করোনাভাইরাস
ইতালিতে দেড় কোটির বেশি মানুষ কোয়ারেন্টিনে

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৮ মার্চ ২০২০, ১৪:৫৩

ইতালির প্রধানমন্ত্রী জিউসেপে কন্তে বলেছেন, লোমবার্ডিসহ আরো ১৪ প্রদেশে অন্তত এক কোটি ৬০ লাখ মানুষকে বাধ্যতামূলকভাবে কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।
এই অবস্থা এপ্রিলের প্রথম দিক পর্যন্ত থাকবে। দেশটিতে নাটকীয়ভাবে করোনাভাইরাস বেড়ে যাওয়ায় ব্যায়ামাগার, সুইমিংপুল, যাদুঘর ও স্কি রিসোর্টগুলো বন্ধ করে দেয়া হবে।
বাণিজ্যিক কেন্দ্র মিলান ও পর্যটকদের মূল আকর্ষণ কেন্দ্র ভেনিসে এই পদক্ষেপ ৩ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে।
ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ইতালি মারাত্মকভাবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। দেশটিতে মৃতের সংখ্যা এখন ২৩০ জন ছাড়িয়ে গেছে। কর্মকর্তারা বলছেন, ২৪ ঘণ্টায় ৫০ জনের বেশি মারা গেছে। নিশ্চিত আক্রান্তের সংখ্যা শনিবার এক ধাক্কায় ১,২০০ থেকে বেড়ে হয়েছে ৫,৮৮৩ জন।
লোমবার্ডির পুরো উত্তর অঞ্চল যেখানে এক কোটি লোকের বাস এবং ইটালির বাণিজ্যিক নগরী মিলানও বন্ধ রাখা হবে। তবে জরুরি ভিত্তিতে কিছু করার প্রয়োজন হলে সেক্ষেত্রে নিয়মের ব্যত্যয় হতে পারে। এছাড়া ১৪টি প্রদেশের মধ্যে ভেনিস, পারমা ও মোদেনা বন্ধ থাকবে, যার ফলে এক কোটি ৬০ লাখ মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলবে।
প্রধানমন্ত্রী কন্তে বলেছেন, যেসব প্রদেশ আক্রান্ত হয়েছে তার মধ্যে মোদেনা, পারমা, পিয়াসেনজা, রেজ্জিও এমিলিয়া, রিমিনি, পেসারো ও আরবিনো, আলেসান্দ্রিয়া, অ্যাসটি, নোভারা, ভারবানো কিউসিও ওসোলা, ভারসেই, পাদুয়া, ট্রেভিসো ও ভেনিস।
এখন পর্যন্ত ৫০ হাজারের মত মানুষ উত্তর ইটালিতে কোয়ারেন্টিনে রয়েছে।
কী কী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে?
- বিয়ের অনুষ্ঠান ও শেষকৃত্যসহ ধর্মীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান স্থগিত।
- সিনেমা, নাইট-ক্লাব, ব্যায়ামাগার, সুইমিংপুল, যাদুঘর ও স্কি রিসোর্টগুলো বন্ধ করে দেয়া হবে।
- রেস্তোরাঁ ও ক্যাফে খোলা থাকতে পারে কিন্তু সেক্ষেত্রে ক্রেতাদেরকে অবশ্যই এক মিটার দূরত্ব রেখে বসতে হবে।
- মানুষজনদের বলা হবে যাতে করে তারা যতটা পারে ততটা ঘরে থাকে।
- যদি কেউ কোয়ারেন্টিন ভঙ্গ করে তাহলে তাকে তিন মাস জেলে কাটাতে হবে।
- সব ধরণের খেলাধুলার আসর বন্ধ থাকবে। ইতালির ফুটবল প্লেয়ার ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট সব ম্যাচ পিছিয়ে দেয়ার আহ্বান করেছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ইতালিকে পরামর্শ দিয়েছে যাতে করে দেশটি ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধে কঠিন নিয়ন্ত্রণ নেয়। এই ব্যাপক মাত্রায় কোয়ারেন্টিন করার পরিকল্পনা চীনও করেছিল। যে পদক্ষেপকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে কাজে আসায় প্রশংসা করেছিল।
ইতালির প্রথম সারির রাজনীতিবিদ নিকোলা জিঙ্গারেত্তি বলেছেন, শনিবার তিনি পরীক্ষা করে দেখেছেন তিনি করোনায় আক্রান্ত।
ইতালির মধ্য-বাম ডেমোক্রেটিক পার্টির এই নেতা ফেসবুকে লিখেছেন, আমি ভালো আছি। কিন্তু কিছু দিন আমাকে বাড়িতে থাকতে হবে।
দেশটি বলেছে, এই সংকট মোকাবেলায় যেসব ডাক্তার অবসরে গেছে তাদেরকে আবার কাজে লাগানো হবে।
মৃতের সংখ্যা ৩৬০০
করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৬শ জনে। এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৬ হাজার ১৯৫ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়া এই ভাইরাসে আক্রান্ত ৬০ হাজার ১৯০ জন চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে। বিশ্বব্যাপী ১০৩টি দেশ ও অঞ্চলে এই ভাইরাসের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে।
শুধুমাত্র চীনের মূল ভূখণ্ডেই করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজার ৬৯৬ ও মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজার ৯৭ জনের। চীনের পর করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি দক্ষিণ কোরিয়ায়। দেশটিতে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৭ হাজার ১৩৪ ও মৃত্যু হয়েছে ৫০ জনের।
ইরান
ইরানে শনিবার নভেল করোনাভাইরাসে নতুন করে ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪৫ জনে। এদিন এই ভাইরাস সংক্রমণে দ্বিতীয় একজন এমপিরও মৃত্যু হয়েছে বলে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে।
দেশটিতে করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ছয় হাজারে পৌঁছেছে। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কিয়ানুস জাহানপৌর শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ১৬ হাজারের বেশি মানুষের এখন পরীক্ষা চলছে। এদের বাইরে আরো এক হাজার ৬৬৯ জনের অসুস্থতার বিষয়টি ধরা পড়েছে।
লাতিন আমেরিকায় প্রথম মৃত্যু আর্জেন্টিনায়
লাতিন আমেরিকায় করোনাভাইরাস সংক্রমণে আক্রান্ত প্রথম ব্যক্তি ব্রাজিলের হলেও প্রথম মৃত্যু হয়েছে আর্জেন্টিনায়। শনিবার ওই আর্জেন্টাইন রোগীর মৃত্যু হয় বলে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিবৃতিতে জানিয়েছে।
ইউরোপ ভ্রমণ করে আসার পর ৬৪ বছর বয়সী ওই ব্যক্তির দেহে ভাইরাসটির সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছিল। রাজধানী বুয়েনোস আইরেসের বাসিন্দা ওই ব্যক্তি ২৫ ফেব্রুয়ারি ইউরোপে থেকে আর্জেন্টিনায় ফিরেছিলেন বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
নিউইয়র্কে জরুরি অবস্থা
করোনাভাইরাস আতঙ্কে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জরুরি অবস্থা জারি করেছে রাজ্যের গভর্নর। ইতোমধ্যে সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৬ জনে।
যুক্তরাষ্ট্রে ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে নতুন করে আরো দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে এ ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৭-তে দাঁড়িয়েছে। শুক্রবার থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আরো আটটি অঙ্গরাজ্যে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। এগুলো হলো-সাউথ ক্যারোলাইনা, হাওয়াই, ইন্ডিয়ানা, ওকলাহোমা, নেব্রাস্কা, কেনটাকি, মিনেসোটা ও পেনসিলভানিয়া। এ নিয়ে দেশটির ৫০টি অঙ্গরাজ্যের প্রায় অর্ধেকেই এ ভাইরাস সংক্রমিত হয়েছে। -বিবিসি, এএফপি ও রয়টার্স