ফিরে দেখা ক্রিকেট-২০২২

শুরুটা আশার হলেও শেষটা হতাশার

২০২২ সালটি বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য বেশ কিছু অর্জনের বছরই বলতে হবে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১-৫ জানুয়ারি মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে ইতিহাস গড়ে বাংলাদেশ ৮ উইকেটে জিতে। প্রথমবারের মতো জয় পায় নিউজিল্যান্ডের মাটিতে।

আর শেষটা হয় ভারতের কাছে ৩ উইকেটে হেরে। এর মাঝে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মূল পর্বে প্রথমবার জয় পাওয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয় ও ভারতের বিপক্ষে ৭ বছর পর ওয়ানডে সিরিজ জয় বড় সাফল্য হিসেবে ধরা হয়ে থাকে।

তবে সারা বছরই জাতীয় দলের প্রধান কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো ও নির্বাচক প্যানেলের উপর মানুষের ক্ষোভ ছিল চোখে পড়ার মতো। ২০২২ সালে জয়ের হিসেবে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট ও ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয়কে সবার চেয়ে এগিয়ে রাখতে হবে। নিউজিল্যান্ডের ৩২৮ রানের জবাবে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস শেষ হয় ৪৫৮ রানে। এরপর স্বাগতিকদের মাত্র ১৬৯ রানে অলআউট করে মাত্র ৪০ রানের টার্গেট ২ উইকেট হারিয়ে পৌঁছে যায় টাইগাররা। দুই ইনিংসে ৭ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হন পেসার এবাদত হোসেন। 

আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ৩-০তে জেতে বাংলাদেশ আর টি-টোয়েন্টি সিরিজ ড্র হয়। এই সিরিজে দুই তরুণ মেহেদী হাসান মিরাজ ও আফিফ হোসেন ধ্রুব দারুণ খেলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে ৮ উইকেট নিয়ে সিরিজসেরা হন তাসকিন আহমেদ। যদিও টেস্ট সিরিজে হারে সফরকারীরা। এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২-০ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজ হারে বাংলাদেশ দল। এরপর জিম্বাবুয়ের কাছে ৯ বছর পর তাদের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ হারে বাংলাদেশ। মূলত সিকান্দার রাজার কাছে হার মানে সাকিব আল হাসানের দল। 

এশিয়া সেরা আসর এশিয়া কাপ ক্রিকেটে চরমভাবে হতাশ করে বাংলাদেশ। তবে সারা বছরই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে চরমভাবে হতাশ করেছে লাল-সবুজ প্রতিনিধিরা। নিউজিল্যান্ড, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সঙ্গে হারতে হয়েছিল। যদিও বিশ্বকাপের আগে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে সিরিজ জিতে ভালোই প্রস্তুতি নিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছিল। বছরের শেষ দিকে এসে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৯ রানে পাওয়া জয়টাই বড় সান্ত্বনা সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের এ খেলাতে। 

ভারতের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতে মেহেদী মিরাজ ও মোস্তাফিজের দারুণ ক্যামিওতে এক উইকেটে জয়লাভের পর দ্বিতীয়টিতে ৫ রানে জিতে সিরিজ নিজেদের করে নেয় স্বাগতিকরা। যদিও তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে ২২৭ রানে হারতে হয়েছে ভারতের কাছে। তবে বছরের শেষ টেস্টে হতাশা হয়েই থাকল। 

বছরের শেষ ম্যাচে ভারতের সামনে মাত্র ১৪৫ রানের লক্ষ্য দিয়েও ম্যাচটা জেতার স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু শ্রেয়াস আইয়ার ও রবিচন্দ্রন অশ্বিনের দৃঢ়তার কাছে হার মানতে হয়। ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপকে এমন লক্ষ্য দিয়ে জয়ের আশা করা তো কিছুটা বাড়াবাড়িই। তবে অবিশ্বাস্য কিছুর স্বপ্ন দেখিয়ে যাচ্ছিলেন বোলাররা। ভারতের বিপক্ষে এর আগে কখনো টেস্ট জেতা হয়নি বাংলাদেশের। দেড়শর কম রান তাড়া করতে গিয়ে ৭৪ রানেই ৭ উইকেট হারিয়ে বসেছিল ভারত। 

তবে টেস্ট র‌্যাংকিংয়ের শীর্ষ সারির দলটি এমন পরিস্থিতি থেকেও দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে অষ্টম উইকেটে আইয়ার ও অশ্বিনের ৭১ রানের জুটিতে ঠান্ডা মাথায় জয় বের করে নিয়ে আসেন। বাংলাদেশেরও শেষটা জয়ে নয় হতাশায় শেষ করতে হয়েছে।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২০২২ সালটি নানা কারণেই আলোচিত হয়ে থাকবে। সেখানে সবার আগে যে নামটি থাকবে সেটি ইংল্যান্ডের। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতে নিজেদের অনন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গেছে জস বাটলারের দল। এই বছরই বিশ্ব ক্রিকেট হারিয়েছে ইতিহাসের অন্যতম সেরা লেগ স্পিনার শেন ওয়ার্নকে।

অনেকটা হঠাৎই ৫২ বছর বয়সে থাইল্যান্ডের কোহ সামুই দ্বীপে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। ওয়ার্নের চলে যাওয়ার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে চলে যান অস্ট্রেলিয়ার আরেক কিংবদন্তি রডনি মার্শও। সর্বকালের অন্যতম সেরা দুই তারকাকে হারানোর শোক কাটিয়ে ওঠার আগেই অ্যান্ড্রু সাইমন্ডসের মৃত্যুর দুঃসংবাদ শুনতে হয় অজিদের। ১৪ মে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৬ বছর বয়সে সবাইকে কাঁদিয়ে চলে যান না ফেরার দেশে। 

১৯৯৩ সালে ইংল্যান্ডের গ্রাহাম গুচকে আউট করে ‘বল অব দ্য সেঞ্চুরি’র খেতাব জিতেছিলেন ওয়ার্ন। টেস্ট ইতিহাসে প্রথম বোলার হিসেবে ৭০০ উইকেটের অনন্য চূড়ায় উঠেছিলেন। তবে দীর্ঘ ক্যারিয়ারে সুনামের পাশাপাশি বদনামও কম কামাননি। আর সব মিলিয়ে ক্রিকেটের অন্যতম এক বর্ণিল চরিত্রের অধিকারী ছিলেন ওয়ার্ন।

ডোপ টেস্ট নিয়ে নিষিদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি জড়িয়েছেন একাধিক নারী কেলেঙ্কারিতেও। ২০০০ সালে স্যার ডন ব্র্যাডম্যান, গ্যারি সোবার্স, জ্যাক হবস, ভিভ রিচার্ডসের সঙ্গে ওয়ার্নও নির্বাচিত হয়েছিলেন উইজডেন ম্যাগাজিনের ‘ক্রিকেটার অব দ্য সেঞ্চুরি’র সেরা পাঁচজনের একজন। 

শোককে শক্তিতে পরিণত করার প্রয়াসে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজন করেছিল গত আসরের শিরোপাধারীরা। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন শিরোপা ধরে রাখতে না পারার ঐতিহ্য ধরে রেখে সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের এ ক্রিকেটে অ্যারন ফিঞ্চের দল বিদায় নেয় সেমিফাইনালের আগেই। ভারত বিদায় নেয় শেষ চার থেকে। স্কটল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের কাছে হেরে যাওয়ায় মূল পর্বে খেলার জায়গা হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শেষ ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের কাছে হারায় একই পরিণতি মেনে নিতে হয় দক্ষিণ আফ্রিকারও।

এরপর ফাইনালে পাকিস্তানকে হারিয়ে দ্বিতীয়বার শিরোপা জয় করে ইংল্যান্ড। ১৩ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্ট সেরা হয়ে স্যাম কারেন আবার আইপিএলের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড়ও হন। তার আগে এশিয়া কাপও হয়েছে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে। ফাইনালে পাকিস্তানকে হারিয়ে শিরোপা উৎসব করে ঋণের দায়ে জর্জরিত শ্রীলঙ্কা। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //