প্রিন্স হ্যারির লেখা বই প্রকাশের প্রথম দিনেই রেকর্ড

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১২ জানুয়ারি ২০২৩, ১৬:৩০

প্রিন্স হ্যারির লেখা বই। ছবি: বিবিসি
প্রিন্স হ্যারির নিজের স্মৃতি নিয়ে লেখা বই ‘স্পেয়ার’ যুক্তরাজ্যে কম সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিক্রির রেকর্ড গড়েছে।
গত মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) বাজারে আসা ছাপানো বই, ই-বুক ও অডিও ফরম্যাট মিলিয়ে চার লাখ কপি বিক্রি হয়েছে প্রথম দিনে। বইটির প্রকাশকের দাবি, যুক্তরাজ্যে আর কোনো নন-ফিকশন বই প্রথম দিনে এত বিক্রি হয়নি।
ডয়েচে ভেলের এক প্রতিবেদনে এ কথা জানানো হয়েছে।
এদিকে হ্যারির স্মৃতিকথাকে আংশিক স্বীকারোক্তি, আংশিক গলাবাজি আর আংশিক প্রেমপত্রের সমন্বয় হিসেবে অ্যাখ্যা দিয়েছেন বিবিসির রাজপরিবার বিষয়ক সংবাদদাতা শন কোল্যান। তার মতে কোথাও কোথাও এটাকে মনে হয়েছে দীর্ঘতম মাতাল পাঠ্য। সব মিলিয়ে এই স্মৃতিকথায় উন্মোচিত হয়েছে রাজপরিবারের অন্ধকার দিক, যা একদম আড়ালে ছিল। তবে ‘স্পেয়ারে’ বর্ণনা করা বিভিন্ন ঘটনাবলি নিয়ে রাজপরিবার এখনো নিশ্চুপ রয়েছে। বিশেষ করে কেনসিংটন প্রাসাদ ও বাকিংহ্যাম প্রাসাদ থেকে এসব ঘটনার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য বা বিবৃতি আসেনি।
বইটি বিশ্বব্যাপী একসঙ্গে ১৬টি ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে। এর নাম এসেছে রাজকীয় ও অভিজাত পরিমণ্ডলের একটি পুরনো কথা থেকে। সেটি হলো প্রথম ছেলে সিংহাসন, ক্ষমতা ও সম্পদের উত্তরাধিকারী আর দ্বিতীয়জন অতিরিক্ত (স্পেয়ার)। যা কিছু পাওয়ার, যে প্রথমে জন্ম নেয়, তারই জোটে।
বিশ্বের বৃহত্তম প্রকাশনা সংস্থা পেঙ্গুইন র্যান্ডম হাউজের লন্ডন শাখা ট্রান্সওয়ার্ল্ড পাবলিশার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ল্যারি ফিনলে এক বিবৃতিতে বলেছেন, বইটি দারুণ চলবে এটা আমরা আগেই জানতাম। তবে এটি আমাদের সর্বোচ্চ প্রত্যাশাকেও ছাড়িয়ে গেছে। আমরা যতদূর জানি, ব্রিটেনে এর আগে শুধু আরেক হ্যারির (‘হ্যারি পটার’) বই-ই প্রথম দিনে এর চেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে।
গত মঙ্গলবার সাধারণ পাঠকের নাগালে আসার আগেই অবশ্য এই বই নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়।
আত্মজীবনী হিসেবে লেখা এই বইয়ে ব্রিটেনের রাজপরিবার থেকে বের হয়ে আসা এই রাজপুত্র তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ব্যক্তিগত দূরত্ব ও টানাপড়েনের ঘটনা তুলে ধরেছেন। লিখেছেন, কী পরিস্থিতিতে তিনি ও তার স্ত্রী বাধ্য হয়েছেন রাজপরিবার ছেড়ে আসতে। বড় ভাই, যুবরাজ উইলিয়ামসের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক এবং রাজপরিবারের সঙ্গে তার দূরত্ব সৃষ্টির বিভিন্ন ঘটনা ছাড়াও মায়ের প্রতি হ্যারির স্মৃতিকাতরতা ও ব্যক্তিগত যৌনজীবন ও মাদকাসক্তির প্রসঙ্গ উঠে এসেছে বইটিতে। প্রাসাদের আড়ালে থাকা অনেক ঘটনা প্রকাশ্যে চলে এসেছে হ্যারির এই বইয়ের মধ্য দিয়ে, যা রাজপরিবারের জন্য স্পষ্টতই বিব্রতকর। গার্ডিয়ানে এক কলামিস্ট বই প্রকাশের পর লিখেছেন- এখন যে কেউ বলতে পারে, ব্রিটেনের প্রথম পরিবারের ভেতরেই যদি এমন সব ঘটনা ঘটে, তাহলে সবার কী অবস্থা?
‘স্পেয়ারে’ হ্যারির সবচেয়ে বিস্ফোরক দাবিগুলোর একটি হচ্ছে, তার বড় ভাই প্রিন্স উইলিয়াম ডাচেস অব সাসেক্স মেগানকে নিয়ে তর্কের সময় তাকে মেঝেতে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিলেন। কথিত এই হাতাহাতি হয়েছিল দুই ভাইয়ের কথোপকথনের পরে। ব্রিটিশ সিংহাসনের উত্তরাধিকারী উইলিয়াম ওই তর্কের সময় মেগানকে ‘অনমনীয়’, ‘অভদ্র’ এবং ‘অনুভূতিহীন’ বলে আখ্যায়িত করেন। হ্যারি লিখেছেন, উইলিয়াম ‘আমার কলার চেপে ধরে, আমার নেকলেস ছিঁড়ে ফেলে এবং আমাকে মেঝেতে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।’
ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে ডিউক অব সাসেক্স লিখেছেন, তাদের সম্পর্কের ‘পুরো বিপর্যয়কর বদলে যাওয়া’ এবং সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে টানাপড়েন নিয়ে আলোচনা করার জন্য লন্ডনের কেনসিংটন প্রাসাদে হ্যারি ও মেগানের তৎকালীন বাসভবন নটিংহাম কটেজে যান উইলিয়াম। হ্যারি দাবি করেছেন, উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের পর বড় ভাইকে পানি পান করতে দিয়েছিলেন এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টাও করেছিলেন, এমন সময় উইলিয়াম তাকে আক্রমণ করে বসেন।
হ্যারির স্মৃতিকথায় দুই রাজবধূর মধ্যেকার সম্পর্কের দূরত্বও উঠে এসেছে। হ্যারি লিখেছেন, ২০১৮ সালে মেগান তার ভাবি কেট মিডলটনকে সম্ভবত এমন কিছু বলে চটিয়ে দিয়েছিলেন যে সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় তার হরমোনের তারতম্যের কারণে তার ‘বুদ্ধি শিশুদের মতো’ হয়ে গেছে। হ্যারি তাদের বাসভবনে উইলিয়াম এবং কেটের সঙ্গে ২০১৮ সালের একটি বৈঠকের বর্ণনা দিয়েছেন, যা ডিউকের মতে, উভয় দম্পতির মধ্যে সম্পর্ক ভালো করার একটি প্রচেষ্টা ছিল। বইয়ে দাবি করা হয়েছে যে কেট মেগানকে বলেছিলেন, ‘আমার হরমোন সম্পর্কে কথা বলার মতো ঘনিষ্ঠতা আমাদের মধ্যে নেই!’ মেগান বলেছিলেন যে তিনি তার সব বন্ধুর সঙ্গে এভাবেই কথা বলেন। হ্যারি উল্লেখ করেছেন যে প্রিন্স অব ওয়েলস মেগানকে ‘অভদ্র’ বলেছেন এবং তার দিকে আঙুল তুলে বলেছেন, ‘এখানে ব্রিটেনে এই আচরণ চলে না।’ জবাবে মেগান বলেছিলেন, ‘দয়া করে আমার মুখের সামনে থেকে আপনার আঙুল সরিয়ে নিন।’
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে শেষ বিদায় জানানোর স্মৃতিও স্মরণ করেছেন হ্যারি, যা নিয়ে অনেকেরই আগ্রহ রয়েছে। হ্যারি জানান, গত সেপ্টেম্বরে বাবা চার্লসই ফোন করে প্রথম বলেছিলেন যে রানির স্বাস্থ্য ‘একটা বাঁক নিয়েছে’। স্মৃতিকথায় হ্যারি দাবি করেছেন, বাবার ফোন পাওয়ার পরপরই তিনি ভাই উইলিয়ামকে বার্তা পাঠিয়েছিলেন যে তিনি এবং তার ভাবি কেট বালমোরাল প্রাসাদে যাচ্ছেন কি না কিংবা কখন ও কীভাবে যাবেন? তবে উইলিয়ামের কাছ থেকে কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।