পর্ন তারকা স্টর্মি-ট্রাম্পের মধ্যকার বিবাদের আদ্যোপান্ত

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ৩১ মার্চ ২০২৩, ২৩:০২

পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলস ও আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত
আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসাবে ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি ক্ষমতায় থাকতে একের পর এক অপকর্ম করেও রেহাই পেয়ে যাচ্ছিলেন। এমন কি ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গা বাঁধিয়ে দেয়ার পরও আবারও প্রেসিডেন্ট হবার স্বপ্ন দেখছেন।
একজন পর্ন তারকার মুখ বন্ধ রাখতে ঘুষ দেবার জন্য আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ঠিক আগে এই ঘটনা ঘটেছিলো। তবে, অভিযোগের বিস্তারিত এখনও প্রকাশ করেনি আদালত।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি স্টর্মি ড্যানিয়েলস নামে ওই নারীর সাথে তার সম্পর্ক গোপন রাখার বিনিময়ে এক লাখ ৩০ হাজার ডলার অর্থ প্রদান করেছে। বিষয়টি তদন্তের পর যুক্তরাষ্ট্রের গ্র্যান্ড জুরি ট্রাম্পকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযুক্ত করার পক্ষে ভোট দিয়েছে।
ট্রাম্প বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। বর্তমানে ফ্লোরিডায় বসবাসকারী সাবেক এই প্রেসিডেন্ট সোমবার নিউইয়র্কে যাবেন বলে আশা করা হচ্ছে এবং মঙ্গলবার তাকে আদালতে হাজির করা হতে পারে। এ সময় তাকে অভিযোগ পড়ে শোনানো হবে।
এই বিচার প্রক্রিয়াকে ‘কলঙ্ক’ হিসাবে উল্লেখ করে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, এটি ডেমোক্র্যাট ও বাইডেনের ষড়যন্ত্র। ডেমোক্র্যাটরা তাকে পাকরাও করতে মিথ্যা বলছে, প্রতারণা করছে। এখন যা করছে তা অকল্পনীয়, একজন নির্দোষ ব্যক্তির বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে।
ট্রাম্পের অভিযুক্ত হওয়ার বিষয়ে ড্যানিয়েলস তার সমর্থকদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এক টুইট বার্তায় তিনি বলেছেন,আমার কাছে এতো এতো মেসেজ আসছে যে আমি সবাইকে তার উত্তর জানাতে পারছি না...এছাড়াও আমি এখনই সব কথা উগরে দিতে চাই না।
যার অভিযোগে কারণে ডোনাল্ড ট্রাম্প ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত হয়েছেন, সেই পর্ন তারকা এবং স্ট্রিপার স্টর্মি ড্যানিয়েলস এখন আলোচনার কেন্দ্রে। এক সময়ে পর্ন সিনেমা জগত দাপিয়ে বেড়ানো এই নারী এখন গোটা বিশ্বের কাছেই দারুণ এক চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্টর্মির দাবি, ট্রাম্প ও তার মধ্যে যৌন সম্পর্ক হয়েছিলো এবং ২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ওই বিষয়ে চুপ থাকতে তাকে এক লাখ ৩০ হাজার ডলার দিয়েছিলেন ট্রাম্পের আইনজীবী। পরে বেশকিছু অভিযোগে সেই আইনজীবী মাইকেল কোহেনের জেল হয়েছিল।
স্টর্মি ড্যানিয়েলসের আসল নাম স্টেফানি ক্লিফোর্ড। যদিও তিনি নিজেকে স্টর্মি নামেই পরিচয় দিতে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন। তিনি জানান, ২০০৬ সালে একটি চ্যারিটি গলফ টুর্নামেন্টে ট্রাম্পের সঙ্গে তার দেখা হয়। সেখানেই ট্রাম্পের সঙ্গে তার পরিচয়।
এই পর্ন তারকার মতে, ক্যালিফোর্নিয়া ও নেভাডার সীমান্ত এলাকার একটি রিসোর্টের লেক তাহো নামে এক হোটেল কক্ষে তাঁকে ডিনারের জন্য আমন্ত্রণ জানান। সেখানে তার সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হন ট্রাম্প। ট্রাম্পের আইনজীবী এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।
এই ঘটনার ঠিক এক বছর আগেই ট্রাম্প তার বর্তমান স্ত্রী মেলানিয়াকে বিয়ে করেছিলেন। স্টর্মি দাবি করেন, ট্রাম্পের সঙ্গে তার যৌন মিলনের ঘটনাটি তার জীবনের সবচেয়ে খারাপ মিলনের একটি। ট্রাম্পের যৌনাঙ্গের আকার নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে হাস্যরসও করেছেন স্টর্মি।
তিনি জানান, ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ট্রাম্পের আইনজীবী মাইকেল কোহেন তাকে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার দিয়েছিলেন যৌন সম্পর্কের ঘটনা গোপন রাখতে। নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করেই সেসময় কিছু না বলে ওই অর্থ গ্রহণ করেন।
ওই ঘটনা নিয়ে ২০১১ সালে ইন টাচ ম্যাগাজিনকে সাক্ষাৎকার দিতে রাজি হওয়ার পরপরই হুমকি পাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেছেন, লাস ভেগাসে এক ব্যক্তি তার কাছে যান। এরপর হুমকি দিয়ে তাকে বলেন, ট্রাম্পকে নিজের মত থাকতে দাও।
২০১৮ সালে সিবিএস নিউজের ‘সিক্সটি মিনিটস’ অনুষ্ঠানে এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা জানান ড্যানিয়েলস। বিষয়টি নিয়ে এর আগে তিনি ইন টাচ ম্যাগাজিনকে যে সাক্ষাতকার দিয়েছিলেন, ২০১৮ সালের আগ পর্যন্ত তা পুরোপুরি ছাপতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
অবশেষে ২০১৮ সালে ট্রাম্প ও স্টর্মি ড্যানিয়েলসের যৌন সম্পর্কের বিষয়টি ছাপে ‘ইন টাচ’ ম্যাগাজিন। এর কয়েক সপ্তাহ পর ‘সিক্সটি মিনিট’ অনুষ্ঠানে ড্যানিয়েলস জানান, ২০১১ সালে ইন টাচ ম্যাগাজিনকে সাক্ষাৎকার দিতে রাজি হওয়ার পরপরই তাকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল।
স্টর্মি ড্যানিয়েলসের অভিযোগ নিয়ে ট্রাম্পকে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য ডেকেছেন প্রসিকিউটররা। তবে সাক্ষ্য দেয়ার প্রস্তাবটি ইচ্ছাধীন, আর ট্রাম্প সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করতে পারেন। যদিও অবৈধ অর্থ প্রদানের বিষয়টি নিয়ে গত পাঁচ বছর ধরে তদন্ত করছে ম্যানহাটনের আদালত।
১৯৭৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানায় জন্মগ্রহণ করেন স্টর্মি ড্যানিয়েলস, আসল নাম স্টেফানি ক্লিফোর্ড। রাজ্যের ব্যাটন রুজে একটি গরিব এলাকায় বড় হন তিনি। ছোটবেলায় ঘোড়ায় চড়তে ও লেখালেখি করতে পছন্দ করতেন স্টেফানি। চাইতেন বড় হয়ে সাংবাদিক হবেন।
কিন্তু সেই স্বপ্ন থেকে বহু দূরে সরে গিয়ে ২০০৪ সালে পর্ন ইন্ডাস্ট্রিতে জড়িয়ে পড়েন স্টেফানি। সেখানে পরিচিতি পান স্টর্মি ড্যানিয়েলস নামে। তবে, আত্মজীবনীতে স্টর্মি জানিয়েছেন, পর্ন ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করার আগে মাত্র ১৭ বছর বয়সেই প্রথম স্ট্রিপ ড্যান্স করেন।
পরে তিনি অন্যান্য কাজ শুরু করেন। পর্ন ছবির পাশাপাশি বেশ কয়েকটি মূলধারার চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন তিনি। জিতেছেন অসংখ্য পুরস্কার। পর্ণ ছবিতে অভিনয়ের পাশাপাশি পর্ন ছবি তৈরি, পরিচালনা, চিত্রনাট্য ও প্রযোজনার কাজও করেছেন।
২০১০ সালে লুইজিয়ানার রিপাবলিকান সিনেট মনোনয়নে প্রতিযোগিতা করে রাজনীতিতেও নাম লেখান। যদিও সেটি বেশিদূর যায়নি। ২০১১ সালে আত্মজীবনী ‘ফুল ডিসক্লোজার’ লেখেন তিনি। এটি নিয়েই মার্কিন ম্যাগাজিন ‘ইন টাচ’কে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে তিনি প্রথমবার ট্রাম্পের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকার কথা প্রকাশ করেন।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, একজন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার কারণে তাঁর সিক্রেট সার্ভিসের নিরাপত্তা রয়েছে। নজিরবিহীন রায় হলেও তাঁর এজেন্টরা সর্বদা তাঁর পাশে থাকবেন। নিউইয়র্ক পুলিশের তরফে হাই অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।
সম্প্রতি রিপাবলিক দলের হয়ে ২০২৪ সালে আবার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়ানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন ট্রাম্প। তবে এই ফৌজদারি মামলায় শ্রীঘরে ঠাঁই হলে তাঁর মার্কিন প্রেসিডেন্টের গদিতে ফেরার আশা ভঙ্গ হতে চলেছে বলেই আন্তর্জাতিক মহলের অনুমান।