শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণ সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত

দেশে সাতানব্বই ভাগই বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অথচ বেসরকারি শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তা নেই বললেই চলে। আমরা জানি, বেসরকারি শিক্ষকরা এক সময় জাতীয় বেতন স্কেলের কিছু পেতেন না। যা সরকার থেকে পেতো মাস তিনেক কিংবা বছর ঘুরে কমিটির হাতে আসতো, তা কাটছাঁট করে শিক্ষকরা পেতেন।

অনেক আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বেসরকারি শিক্ষকদের এই পর্যন্ত আসা, এতে অনেক শিক্ষকদের অবদান অস্বীকার করার কেনো সুযোগ নেই। আগের যুগে আন্দোলনরত শিক্ষকদের দালালী দেখিনি, সরকারে সমর্থনপুষ্ট শিক্ষক সংগঠন থাকলেও আন্দোলনের মাঠে এক কাতারেই ছিলেন। বর্তমানে কিছু শিক্ষক নেতাদের বদনাম রয়েছে- এরা সরকারের তোষামোদ করে নিজের ব্যাক্তিগত ফায়দা হাসিল করতে বেশী ব্যস্ত। ওনারা কল্যান তহবিল কিংবা অবসর বোর্ডের দায়িত্ব নিয়ে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের তেমন কোনো কল্যাণ করতে পারেননি, বরং নিজেরা গাড়ি-বাড়ির মালিক হয়েছেন।

যাক সেই কথা তারপরেও যেসব শিক্ষক নেতাদের কারণে বেসরকারি শিক্ষকগণ এই পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে তাদেরকে শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করছি। বলা হয়-বেসরকারি শিক্ষকদের জাতীয় বেতন স্কেলের শতভাগ দেয়া হয় অথচ সরকারি শিক্ষক যেখানে বাড়ি ভাড়া বাবদ বেতন স্কেলের ৪০-৫০% পান সেখানে বেসরকারি শিক্ষকগণ পেয়ে থাকেন মাত্র একহাজার টাকা। যা অত্যন্ত হাস্যকর এবং এক প্রকার তামাশা করার সামিল। বেসরকারি শিক্ষকদের মেডিক্যাল ভাতা পাঁচশ টাকা যা দিয়ে পুরো মাসে পরিবারের মেডিক্যাল খরচ কিভাবে চলে? দুই ঈদে বোনাস দেয়া হয় সিকি পরিমাণ, তাও ঈদের পূর্বে তাদের হাতে আসে না, বেতন ভাতা ব্যাংকে এমনভাবে ছাড় হয় যেন মাসে বিশ তারিখের আগে টাকা তোলা কখনও সম্ভব হয় না।

এমপিওকরণ একটি জটিল নিয়ম এবং পুরোটা দুর্নীতিবাজ অসৎ লোকদের দখলে তার প্রমাণ বিগত সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তি, গণমাধ্যমের খবরে প্রকাশ- জীবনেও পাঠদান হয়নি এমন প্রতিষ্ঠানকে এমপিও দেয়া হয়েছে। আমার বাড়ির পাশে একটি কলেজ ছাপা মোতালেব কলেজ প্রায় সব শর্ত পূরণ করেও এমপিওভুক্ত হতে পারেনি। এভাবে সারাদেশে নিবন্ধিত অনেক শিক্ষক এমপিওবিহীন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করে তাদের জীবন আজ দুর্বিসহ। 

কোন এক বিজ্ঞ আলোচক টক শোতে এমপিও নিয়ে আলোকপাত করতে গিয়ে ঠিক এভাবেই বলেছিলেন- এমপিওভুক্ত কিংবা এমপিওকরণের বডিতে সারা গায়ে ক্ষত, কোথায় মেডিসিন প্রয়োগ করলে এই রোগ সারবে জানেন না। আমিও বলতে চাই- এই ক্ষত-বিক্ষত এমপিও বডি পাল্টিয়ে সোজা জাতীয়করণ সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত।

লেখক: সৈয়দ শাহাদাত হোসাইন
সহকারী অধ্যাপক
বাকলিয়া শহিদ এন এম এম জে বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, চট্টগ্রাম

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //