙাগড়া নিয়ে কথা বলি! এ বছরের মাঝামাঝিতে জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী ন্যান্সীর ঘর ভাঙার সংবাদ চাউর হয় মিডিয়াতে। এক কাঠি সরেস ন্যান্সীও কম যাননি। ভাঙনের পরপরই তিনি আবার নতুন করে ঘর বাঁধার সংবাদ দিয়েছেন ভক্তদের। কেননা তার কিছুদিন পরেই ন্যান্সী প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান অনুপম মিউজিকের সিইও মোহসিনের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

বছরের একেবারে শেষে এসে চিত্রনায়িকা সুবহাকে বিয়ের মাধ্যমে তৃতীয়বারের মতো বিয়ের পিড়িতে বসেছেন গায়ক ইলিয়াস। তবে ন্যান্সী ও ইলিয়াস ভাঙনের পাশাপাশি গড়ার খবর দিলেও কিছুদিন আগে স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের সংবাদ দিয়ে জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী পূজা শুধু ভাঙনের সংবাদই শুনিয়েছেন। নতুন মুখের আসা, নতুন গানের জনপ্রিয়তা অর্জন এবং বছর শেষে স্টেজ শোর জমজমাট অবস্থা দীর্ঘদিন ধরে মঙ্গা লেগে থাকা সংগীতের বাজারে কিছুটা সুখকর অনুভূতি দিলেও এ বছর সংগীতাঙ্গন শোকের চাদরেও ঢেকে গিয়েছে কয়েকবার। কেননা এ বছরই করোনাক্রান্ত হয়ে না ফেরার দেশে চলে গিয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত সংগীত পরিচালক ফরিদ আহমেদ, রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী মিতা হক।

সব মিলিয়ে বলা যায় করোনাক্রান্ত সারা বিশ্বে এই মুহূর্তে বেঁচে থাকাই যেখানে ভালো থাকা, সেখানে বছরজুড়ে সংগীতাঙ্গনের ঘটে যাওয়া সুখ ও দুঃখজনক ঘটনাগুলোর ভিড় থেকে সুখকর ঘটনাগুলো বেছে নিয়ে তৃপ্তির হাসি হেসে সন্তুষ্ট থাকাটাই হবে শ্রেয়।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //