Logo
×

Follow Us

নাটক

খবরে নেই যে তারকারা

Icon

মাহমুদ সালেহীন খান

প্রকাশ: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১০:২৩

খবরে নেই যে তারকারা

ঢাকাই সিনেমায় এখন নতুনের ছড়াছড়ি। নতুন সিনেমার ঘোষণা হচ্ছে আর আসছে নতুন নায়িকা। কিন্তু তাদের মধ্যে কাউকেই সম্ভাবনাময়ী বলা যাচ্ছে না। তাদের মধ্যে দু-একজন ভালো করলেও অধিকাংশের অধিকাংশের মধ্যে তেমন কোনো সম্ভাবনা দেখা যায় না।

কিন্তু একটা সময় ঢালিউড পাড়ায় অনেক ধ্রুবতারা ছিলো। যারা দর্শক হৃদয়ে জেগে উঠেছিলেন নিজ অভিনয়গুণে। সত্তর দশকের শুরুর দিক থেকে নব্বইয়ের দশকে অনেক নতুন মুখ এসেছিলেন সিনেমা পাড়ায়। তাদের কেউ কেউ এখনো রয়েছেন; কিন্তু অনেকেই নেই অভিনয়ে। আবার তাদের অনেকেই পাড়ি জমিয়েছেন না ফেরার দেশে। আলোর ঝলকানি দিয়ে হারিয়ে যাওয়া সেই তারাদের নিয়ে পাঠকদের জন্য আজকের আয়োজন।

শিল্পী: নব্বই দশকের দর্শকনন্দিত নায়িকা শিল্পী। পুরো নাম আঞ্জুমান আরা শিল্পী হলেও তাকে শিল্পী নামেই চিনতো সবাই। ১৯৯৫ সালের দিকে চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে তার। মোহাম্মদ হোসেন প্রযোজিত ও রানা নাসের পরিচালিত ‘প্রিয়জন’ চলচ্চিত্রে প্রয়াত অমর নায়ক সালমান শাহর বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন তিনি।

এই ছবিটি তাকে দর্শক জনপ্রিয়তা এনে দেয়। প্রায় ৩৬টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন এই দর্শকনন্দিত নায়িকা। দর্শক জনপ্রিয়তার শীর্ষে থেকেও ২০০০ সালে চলচ্চিত্র থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন শিল্পী। তার অভিনীত মুক্তিপ্রাপ্ত সর্বশেষ চলচ্চিত্র দুটি হচ্ছে নায়করাজ রাজ্জাকের ‘প্রেমের নাম বেদনা’ এবং দেওয়ান নজরুলের ‘সুজন বন্ধু’। বর্তমানে অভিনয় ছেড়ে সংসার এবং দুই সন্তান ছেলে সানাদ ও মেয়ে অ্যাঞ্জেলিনাকে নিয়েই ব্যস্ত রয়েছেন তিনি।

সোনিয়া: নব্বইয়ের দশকের ব্যস্ত নায়িকাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সোনিয়া। ১৯৯১ সালে ‘মাস্তান রাজা’ ছবিতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে সোনিয়ার চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু। এরপর প্রয়াত নায়ক রাজ রাজ্জাকের নির্দেশনায় বাপ্পারাজের বিপরীতে ‘প্রেম শক্তি’ ছবিতে প্রথম নায়িকা চরিত্রে কাজ করেন। ৫০টির অধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি, পাশাপাশি  নাটকেও অভিনয় করতেন।

কিন্তু প্রায় ১০ বছর ধরে সব ধরনের অভিনয়ের বাইরে আছেন। কয়েক বছর আগে বিয়ে করে প্রবাসী স্বামীর হাত ধরে লন্ডনে পাড়ি দিয়েছিলেন, সেখানকার নাগরিকত্বও পেয়েছেন। বৈবাহিক জীবনে সোনিয়া তিন সন্তানের জননী। লন্ডনে হাসি নামেই সবার কাছে পরিচিত তিনি। সোনিয়া সর্বশেষ অভিনয় করেন ‘শুভ বিবাহ’ ছবিতে।

লিমা: জীবন রহমান পরিচালিত প্রেম যুদ্ধ ছবিতে ১৯৯৪ সালের শেষের দিকে সালমান শাহের সঙ্গে জুটি বাঁধেন লিমা। পরের বছর দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর ‘কন্যাদান’ ছবিতেও দেখা যায় এই জুটিকে। কিন্তু ১৯৯৫ সালের পর থেকেই অনেকটা হারিয়ে যান এই নায়িকা।

রাভিনা: ১৯৯৭ সালে মুক্তি পেয়েছিল মোহাম্মদ হান্নান পরিচালিত ‘প্রাণের চেয়ে প্রিয়’ ছবিটি। সেসময় ব্লকবাস্টার ও ব্যবসাসফল হওয়া এই ছবিটি ছিল চিত্রনায়ক রিয়াজের ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট। এই ছবির ‘পড়ে না চোখের পলক’ গানটি হয়ে উঠেছিল সবার প্রিয় গান। সদ্য প্রেমিক হয়ে ওঠা ছেলেরা ছাড়াও গানটি শোনা যেত গানপ্রেমীদের মুখে মুখে। আর সেই সুবাদে ছবিটি তো সুপারহিট হলোই, রিয়াজ হয়ে গেলেন তারুণ্যের হার্টথ্রব।

তার সঙ্গে তারকা বনে গেলেন- এক অপরিচিত নায়িকাও, যাকে দেখা গেছে রিয়াজের বিপরীতে। সে আর কেউ নয়, রাভিনা। ঢাকাই সিনেমায় এসেছিলেন আলোর ঝলক হয়ে। প্রাণের চেয়ে প্রিয় ছবিটির ব্যাপক সাফল্যের পর রিয়াজের সঙ্গে জুটি বেঁধে আবারো হাজির হয়েছিলেন ‘সাবধান’ ও ‘দলপতি’ সিনেমায়। ছবি দুটিও সাফল্য কুড়িয়েছিল, সেই সঙ্গে রাভিনাও। কিন্তু এরপর আর তাকে দেখা যায়নি পর্দায়। 

একা: এক সময়ের আলোচিত নায়িকা একা। গুণী নির্মাতা কাজী হায়াতের ‘তেজী’ এবং ‘ধর’সহ বেশ কয়েকটি ছবিতে মান্নার বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন এই নায়িকা। সে সময় এ জুটিকে বেশ গ্রহণ করেছিল দর্শক। চলচ্চিত্রমহলে বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন এই নায়িকা। অভিনয় করেছেন নায়ক রুবেলের বিপরীতে ‘বাবা কেন আসামি’ ছবিতেও।

এখানেও নজর কাড়তে সক্ষম হন তিনি। নায়ক মান্না মারা যাওয়ার পরও একাধিক নায়কের সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন। শাকিব খানের বিপরীতে  ‘আজকের দাপট’ আলেকজান্ডার বোর সঙ্গে সর্বাধিক ছবিতে অভিনয় ছাড়াও ৩০টির বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি।

কিন্তু সেভাবে আর নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে একার নামে মাদক ব্যবসার অভিযোগ উঠলে তিনি আমেরিকা চলে যান। এরপর ২০১২-১৩ সালে দেশে ফেরেন। এরপর থেকে চলচ্চিত্রে আর দেখা যায়নি এই নায়িকাকে। বিদায় জানিয়েছেন চলচ্চিত্রকে। তবে বিদায় জানালেও হুটহাট হাজির হন কাছের মানুষদের প্রোগ্রামে, কিন্তু সেটা অনেকটা আড়ালেই বলা চলে। 

সিমলা: বাংলা চলচ্চিত্রের আরেক সম্ভাবনাময়ী নায়িকা ছিলেন সিমলা, যিনি অভিষেক ছবিতে ‘ফুলি’ এবং ‘সিমলা’ নামের দুটি চরিত্রে অভিনয় করে জিতে নিয়েছিলেন ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার’। পরিচালক শহিদুল ইসলাম খোকনের ১৯৯৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ওই ছবিতে সিমলার অভিনয় দেখে অনেক চলচ্চিত্র বোদ্ধাই তাকে নিয়ে নানা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে আর আলো ছড়াতে পারেননি এ নায়িকা। বরং ছড়িয়েছেন সমালোচনা।

২০১৫ সালে ‘নিষিদ্ধ প্রেমের গল্প’ নামের একটি ছবিতে ১৫ বছরের এক বালকের নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করে সমালোচিত হন তিনি। ছবিতে ওই বালকের সঙ্গে একাধিক যৌন দৃশ্যে দেখা গেছে তাকে। ‘ম্যাডাম ফুলি’র পর আর কোনো ছবিতেই সাফল্যের দেখা পাননি তিনি। তবে  ‘পলাশ নামের এক ছেলেকে অনেকটা গোপনে বিয়ে করেছিলেন সিমলা, আবার তাকে ডিভোর্স দেয়ার পর তার সাবেক স্বামী চট্টগ্রামে বিমান ছিনতাই করার সময় নিহত হন।

নিহত হওয়ার আগে জানিয়ে গিয়েছিলেন তার স্ত্রী সিমলার কথা। এরপরই সিমলার বিয়ে বিচ্ছেদসহ নানা ঘটনার কথা মিডিয়ায় আলোচিত হয়।

রত্না: ২০০২ সালে ক্লাস সেভেনে পড়া অবস্থায় ‘কেন ভালোবাসলাম’ ছবির মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে নাম লিখান রত্না। একই বছর কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘ইতিহাস’ ছবিতে কাজী মারুফের বিপরীতে অভিনয় করে সবার নজরে আসেন এই নায়িকা।

তার অভিনীত ছবির সংখ্যা ৪৮। ২০১৫ এর শুরুর দিকে হঠাৎ করেই ধস নামে রত্নার ক্যারিয়ারে। সেই ধসেই হারিয়ে যান চলচ্চিত্রের সম্ভাবনাময় এ নায়িকা। এরপর ছোট পর্দায় অভিনয় করে টিকে থাকতে চেয়েছিলেন। শেষমেশ সেটাও পারেননি।

ইরিন: সোহানুর রহমান সোহানের হাত ধরে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবির মাধ্যমে অভিনয়ে এসেছিলেন প্রিয়দর্শিনী মৌসুমী। তার সঙ্গে হাজির হয়েছিলেন সালমান শাহ। এদিকে চিত্রনায়িকা মৌসুমীর ছোট বোন ইরিন জামান। সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘অনন্ত ভালোবাসা’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে অভিনয় জগতে আসেন ইরিন।

১৯৯৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ওই ছবিতে কিছুটা সুনাম কুড়িয়েছিলেন তিনি। এরপর বেশ কয়েকটি ছবিতে দেখা গেলেও তিনি নজর কাড়তে পারেননি পরিচালক, প্রযোজক বা দর্শকদের। অভিনয়ের পাশাপাশি গায়িকা হিসেবে অল্পবিস্তর সুনাম আছে ইরিন জামানের। ২০১৪ সালের এপ্রিলে ‘মধুরাত’ এবং ‘তোমায় দেখবো ছুঁয়ে’ নামের দুটি অ্যালবাম মুক্তি পায় তার।

এরপর থেকে খবরে নেই এই নায়িকা-গায়িকার। স্বামী-সন্তুান নিয়ে থিতু হয়েছেন প্রবাসে। ‘অনন্ত ভালোবাসা’ ছবির মাধ্যমে অভিষেক হয়েছিল হালের সুপারস্টার শাকিব খানেরও। শাকিব রয়ে গেলেও হারিয়ে গেছেন ইরিন।

তামান্না: আফজাল হোসেনের নির্দেশনায় ১৯৯৫ সালে স্টারশিপের একটি বিজ্ঞাপনে মডেল হিসেবে কাজ করার মধ্য দিয়ে মিডিয়াতে অভিষেক ঘটে চিত্রনায়িকা তামান্নার। তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র সাইফুল আজম কাশেম পরিচালিত ‘ত্যাজ্যপুত্র। এই ছবির শুটিং চলাকালে তিনি কাজ করেন শহিদুল ইসলাম খোকন পরিচালিত ‘ভ-’ ছবিতে। কুংফু হিরো হিসেবে খ্যাত রুবেলের বিপরীতে এ ছবিতেও আলো ছড়িয়েছিলেন তামান্না।

২০১৩ সালে মুক্তি পায় তার অভিনীত শেষ ছবি মঈন বিশ্বাসের ‘পাগল তোর জন্য রে’। কিন্তু এরপর হঠাৎ করেই দেশ ছেড়ে, অভিনয় ছেড়ে সুইডেনে পাড়ি জমান এই নায়িকা। স্বামী নিয়ে স্থায়ীভাবে সেখানেই বসবাস করছেন। তবে ইদানীং তিনি শোনা যাচ্ছে আবারো অভিনয়ে ফিরছেন। নিজেই বেশ কয়েকবার অভিনয়ে ফেরার কথা জানালেও এখন পর্যন্ত তাকে আর সিনেমায় দেখা যায় নি।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫