
সলিমুল্লাহ খান
‘সাম্প্রতিক দেশকাল’, কি করিয়া জানি আমি এই পত্রিকার সাংবাদিকদের সহিত একপ্রকার আত্মীয়তার বন্ধনে বাঁধা পড়িয়াছি। প্রচারসংখ্যায় কি পাতার পরিমাণে এই পত্রিকার পারদ হয়তো বড় ওপরে চড়িতে পারেনি, ইহার চেহারাতেও হয়তো বড় একটা প্রসাধনীর ছাপ নাই, কিন্তু ইহাতে প্রকাশিত প্রতিবেদন ও সংবাদ বিশ্লেষণের মান সেই ক্ষতি বহুগুণে পোষাইয়া দিয়াছে।
বড় আকারের পুঁজি লগ্নি না করিয়া আর শুধু চানাচুর পরিবেশন না করিয়াও- মানে মাত্র জনগণের প্রেম মূলধন করিয়া- যে ভাষাহীনের বেদনাকে ভাষা দেওয়া যায়, তাহার সাম্প্রতিক প্রমাণ ‘সাম্প্রতিক দেশকাল’। এই প্রমাণ সে গত আট বৎসর ধরিয়া রাখিতেছে। ভবিষ্যতের হাতে কি আছে তাহা ভগবান জানেন। আমরা সামান্য জীব; প্রার্থনাই আমাদের একমাত্র পাথেয়।
‘সাম্প্রতিক’ শব্দটি আমার অপছন্দের নয়, তবে ‘দেশকাল’ শব্দটির সহিত আমার একটা আত্মিক সম্পর্ক রহিয়াছে। ইউরোপিয়া তত্ত্বজ্ঞানী এমানুয়েল কান্টের জামানা হইতে শুনিয়া আসিতেছি, দেশ ও কাল এই দুই প্রতিজ্ঞা আমাদের অভিজ্ঞতার ধাত্রী। আমরা বলিতে চাহিব, ‘দেশ মানে আমরা যেখানে, আর কাল মানে আমরা যখন।’ কান্ট সাহেব ইহাদের জননীর মর্যাদা দিয়াছেন। আমরা ইহাদিগকে আমাদের কন্যা বলিয়াও জ্ঞান করিব। এমন সুন্দর নামের পত্রিকাটি পত্রেপল্লবে আরো বিকশিত হইবে-এহেন আশা করা মোটেও অসঙ্গত নহে।
‘সাম্প্রতিক দেশকাল’ অনন্তকাল ধরিয়া বাঁচিয়া থাকুক- এই বাসনাই আজ নিবেদন করি। প্রার্থনা করি, নিজের সীমা সে নিজেই ছাড়াইয়া যাক।
সলিমুল্লাহ খান
লেখক ও চিন্তক