Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে ৩ কিশোর নিহতের ঘটনায় আটক ১০

Icon

যশোর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৪ আগস্ট ২০২০, ১৩:৪৮

শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে ৩ কিশোর নিহতের ঘটনায় আটক ১০

যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে (বালক) তিন কিশোর নিহতের ঘটনায় ১০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের আটক করেছে পুলিশ। এর আগে কর্মকর্তা ও আনসার সদস্যদের বেধড়ক পিটুনিতে যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেছে হাসপাতালে ভর্তি কিশোর বন্দিরা।

শুক্রবার (১৪ আগস্ট) দুপুর ১২টার দিকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ডিএসবি তৌহিদুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তৌহিদুল ইসলাম জানান, তিন কিশোর নিহত হওয়ার ঘটনায় কেন্দ্রের ১০ কর্মকর্তা, কর্মচারী ও আনসার সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য পুলিশ কার্যালয়ে আনা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পরবর্তী কার্যক্রম করা হবে। তবে এই মুহূর্তে কাউকে আটক দেখানো হয়নি। আর জিজ্ঞাসাবাদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের পরিচয় প্রকাশ করা যাচ্ছে না।

এর আগে বৃহস্পতিবার যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে মারপিটের ঘটনায় ৩ বন্দি কিশোর নিহত হয়। এ সময় আহত হয়েছে অন্তত ১৪ জন। আহতদের পুলিশ উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেছে।

ঘটনার পরপরই শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের প্রবেশন অফিসার মুশফিক আহমেদ দাবি করেন, সম্প্রতি কেন্দ্রে বন্দি কিশোরদের দুই গ্রুপের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এরই জেরে বৃহস্পতিবার বিকেলে তারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। রড ও লাঠির আঘাতে মারাত্মক জখম হয় ১৭ কিশোর। প্রাথমিকভাবে উন্নয়ন কেন্দ্রে তাদের চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা চলে। তবে অবস্থা গুরুতর হওয়ায় আশঙ্কাজনক একে একে আহতদের উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়। এর মধ্যে নাইম, পারভেজ ও রাসেলকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

জেনারেল হাসপাতালের ডা. অমিয় দাশ বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই তারা মারা যায়। কী কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছে, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ছাড়া বলা যাবে না।

নিহতরা হলো- খুলনার দৌলতপুর থানার মহেশ্বরপাশা পশ্চিম সেনপাড়ার রোকা মিয়ার ছেলে পারভেজ হাসান রাব্বি (১৮), বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার মহিপুর গ্রামের আলহাজ নুরুল ইসলাম নুরুর ছেলে রাসেল ওরফে সুজন (১৮) এবং একই জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার তালিপপুর পূর্বপাড়ার নানু প্রামাণিকের ছেলে নাঈম হোসেন (১৭)। নাঈম হোসেন ধর্ষণ এবং রাব্বি হত্যা মামলার আসামি ছিল।

অন্যদিকে যশোর জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসাধীন বন্দিদের দাবি, গত ৩ আগস্ট কেন্দ্রের আনসার সদস্য নূর ইসলামের পক্ষে কয়েকজন বন্দি মাদক সেবন করে চুয়াডাঙ্গার পাভেল নামে এক বন্দিকে মারপিট করে। এ নিয়ে সে অফিসে জানালে গালিগালাজ করে তাকে ফের মারপিট করে। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে তাদেরকে অফিসে ডাকা হয় এবং বিষয়টি জানতে চাওয়া হয়। ঘটনার বিস্তারিত জানানো পর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের সহকারী তত্ত্বাবধায়ক মাসুম বিল্লাহ, প্রবেশ অফিসার মুশফিকসহ অন্যান্যরা বন্দিদের মারপিট করে। দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত দফায় দফায় তাদেরকে মারপিট করা হয়। পরে তাদের ঠিকমতো চিকিৎসা করা হয় না।

আহতরা জানায়, মারধর করে তাদের এখানে সেখানে ফেলে রাখা হয়। পরে একজন করে মারা গেলে তাদের হাসপাতালে পাঠানো হয়। এরপর রাত ৮ টা থেকে ১১টার মধ্যে চার-দফায় আহতদের হাসপাতালে আনা হয়।

বন্দি রাসেলের আগামী মাসে জামিনে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল দাবি করে কিশোররা জানায়, বেদম মারপিট আর চিকিৎসা না পেয়ে রাসেল মারা গেছে।

বৃহস্পতিবার গভীর রাতে যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে বের হয়ে খুলনা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি একেএম নাহিদুল ইসলাম জানান, সরকারি প্রতিষ্ঠানে মর্মান্তিক ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। মৃত্যুপথযাত্রীরা কেউ মিথ্য কথা বলে না। হাসপাতালে চিকিৎসাধীনদের কথার সত্যতা ও যৌক্তিকতা রয়েছে। আমরা যারা অপরাধ নিয়ে কাজ করি, তারা ঘটনার প্রায় ছয় ঘণ্টা পরে বিষয়টি অবহিত হয়েছি। যে কারণে মূল ঘটনা জানা জটিল ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিনি আরো বলেন, মামলা হবে। সেই মামলার বাদি যে কেউ হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্তরা বা তাদের স্বজন অথবা তৃতীয় কোনো পক্ষ; সর্বশেষ কাউকে না পাওয়া গেলে পুলিশ তো রয়েছে।

রাত সাড়ে ১২টার দিকে উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে বের হন জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান। এসময় তিনি বলেন, কী কারণে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে, তা তদন্ত ছাড়া বলা সম্ভব নয়। আমরা তদন্ত কমিটি করে দেবো। এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫